এক
নীলাঞ্জনা,
জানিনা এ চিঠি তোমার কাছে পৌছুবে কি না।
এ চিঠির ভাগ্যও হয়তো অন্যগুলোর মতোই হবে; যেমনটি আগেও লিখেছি নির্ঘুম রাতে হলের সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর, টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে। সেই চিঠিগুলোও তোমাকে পাঠানো হয়নি কখনো।
ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরুর প্রথম দিনই চোরা চোখে সবগুলো মেয়েকে দেখে নিয়েছি। সুন্দরী মেয়েদের প্রতি আমার আজন্ম প্রবল আগ্রহ।
দিন যায়।
ক্লাশের মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপের মতো গড়ে উঠে বন্ধুদের ছোট ছোট দল। তবে আমাদের দলটি ছিল বসচেয়ে হুল্লুড়ে। পিকনিক, পার্টি, আড্ডা- সবকিছুতেই সবচেয়ে এগিয়ে। ঠিক কখন কিভাবে শুরু হয়েছিল এখন মনে পড়ছেনা, কিন্তু এক সময় আবিষ্কার করলাম ক্লাশের সবচেয়ে সুন্দরী আর স্মার্ট মেয়েটি আমার দলের সঙ্গেই ঘুরছে-ফিরছে আড্ডা দিচ্ছে।
যাকে দেখলেই আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, সেই মেয়ে আমার কয়েক ইঞ্চি দূরে ঘাসের গালিচায় বসে বাদাম চিবুচ্ছে। হেসে গড়িয়ে পড়ছে আমার কৌতুক শুনে! সায়েন ফিকশনের মতো অসম্ভব আর অবাস্তব মনে হয় সবকিছু।
মুখচোরা আমি কারো কাছে তোমার সম্পর্কে জানতে চাওয়ার সাহস পাই না। পাছে ভেবে বসে আমি তোমার প্রেমে পড়েছি (সত্যিইকি পড়িনি!)। স্বপ্নের দিনগুলো বয়ে যায় বিদ্যুৎ গতিতে।
কিভাবে যেন একদিন জেনে যাই, তুমি বিবাহিতা।
মনে পড়ে সেই রাতে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছিলো। বৃষ্টি হচ্ছিলো আমার মধ্যেও। সারা রাত ভেজা বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেট টেনে গেছি।
সেদিন সকাল সকাল ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে মেজাজ খাট্টা হয়ে গেল।
সকালের ক্লাশটি হচ্ছে না। পরের ক্লাশ সেই দুটোয়। ওই ক্লাশটি বাঙ মেরে মহসিন হলে গিয়ে আরিফের রুমে ম্যারাথন আড্ডা দেবো, নাকি লাইব্রেরি বা সেমিনার রুমে বসে বই নাড়াচাড়া করবো- এই দুটি সম্ভাবনা নিয়ে যখন মনে মনে ভাবছি, তখন পিছন থেকে ডাক-
-ওহ্ তোমারও একই অবস্থা! এদিকে আমিও গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। এখন এ সময়টা কীভাবে কাটাই! এক কাজ করি চলো কিছুক্ষণ লাইব্রেরিতে গিয়ে বসি। পরীক্ষাতো নাকের ডগায়, এদিকে কোনো প্রস্তুতি নেই।
তোমাকে দেখে বরাবরের মতোই আমার নি:শ্বাস দ্রুত বইতে শুরু করলো, নাক-কান দিয়ে গরম হল্কা বের হচ্ছিলো। দুই হাতের তালু ঘেমে উঠে।
অনার্সে একটু বেশি রকম ভালো রেজাল্ট থাকায় বরাবরই ডিপার্টমেন্টের সুন্দরীরা আমার কাছে নোটের জন্য ভিড় জমায়। আমিও মজা পাই তাদের সঙ্গে কথা বলে। তোমার কেসও তাহলে একই, আমি মনে মনে হাসি।
তখনো জানিনা এই পাঁচ ঘন্টাই আমার জীবনের ছক বদলে দেবে!
ওই পাঁচ ঘন্টায় আমরা পাঁচ আলোকবর্ষ অতিক্র করে পরষরের কাছাকাছি আসি। নোটখাতা, বই, পড়ে থাকে টেবিলে। খুলে যায় অনর্গল কথার আর্গল। দুজন দুজনকে আবিষ্কার করি। নিজের ক্যাবলা মার্কা হাসি নিয়ে বরাবরই দুশ্চিন্তা, তাই পারতপক্ষে কারো সামনে হাসি না।
কিন্তু তুমি জানালে আমার হাসি নাকি খুব সুন্দর। দেবশিশুর মতো পবিত্র। এমন করে কেউ কখনো বলেনি। আমি লজ্জায় বেগুনি হই। সে রাতে আমার ঘুম হয়নি।
এরপর দিন কাটে দ্রুত।
সুযোগ পেলেই বন্ধুদের দল থেকে দুজন একা হয়ে যাই। বেইলি রোডে চটপটি, মহিলা সমিতিতে নাটক, ওপেন এয়ার কনসার্ট, জাদুঘরে চিত্র প্রদর্শনী, বিশ¡সাহিত্য কেন্দ্রে গানের অনুষ্ঠান- আমার সাদা-কালো জীবনটা হঠাৎ করেই হয়ে যায় “সম্পূর্ণ রঙ্গীণ”।
কিন্তু আমার মধ্যে চলতে থাকে অসহনীয় টানপোড়েন। বুঝতে পারছি যা চলছে তা ঠিক নয়; এখনই থামাতে হবে, নয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে।
পরকীয়া প্রেমের পণিতি কখনোই শুভ হয়না; অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে।
কিন্তু তোমার নেশা তখন আমাকে ড্রাগের মতো পেয়ে বসেছে। শুক্রবার ইউনিভার্সিটি বন্ধ। সে দিনটি আমার দ্বীপান্তরের মতো। মনে হয়, জনবিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে আমি নির্বাসিত।
তোমাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকি প্রতিটি মুহুর্ত। এর পরও একদিন বুকে পাথর বেঁধে, সাহস করে বাস্তবের মুখোমুখি হই।
“তোমার সঙ্গে খুব জরুরি কথা আছে। ক্লাশ শেষে চারুকলার বকুলতলায় থেকো। ”
কৌশলে চিরকুট ধরিয়ে দেই তোমার হাতে।
তখন মোবাইল আজকের মতো এতোটা পরিচিত নয়, আমার মতো মফস্বলের ছেলেদের জন্য সেটা ভিন গ্রহের বস্তু। তাই চিরকুট। ব্যপারটা অতিনাটুকে হয়ে গেল কিন্তু অন্য উপায় ছিল না।
ক্লাশ শেষে তুমি বকুল তলায় এলে। বড় বড় চোখদুটো বিষ্ময়ে আরো বড় হয়ে আছে।
তার সঙ্গে মিশেছে একরাশ শঙ্কা।
-কী ব্যপার একেবারে চিঠি দিয়ে তলব! কোনো সমস্যা?
এই প্রশ্নের মুখে পড়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলি। রাতে হাজারবার মহড়া দেওয়া কথাগুলোা বেমালুম হজম হয়ে যায়। দু হাত কচলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি।
দেখো, তোমার আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের সীমা ছেড়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার মনে হয় এখনই আমাদের সাবধান হওয়া ভালো....
আমার কথা শুনে যে প্রতিক্রিয়া তুমি দেখালে তার জন্য আমি এতোটুকু প্রস্তুত ছিলাম না। তোমার কাঁচভাঙ্গা হাসির সামনে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি। হাসলে তোমাকে বরাবরই আরো সুন্দর লাগে। তবে তখন সেই সৌন্দর্যও দেখিছিলাম না আমি।
সামলে নিয়ে তুমি বললে,
-তাহলে আপনার ধারণা আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি, কেমন?
তোমার আপনি সম্বোধন শুনে এবং এই পাল্টা প্রশ্নে একেবারেই বেকুব বনে যাই।
মনে মনে ভাবি, আসলেইতো, কেন আমি ভাবলাম যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছে? আমিতো জানি স্বামীর সঙ্গে সুখের সংসার তোমার। তার পরেও কেন যে..
নিজেকে খুব ছোট মনে হয়; মনে হয় লজ্জায় দুর্বাঘাসের সঙ্গে মিশে যাই।
বেকুব আমি বরাবরই, তাই বলে এতোটা!
এ ঘটনার পর আমাদের সম্পর্কে কোথায় যেন ছন্দপতন ঘটে। কিছুতেই আর স্বাভাবিক হতে পারিনা তোমার সঙ্গে। বোকার মতো তোমার কাছে ধরা দেওয়ার লজ্জা আমাকে নিরন্তর তাড়া করে ফিরে।
কিন্তু তোমার ব্যবহারে এতোটুকু পরিবর্তন নেই। আগের মতোই ক্লাশ-নোট-লেকচার-আড্ডা সবকিছু চলতে থাকে। আর আমি নিজের কাছথেকে পালিয়ে বেড়াই।
ডিপার্টমেন্টে হৈহৈরৈরৈ, কি ব্যপার! সার্ক ট্যুর। বরাবরের মতোই আমাদের গ্রুপই সবকিছুর দায়িত্বে।
সঙ্গে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান স্যার আর একজন ম্যাডাম। তুমিও আছো দলে ।
প্রথমে নেপাল।
কাঠমান্ডুর একটি হোটেল থেকে ভোররাতে নাগরকোটে সূর্যদয় দেখতে যাওয়ার কথা। বিকেল থেকেই আমার অসহনীয় মাথা ব্যথা।
ভেবেছিলাম প্যারাসিটামলে ম্যানেজ করা যাবে। কিন্তু রাতে এলো প্রচন্ড জ্বর। কন্ডাকটেড ট্যুরে আগে থেকেই টাকা দেওয়া আছে, এই মুহুর্তে বাতিল বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তা ছাড়া আমার একার জন্য ৪০ জনের দলের প্রোগ্রাম বাতিলের প্রশ্নই উঠেনা। অগত্যা কিন্তু কিন্তু করে সবাই আমাকে রেখেই ভোররাতে রওনা হলো।
অন্য রুমমেটরা যখন যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো, আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এর পর কিছুতেই দুটো চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। কতক্ষণ পর জানিনা, এক সময় দরজায় মৃদু কড়াঘাত।
দরজা খুলে চমকে উঠি। তুমি! বুঝতে পারি কোনো একটি অযুহাতে তুমিও হোটেলে রয়ে গেছ।
নিজেকে সামলে জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে আবার বিছানায় এসে লেপের উষ্ণতায় ঢুকি। তুমি এসে বিছানায় বালিশের পাশে বসে কপালে হাত রেখে আমার জ্বর দেখো। সকল বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলি আমি। মনে হয় পৃথিবীর কোথাও কিছু নেই। শুধু এই কামড়া আর আমরা দুজন।
এটাই সত্য, আর সব কিছুই মিথ্যা।
হাতধরে টেনে তোমায় নিয়ে আসি লেপের ভেতর। দুহাতে জড়িয়ে ধরি।
নারী শরীর নিয়ে আমার অজ্ঞতাই সেদিন আমদের দুজনের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায়। নরম বিছানার উষ্ণতায় তোমাকে জড়িয়ে ধরেই মনে হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ আমি পেয়েছি।
জ্বরতপ্ত শরীরে তামায় জড়িয়ে ধরেই দুর্বল আমি ঘুমে ঢলে পড়ি।
সেই রাত্রির পর খড়কুটোর মতো ভেসে যায় আমার বিবেচনাবোধ, সকল সংস্কার। ভুলে যাই সবকিছু।
দু সপ্তার ভ্রমন শেষে ঢাকা ফিরে বাস্তবে নেমে আসি। এদিকে তোমার স্বামী এক সহপাঠির কাছ থেকে আমাদের সব কথা জেনে যায়।
তুমিও অকপটে স্বামীর কাছে স্বীকার করো সবকিছু।
একদিন সেই ভদ্রলোক হলে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমার হাত ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন বহুজাতিক সংস্থার এই বড় কর্মকর্তাটি। জানান, তোমাকে ছাড়া বাঁচবেন না তিনি...আমার কাছে তোমাকে ভিক্ষা চান তোমার স্বামী।
নিজেকে খুব ছোট মনে হয়, মনে হয় আমি জ্বলজ্যান্ত একজন ভিলেন।
তাকে কথা দেই, তোমার জীবন থেকে চীরতরে সরে যাবো আমি।
দেখো, আমি ঠিক ঠিক কথা রেখেছি। বারোটি বছর তোমার কাছ থেকে দূরে থেকেছি; বারো বছর! অথচ মনে হয় এইতো, সেদিন!
মাস্টার্স পরীক্ষার আর কয়েকদিন বাকি। অস্থির এই অবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নেই। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তুমি প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয়।
আর আমি? দ্বিতীয় শ্রেণীর সনদটি ঝোলায় নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি যে কোনো মানের একটি চাকরির আশায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার স্বপ্নটি চোখের সামনে পুড়ে ছাই হলো। হল ছেড়ে দিতে হয়েছে। গ্রাম থেকে বাবার তাগাদা আসছে; আর কতোকাল সংসারের বোঝা বয়ে বেড়াবেন তিনি! এবার পুত্র দায়িত্ব নিক। সংসারের বোঝা থেকে মুক্তি চান।
এদিক-সেদিক ঠোক্কর খেয়ে শেষে একটা এনজিওতে চাকরি জুটে যায়।
বড্ড অচেনা ঢাকা শহরে কোটি লোকের ভিড়ে কুঁচকে থাকি সব সময়; পাছে তোমার সঙ্গে কোথাও দেখা হয়ে যায়! আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই দেশ থেকে পালানোর।
একটু দেরিতে হলেও সুযোগ এলো। ডিভি নামের সোনার হরিণ হঠাৎ ধরা দিলো এ সময়। সেই থেকে পড়ে আছি মার্কিন মুল্লুকে।
চার চাকার বাহনটিকে রুটি-রুজির সম্বল করে নিস্তরঙ্গ জীবনটা কেটে যাচ্ছিলো এক রকম।
পরশু এয়ারপোর্টে তোমাকে দেখে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
বারো বছরে এতোটুকু পাল্টাওনি তুমি। কালো ওভারকোট আর সিল্কের স্কার্ফে তোমাকে দারুন লাগছিলো। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানানসই গাম্ভীর্য তোমার সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি বাজি রেখে বলতে পারি, সেই মুহুর্তে বিমানবন্দরে সবাইকে ম্লান করে দিয়েছিলে তুমি।
ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষমান আমাকে যখন তুমি হাতছানিতে ডাকলে; হৃৎকম্পন থেমে গিয়েছিলো। স্টিয়ারিংয়ে হাতদুটো অসার হয়ে পড়েছিলো। তোমার ডাকেই আবার সম্বিৎ ফিরে পাই। শহরের সবচেয়ে বড় পাঁচ তারা হোটেলের ঠিকানা বললে তুমি।
তোমাকে নিয়ে মসৃন পথ ধরে ছুটে চলে আমার ভাড়ার গাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানলাম, দুদিনের একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতেই নিউ ইয়র্ক থেকে উড়ে তুমি এ শহরে এসেছো। জাতিসংঘের উঁচু পদে আসীন তুমি এখন অন্য জগতের মানুষ।
নিজেই আগ্রহ করে তোমার ফেরার সময়টি জানতে চাইলাম, তোমাকে বিমান বন্দরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালাম। আমার অনুরোধ রাখলে তুমি।
ভাগ্যিস! নয়তো কী আরেকবার তোমাকে দেখার সুযোগ পেতাম, বলো?
আমাকে তুমি চিনতে পারোনি। বাঙালি বলেও ভাবোনি। অবশ্য এই ভুলটা অনেকেই করে। দীর্ঘদিন এই শীত প্রধান অঞ্চলে থাকার ফলেই হয়তো গায়ের চামড়া ফ্যাকাসে হয়ে আরো সাদা হয়ে গেছে। কিছুটা ওজন বেড়েছে।
মুখে চাপ দাঁড়ি, ঘাড় বেয়ে নেমে পড়া ঝাকড়া চুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি আর আজকের এই আমির মধ্যে আকাশ পাতাল ফাড়াক।
বাঙালিরাও আমাকে পাকিস্তানি ভেবে ভুল করে। আমি সে ভুল ভাঙ্গাই না। দেশের লোকদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি।
আমাকে দেখে অনেকেরই ভুল হয়।
তাই বলে তোমারও?
কই আমিতো এক মুহুর্তেই তোমাকে চিনেছি!
দুই
কোনো রকম বিদায় সম্ভাষণ ছাড়া চিঠিটা হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে।
সময় নিয়ে খুব ধীরে কাগজটি ভাঁজ করে সুমনা। অনেক দিন পর নীলাঞ্জনা নামটি সামনে এলো। শোভন তাকে এ নামেই ডাকতো।
চিনতে পারেনি?
প্রথম দিন এক পলকেই শোভনকে চিনে নিয়েছিল সে। মুখে জঙ্গলের মতো দাঁড়ি আর মাথায় ঝাকড়া চুলের বোঝা চাপিয়ে ভেবেছে ফাঁকি দিতে পারবে?
ফেরার পথে এয়ারপোর্টে গাড়ি থেকে ব্যাগ নামানোর সময় কৌশলে শোভন যখন চিঠিটা হ্যান্ড ব্যাগে ভরে দিচ্ছিলো, তখন বেশ অবাক হলেও না দেখার ভান করে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো সে।
দুই কন্যা আর স্বামীকে নিয়ে সংসার সুমনার। পুরোনো পরিচয়ের দাবি নিয়ে দুজনার কেউই সামনে এসে দাঁড়ায়নি। ভালোই হলো।
এতোগুলো মানুষের জীবনকে এলোমেলো করে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।
আর ইউ ওকে ম্যাম?
বিমান সেবিকার প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পায় সুমনা। কখন যে দুচোখের কোল বেয়ে জল নেমেছে নিজেই বুঝতে পারেনি। হাত বাড়িয়ে বিমান সেবিকার কাছ থেকে নরম কাগজের টুকরোটি নেয়।
মাটি থেকে হাজার ফুট উঁচুতে সগর্জনে ছুটে চলছে উড়োজাহাজ।
(শেষ)
ভালোবাসা দিবসের বিশেষ সংকলনে প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।