আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি অনেক আঁধার আমাকে ছিন্নভিন্ন করেছে। নীল হয়েছে আমার শিরা উপশিরা । তবু - তবু, আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি । তোমাকেই শুধু তোমাকেই -
"বসন্তের ফুল গাঁথলো ও-আমার জয়ের মালা/বইলো প্রাণে দখিন হাওয়া, আগুন জ্বালা/ যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে/নাচের তালে ঝঙ্কার তাই আমায় মাতালে- শুধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নয়, বসন্তের দখিন হাওয়া আজ মানব ও প্রকৃতির সবখানেই বয়ে যাবে। মাতাবে আপন মোহে।
ভালোবাসায় ঝঙ্কার আনবে। আজ যে বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আজ পহেলা ফাগুন। প্রভাতের নবীন ঊষা বাংলার প্রকৃতিতে ঋতুরাজের দোলা নিয়ে এসেছে।
মানব-মানবীর হূদয় বেদি আর পশু-
পাখি, প্রজাপতির রঙিন পাখনা, মৌমাছির গুনগুনানি, বৃক্ষ-লতা-গুল্ম, ফুলে-ফলে, পত্র-পল¬বে, শাখে-শাখে, ঘাসে ঘাসে, নদীতটে, কুঞ্জ বীথিকায় ও অরণ্যে-পর্বতে নবযৌবনের বান ডেকেছে। সকালের ঘুমভাঙানি দক্ষিণা সমীরণে কেটেছে শীতের জরাগ্রস্ততা। জেগেছে আশ্চর্য শিহরণ। জারুল-পারুল, মাধবী-মালতী-রজনীগন্ধা, পলাশ-জবা, কৃষ্ণচূড়া-দোপাটি, কনকচাঁপার গুচ্ছ আন্দোলিত হয়েছে নবজীবনের স্পন্দনে। আড়মোড়া ভাঙানিয়া বসন্ত বায় হিলোলিত হয়েছে আম্রকুঞ্জ।
নবপত্রে ও পুষ্পে বন-বাদার উঠেছে কেঁপে। শরীরময় ছড়িয়ে পড়েছে যৌবনের উত্তাল উচ্ছলতা-উদ্দমতা। তাই তো মন উদাস করা কোকিলের কুহুতান নিয়ে যাবে দূরে কোন অশত্থ আর বটচ্ছায়ায়। যেখানে দখিনা ঝিরঝির বাতাসে খুঁজে ফিরবে প্রিয়া আর সোনামণির আদুরে মুখখানি। বসন্তের উষ্ণতায় আমের মুকুল আজ মঞ্জুরিত।
গিরি-শৃঙ্গমালার ভেঙেছে মহৎ মৌনতা। নব পুষ্প ও পত্র-পল¬বে প্রকৃতিতে সাজ সাজ রব। কোন এক অতীন্দি য় লোকের দুর্জ্ঞেয় রহস্যঘেরা এক অস্ফুট আহ্বান যেন কানে এসে চুপি চুপি কথা কয়ে যায়- ‘কবি নীরব কেন, বসন্ত যে এসেছে ধরায়।
বসন্ত মানেই সুন্দরের জাগরণ। নবীনের আগমন।
চিরায়ত সুন্দর, ভালোবাসা আর যৌবনের প্রতীক এ বসন্ত। বসন্তের রোদেলা দুপুরে, মন উদাস করা খ্যাপা বাতাসে কিংবা মায়াভরা আবির ছড়ানো গোধূলি লগ্নে, বসন্তানিলের ৱিগ্ধ পরশে বা সোনাঝরা পূর্ণিমা নিশীথে অথবা নির্মেঘ অমাবস্যা আচ্ছাদিত পুষ্পিত কাননের সৌরভে প্রকৃতিতে আনন্দধারা বয়ে যায়। আকাশ-বাতাস যৌবনের ঝড়ে আন্দোলিত হয়। মনের রাগ-রাগিণীটা আবীররাঙা হয়ে ওঠে সুরেলা বাতাসের মৃদুমন্দ চালে। বসন্তের আগমনে হূদয় পুলকিত আর আন্দোলিত হয় বলেই কবিরা আকাশে চোখ মেলে তাকাতেই যেন জ্বলে ওঠে আলো।
বসন্তের বন্দনা করে একটি ছত্রও লেখেননি, এমন একজন বাঙালি কবিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাচীন চর্যাপদে পাওয়া বসন্ত আরও ঋদ্ধ করেছেন কবিগুরু। আর সুভাষ মুখোপাধ্যায় তো প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেই ফেলেছেন- ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত।
বসন্তের মাতাল হাওয়ায় যাদের মন-ময়ূরী বেশি আন্দোলিত হয়ে ওঠে, তারা তরুণ-তরুণী। তাই তো দখিনা বাতাসে যখন ভেসে আসে উদাস করা কোকিলের কুহুতান, তখন তারা অগোচরেই গেয়ে ওঠে- শোন গো দখিনা হাওয়া/প্রেম করেছি আমিঃ।
কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা বসন্তের আবেশেই বজ নির্ঘোষে ঘোষণা দেয়- মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব তুমি আছ আমি আছি।
এ বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে পলাশের শাখে গলা ছেড়ে ডাক দেয়া কৃষ্ণ কোকিলের কুহুতান গাঁও-গেরামের নিত্য চিত্র। কিন্তু ইট-কাঠ-পাথরে গড়া যান্ত্রিক-কৃত্রিম নগরীতে ব্যস্ত মানুষের কানে তা কতটাই বা পৌছে! কিন্তু তবুও কি পিছিয়ে থাকে নগরবাসী? এই শহরে বৃক্ষের ৱিগ্ধতা কিংবা কুঁড়িদের নাচনের অনুপস্থিতি যতই থাকুক, প্রিয়ার কমনীয় অঙ্গে নিশ্চিতই আজ শোভিত হবে লতানো শাড়ি; প্রিয়’র রোমশ শরীরে উঠবে বাহারি ডিজাইনের রঙিন পাঞ্জাবি। প্রিয়র দক্ষিণ বাহুকে প্রিয়া তার কোমল-উত্তর হস্তে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, রমনা-সোহরাওয়ার্দী-চন্দ্রিমা উদ্যান অথবা টিএসসি, শহীদ মিনার, রবীন্দ্র সরোবরে রেশমি কেশ হাওয়ায় উড়িয়ে দেবে। অথবা পরম আদরে বাঁধা চুলের বেণিদ্বয় দুলুনি দেবে এ-কাঁধ থেকে ও-কাঁধে।
আর গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠবে- আমারে কে নিবি ভাই সঁপিতে চাই আপনারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।