আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ পরিচিতি - যুক্তরাষ্ট্র

ুিাুাুৃিাুাৃুা

বর্তমানে যে এলাকা জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থিত সে এলাকায় এককালে রেড ইন্ডিয়ান উপজাতিগুলোর বসবাস ছিল। রেজ ইন্ডিয়ান উপজাতিগুলোকে এখন নেটিভ আমেরিকান বলা হয়। ইউরোপীয়রা আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে নেটিভ আমেরিকানদের জীবন ও সংস্কৃতি বদলে যায়। ইউরোপীয়রা আমেরিকা আবিষ্কারের পর ইউরোপীয় দেশগুলো ১৭ শতাব্দীতে এ এলাকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, স্পেন ও সুইডেন উপনিবেশ স্থাপন করে।

বৃটেন ১৬৬৪ সালে ডাচ ও সুইডিশ উপনিবেশগুলো দখল করে এবং সেগুলোকে পূর্ব উপকূলের বৃটিশ উপনিবেশগুলোর সাথে যুক্ত করে। ১৭ শতাব্দীর এবং ১৮ শতাব্দীর গোড়ার দিকে উপনিবেশগুলো জনপ্রিয় স্বশাসনের ঐতিহ্য গড়ে তোলে। বৃটেন উপনিবেশগুলোতে কর আদায় করার চেষ্টা করলে তারা তা মেনে নেয় না। ম্যাসাচুসেটস মিলিশিয়া ও বৃটিশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে উপনিবেশগুলোর কংগ্রেস বৈঠকে বসে। এই দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেস নিজেকে একটি ফেডারেল সরকার হিসেবে সংগঠিত করে।

শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। উপনিশগুলো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট শাসিত একটি ফেডারেশন রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং বৃটেনকে পরাজিত করে। এই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ১৭৭৬ সালে ৪ ঠা জুলাই। যুক্তরাজ্যে ১৭৮৩ সালে প্যারিস চুক্তির পর য্ক্তুরাষ্টের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।

সকল উপনিভেম ১৭৮৮ সালে একটি ফেডারেল সংবিধান গ্রহণ করে এবং ১৭৮৯ সালে সংবিধানটি কর্যকর হয়। জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের পথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ৩৭ টি নতুন রাজ্য মূল ১৩ টি রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। ফলে দেশটি সারা উত্তর আমেরিকা মহাদেশ জুড়ে স¤প্রসারিত হয়। সেই সাথে দেশটি সমুদ্রের অপর পাড়ে বেশকিছু স্থানের দখল লাভ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুটি সবচেয়ে পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা হলো গৃহযুদ্ধ (১৮৬১ - ৬৫) এবং ১৯৩০ দশকের ব্যাপক মন্দা। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৯১ সালে ঠান্ডা লড়াই শেষের বিজয়ে উজ্জীবিত যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়ে আছে। এদেশের অর্থনীতিেিত বর্তমানে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি, কম বেকারত্ব, ও মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রয্ুিক্ততে দ্রুত অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। য্ক্তুরাষ্ট্রের সংবিধান অনুমোদনের সংগ্রামকালে পরবর্তীতে যেসব দল আবির্ভূত হবে সেগুলোর ব্যাপারে রাজনৈতিক দল পদ্ধতির রূপরেখা প্রণীত হয়। ১৭৯৭ সালে পেডারেলবাদীরা ক্ষমতায় আসে এবং জন এ্যাডাম্স প্রেসিডেন্ট হন।

একটি অধিকতর দুর্বল ফেডারেল সরকারের সমর্থকরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান পার্টিতে (ডিআরপি) যোগদান করে। এই পার্টি ১৮০০ সালে ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণ গওহণ করে এবং থমাস জেফারসন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে এলাকা স¤প্রসারন করে এবং ১৮০৩ সালে ফ্রান্সের লুসিয়ানা উপনিবেশ কিনে নেয়। ১৮১২ সাল আমেরিকান বৃটিশ যুদ্ধের পর ১৮১৬ সালে জেমস মনরো প্রেসিডেন্ট বিনর্বাচিত হন। তার আমলে যুক্তরাষ্ট্র ১৮১৯ সালে স্পেনের কাছ থেকে ফেÍারিডা কিবনে নেয়।

১৮২৪ সালে নির্বাচনের পর এ্যান্ড্রিট জ্যাকসন ডেমোক্রেটিক ডিআরপি’র দলছুট নতুন সংগঠন হুইগ পার্টি ১৮৪০ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে। উইলিয়াম হেনরি হ্যারি সন প্রেসিডেন্ট হন, কিন্তু তিনি তার অভিসেকের পরপরই মারা যান। তার স্থলভিষিক্ত হন জন টাইলার। ১৮৪৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি জয়লাভ করে এবং জেমস ক্স পক প্রেসিডেন্ট হন। ১৮৪৫ সালে স্বাধীন টেক্সাস রাষ্ট্র ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং ১৮৪৮ সালে প্যাসিফিক কোস্টকে কুক্ষিগত করা হয়।

১৮৫০ এর দশকের মাঝামাঝি দেশের প্রথম প্রধান বিভাগীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র রিপাবলিকান পার্টির আবির্ভাব ঘটে। ফলে রাজনীতি এমন এক মঞ্চে পরিণত হয় যেখানে দাস প্রথার স¤প্রসারণ নিয়ে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটে। দলটি মুক্তশ্রম শিল্প পুঁজিবাদ এবং দাসপ্রথা বিরোধী নীতি গ্রহণ করে। ১৮৬১ সালে ১১ টি দিক্ষণাঞ্চলীয় রাজ্য আমেরিকা কনফেডারেট রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছন্ন্ হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে এবং ১৮৬৫ সালে কনফেডারেট রাজ্যগুলো আবার একীভূত হয়।

১৮৬৪ সালে লিংকন পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর আততায়ীর গুলীতে নিহত হন। ফলে ডেমোক্রেট দলীয় ভাইস প্রেসিড্নেট এন্ড্রু জনসন প্রেসিডেন্ট হন। ১৯১২ সালে ডেমোক্রেট প্রার্থী উড্রো থমাস উইলসন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং জার্মানীকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৮২৯ সালে শেয়ার বাজারে বিপর্যয় ঘটলে মহামন্দা শুরু হয় এবং ব্যাপক বেকারত্ব দেকা দেয়।

ফ্রাংকলিন ডেলানো রুজভেল্টের আমলে এই সংকট মুকাবিলার ব্যবস্থা করা হয়। পার্ল হারভারে আক্রমণের পর ১৯৪১ সালে রুজভেল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মাানী ও জাপানকে পরাজিত করতে সিদ্ধান্তকারী ভূমিকা পালন করে। ১৯৬০ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে লিবারেল ডেমোক্রেট জন ফেটজেরাল্ড কেনেডী প্রেসিডেন্ট হন। তিনি ১৯৬৩ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন এবং তার স্থলভিষিক্ত হন লিন্ডন বেইনস জনসন। রক্ষণশীল রিপাবলিকান রিচার্ড মিলহাউস নিক্সন ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট হন এবং ১৯৭৪ সালে অভিশংসন বা ইম্পিচমেন্টের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং রুডলফ ফোর্ড প্রেসিডেন্ট হন।

১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটরা নির্বাচনে জয়ী হয় এবং জেমস আর্ল কার্টার প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৮১ সালে রক্ষণশীল রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান তার স্থলভিষিক্ত হন। তার দু’মেয়াদের পর প্রেসিডেন্ট হন জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ। বুশের পর ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলীয় উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হন।

তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের পুত্র। ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর দুটি হাইজ্যাককৃত বানিজ্যিক বিমান নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে এবং ভবনটি ধ্বংস হয়। তৃতীয় একটি বিমান পেন্টাগনের একাংশে ধ্বংস করে। চতুর্থ একটি বিমান পেনসিভনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। এসব ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার লোক নিহত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলা আল-কায়দা’র কাজ বলে আখ্যায়িত করে ৭ অক্টেবর বৃটেনকে সাথে নিয়ে আফগানিস্তানে হামলা চালায়। ফলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ আফগান নিহত হয়। বহু লোককে বন্দী করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও কয়েক হাজার বন্দীকে কিউবার গুয়ান্তামো বে’তে অবস্থিত মার্কিন ঘাটিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিপীড়ন করা হয়। ২০০৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তাথাকথিত কোয়ালিশন বাহিনী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইরাকে আগ্রাসন চালায়।

ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পারমানবিক অস্ত্র আছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে এ আগ্রাসন চালানো হয়। ফলে দেশটিতে প্রায় সোয়া লাখ নির্দোষ মানুষ নিহত হয়। ইরাকেও মার্কিন বাহিনী বন্দীদের ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন চালায়। ফলে এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে তার সামরিক প্রাধান্য, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবাদে নিজেকে প্রকারান্তরে বিশ্ব নেতা হিসেবে দাবী করে থাকে।

এব মেরুর বিশ্ব গড়ার ব্যাপারেও তাদের প্রণান্তকর প্রচষ্টো লক্ষ্যনীয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রচ্ছন্নভাবে সংকীর্ণ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে তাড়িত হয়ে যে ক্রুসেড চালাচ্ছে সেটাও অনেকটা স্পষ্ট। কেননা ইহুদীদের পক্ষ নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর ওপরই দেশটির বেশী খড়গহস্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে কিচু পর্যবেক্ষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্য বিস্তারের মানসিকতার এবং অপরের সম্পদ বা তেল লুট করার লক্ষ্যে এসব করছে। আর এটা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রে প্রসার ঘটানো, ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রতিশ্র“তিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।