এক পশলা গদ্য :
এখন মনীষার মঙ্গাকাল। মানুষ নিয়ে চিন্তা করার আকাল। সমাজ নিয়ে যতো না গবেষণা হচ্ছে, মানুষ নিয়ে ততোটা হচ্ছে না। আমি পল্লী বিজ্ঞান নামে একখান গ্রন্হ রচনায় হাত দিয়েছি। খোদার ফজলে আমি এই বছরের শেষে করতে পারবো।
আজ এক পশলা গদ্যে আজ পল্লী বিজ্ঞান গ্রন্হখানার ভূমিকার কিছু অংশ আপনাদের কাছে পেশ করতে চাই।
আমি গরিব- গুর্মা মানুষ। আমি গরিবি হঠানোর জন্য যে সকল কর্মসূচী নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলো খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করি। এর ভেতরকার রাজনীতিটা বোঝার চেষ্টা করি। আমি এই নি্য়ে ভাবতে ভাবতে মনে আসে যে, আমি তো আমার গ্রামই বুঝি নাই।
আমার লেখাপড়া খুব কম বলে আমার সুবিধা হলো, আমার পশ্চিমদেশি চোখ নাই। আমার স্বদেশি একখানা সমাজ বিজ্ঞান বই লিখা দরকার। আমার গ্রামের ইতিহাসও জানা দরকার। অধরা স্পেসে বসে শিল্পের জ্যামিতি খুঁজি। ইসকুলে আমাকে রচনা লিখতে বললে আমি প্রথাগত টেক্সটের টেক্সচার বদলে দিতাম।
গদ্য ও পদ্যের সীমারেখা আমি ভাব ও ভাষাগত
অর্থে আমি ভুলে যেতে চাইতাম। টেনে-টুনে স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছি।
আমি নিষিদ্ধ জ্ঞানের বলি। তাই অক্ষর ও বই নিয়ে নাড়াচাড়ার যে পড়াশুনা, সেটা খুব আগায় নাই। এখন অক্ষর ব্যাবহার করছি।
অনেক ভুল হবে। মাফ করে দেবেন; প্রথমে শৈশবে দেখা গ্রাম নিয়ে কিছু বলি।
আমার প্রকৃতি যেমন করে আমাকে অভিভূত করত, প্রকৃতির প্রকাশ আমাকে দিওয়ানা করে দিত। আড়ালিয়া জলায় ফুটতো কী পবিত্র কমল নিকর। পদ্মফুলে- ফুলে ভরা বহু জলা আছে আমার রাজশপুর গ্রামের বনে।
তাই পদ্মপতায় শিশির কালি দিয়ে কবিতা লিখার খায়েশ বহু দিনের। সেই স্বাদ এখনো মিটে নাই।
কিশোরকালে যখন বালেগ হয়ে উঠছিলাম, অই সময়টা পদ ও পদ্যের। মাথার ভেতর কতকিছু খেলা করে। অনন্ত বৈশাখের ঝড় এসেছিলো বার বার এসেছিলো জীবনে।
ঝড়ের সাথে সাথে আমার কৈশোর কখন যে উড়াল দিয়েছিলো, সে কথা বেশ মনে আছে। কোনো এক ফুটিফুটি প্রভাতে আমার চর্মচক্ষু দিয়ে জগত দেখার ব্যাপারটি আর রইল না। আমার ভেতর একটা আউলা-ঝাউলা ব্যাপার তৈরি হল। আত্মমগ্নতার নিরবতায় ডুবে থাকা। এই নিজের ভেতর নিজে সব সংকট, কষ্ট, সব জ্বালা পোড়া, অঙ্গারভূক আমার ভেতরটা শুষে নিতো।
আমার অতিক্রান্ত শৈশবের শব্দের প্রতিধ্বনি এখনও শুনতে পাই। আমার স্মৃতিতে যে পল্লীজননী তার প্রতি আমার অপার কৃতজ্ঞতা। আমার অই বনানীবিপুল পল্লিতে রঙ্গিলা-ঢকিলা সব চেনা-অচেনা বৃক্ষ, গুল্ম-তরুলতা। পদ্মপুকুর, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কত জলা- আড়ালিয়া, বাছইরগা, মইষ বা মহিষমারা, ফকির জলা। আরো অনেক আছে।
আপনার বনভোজনে যেতে পারেন। শুনেছিবাছইরগা, লোঙ্গা .. এগুলো টিপরা সর্দারদের নাম। আড়ালিয়া জলা কিংবা মহিষমারা জলার পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে নিজেকে দরবেশ-দরবেশ লাগতো। এসব জায়গা যে কোন কবির জন্য নিভৃত সাধনক্ষণ হতে পারে।
রাজশপুর, ওরফে বদরপুর, গ্রামে এক বিশাল শাল বন আছে।
এখানে একটি ফরেষ্ট বিট রয়েছে। আমি যখন অই গ্রামে ঘুরি, তখন ইতিহাস যেন চারপাশে ঘুর ঘুর করছে, এমন বোধ হত।
আরো লিখিব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।