এডিট করুন
বাবা দুইটা টাকা দেওনা।
কি করবি?
বিস্কুট খামু।
টেকা নাই।
হ্যা আসলেই টাকা নেই। বিস্কুট খাওয়ার জন্য টাকা নেই।
বিস্কুট খাওয়াটা তেমন প্রয়োজনীয় নয়।
না টাকা আছে তমার কাছে। দেও না বাবা, মাত্র তো দুইটাই টাকা।
না এহন টেকা নাই। কতক্ষণ আগেই না ভাত খাইলি, এহনি বিস্কুট খাওয়া কিসের।
পরে খাইস।
না, না পরে না, এহনই খামু, দেও না বাবা।
না এহন না পরে খাইস বিস্কুট।
দুটো টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সংসারে চাল, ডাল, তেল, লবন খুব হিসেব করে কিনতে হয়।
একটি টাকাও ফেলনা নয়। দুটো টাকা স্রেফ বিস্কুট খাওয়ার পিছনে খরচ করা একটা বিলাসিতা বৈকি।
না না এহনই খামু, তুমি তো এইমাত্র সিগ্রেট কিনা আনলা দোকান থিকা। তোমার কাছে টাকা আছে। দেও না বাবা দুইটা টাকা।
এক একটা ক্যাপষ্টান সিগারেটের দাম এক টাকা করে। বাবা সবসময় দশটা করে ক্যাপষ্টান কিনে থাকে। একটা পুরোন সিগারেটের প্যাকেটে দশটা ক্যাপষ্টান সিগারেট ভরে দেয় দোকানীটা। মাঝে মাঝে তাকে নতুন প্যাকেট খুলতে হয় দশটার হিসাব মেলানোর জন্য। ছেলেটা এ সবই দেখে।
তার তো বয়সই দেখার। সে দোকানটার পাশের রাস্তায় ধুলোবালি নিয়ে খেলা করে আর বাবার ক্যাপষ্টান সিগারেট কেনা দেখে।
না এহন টাকা নাই, সব টাকা দিয়া সিগারেট কিনা ফালাইছি, ভাংতি টাকা নাই আর। পরে নিস।
সিগারেট প্রয়োজনীয় বাবার কাছে।
বিস্কুট প্রয়োজনীয় ছেলের কাছে। একজনের কাছে টাকার উৎস আরেকজনের কাছে টাকার চাহিদা। সম্পর্কটা বাবা-ছেলেই বলেই সংঘর্ষ তৈরী হয় না।
কহন দিবা টাকা।
ছেলে নিশ্চিত হতে চায়।
বাবা না আবার ফাকি দেয়!
সন্ধ্যার সময় নিস।
ঠিক আছে। মনে থাকে যেন।
ছেলেটা বাবার সাথে দর দস্তুর করে আবার রাস্তায় বেরিয়ে আসে। দোকানের স্বচ্ছ বিস্কুটের ডিব্বাগুলোর দিকে তাকায়।
হরেক রকমের বিস্কুট সেখানে। সর্বনিম্ন আট আনা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক টাকা। আজকে সে ঐ বাদামী রংয়ের বিস্কুটগুলো খাবে। আট আনা করে ছোট ছোট বিস্কুটগুলো। চারটা বিস্কুট কেনা যাবে দুই টাকা দিয়ে।
সন্ধ্যার সময় বাবাকে আরেকটু তাড়া দিতে হবে। সন্ধ্যায় টাকাটা পাওয়া যাবে না সে জানে। কারণ বাবা তখন "সন্ধ্যার সময় ঘর থেকে টাকা বের করতে হয় না" ফতোয়াটা দেবেন। টাকাটা পাওয়া যাবে সন্ধ্যার একটু পরে যখন আকাশে চাদ উঠবে এবং মোটামুটি সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাবটা কেটে যাবে। সন্ধ্যার সময় কিছু খাওয়া বা ঘুমানোও নাকি ভাল নয়।
মা বলেন, কালী সন্ধ্যার সময় কেউ খায় না, এ সময় রাক্ষসরা খায়। বাবা বলেন সন্ধ্যার সময় ঘুমায় না, তাহলে শরীর খারাপ করে। সন্ধ্যা কেন একটা আলাদা সময় পুরো দিনটাতে ছেলেটা তা নিয়ে মাঝে মাঝে চিন্তা করে। একদিন ছেলেটা সন্ধ্যার সময় ময়লা ফেলতে গিয়েছিল বাইরে। মা মানা করেছিল তাকে।
বলল সন্ধ্যার সময় ময়লা ফেলতে হয় না। ছেলেটা ভেবে পায় না কেন সন্ধ্যা নিয়ে এত চিন্তিত সবাই। মাঝে মাঝে সে ভাবে রোজার মাসগুলোতে তো সবাই সন্ধ্যার সময় ইফতার করে। তখন রাক্ষসেরা কি করে। সে জানে এই প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই।
কারণ মা বলবেন, রোজার সময় সন্ধ্যাবেলা রাক্ষসেরা খায় না। কোনকিছু না মিললেই সেটাকে একটা ব্যাতিক্রম হিসেবে চালিয়ে দেবার একটা প্রবণতা আছে বড়দের মধ্যে ছেলেটা তা বোঝে। তাই সে প্রশ্ন করে না, কারণ সে জানে প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে।
ছেলেটা রাস্তায় ধুলো নিয়ে খেলে। হাত দিয়ে ধুলো জমা করে ছোট ছোট পাহাড় বানায়।
আবার হাত দিয়ে সব ধুলো এলোমেল করে ধুলোর পাহাড়কে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।
সন্ধ্যা হতেই ছেলেটা বাবার সাথে সেই দৃশ্যাভিনয়ে মিলিত হয়। কিছুক্ষণ দরকষাকষি করে বাবার সাথে। তারপরে সে আবার রাস্তায় বের হতে চায়। মা তাকে বাধা দেয়।
সন্ধ্যায় নাকি ঘর হতে বের হওয়া ভাল না। ছেলেটা একফাকে পালিয়ে ঘর হতে বের হয়ে যায়। রাস্তার পাশের দোকানগুলো তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ষাট একশ ওয়াটের হলুদ বাতিগুলোতে। ছেলেটা আবার বাদামী রংয়ের বিস্কুটের ডিব্বাটার দিকে তাকায়। হলুদ আলো পড়ে বিস্কুটগুলো আরো বেশী বাদামী দেখাচ্ছে।
ছেলেটা বড় রাস্তায় চলে যায়। সেখানকার দোকানগুলো আরো বড় বড়। অনেকগুলো দোকানে ফ্রীজ আছে। ফ্রীজগুলো কোকাকোলা, স্প্রাইট আর ফান্টার বোতলে ভর্তি। ২৫০ মিলি এর বোতলগুলো যেন এক একটা অমৃতের ভান্ড।
ছেলেটার কপালে কালে ভদ্রে ঐসব অমৃতের ভান্ড জোটে। ওগুলো অনেক দুরের জিনিস। তাই ওসব নিয়ে ছেলেটা শুধু কল্পনাই করে, বিস্কুটের মত ওগুলোর জন্য বাবার সাথে দরকষাকষি করার হিম্মত ছেলেটার নেই।
চলবে...............( আমার বাকী সব চলবের মতন )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।