১।
বাঙলাদেশে বহু হন্তারক বুক ফুলিয়ে, দাঁত কেলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এদের মুখে দেশপ্রেমের খই ফোটে। এদের দেখলে আমি চিনি ফেলি। মানুষ খুন করে যারা তাদের চোখে-মুখে ছাপ পড়ে যায়।
এদের কাউকে কাউকে খুবই মিষ্টভাষী মনে হয়। আসলে এরা খুবই ভয়ংকর। আমি এখনও আমার এলাকায় রাজাকার নিয়ে চিন্তা করি। এরা বোধ হয় সমাজের মূলস্রোতে মিশে গেছে, এদেরকে দেখি না আর। একই পরিবারের কেউ রাজাকার, কেউ আওয়ামি লীগ করে, কেউ বিনপি।
কী আশ্চর্য কারবার!
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নি্য়ে মেলা গবেষণার দরকার রয়েছে। বাংলার সব ঘর শহিদের ঘর। মুক্তিযুদ্ধের সময় অচেনা বাড়ির সব উঠান চেনা। যোদ্ধার খাদ্য প্রকৃতি রাঁধে- বাড়ে, প্রস্তুত করে। আঁধার গেরিলাকে সাহায্য করে।
আমার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনো টাটকা। কারণ, ছোটবেলার কথা। আমার কৈশোর ও উন্মুখ যৈবনের শুরুর দিকটা কেটেছে, যে গ্রামে, তার নাম রাজশপুর। কেউ কেউ বদরপুরও বলে।
শানু আমার বোন।
প্রায় পিঠাপিঠি বলতে পারেন। আমরা আমাদের বাড়ির সামনে ঝান্ডু বুড়া চুনা আমগাছের তলায় বসে খেলতাম, কখনো দোকান-দোকান, কখনো অন্য কিছু, কখনো বসে বসে চপল-ছটপটানি, হুদাহুদি। প্রভাতে আমাদের সবসময়ই খেলাখেলা ভাব হতো। খেলতে খেলতে ঘুমাতাম, নিদ্রা শেষে খেলতাম। ২৬ মার্চ সকালেও খেলছি।
পান্জাবি-মুক্তি খেলতে -খেলতে ১৬ ডিসেম্বর এসে গেলো।
কয়েকটা গুলির শব্দ হলো। এখনও কানে বাজে। নূরবানু বললো, শিকারি। চন্দ্রবান কোথায় তখন, মনে নাই।
সে নূরবানুর বোন। আমার মা, খালা, ফুফু সকালের রান্না প্রায় শেষ করে এনেছেন। ইতি্হাসের চাল-চলন বড়োদের কাছে আগে ধরা পড়ে। দাদা তার ডাক্তারি যন্ত্রপাতি, জমির দলিল দস্তাবেজ এবং আর যা কিছু তার সখের, আনন্দের ও প্রয়োজনের সব গুছিয়ে শরণার্থি হবার জন্য প্রস্তুত। আমার কাকা হারুণ_উর -রশীদও আগে থেকেই একদম ছুটার জন্য তৈরি।
তিনি ন্যাপ করতেন। ঢাকায় যা ঘটেছে, তা তিনি জানতেন। তার রাজনৈতিক মর্মও বোধ হয়, তিনি কিছুক্ষণ আগে আমাদের বাহির বাড়ির ঐতিহাসিক ময়দানে কিছু হাতলভাংগা-হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আলাপ করছিলেন। তিনি এবং আরো অনেকে অনেক কিছুই জানতেন, পরে বুঝেছি।
"আসলে তখন আমাদের জ্ঞান হইতেছিল।
আস্তে আস্তে চোখ ফুটিতে আরম্ভ করিল। ব্ই পড়িয়া যা জানা যায় না, লড়াই তা শেখায়। সব শিশুই মুক্তি সংগ্রামে গেরিলা হয়ে ওঠে, পিতা কিংবা দাদা রাজাকার হলেও। শিশুরা রাজনীতির আসল খেলাটা বুঝতে পারে। ওরা তো সবসময়ই খেলে।
২। আসলে সংগ্রামের বছর শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে সংগ্রামের বছর বার বার ফিরে আসে। আমরা আসলে তৌহিদের তল্লাটে থাকি, কিন্তু চরের চৌকিদার। চর ভঙ্গুর, এই ভবের মতো।
চর ও চরাচরের প্রাণ আছে।
আমরা জেগে উঠি ক্ষরণ-ক্ষুব্দ কালে। যখন সব তছনছ হয়ে যতে থাকে, ছ্ত্রখান সব একসাথে করি। উন্নয়নের একটি জ্যোতির্ময় প্রেক্ষিত চাই। একটি দিব্যকাল ও দিব্যদৃষ্টির জন্য সব কানা একসাথে বসে আছি।
কিন্তু কাঁদতে-কাঁদতে আমাদের চোখ কানা হয়ে যায়, ভবিষ্যতের আশায়। তখন স্রোতরিক্ত নদীর কাছে পদ্মাপাগল স্রোত চাই। আসমান ফুটে উঠুক তারায়, আমরা অনির্দিষ্ট থেকে সুনির্দিষ্ট পথে যাই।
আরো লিখবো এই বিষয়ে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।