ভাতের মজা কিছুতেই পাই না।
আমাদের কাজের বুয়া দুই দিন যাবত অসুস্থ। ভোগান্তিটা আমরা ভালই টের পাচ্ছি। নিজেরা রান্না করে খাওয়ার মত অবস্তাও নেই। একমাত্র ভরসা মেসের পাশে অবস্থিত নোংরা ভাতের হোটেল টা।
বুয়া না আসলে প্রায়ই আমরা সেখানে খাওয়া দাওয়া করি। আজকে সকাল এগারোটার সময় আমরা তিনজন গেলাম সেখানে পরোটা খেতে। দুইজনে পরোটা ভাজি খেলাম, অন্যজন পরোটা ঠান্ডা বলে সেটা ফিরিয়ে দিয়ে গরম গরম সিঙ্গাঁড়া আনিয়ে খেল। আমরা যে টেবিলটাতে বসলাম তার পাশের টেবিলে দেখলাম তিনজন ভদ্রলোক নাস্তা খাওয়া শেষ করে চায়ের পর্ব সারছেন। উনাদের দেখে আমার যা মনে হল তা হল এরা নিশ্চয়ই এই নোংরা হোটেল খাওয়ার লোক নন।
ভাল রেস্টুরেন্টে এদের আনাগোনা। তবুও এখানে বসে কিভাবে খাচ্ছেন তা একটা ভাবার বিষয় বৈকি। ইতিমধ্যে উনাদের একজনের ফোন কল আসল আর উনি উঠে চলে গেলেন। অন্যজন গিয়ে বিলটা মিটিয়ে আসলেন। টেবিলে বসা জন না না করছেন অন্য ভদ্রলোক কে বিলটা দিতে।
কিন্তু তিনি শুনলেন না। বিলটা মিটিয়ে এসে চেয়ারটা টেনে বসলেন। তখন বসা ভদ্রলোকটি উনার কাছে পাঁচটা টাকা চাইলেন। আমি একটু অবাক হলাম। ভাবলাম, উনাকে লক্ষ্য করে দেখি টাকাটা দিয়ে তিনি কি করেন! তিনি করলেন কি, হোটেলের যে ছেলেটা তাদের কে সার্ভ করছিল তাকে ডেকে আনলেন।
এনে ওর হাতে পাঁচ টাকার নোটটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, নে! এটা তোর! পিচ্চিটা যেন একেবারে ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে গেল! এতক্ষনে ফোনের কাজ সেরে তৃতীয় ভদ্রলোকও ফিরে এসে বসলেন। নিদেনপক্ষে এই হোটেলে পিচ্চিটাকে কেউ কোন কালে টিপস দিয়েছে বলে মনে হয় না!
কাঁপা কাঁপা হাতে টাকাটা নিয়ে পিচ্চিটা চলে গেল। পিচ্চিটাকে অনুসরণ করল দুই জোড়া চোখ, আমার এবং ঐ ভদ্রলোকের। পিচ্চিটা সোজা কিচেনে চলে গেল। গিয়ে টাকাটাকে ভাল করে দেখল এবং পকেটে পুরে রাখল।
ওর চেহারায় একটা উজ্জ্বল দ্যুতি দেখতে পেলাম। আমার বড় ভাল লাগল সে দৃশ্যটা দেখে! সেইসাথে আমার চোখজোড়া ভদ্রলোকের উপর ফিরিয়ে নিলাম। দেখলাম উনিও মুগ্ধ দৃষ্টিতে পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষন পর উনারা হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু ভাল লাগার একটা আবেশ আমার মধ্যে রেখে গেলেন।
যার ফলে আজকের ঠান্ডা পরোটা ভাজিও আমার কাছে অসাধারণ লাগল। ইচ্ছা করছিল আমিও পিচ্চিটাকে কয়েকটা টাকা দেই। কিন্তু না, আজ নয়, আরেকদিন দিব। আজ পকেটের অবস্থা যে তেমন সুবিধার নয়। তবে দিব অবশ্যই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।