ভাষা ব্যবহৃত হয় সম্পর্কচর্চার ধরন - ধারনের উপর । কোন ব্যক্তি বা বস্তর সাথে অপর ব্যক্তি বা বস্তর সম্পর্কস্থাপন সম্পর্কচর্চার ভেতর থেকে এক প্রকার ভাষার উদয় হয় । সম্পর্কহীন ব্যক্তির কাছে সেই ভাষা দুর্বোধ্য হতে পারে । আরেক প্রকার ভাষা ব্যবহৃত হয় অত্যন্ত সাংকেতিক ।
সম্পর্কচর্চার মানে কী ? জন্মগতভাবে বা সামাজিক সত্তাগুলোর মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক হয় ।
সেই সম্পর্ক হওয়াটাকে দার্শনিক পরিমন্ডলের ভেতর ঢুকানো যাবে না । সম্পর্কচর্চা বলতে আমরা বুঝি একটি নির্দিস্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে উভয়সত্তার মাঝে অবিরাম একার্থ উৎপাদনের প্রয়োজনে সাম্যবস্থার চর্চা করা । দুজনে দুজনার ভেতরকার ইঙিতকে প্রাধান্য দিযে সম্পর্ক প্রবাহ রাখা । আবদেল মাননান সে চেস্টাই করেছেন ।
এ যাবৎকাল ধরে যারা ফকির লালন সাঁইকে নিয়ে [অর্থাৎ তাঁর ভাষা সাধনা বা দর্শনকে ]নিয়ে বিশদ গবেষনা করেছেন তাঁরা কি সাইজীর ঘরের মানুষ ? অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর হবে না ' ।
আবার সাঁইজীর ঘরের মানুষও যে এক্ষেত্রে পাওয়া যাবেনা , তা কিন্ত নয় । অথচ আমরা এও বলতে পারছি না যে তাঁরা সাঁইজীর দর্শনের প্রকৃত রূপটিকে বিকশিত করতে সহায়তা করেছেন । এই অক্ষমতার দায় তাঁদের নিতে হবে । কারণ এখন পর্যন্ত সাঁইজীর দর্শনের প্রকৃত রূপটি যে কি সেটার সামগ্রিক স্বরূপটি আঁচ করতে পারছি না । কেবল শুরু হয়েছে বলা যায় ।
তার আংশিক উদাহরণ আমরা আবদেল মাননানের লালন বিষয়ক চতুর্থ গ্রন্থনা লালন ভাষা অনুসন্ধান ২ থেকে তুলে ধরার চেস্টা করতে পারি ।
লালন সাঁইজী কি একজন সংগীত শিল্পী / পদাকার বা একজন দার্শনিক গীতিকার [ অতি তুচ্ছ করে বললে একজন কবি হবার জন্য ] কালামগুলো বলেছিলেন ? অবশ্যই নয়। এমন কি কালামগুলো তিনি আমজনতার উদ্দেশ্যেও ব্যক্ত করেননি । খুব মনোযোগের সাথে খেয়াল করলে বোঝা যাবে পদগুলো তিনি তাঁর ঘরের মানুষদের কাছে ব্যক্ত করেছেন । মূলত দুটি পদ্ধতিতে ।
প্রথমটি হচ্ছে যাকে উদ্দেশ্য করে ব্যক্ত করছেন সেটি তাঁর নিজের ক্রমস্তরকে বিবেচনায় রেখে । দ্বিতীয়টি হচ্ছে অত্যন্ত সাংকেতিক ভাষায় । অবশ্য যে সংকেতের অর্থ যার কাছে ব্যক্ত করছেন তাঁর কিন্ত অধিগোচর আছে । অতএব আমরা বুঝতে পারছি সাঁইজীর কালাম এবং কালামের অর্থ বা তর দার্শনিকতা নিয়ে তাঁর ঘরের মানুষদের মাতামাতি না করবার কারণ। কিন্ত আমরা যারা বাইরের লোক আমরা কীভাবে সাঁইজীর কালামগুলোর প্রকৃত অর্থ পেতে পারি ?
পূর্বেই সংকেত দিয়েছি যে সাইজীর পদগুলোর প্রকৃত অর্থ জানেন কেবল তাঁর ঘরের মানুষ জন ।
যাদের কাছ থেকে আমরা পদগুলোর অর্থ জানতে পারি । কিন্ত এটা সহজ ব্যপার হবেনা যে তার ঘরের মানুষ আমাদেরকে অর্থ জানাবেন । বা জনাতেও পারেন । কিন্ত তাতেও কাজ হবেনা । অর্থাৎ আমরা সাইজীর পদগুলোর অর্থ জানলেও তা হবে কেবল শব্দার্থ জানার মতোই ।
কাজ করার ইঙিত আমরা ঐ অর্থগুলো থেকে আদৌ পাবোনা ।
একটু বিস্তারিতভাবে বিষয়টা খুলে বলা যাক ।
সাইজীর ফকিরিপন্থায় যখন একজন ব্যক্তি সাধুদের সাথে আশ্রয়যোগ ঘটে তখন তার জন্য যেসমস্ত বিষয় আশয় অবগত হওয়া জরুরী সেই সমস্ত বিষয় আশয় অবগত হয়ে যান তিনি স্থুল পর্যায়ের অর্থ নির্দেশ করে এমন পদগুলো থেকে । শিক্ষানবিশও স্থুলপর্যায়কে অতিক্রম করে সধকপর্যায়ের অর্থ জানতে চাইবেন না । এটাই হচ্ছে শৃংখলা ।
কিন্ত আমরা যারা বাইরের মানুষ তাদের কাছে তো পদগুলোর ভেতর যে স্থুল , প্রবর্ত , সাধক , সিদ্ধস্তর আছে সেসব অজানা । তাই আমরা যখন কোন একটি পদের কোন একটি শব্দের অর্থ জানতে চাই , একজন সাধকের কাছে তখন তিনি কিন্ত আমার অবস্থান জানেন । এবং তার পরে তিনি যা বিশ্বাস করেন , আপন সাধন তত্ত্ব কথা , নাহি বলিও যথা তথা এই বক্তব্যেই অটল থাকেন । আবদেল মাননানও সেই কাজ করেছেন । লালনভাষা অনুসন্ধান-২ তে শব্দের সাধন সংকেত থেকে অর্থ জানালেও সাধনপদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানাননি ।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি সাইজীর প্রকৃতদর্শন বা ভাঙিয়ে বললে দর্শনের প্রকৃত রূপটি কি ? সেটা আমরা আজও জানতে পারিনি । কখনও তাঁকে পাশ্চাত্যের দর্শনতেত্ত্বের সাথে জোড়াতালি দিয়ে উপস্থাপনের চেস্টা করা হয়েছে । কখনও আবার সরাসরি খেলাফাতে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের দ্বারা । কিন্ত এটা কখনও হয়নি যে প্রাচ্যের সাধন প্রনালীর ভেতর থেকে ফকির লালন সাঁইজীর স্বাতন্র খুঁজে বের করার । আবদেল মাননান শুরু করলেন মাত্র ।
কারন তিনি কোথাও না ঘুরিয়ে সরাসরি বলেছেন ,লালন সাইজী নিজের প্রতি সম্বোধন সূচক শব্দের ব্রবহারেই তাঁর দর্শনের মূলাংশ লুকিয়ে আছে । সাঁইজী নিজেকে ফকির হিসেবে দাবি করেছেন ।
ফকির শব্দের মানেটা কি ?
যখন আমাদের গৃহদ্বারে কেহ ভিক্ষা চাইতে আসেন তখন আমরা বলি ফকির এসেছে । ফকির শব্দটিকে ভিক্ষুক শব্দের সমার্থক ভেবে ব্যবহার করে থাকি । যদিও ফকির শব্দটির অর্থ পুরো মাত্রায় ভিন্ন ।
আবদেল মাননান লিখেছেন , ফকির অর্থ আল্লাহর ক্বাফ শক্তি অর্জনে যিনি রাজি থাকেন । ফে ক্বাফ ইয়া রে এ চারটি আরবি হরফে গঠিত ফকির শব্দের অর্থ আল্লাহর নির্বাণ শক্তি চরিত্রগত করার মধ্যে যিনি অবিরাম ডুবে আছেন । আল্লাহর ক্বাফ শক্তির মানেটা কি ? তারও পূর্বে আল্লাহ বলতে কি বুঝায় ? ফকির লালন সাঁই তাঁর দুটি পদে এ প্রসঙে বলেছেন , জানতে চাইলে খোদার কথা দেখাও আসমানে । তার মানে খোদা তথা আল্লাহর অবস্থান আসমান তথা নিরাকারে নয় । যদিও খোদা ও আল্লাহ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ একপ্রকার নয় ।
খোদ্ [নিজ] থেকে খোদা । ফার্সি শব্দ । আল্লাহ শব্দটি আরবি । যার অর্থ ,-[আদ ও সামা ] সৃস্টির ও মনের কেন্দ্রবিন্দুটি হইলেন আল্লাহ । আল +ইলাহ =আল্লাহ [শব্দসংঙ্ঞা , কোরানদর্শন ,সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি , রেমন পাবলিশার্স ,ঢাকা ] ।
আল্লাহর ক্বাফশক্তি কি ? ক্বাফ অক্ষরটি আল্লাহর ছয়টি নামের ইঙিত দিচ্ছে । যথা : ক্বাইউমুন , কুদ্দুসুন , ক্বাবিউন , ক্বাদিরুন , ক্বাবেদুন , কাহ্হারুন । হাকীকতের ক্বাইউমিয়াতকে সৃস্টির মধ্যে স্থায়িত্ব দান করার জন্য ক্বাফ । তাহা ছাড়া ক্বাফ অক্ষর দ্বারা উপরে উল্লেখিত আল্লহতায়ালার যে কয়টি নাম কোরানে পাওয়া যায় তাহার সব নামই শক্তিধর নাম । ১. ক্বাইউমুন -চিরস্থায়িত্তের শক্তি ।
ক্বাইউমু -স্থায়িত্বনির্ধারিত করা হইল ।
২. কুদ্দুসুন -দুর্বল এবং অধঃপতিতকে উন্নতমর্যাদা দানকারী শক্তি ।
৩. ক্বাবিউন - চিরন্জীব শক্তির উৎস । ক্বাবিউ -সৃস্টি শক্তিশালী হইয়া উঠিল ।
৪. ক্বাদিরুন -সুপরিমিতিদানকারী শক্তি ।
তক্বদীর দাতা শক্তি । তক্বদীর অর্থ ভাগ্য নহে । বরং কর্মবৃত্ত দানকারী শক্তি । এই বৃত্ত [সারকেল অব একটিভিটিস এন্ড ক্যাপাসিটিস ] সৃস্ট জীব নিজ ক্ষমতায় বদলাইয়া লইতে পারেনা । মানুষ ভাল আমলের দ্বারা উহা ক্বাদির শক্তির নির্ধারিত স্বাভাবিক নিয়মেই পরবর্তী উন্নত কর্মবৃত্ত প্রাপ্ত হইয়া থাকে [ইষৎ সংক্ষিপ্ত -গোঁপা ] ।
ক্বাদিরু -শক্তিশালী ,সৃস্টিকে শক্তি দেওয়া হইলো ।
৫. ক্বাহহারুন - অপ্রতিহত ক্ষমতা । মৃতু্ দানকারী শক্তি । ক্বাহহারু - ধ্বংসকারী । না কে ধ্বংসকরা হইল ।
যাহা নহে , অর্থ যাহা ক্ষনস্থায়ী এবং মিথ্যা তাহা ধ্বংস করা হইল । অর্থ্যা যাহা নহে তাহাই ধ্বংস করা হ্ইল ।
৬. ক্বাবিদু - নিয়ন্তক । সৃস্টিকে নিয়ন্তক করা হ্ইল । ভাঙন ক্রিয়ার শক্তি বর্ধিত করিয়া সৃস্টি হইতে কোন কিছু নিশ্চিন্হ করিয়া ফেলার শক্তি সৃস্টিকে দান করা হইলো [ সাংকেতিক অক্ষর , কোরান দর্শন , পর্বোক্ত ] ।
তাঁর মানে ফকির হচ্ছেন তিনিই যিনি ৬টি গুনের অধিকারী হয়ে বিরাজ করেন । একই সাথে আল্লাহর নির্বাণ শক্তি চরিত্রগত করার মধ্যে যিনি অবিরাম ডুবে আছেন ।
নির্বাণ শক্তির অর্থ এবং করণও ভিন্নাকৃতির । সম্পর্কচর্চার পাথেয় । নির্বাণ শক্তি লালন কোরান ভাব ভব কেতাব অর্থগত দিক থেকে একে অপরের পরিপূরক ।
বিষয়টা আমরা উপস্থাপনা করবো আবদেল মাননানের লালনভাষা অনুসন্ধান ২ -এর পাঠোদ্ধার থেকেই ।
নির্বাণ [গ্রেট এমটিনেস অব মাইন্ড ] শব্দটি বৌদ্ধধর্মের সাথে যুক্ত । বৌদ্ধসাধনার চূড়ান্ত অবস্থা । নির্বাণ শব্দের অনেকগুলো ব্যবহার দেখিয়েছেন হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় তার বঙীয় শব্দকোষ এ । যার মধ্যে উল্রেখ যোগ্য হলো , শান্ত , দীপ্তিবাহিত , মোক্ষপ্রাপ্ত , বিনাশ , সমাপ্তি , শূণ্য, অবসান ।
শূণ্য শব্দটিকে আমাদের বর্তমান পাঠোদ্ধারের প্রয়োজনে বিবেচনা করতে পারি । শূণ্য বা শূন্য একটি পর্যায় নয় । অবস্থা মাত্র । যেখানে কিছুই নাই । কিছুই হয়না সেরকম অবস্থা ।
যে বা যার অবস্থার ভেতর কোন কিছু জন্মগ্রহন করেনা । মৃত্যুও হয়না । অবস্থাটি স্বাভাবিক নয় । সংগঠিত বলা যায় । নির্বাণ শব্দের আরবি সমার্থক শব্দ হলো মকামে মাহমুদা ।
যার অর্থ অতিউচ্চতর প্রশংসিত স্তর । যে স্তরে পৌঁছতে হয় । পৌঁছনোর পর স্থিতিশীল অবস্থাকে লা মোকাম বলে। যে অবস্থাকে আবার ফানা বলে । ফকির লালন সাঁইর পদে ফানা শব্দের ব্যবহার আছে ।
তিনি বলেছেন , আপনার আপনি ফানা হলে সে ভেদ জানা যাবে । সে ভেদটি কোন ভেদ ? যেখানে স্রস্টা ও সৃস্টিকে আলাদা দেখা যায় । ফানা -ফি+নুন =ফানা । অর্থাৎ অনুদর্শনের মধ্যে বিলিন হওয়া । in the minuteness of truth ।
আর বাক্বা মানে বে+ক্বাফ = বাক্বা আত্নিক শক্তির সহিত । শক্তিধর । ক্বাফগুণ সম্পন্ন শক্তিধর । with power , absorbing of the great Emptiness in the mind and to stay in that position permanently [ প্রাগুক্ত ]
অল্লাহ হচ্ছেন প্রকৃত লা অবস্থা , নির্বাণ এবং মোকামে মাহমুদার স্তর । ফকির লালন সাঁই ফানা শব্দ দিয়ে স্তরটিকে বুঝেছেন ।
বলছেন , আপনি আল্লাহ ডাকো আল্রাহ বলে । এর সাথে মিলিয়ে পাঠ করতে হয় আপনার আপনি ফানা হলে সে ভেদ জানা যাবে । এই আপনি সত্তাই হচ্ছে Emptiness in the mind । আপনি অর্থাৎ আল্লাহ সত্তা হচ্ছে আপনার । এই অপনার আপনি সত্তা হচ্ছে নির্বাণ , লা বা না সত্তা [ যাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই ] বাকিটা অপরের সত্তা হিসেবে বিবেচিত ।
আপনার এই আপনি সত্তাকে আবদেল মাননান সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর ন্যায় কেতাব বলেছেন । যার পরিচয়বাহী চিন্হ হিসেবে থাকে কোরান । কোরান কখনও কেতাব নহে । বরং ইহা কেতাবের অংশবিশেষ । অর্থাৎ কেতাবকে পরিচয় করিয়া দিবার জন্য কিছু কথার সমস্ঠি [প্রাগুক্ত ] ।
আর কোরান হচ্ছে সৃস্টিরূপে স্রস্টার বিকাশ বিজ্ঞান ।
ফকির শব্দটি যেমন লালন শব্দটিও তেমনি ফকিরিপন্থা তথা সাঁইজীর দর্শনের পরিচয়বাহী চিন্হ । লালন শব্দটির অর্থ করতে গিয়ে আবদেল মাননান লিখেছেন , লা কে যিনি আপন মূলসত্তায় সার্বিকভাবে লন তিনিই লালন । লা মানে না । কিন্ত স্বাভাবিক জগতের নিগেটিভ অর্থাৎ নেতিবাচক অর্থে কখনই নয় ।
সাধকের পজেটিভ বা ইতিবাচক লা কে যিনি নিজ দেহ মন ও আচরনে আয়ত্ত করেন । কোরান সূরা আর রহমান এ বলেছেন , সুতরাং তোমাদের দুইয়ের রবের কোন আপন সার্বিক লা এর সহিত মিথ্যা আরোপ করিবে ? সূফি সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী কোরানদর্শনে এ বাক্যটির যথার্থ ব্যাখ্যা দিয়েছেন .- যিনি কামেল গুরু তিনি লা মোকায় অবস্থান করেন । তাহার সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার পথে দৃশ্য , শব্দ , গন্ধ , স্পর্শ ইত্যাদি রূপে যাহা কিছু তাঁহার সত্তার নিকট আগমন করে তার কোনটিই তাঁহার মনের মধ্যে মোহের দাগ কাটিতে পারেনা অর্থাৎ তাহাতে কোনরূপ শেরেক উৎপাদিত হয়না । তাই তিনি জন্মমৃত্য হইতে মুক্ত হইয়াছেন এবং দেহ মনকে আপন সত্তা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়াছেন , অতএব কালজয়ী মহাপুরুষ হইয়াছেন । আলা ইহার অর্থ নেয়ামত নয় ।
আলা অর্থ আমিত্বর লা অবস্থা অর্থাৎ না অবস্থা । বড় মদ স্থাপন করিয়া এই লা অবস্থার চির স্থায়িত্ব এবং বিস্তার বুঝানো হইয়াছে । কামেল গুরূর অপর নাম ফাতেরিস সামা ওয়াতে অল আর্দ অর্থাৎ মন ও দেহ বিচূর্ণকারী । কামেল গুরু আপন অস্তিত্ব হইতে দেহ মন বিচূর্ণ করতে পারিয়াছেন বলিয়াই শিষ্যগণকেও সেই পথে পরিচালনা করিবার পূর্ণযোগ্যতা অর্জন করিয়াছেন । এইরূপে কামেল গুরূর কোন লা অবস্থার সংগেই মিথ্যা বা শেরেকের কোনরূপ যোগ থাকেনা ।
কামেল মোর্শেদের আপন ইন্দ্রিয় পথে যে সকল ধর্মরাশি মস্তিস্কে আগমন করে তাহার প্রত্যেকটির মোহ তিনি ত্যাগ করিয়া নিস্কাম মোহশূন্য অবস্থায় বিরাজ করেন । সতরাং তাহার কোনও বিষয়ের সংগেই মিথ্যা বা মোহযুক্ত হইতে পারেনা । শেরেক শূন্যতাই রবের আসল পরিচয় [সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী , সূরা আর রহমান , কোরান দর্শন তৃতীয় খন্ড , প্রাগুক্ত ] ।
জীবের নির্বাণ বা লা মোকাম স্তরকেই কোরানের পরিভাষায় বলা হচ্ছে মোকামে মাহমুদা । মোকামে মাহমুদার স্তরে পৌঁছানোর প্রয়োজনেই জীবাত্না যে সমস্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত ; সেই সম্পর্কচর্চার প্রকৃতি বিশ্লেষনের তাগাদা থাকে ।
কোনও বস্তু বা ভাব এর সাথে জীব সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েছে , সেই সমস্ত বস্তু ও ভাব জ্বীবের নির্বাণ -প্রয়োজনে কতটুকু সহায়ক কতটুকু প্রতিবন্ধক সেই সমস্ত বুঝে নেবার প্রয়োজন রয়েছে । এছাড়াও আরেকটি প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসা যেতে পারে যে, আজকের জমানায় কেন আমাদের নির্বাণ বা মোকামে মাহমুদা তত্ত্ব প্রয়োজন হয়ে দেখা দিল ।
চলবে ............................................................................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।