আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শত বাধার পরও ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা

আমি খুবই Innocent...!!!

শত বাধার পরও ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা আপেল মাহমুদ পাঠকদের মতামত স্কুল থেকে শুরু করতে হবে কনক চাঁপা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়ে একই রঙের পোশাক পরে স্কুলে আসে। এটা মূলত ভেদাভেদ বা বৈষম্য দূর করার জন্য করা হয়। কিন্তু তারপরও বৈষম্য দূর হচ্ছে না। কারণ স্কুলে বিরতির সময় শিক্ষকরা ছাত্রদের মাঠে খেলতে বলেন আর মেয়েদের কমনরুমে আবদ্ধ করে রাখেন। তারা বোঝাতে চান খেলা শুধু ছেলেদের, মেয়েদের জন্য নয়।

ছেলেরা খেলবে আর মেয়েরা তা দেখে আনন্দে হাততালি দেবে। এখানে মেয়েদের জন্য মাঠের এক পাশের এক টুকরা জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয় না। স্কুলগুলোতে খেলার মাঠের পাশাপাশি আলাদা গেমস রুম থাকে। যেখানে ছেলেরা ইনডোর খেলাধুলা করতে পারে। কিন্তু মেয়েদের জন্য আলাদা কোনও গেমস রুম থাকে না।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোতেও আমরা বৈষম্য দেখতে পাই। ছেলেদের জন্য যদি ১০টি ইভেন্ট থাকে তাহলে মেয়েদের জন্য তিন থেকে চারটি ইভেন্ট রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্কুলে শরীরচর্চার কাস থাকে। সেই কাসগুলোতে ছেলেদের মাঠে নিয়ে কাস করানো হলেও মেয়েদের শ্রেণীকক্ষে অলস সময়কাটাতে হয়। অর্থাৎ স্কুল থেকেই মেয়েরা খেলাধুলার জগৎ থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

আর এর পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে স্কুলের শিক্ষকরা। শহরের স্কুলের মধ্যে গুটি কয়েক মেয়েদের জন্য ইনডোর খেলার ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামের স্কুলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই মেয়েদের খেলাধুলার জগতে নিয়ে আসতে হলে সেই মানসিকতা ও প্রস্তুতি স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকেই শুরু করতে হবে। মেয়েরা যেন খেলাধুলার প্রতি অনুপ্রাণিত হয় সেই দিকটিও দেখতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে উম্মে কুলসুম রোকেয়া হল, ঢা.বি. আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য প্রকট।

একজন পুরুষকে সমাজ যেভাবে চিন্তা করে নারীকে সেভাবে করে না। নারীকে সব সময় অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। ছোটবেলায় ছেলেমেয়ে একসঙ্গে খেলার সুযোগ দেওয়া হলেও শৈশব থেকে তারা যখন কৈশোরে অবতীর্ণ হয় তখন তাদের আর একসঙ্গে খেলতে দেওয়া হয় না। তখন মেয়েরা আশ্রয় নেয় ঘরে। যেখানে বসে সাপ।

লুডু খেলে। আর ছেলেরা খেলে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়সহ বিভিন্ন খেলা। মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জগতও ছোট করে নিয়ে আসা হয়। আমাদের সমাজ তাদের খেলার মাঠের চেয়ে ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর এতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।

ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে রকম মনোযোগী হওয়া হয় একজন মেয়ের ক্ষেত্রে তা করা হয় না। সমাজের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে ছেলেরা। বর্তমানে সমঅধিকারের কথা বলা হলেও সেটা শুধু মুখের কথার ভেতরই আবদ্ধ, বাস্তবে এর শতকরা হার অনেক কম হবে। তাই বর্তমানে আমাদের দরকার একটি সচেতন সমাজ। যেখানে লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না।

খেলাধুলাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে হাবিবা নাজনীন গোপীবাগ, ঢাকা নারীরা শারীরিকভাবে সামর্থ্য নয়। তারা কেন মাঠে থাকবে? তাদের যদি খেলার ইচ্ছা হয় তবে ঘরে বসে পুতুল খেলবে। এটা হচ্ছে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা বলে তাদের খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই টেনিস, ভারোত্তোলন, ফুটবলসহ বিভিন্ন পেশিশক্তির খেলায় নারীরা অংশগ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো এটি থেকে পিছিয়ে নেই। আমাদের দেশের নারীদের বিভিন্ন নেতিবাচক কথা না বলে যদি উপযুক্ত ট্রেনিং দেওয়া হয় তাহলে তারাও খেলাধুলায় ভালো করতে পারবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে তারাও দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারে।

ইতিমধ্যে অবশ্য সেই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। ক্রীড়া অঙ্গনে একজন পুরুষকে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় নারীকে সেই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে আমরা আধুনিক যুগে বাস করলেও আমাদের মন এখনও আধুনিক হয়নি। আমাদের চিন্তাচেতনা এখনও পুরনো রয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের চিন্তাচেতনার পরিবর্তন না ঘটছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের সমাজের নারীরা সামনে অগ্রসর হতে পারবে না।

সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যেখানে নারী সেখানে নারীর সহযোগিতা ছাড়া দেশ বেশিদূর এগোতে পারবে না। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। মুসলিম দেশগুলো মডেল হতে পারে কেয়া আক্তার সিলেট সৌদি আরব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের নারীরা আজ ফুটবল, ক্রিকেট, ভারোত্তোলনসহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করছে। পোশাকে ধর্মীয় বিধান মেনেই তারা এটি করছে। তুরস্কের নারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয়।

আমাদের দেশের নারীরাও মুসলিম দেশগুলোকে অনুসরণ করতে পারে। তারা যদি মাঠে ফুটবল, রাগবি, ক্রিকেট খেলতে পারে আমাদের দেশের মেয়েরা কেন পারবে না। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নারীদের অবলা, দুর্বল বলে দূরে সরিয়ে রাখি। কিন্তু তাদের জন্য যদি সঠিক সুযোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তারাও খেলাধুলায় ভালো করবে। আমেরিকার ভেনাস, সেরেনা, ভারতের সানিয়া মির্জা, রাশিয়ার শারাপোভা আজ বিশ্বের সম্মানজনক আসনে বসে আছেন।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নারীদের কীভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় সেই দিকে মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু সেই দিক থেকে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। ছেলেদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করাতে যে ধরনের পদক্ষেপ সরকার থেকে নেওয়া হয় মেয়েদের ক্ষেত্রে তা নেওয়া হচ্ছে না। এখানে সরকারের এক ধরনের উসিদাসীনতা রয়েছে। তাই সরকারের উচিত মেয়েদের সচেতন করে খেলাধুলার জগতে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

এখানে শুধু মেয়েদের নয়Ñ আমাদের সমাজপতিসহ সবাইকে সচেতন করতে হবে। সামাজিক যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করতে পারলে মেয়েরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। গণমাধ্যমকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে কামরুল হাসান গোদারপাড়া বাজার, বগুড়া বর্তমান যুগ গণমাধ্যমের যুগ। নিত্যনতুন তথ্যপ্রযুক্তি গণমাধ্যমে ব্যবহারের ফলে যেকোনও তথ্য খুব সহজে আমাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে মানুষকে সচেতন করা সহজ হচ্ছে।

আমরা মোটামুটি অসচেতন এবং গোঁড়া জাতি। কোনও কিছু একবার আঁকড়ে ধরলে তা আর ছাড়তে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি নারী হচ্ছে একজন লজ্জাশীলা যে সবসময় ব্যবহৃত হবে পুরুষদের কাজে। পুরুষরা যেভাবে নারীকে নাচাবে সেভাবেই সে নাচবে। পুরুষরা সমাজ সাজাবে এবং নারী হবে সেই সাজের উপকরণ।

আমাদের এসব দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে গণমাধ্যম। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি এবং ইলেকক্ট্রেনিক মাধ্যমে তথ্য প্রচারের মধ্য দিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি, যাতে অধিক হারে নারী খেলাধুলার অঙ্গনে অংশগ্রহণ করতে পারে। পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে রিফফাত ফেরদৌস বীরগঞ্জ, দিনাজপুর একটি পরিবারে যখন একজন ছেলে ও একজন মেয়ে পাশাপাশি বেড়ে ওঠে তখন পরিবারের সদস্যরা এখানে বিভাজন সৃষ্টি করে। যে পরিবারের বাবা-মা যত বেশি অসচেতন সে পরিবারে মেয়েদের ততবেশি অবহেলার শিকার হতে হয়। বাবা-মা তার সন্তানকে যেভাবে গড়ে তোলেন তার সন্তানও সেভাবে গড়ে ওঠে।

ক্রিকেটের অধিনায়ক সালমা, দাবার রানী হামিদসহ যারা আজ প্রতিষ্ঠিত তাদের অতীতে তাকালে দেখতে পাই বর্তমান অবস্থানে আসার ক্ষেত্রে পরিবারের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। পরিবার থেকে যদি সহযোগিতা করা হয় তাহলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। এখানে শুধু পরিবার নয়, সমাজের যে সব প্রধান রয়েছে তাদেরও সুদৃষ্টি দরকার, সেই সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা। যেসব পরিবার থেকে মেয়েরা খেলাধুলায় ভালো করবে সেসব পরিবারের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্য পরিবারের মেয়েরা এতে অনুপ্রাণিত হয়। সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দরকার কানিজ ফাতেমা নিউমার্কেট, চট্টগ্রাম বর্তমানে মেয়েদের আগের তুলনায় খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এটা অবশ্যই একটি খুশির খবর কিন্তু তার পরেও তারা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। খেলাধুলায় অংশগ্রহণের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার তা আমাদের নেই বললেই চলে। খেলাধুলার উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে সুপ্রশিক্ষিত প্রশিক্ষকের অভাব। একজন প্রশিক্ষকের ওপর একজন খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। প্রশিক্ষক নিজেই যদি ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে না পারে তাহলে জাতি ভালো খেলোয়াড় পাবে কোথায়।

ছেলেদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে সুদক্ষ প্রশিক্ষক আনা হয়। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিভা থাকার পরেও মেয়েরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছে না। শুধু প্রশিক্ষকের কথা বললে ভুল হবে, এর সঙ্গে প্রশিক্ষণের উপকরণেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর যেসব উপকরণ আছে সেগুলোও অনেক পুরনো।

ফলে মেয়েরা কোনও দিক থেকেই এগোতে পাচ্ছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।