ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বুধবার রাত ১২টার পর তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে মহিউদ্দিন আহমেদ ও বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এ কে এম মহিউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে।
এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র একথা নিশ্চিত করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকারী এ পাঁচজনই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।
এদের মধ্যে ফারুকের বাড়ি নওগাঁয়, শাহরিয়ারের কুমিল্লায়, বজলুল হুদার বাড়ি মেহেরপুরে এবং দুই মহিউদ্দিনের বাড়ি পটুয়াখালীতে।
মৃত্যুদণ্ডবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুনিদের ফাঁসিতে না ঝোলানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
গত ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এরপর ৩ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আবদুল গফুর আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পাঁচ খুনি রিভিউ আবেদন করলে গত ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি তার ওপর শুনানি হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর সাতজনের মধ্যে আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। দণ্ডিত অপরজন আব্দুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা সদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে আত্মীয়-স�জনসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
৩৪ বছরের অপেক্ষা
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কোনো মামলা করতে দেয়নি তৎকালীন সরকার।
বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা।
প্রথমে বাধা, এরপর হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্য '৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন খোন্দকার মোশতাক সরকার ইন্ডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে।
দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করলে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।
হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মুহিতুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
ওই বছরের ১২ মার্চ ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে শুরু হয় বিচার। একই বছর ৭ এপ্রিল ওই আদালত ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। মারা যাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েন মোশতাক আহমেদ, মাহবুবুল আলম চাষী ও মোস্তফা আহমেদ।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির ১৫ জনকে 'ফায়ারিং স্কোয়াডে' মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এর আগেই আব্দুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা রশিদ হাইকোর্টের আদেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
এরপর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তার রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিন আসামি মো. কিসমত হাসেম, আহমেদ শরিফুল হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেন।
তবে হাইকোর্ট প্রচলিত নয় বলে 'ফায়ারিং স্কোয়াডে' মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে 'ফাঁসিতে ঝুলাইয়া' মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা কারাবন্দি চার আসামি বজলুল হুদা, ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার ও মহিউদ্দিন আহমেদ একই বছর আপিলের আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার এ কে এম মহিউদ্দিনকে ২০০৭ সালে দেশে আনা হলে তিনিও আপিলের আবেদন করেন।
২০০৭ সালের ২৩ সেপেম্বর আপিল বিভাগ শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আপিল বিভাগে বিচারপতি সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন আপিল শুনানি ঝুলে ছিল।
আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে গত বছরের মাঝামাঝিতে চারজন বিচারপতি নিয়োগের পর আপিল শুনানির অচলাবস্থার নিরসন হয়।
সর্বশেষ
লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান ৫ জনের ফাসি কার্যকর।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।