আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
পূর্ব প্রকাশের পর... সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৫:৩৪ রাইন, হ্যাঁ, এখন তো আপনার ভোর হয়ে গেছে। আযান দিচ্ছে এখনও? আপনার বাড়ি থেকে আযান শোনা যায়? আমাদের বাসা থেকে যেতো... একদম অন্যরকম লাগে শুনতে... বিশেষ করে ফজর আর মাগরিব... আপনি কি সুন্দর করে পাজল নিয়ে বললেন... ইউ রিয়েলি হ্যাভ এ ওয়ে উইথ ওয়ার্ডস! শুনতে কখনই লেকচার লাগে না... আমার আব্বাও এই রকম জানেন? ঢাকা ইউনিতে ইকোনোমিক্স পড়াতো আগে... এখন তো একটা করে সেমিস্টার পড়ায় এআইইউবি’তে। ঐ স্টুডেন্টদের কথা একদিন বলছিলো। বললো যে ওদেরকে পড়ায় নাকি ততো আরাম পেতো না প্রথম প্রথম, কারণ কেউ মনোযোগী ছিলো না। তারপরে একদিন ঝাড়ি লাগাইসে, একদম পুরানো স্টাইলের টিচারদের মতোন... আব্বা আব্বা ভাবে! তারপর থেকে নাকি অনেক ভক্ত হয়ে গেসিলো।

তো একবার আব্বা আমাকে এক্সাম্পল দিচ্ছিলো ক্লাসে একটা থিওরি কীভাবে এক্সপ্লেইন করসে, ঐটা শুনে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেসি! থিওরিটা ইকোনোমিক্সের... একটা টার্ম আছে “প্রিজনার’স ডিলেমা”। এটাকে... গেইম থিওরি বলে। ব্যাপারটা হলো এরকম। ধরেন দুই জন প্রিজনার, তাদের কাছে আলাদা আলাদা করে বললেন রাজসাক্ষী হতে। এখন একজন যদি রাজসাক্ষী হয়, তাহলে অন্যজনের লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট হবে আর সে হেল্প করার জন্যে মুক্তি পাবে।

দুইজনই যদি বলে দেয়, দুইজনই শাস্তি পাবে... কেউই যদি না বলে... তাহলে চান্স আছে যে অপরাধ প্রমাণ হবে না... এবং কেউই শাস্তি পাবে না... ... এই থিওরি দিয়ে অনেক বিজনেসের মতিগতি বোঝানো হয়। তো, আব্বা এইটা বুঝাতে গিয়ে ইন্ডিয়ানা জোনসের কথা বলসে ক্লাসে। মানে দুইটা জিনিশ বুঝাইসে একসাথে। একটা হলো যদিও ইকোনোমিক্সে ধরে নেয়া হয় যে হিউম্যান বিয়িংস আর র্যাসশনাল থিংকারস, সব সময়ই এরকম না। আমরা মাঝে মাঝে ইরর্যা শনাল কাজ করি... আরেকটা হলো প্রিজনার’স ডিলেমা... একটা সীন আছে যেখানে বাবা আর ছেলে থাকে... এবং তাদের সামনে দুইটা ড্রিঙ্ক... একটায় বিষ আরেকটা অমৃত।

কোনটা যে কি কেউ জানে না। একজন একটা খেয়ে যদি মারা যায়, তাইলে অন্যটা অমৃত... আর বেঁচে থাকলে অন্যটা বিষ... যদিও র‌্যাশনালি স্পিকিং, বাবাকে দিয়ে টেস্ট করানো উচিত ছিল, যেহেতু তার বয়স বেশি এবং শক্তি কম... কিন্তু মুভিতে ইন্ডিয়ানা জোনসই প্রথম ট্রাই করলো ড্রিঙ্কটা (দেখেন, আব্বা আম্মার কথা বলতে গিয়ে আপনাকে ইকোনোমিক্স শিখাইতেসি!! আর আপনি বলেন আপনি লেকচার ঝাড়সেন?) হ্যাঁ, আম্মা বেঁচে আছে ভালোমতোই... সে এখন পঞ্চান্নের মতোন। আম্মা আমার আব্বার চেয়ে অনেক ছোট, দশ বছরের ডিফারেন্স। এবং আমাদের সাথে বাচ্চাদের মতো ভাব তার। আসলে বিয়ের সময়... শী অয়াজ অনলি ফিফটীন।

আর মনে হয় ঐ বয়সটাতেই আছে। যেমন সেইদিন কথা বলছি তার সাথে... কথার মাঝখানে হঠাৎ আব্বাকে বলে যে... “এই, তোমার পায়ে পোকা কামড়ায়!” আমি বললাম... “পোকা আছে নাকি?” বলে যে... “বাংলাদেশে অনেক পোকা... বড়ো, মেঝো, খাটো!” তারপরে ছড়া বলে... “তোর আব্বার তাড়া খাইয়া, আমার দিকে আসছে ধাইয়া, দিসি পড়া, গেসে মইরা!” এইটা নিয়ে হাসলাম অনেক... আমার একবার ইচ্ছা ছিলো তিন গোয়েন্দার মতোন একটা সিরিজ লিখবো। সেইখানে তিন বোন থাকবে তিন গোয়েন্দা আর তাদের মা থাকবে প্রবলেম সলভার। পরে আর লেখা হয় নাই... কতো কিছু যে ইচ্ছা করে! ওহ! আপনি কানাডা যাবেন কেনো? নিউজিল্যাণ্ডে চলে আসেন বরং... আমি এখানে থাকি... তাই সার্টিফিকেট দিচ্ছি... অনেক সুন্দর দেশ... মানুষজন ভালো অনেক... আর এই দেশের maori name হলো aotearoa মানে...দ্যা ল্যান্ড অফ লং হোয়াইট ক্লাউডস........ নিয়ন্তি -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৬:১৬ নিয়ন্তি, বাহ! কতো মিল পাই। আমি তো নিউজিল্যান্ডে আসবোই না তাহলে।

লর্ড অফ দ্যা রিংস দেখে নিউজিল্যান্ডের প্রেমে পড়েছি। ওখানে নিউজিল্যান্ড কতো সুন্দর দেশ সেটা বুঝা যায়! আমি সুন্দর কোনো দেশে যাবো না। গেলে শেষে দেশের প্রেমে পরে যেতে হবে। তারপরে যখন বাংলাদেশে ফিরবো, আমার কাছে মনে হবে এখানে জ্যাম, ধুলা, ধোঁয়া, গ্যাঞ্জাম, ট্র্যাফিক, মানুষ খারাপ। বাসাগুলা তখন শ্যাবি লাগবে, টয়লেট ময়লা লাগবে, বিদেশের সিস্টেমে ফরম্যাট হয়ে গেলে সেই ভার্সন দেশে অচল!! বাইরে থাকা আত্মীয়দের দেখেই বুঝি এই ফারাকটা।

তাদের দোষ নাই, আমাদেরও উপায় নাই। যার যার সিস্টেম তার তার কাছে। এজন্যে আমি বেঁচে থাকা কঠিন এমন দেশে যাবো, যেখানে সৌন্দর্য উপভোগের সময় পাবো, কিন্তু আরাম পাবো না। দেশের বৃষ্টি, মাটি, কাদা, ধুলার জন্য মন কাঁদবে। তারপরে কাজ (পড়া) শেষ হলেই ফিরে আসবো! :-) আপনার বাবার পড়ানো আমার পছন্দ হইসে।

যে টিচার ক্লাসে মুভির উদাহরণ থেকে গল্প করতে পারেন, তিনি বস!! ওনার মতো কয়েকজন টিচার ক্লাসে পাইলে আমাদের অনেক উপকার হইতো। শুধু শুধু ক্লাসগুলা বাংক করে রেজাল্টের বারোটা বাজানো লাগতো না! আমার মা কেমন শুনবেন? অনেক নরম সরম আর ভালোমানুষ ধরনের। আমার এলোমেলো জীবন-যাপনের পেছনে সে নিজে দায়ী কি না এটা অনেকদিন ধরে চিন্তা করেছে। তার ধারণা, আমি যা করেছিলাম, এমন জীবন কাটাচ্ছি, এটা তার কোনো একটা ভুলে হয়েছে। তার এই ধারণা ভাঙাতে আমার অনেকদিন লেগেছে।

গত উইকএন্ডে গিয়েছিলো বসুন্ধরা হাউজিংয়ে। আমার আব্বা অনেক আগে একটা জমি কিনেছিলো ওখানে, সেটা তদারকি করতে। পাঁচিল দিবে, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি। আমি বললাম, “কেনো?” বলে, “টাকা জমাইসি, এই জমিটা তো আমার নামে, এখানে একটা দুইতলা বাড়ি করবো, তারপরে আমরা থাকবো। তুই উপরের তলা নিবি না নিচের তলা?” আমার কী হইলো, ঐ দুপুরে গরম রোদের মধ্যে দাঁড়িয়েই গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে গেলো তাল তাল কান্না! বললাম, “আমার কিছু লাগবে না, আমি যা কামাই, তা দিয়ে অনায়াসে চলে যাবে।

” তখন বলে যে, “তা তো যাবেই। কিন্তু তুই কাছে থাকলি, আমার টেনশন করতে হবে না। বুড়া বয়সে দূরে দূরে থাকবি আমার দিন কাটবে টেনশন করে করে। ” বলেন! এইসব ব্ল্যাকমেইলিং কেমন লাগে! মায়ের গল্প বলতে থাকলে এই মেইল আর শেষ হবে না। আপনিও পুরোটা না পড়েই ডিলিট করে দিবেন! আমি বরং থামি।

ইতি রাইন (আমি একটু শুবো। মাথা ঘুরতেছে। অনেকদিন পরে এমন সারা রাত জাগলাম। এই মেইলের রিপ্লাই দিতেও পারেন, নাও দিতে পারেন। পরে আবার কথা হবে... শুভ দুপুর-ভোর!) -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৭:২২ রাইন, হ্যাঁ, ঘুমান।

(বাবা-মায়ের সাথে নাশতা খাওয়ার প্ল্যান বাতিল?) আপনাকে সারা রাত জাগিয়ে রাখলাম আজকে। অবশ্য এজন্য আমার একটুও দুঃখ লাগছে না... অপরাধবোধও না! কারণ আমি জানি আমার কাছে লিখতে আপনার ভালোই লাগলো, আমারও যেমন। না? :-) লর্ড অফ দ্যা রিংস আমারও খুব প্রিয় একটা মুভি। আমরা প্রত্যেকটা হলে গিয়ে দেখসি। কয়েকটা দৃশ্য আছে এতো সুন্দর।

ঐ দৃশ্যটা মনে আছে আপনার? একটা বনের মধ্যে দিয়ে এল্‌ভ্‌সদের একটা দল হেঁটে যাচ্ছে। সবাই খুব সুন্দর... পারিপার্শ্বিক সুন্দর... সবাই নীরব... ঐটা দেখলেই আমার স্বপ্নদৃশ্য মনে হয়। আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র হলো... স্যাম। আর খুব সুন্দর একটা দৃশ্য একদম শেষ অংশতে... যখন ফ্রোডো ফিরেছে জয়ী হয়ে আর সবাই ওকে ঘিরে আছে, পরদিন সকালে আস্তে চোখ খুললো চারপাশে অনেক মুখ... সবাই খুশি, সবাই গর্বিত... সবার এক্সপ্রেশনে মায়া... ভালোবাসা... ফ্রোডো সারাঘর খুঁজতে থাকে... আর হঠাৎ করে স্যামের মুখ উঁকি দেয় দরজার আড়াল থেকে। আর খুব স্মিত হাসে।

আর কেউ দেখে না ওকে, শুধু ফ্রোডো ছাড়া... কী সুন্দর না? আমি যতোবার ঐ অংশটা দেখি আমার কান্না চলে আসে... আমি অবশ্য সবসময় মুভি দেখলে অনেক কান্নাকাটি করি! আমার কী মনে হয় জানেন? যতোই সুন্দর হোক দেশ... যে কোনো কিছু... বেহেস্তের মতোন হোক, তবু মানুষের মধ্যে তার বড়ো হওয়ার জায়গাটার প্রতি আলাদা একটা টান থাকে... আর কোনোকিছুই “হোম” না... তাই... আপনার বিদেশী আত্মীয়রা যেমনই হোক, আপনি কখনোই ঐ রকম ফীল করবেন না আমি জানি। যে দেশেই যান... শেষমেশ ঐ ধূলা, কাদা, ভীড়, ট্রাফিক এই গুলাই মিস করবেন। আমি মাঝে মাঝে আমার বন্ধুদের ফোন করি, ওরা যখন রাস্তায় থাকে। চারপাশের এতো শব্দ! গাড়ির হর্ন... মানুষের কথা! আমার অনেক অনেক ভালো লাগে... মনে হয় আমিও ঢাকার রাস্তায়। কিছু ভালো লাগা থাকে, যা ভিতরের... বাইরের আপাতত সৌন্দর্য বা আগলিনেসের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নাই।

কি যেন একটা কবিতার লাইন আছে না? “নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা!” ... অথবা নজরুল গীতি মনে পড়ছে এখন... “যত ফুল ততো ভুল কণ্টক জাগে, মাটির পৃথিবীটাই এতো ভালো লাগে... স্বর্গের প্রেমে নাই বিরহ অনল, সুন্দরও আঁখি আছে, নাই আঁখি জল...” চোখের পানি বলেন, অনুভূতি অথবা স্মৃতি... এই গুলা মিসিং লিঙ্ক। যখন আমি ঢাকার কথা ভাবি, তখন একটা মায়ার প্রলেপ থাকে ভাবনার ওপরে... তাই কোনকিছু খারাপ লাগে না... সব ভাল... আপনার আম্মার কথা শুনে আমার অনেক ভালো লাগছিলো... সব বইলেন... একদম মহাকাব্য লিখলেও আমি খুশি! আপনার জীবন-যাপন এখন কেমন? আমার তো এম্নিতেই আপনার সাথে কথা বলে যে ধারণা হয়, তাতে মনে হয় অনেক অগোছালো... বাবা-মা আসলেই আজব জিনিশ। মাঝে মাঝে ওরা কতো কিছু কল্পনা করে কষ্ট পায়, অপরাধবোধে ভোগে, অথচ আমাদের হয়তো ঐসবকিছু মনেই থাকে না। আমরা তিন বোন, আমি সবচেয়ে বড়ো এবং আমার বাবা মায়ের মতে, সবচেয়ে বোকা... ওদের বেশিরভাগ চিন্তা আমাকে নিয়ে থাকে, কারণ আমি নাকি অনেক ভালনারেবল্‌ , একা একা কিছুই পারি না! অথচ ওদের ধারণার চেয়ে আমি অনেকই অন্যরকম। শেষ বার যখন ওরা আমার এখানে বেড়াতে আসছিলো, তখন একবার আব্বা নোটিস করেছে যে আমি রাবিশ বিন নিয়ে রেখে আসছি ড্রাইভ ওয়েতে, যেখান থেকে উইকলি কালেক্ট করে... ঐটা দেখেই আব্বা একদম ইমপ্রেস্‌ড! ‘আমার মেয়েটা কী রেসপন্সিব্‌ল হইসে, কত্তো কাজ করে!’... আমার এই রকম ভালো লাগে... আর আপনার মতোনই হঠাৎ করে কান্না চলে আসে, একটা পৃথিবী থাকবে, যেখানে একদিন আমার বাবা মা থাকবে না, অথচ আমি থাকবো, আমি এখনও এমন ভাবতে পারি না... বা বিশ্বাস করতে... আস্তে আস্তে মানুষের যাওয়ার জায়গা কমতে থাকে, না? আপনি এতোক্ষণে নিশ্চয়ই খুব ঘুমাচ্ছেন! আমি তো মাঝখানে লাঞ্চ-ব্রেক নিয়ে আবার আসলাম।

এই চিঠির উত্তর যদি দেন, তাহলে আমার অন্য একাউন্টেও cc করে দিয়েন, নয়তো সোমবারের আগে দেখা হবে না। অনেক ভালো থাকেন আর সুখে নিদ্রা যান! ইতি নিয়ন্তি -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- (আগামী পর্বে সমাপ্য)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।