আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হীড বাংলাদেশের কথাও আছে এই রিপোর্ট এ -----------

ভাল লাগে মানুষকে সৃস্টিকে প্রকৃতিকে

জানুয়ারি ২৭, ২০১০, বুধবার : মাঘ ১৪, ১৪১৬ হাজার হাজার এনজিওর নিবন্ধন বাতিল হচ্ছে যুগান্তর রিপোর্ট হাজার হাজার এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল হচ্ছে। বিশৃংখলা চলছে এনজিও খাতে। লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। নিবন্ধন নিয়ে নিয়মবহির্ভূত কাজ করে যাচ্ছে বহুসংখ্যক এনজিও।

অনেক এনজিও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে। আবার কোন এনজিও সামাজিক উন্নয়নের নামে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অনুমতির আবেদনের সঙ্গে কাজের বিন্দুমাত্র মিল নেই। বহু এনজিও একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এনজিও’র অনুমতি নিয়ে জঙ্গিবাদ সংগঠিত করার অভিযোগও রয়েছে।

সব মিলিয়ে এনজিও খাতে চলছে চরম বিশৃংখলা। লাগামহীনভাবে চলছে দেশের পুরো এনজিও খাত। জানা যায়, সরকারের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখের মতো এনজিও নিবন্ধন নিয়েছে। অথচ সক্রিয় আছে ৫০ হাজারেরও কম। বেশ কয়েক বছর ধরে অকার্যকর থাকার কারণে হাজার হাজার এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এনজিও সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের বাস্তবায়ন শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকেও বেশ কয়েকটি এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরনো আইনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস। এছাড়া সব এনজিওকে একটি অভিন্ন ব্যবস্থাপনায় তদারকির চিন্তা-ভাবনাও শুরু করেছে সরকার। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, ব্যুরোতে এনজিও সম্পর্কিত অনিয়ম-দুর্নীতির অন্ত নেই।

কিছুদিন আগেও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম যুগান্তরকে বলেন, কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। সম্প্রতি সেভাবেই ৫৪টি এনজিও’র রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে। হিড বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও সম্পর্কে তদন্ত শেষে রিপোর্টটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তারা অভিযুক্ত এনজিওগুলো সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন।

দেখা গেছে, এসব সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে অকার্যকর রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনের জন্য স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রমের জন্য রেজিস্ট্রেশন নিয়ে যেগুলো অকার্যকর রয়েছে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। সরকার ভলান্টারি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এজেন্সিস (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর আর্টিকেল ১০ অনুসারে এই রেজিস্ট্রেশন বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব এনজিও লিখিত প্রতিশ্র“তিতে ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়টির কথা উলে¬খ না করেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়া হবে। অধ্যাদেশ অনুসারে সমাজকল্যাণ অধিদফতরের আওতায় নিবন্ধনকৃত সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং এনজিওকে তাদের বার্ষিক রিপোর্ট ও আর্থিক তথ্য-উপাত্ত জমা দেয়ার কথা।

কিন্তু অনেক এনজিও গত ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে কোন রিপোর্ট বা আর্থিক তথ্য জমা দেয়নি। প্রসঙ্গত, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ছাড়াও আরও সাতটি সরকারি কর্তৃপক্ষ এনজিও’র রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর আওতায় রয়েছে ২,৪৭৯টি দেশী ও বিদেশী এনজিও, সমাজকল্যাণ বিভাগের আওতায় ৫৫ হাজার, সমবায় বিভাগের আওতায় প্রায় দেড় লাখ, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এন্ড ফার্মসের আওতায় ১০ হাজার, মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির আওতায় ৫০১, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৬ হাজার ৩০ এবং যুব উন্নয়ন অধিদফতরের আওতায় এক লাখ এনজিও নিবন্ধিত আছে। অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোম্পানিজ অ্যাক্ট অনুসরণের চিন্তা-ভাবনা করছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসের রেজিস্ট্রার আবেদুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, রেজিস্ট্রেশন আইন-১৮৬০ সালের সোসাইটিজ অ্যাক্ট অনুসারে এনজিওগুলোর নিবন্ধন দেয়া হয়।

কিন্তু ওই আইন অনুসারে নিবন্ধন বাতিলের কোন সুযোগ নেই। সরকার যদি আইনের সংশোধন করে, সেক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এনজিও খাতের ব্যাপক অনিয়মের ব্যাপারে তিনিও একমত পোষণ করে বলেন, এনজিওগুলো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও আইনের কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। নিবন্ধন নিয়ে তারা চলে গেছে, তারা কি করছে সেটা আমরা কিছুই আর জানতে পারি না। এনজিও’র নিবন্ধন নিয়ে জঙ্গিবাদ সংগঠিত হচ্ছেÑ এমনও অভিযোগ রয়েছে।

আবার দেখা যায়, ১০টি এনজিও একই ধরনের কাজ করছে। তহবিল ডুপি¬কেশন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের একটাই উপায় আছে। সেটা হল, সোসাইটিজ অ্যাক্টে অনেক কিছুই বলা না থাকায় কোম্পানি আইন অনুসরণ করা যায়। এটিরই এখন চিন্তা-ভাবনা চলছে।

কোম্পানি আইনে বলা আছে, কোন কোম্পানি অকার্যকর হয়ে গেলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এনজিও পরিচালনাকারীদের বক্তব্য : এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশের (এডাব) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মতিন যুগান্তরকে বলেন, যেসব এনজিও সততার সঙ্গে সক্রিয় আছে, তাদের অবশ্যই সরকারের তরফ থেকে সহায়তা করতে হবে। আর যারা অসৎভাবে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। খাতাপত্রে আড়াই লাখ এনজিও’র কথা শোনা যায়। অথচ মাঠে তো আড়াই হাজারও দেখা যাচ্ছে না।

এনজিওগুলোর অসততার বিষয়টি খুব সহজেই ধরা যায়। ধাপ্পাবাজ, অপেশাদারদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তিনি বলেন, যারা সমাজসেবার নাম করে ব্যবসায়িক কাজ করছে তাদের ধরতে হবে। আবার সরকারও অনেক এনজিওকে ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করছে। এনজিও দিয়ে ঠিকাদারি করানোর চেষ্টা করলে সেটাও ঠিক হবে না।

সব মিলিয়ে এসব বিষয়ে সরকারকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। এনজিও ফেডারেশনের পরিচালক এম তাজুল ইসলাম বলেন, আসলে এনজিওগুলো বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিবন্ধন নেয়। দেখা যায়, একই এনজিও একাধিক সরকারি সংস্থার হিসাবে চলে আসছে। আবার এমনও অনেক এনজিও আছে, যারা রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আর কোন কাজ করেনি। পাঠাগার, ক্লাবের নামে নিবন্ধন নিয়েছে।

এগুলো সেই অর্থে এনজিও নয়। সরকার এখন ২০ হাজার এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলায় পুরো এনজিও খাতের বদনাম তৈরি হচ্ছে। অথচ এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রণে সরকারের মেকানিজম আগে থেকেই হাতে ছিল। প্রত্যেক বছর রিপোর্ট জমা না দিলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। সে অনুসারেই ভুঁইফোড়, অসৎ এনজিও’র বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এডাবের পটুয়াখালী-বরগুনা এলাকার সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ এনজিওই ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের নামে ব্যবসায়িক কাজ করছে। এজন্য এনজিও’র মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম কমে গেছে। সরকারকে এ বিষয়গুলো দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।