আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লাইমেট-ড্রাগন পৃথিবীর চিরপরিচিত প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা গুড়িয়ে দিচ্ছে

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

'ন্যাচারাল সিস্টেম' বা 'প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা' বিশ্বভ্রম্মান্ডের এক রহস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। অমিত তেজধারী মানুষ এই প্রাকৃতিক শৃংঙ্খলার বাইরে নয়। তবে মহাবিশ্বে অন্য সকল সৃষ্টি তার নিজস্ব বলয়ের বাইরে তেমন হুমকী সৃষ্টি করতে সক্ষম না হলেও মানুষ এই শৃঙ্খলাকে বিনষ্ট করার মত শক্তি রাখে। সেই সাথে নবসৃষ্টির, পূণনির্মাণেরও। মানুষ তার বসবাসযোগ্য করে পৃথিবী গড়ে নিয়েছে।

গড়তে গিয়ে প্রকৃতিকে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করেছে, ধ্বংষ করেছে। এর কিছু প্রকৃতি অনুমোদন করেছে, কিছু করে নি। যা অনুমোদন করেনি তার সাথে সমাঝোতা করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রকৃতি ও মানুষ - এই দুই পরাশক্তির নিরবিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের মধ্যে মানুষের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। প্রকৃতি যে বিষয়গুলো অনুমোদন করেনি তার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম।

ফিরিয়ে দিচ্ছে উল্টো চিত্র। পৃথিবীকে মানুষের বাসের অযোগ্য করে প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। যেমন হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ ধ্বংষ করেছিল প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা – ফলে প্রকৃতিও উপহার দিয়েছে যুগের পরে যুগ বিকলাঙ্গ মানুষের জন্ম। ভুপাল, চেরোনবিলেও একই চিত্র দেখেছে মানুষ। প্রকৃতি তার সাম্রাজ্যে রাষ্ট্রসীমা অগ্রাহ্য করে বলে এই প্রতিশোধের শিকার হয়েছে নিরাপরাধ মানুষ।

পারমানবিক বোমা বিষ্ফোরণের কয়েক যুগ পরেও যার রেশ কাটেনি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতি অনুমোদন করেনি, মূলত আমাদের বসবাসযোগ্য পৃথিবীকে অক্ষুন্ন, অবিকৃত রেখে। পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী - প্রভাব পড়েছে এর জল, স্থল ও বায়ুমন্ডলে। মানুষকে পৃথিবী তার নতুন প্রাকৃতিক বিনির্মাণে শৃঙ্খলিত করে ফেলতে উদ্যত। যে অঞ্চলে মানুষ মেরু শীতলতা অভ্যস্ত সেখানে সূচনা হচ্ছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় উষ্ণতার।

মোদ্দাকথা, চিরপরিচিত তাপমাত্রা বন্টনের প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করেছেন। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব নিদৃষ্টভাবে এখনই যেসব স্থানে পরিলক্ষিত হয় তার বর্ণনা আছে আইপিসির ৪র্থ এসেমেন্ট রিপোর্ট। বিশাল এই রিপোর্টের দ্বিতীয় খন্ডের একটা অংশের নাম সামারি ফর পলিসিমেকার , [পিডিএফ, ১৬ পৃষ্ঠা, ৯২৪ কেবি, অনায়েসে ডাউনলোড করে নিতে পারেন] যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে - Observational evidence from all continents and most oceans shows that many natural systems are being affected by regional climate changes, particularly temperature increases. উদাহারণসরূপ বলা হয়েছে নিম্নোক্ত গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণের কথা: প্রথমত: হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার বা পুঞ্জীভূত বরফের স্তুপের ক্ষয়। উঁচু পাহাড়ের শীর্ষে, উত্তর-দক্ষিণ মেরুর বরফাঞ্চলে মাইলের পরে মাইল এমন বিশাল বিশাল বরফের ঘনীভূত আধার ধারণ করে আছে কয়েক মহাসমু্দ্রের জলরাশি।

গ্লেসিয়ালিস্ট বা এই হিমবাহ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন হিমবাহ ক্রমশ গলে যাচ্ছে। গলে যাওয়ার মাত্রা হিসাব করে তারা ভবিষ্যতে কি পরিমাণে গলবে তার একটা ধারণাও করেছেন। (১) এর ফলে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পাবে এবং ইতোমধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি শহরগুলোর, যেমন, নিউইয়র্ক, নিউ অর্লিয়েন্স, আম্সটারডাম, হেগ, ভেনিস, কর্তৃপক্ষ শহর রক্ষা ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য নানা প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা, নিরীক্ষা শেষে বাস্তবায়নও শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া, বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের বরফ গলে নড়বড়ে করে দিচ্ছে ভূ-গঠন ও দৃঢ়তা ফলে ভূমিধ্বসের ঝুঁকি বাড়ছে। এর ফলে সন্নিকটস্থ অঞ্চলের জনবসতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।

দ্বিতীয়ত: মেরুঅঞ্চলে জীব-বৈচিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে পরিবর্তিত পরিবেশের কারণে। যা প্রভাব ফেলছে জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে খাদ্যাভাসে। বৃষ্টি ও হিমবাহ নিঃসৃত পানির পরিমাণ বাড়ছে বসন্তের প্রারম্ভে, অনেক অঞ্চলে নদ-নদীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পানির গূনগত মানের উপরে প্রভাব ফেলছে। এছাড়া বসন্তে নতুন পত্র-পল্লব প্রস্ফুটিত হওয়া, অতিথি পাখির অভিবাসন বা ডিম ফোটার সময়কালে পরিবর্তন ঘটছে। মেরুঅঞ্চল এবং অমেরুঅঞ্চলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্রে লক্ষণীয় মাত্রায় পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছে।

উচ্চ-অক্ষাংশের সমুদ্রে সামুদ্রিক জীবানু, শ্যাওলা ও মৎসের মাত্রা ও পরিমাণে পরিবর্তন ঘটছে। সার্বিকভাবে সমুদ্রে এসিডের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতির এই পরিবর্তন পৃথিবীর নানা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ফিজিকাল পরিবর্তনের ইংগিত মাত্র। ভূমি, পানি, উদ্ভিদ, প্রাণী, আলো, বাতাস সর্বত্র এর প্রভাব ক্রমশ স্পষ্টতর হওয়ার সূচনা বলা যায়। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণলব্ধ এসব প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং প্রধানত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে।

যার কোনটাই মানব বসতির জন্য পৃথিবীকে উপযুক্ত রাখার মত নয়। আবাসযোগ্য করে গড়ে তুলে আমরা এখন এর জলবায়ুকে ধরে রাখতে পারছি না। বরঞ্চ প্রকৃতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমরা কোথায় বাস করবো এবং কিভাবে বাস করবো। প্রকৃতির এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এর জন্য কোনো একক রাষ্ট্রকে দায়ী করেও এর সমাধান আশা করা যায় না।

প্রকৃতির এই পরিবর্তনের জন্য আমেরিকা বা উন্নত বিশ্ব দায়ী এমন সরলীকরণেরও বিপক্ষে আমি। প্রকৃতি যে কারণে পরিবর্তন ঘটাছে আমাদের অবশ্যই সেই কারণটাকে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে যে পরিবর্তনের উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি তার সাথে খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এ কথা নিশ্চিত এজন্য বাংলাদেশের চেয়ে সোচ্চার কণ্ঠস্বর অন্য কোথাও শুনতে পাবার কথা নয়। কারণ উপর্যুপরী ঘূর্ণিঝড় সঙ্কুল আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল ও দরিদ্রতা মিলেমিশে যখন সমু্দ্র পৃষ্ঠ বৃদ্ধির সম্মুখীন হবে - তখন এই দেশের মানুষ কোথায় গিয়ে দাড়াবে কল্পনা করা যায় না।

১. ২০৩৫ সালে হিমালয় পর্বতমালার গ্লেসিয়ার ক্ষয়ের একটা সাইন্টিফিক প্রেডিকশনও তারা দিয়েছিলেন যা সম্প্রতি অসত্য তথ্য নির্ভর বলে জানিয়েছেন ইউএন এর ক্লাইমেট প্রধান রাজেন্দ্র পাচৌরী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।