বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কেটিংএর আনাগোনা শুরু হয়েছে। আমার আগের পোস্টেই বলেছি ইভেন্ট ও প্রসেস এর মাঝে সম্পর্কের কথা। সেই পোস্টে বাংলাদেশের রাজনীতির একটা সম্পর্ক টেনে একটা ট্রেন্ড বুঝার চেষ্টা করেছি। আপনি ভোট দেন তো? এবারের পোস্টটি আপনার জন্য লেখা।
১.
ব্রান্ডিং ধারনাটাই এখন ভাল মতোন ব্রান্ডেড।
তাই সবাই চিন্তা করে এমন কিছুই করা যাবে না যা "ব্রান্ড" নষ্ট করে দিবে।
এই চিন্তা কি শুধু ব্র্যান্ড ম্যানেজারের? মোটেই না। সবার মাথায়ই এচিন্তা কাজ করে। আপনি সুফি টাইপ মানুষ। সহজ সরল।
শীতের কাপড় কিনতে গিয়ে 'রকিং' কোন জ্যাকেট কিনতে আপনার বাধবে। কারন আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু। পাবলিক পারসেপশান নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি ক্লাসের হার্টথ্রব সুন্দরী, বাবার 'বাংলা মটরসাইকেলের' পেছনে বসে ক্যাম্পাসে আসার কথা কল্পনাই করতে পারেন না!..... পাবলিক পারসেপশান ম্যাটারর্স.... ইনফ্যাক্ট সবাই কোন না কোন ফর্মাটে ব্র্যান্ড ম্যানেজার।
২.
উপরের ১. নং পয়েন্ট থেকে এটা পরিষ্কার যে, পাবলিক আমাকে কিভাবে দেখে এটা গুরুত্বপূর্ন।
আমার কাছে, অন্তত।
- আচ্ছা, পাবলিক আমারে ক্যান দেখে? কিংবা পাবলিক আমারে দেখে কিভাবে? কই, আমিতো পাবলিকের সামনে গিয়া নাচি না???
- পাবলিক আমারে দেখে কারন তুমি পাবলিকের মাঝেই থাকি, জীবন যাপন করি।
- তার মানে তুমি কইতে চাইতেছ, সব পাবলিক আমারে দেখে না?
- অফকোর্স নট, তুমি কি সেলিব্রিটি নাকি?
- না ...তা না।
- তোমরা গন্ডি খুবই ছোট। মাইন্ড কইরো য্যান
- না..না..মাইন্ড খামু ক্যান।
এইডি তো শান্তির কথা। কিন্তু....যারা সেলিব্রিটি তাদের তো জীবন বরবাদ হো যায়েগা!!
-কথা সইত্য। তাগো বহুত বিপদ। যেমন ধরে, আমাগো জাফর ইকবাল স্যারের কথা, কয়দিন আগে বলগে তারে নিয়া যা হইলো....কিছুই হইতো না যদি তিনি সেলিব্রিটি না হইতেন।
- কথা ঠিক।
এগ্রিড। তয় মাথায় একখান শয়তানি বুদ্ধি আইছে
- এইডা আর নতুন কি! কইয়া ফালাও।
- যদি কাউরে বাশ দেওনের দরকার হয়, তয় তারে সেলিব্রিটি বানাইয়া দেওন লাগব। এক্কবারে লাইফ লং ব্যাম্বু..
- দুর! যারে তারে তুমি সেলিব্রিটি বানাইতে পারবা নাকি? তাছাড়া তুমার বাশ কতটা ইফেক্টিভ হইবো এটা ডিপেন্ড করতাছে তুমার ব্র্যান্ডের রিচ (reach) কতটুকু এর উপর।
- দ্যাত মিয়া, খালি জার্গন মারতাছ।
এসব টার্মিনলজি ফালায়া আম পাবলিকের ভাষায় কথা কও। এই সব রিচ-ফিচ আমার মাথার আশপাশ দিয়া যাইতাছে।
- আইচ্চা, সহজ কইরা কই। ইন্ডিয়াতে কয়দিন আগে পেপসি না কুক, কে জানি খুব বিপদে পরছিল। কারন বেশ কিছু লোক এই সব সফট ড্রিংক্স খাইয়া টাল হইয়া গেছিল।
মারাও গেছিল কয়েকজন। আর এই চান্স পাইয়া পিচ্চিপাচ্চি এনজিওগুলান সব একযোগে মাঠে ঝাপাইয়া পড়লো, দেশ গেলোরে....পরিবেশ গেলোরে...বইলা এক শোরগোল। কোকাকোলা আর পেপসির অবস্থা তখন ক্যামন একবার ভাইবা দেখ?
- নিশ্চিত নাকানি চুবানি অবস্থা?
- এক্কেবারে। ওদের মতোন গ্লোবাল কর্পরেশনের বিরুদ্ধে এরকম এলিগেশনের ইমপ্যাক্ট সারা দুনিয়াতে তাদের টোটাল সেল এর উপর পড়ে, নট অনলি ইন ইন্ডিয়া।
- এইবার তোমরা রিচ ব্যাপারটা বুঝলাম।
যার যত সাকরেদ, সে তত বাশ খাইব।
- আরেকটা কথা আছে এর মাঝে। বেশি সাকরেদ থাকলেও বাশের মাজেজা তত হইব না যদি, তারা অনেক বেশি প্রমিজ না করে।
- মাথার উপ্রে দিয়া গেলো।
- আমার কথাই ধর, আমার চুডু পোলাটার লগে আমার সকালে আর রাইতে দেখা হয়।
তারে আমি তেমন কোন প্রমিজ ও করি না। সে আমারে কিছু বললে আমি প্রমিজ না করে সেটা এনে দিই। এই যে প্রমিজ করলাম না, এটার কারনে সে কিন্তু তেমন আশা করে না।
আরেকটা সিচুয়েশন চিন্তা কর, জিলেট কয়, তারা তাদের লাইনে সেরা। তাদের শেভিং রেজারের বিজ্ঞাপন দিতে গিয়া তারা ব্লেডের গুনগান করে, স্মুদনেসের গুন গায়, ডুয়াল ব্লেড হাবি জাবি অনেক কিছুই কয়।
পাবলিক কিন্তু অত কিছু বুঝে না। শুধু ধইরা নেয় এইডা বহুত কামেল জিনিস, ব্যাপক কাজেরও জিনিস। যখন তারা কিন্তে যায় আর দেকে ব্লেডের দামই তিনশ, রেজারের দাম আরও বেশি, তখন তাদের আগের প্রিকনসেপশান জোরালো হয়- নিশ্চয় এইডা আমার দাড়ির এক্কেবারে গোড়া থেকইক্যা তুইল্লা নিয়া আইবো। কিন্তু বাসায় আইয়া যদি তার বহুত দামি জিলেট বাংলার বলাকা ব্লেডের মতোন বিহেইভ করে তখন সে জিলেটের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার কইরা ফেলবো। ব্র্যান্ডের প্রমিজ রক্ষা না করলে পাবলিক পিড়িতে ছ্যাকা খাওয়া পাঙ্কের মতোন বিহেভ করে।
সে অন্তত ২০জনরে বলবে, "সাবধান, জিলেট ভুলেও কিনিওনা। উহা অতিশয় বদ রেজার। কুনু কামের না। "
- থাম থাম....থিওরি বেশি হইয়া যাইতাছে। আমি একটা বটম লাইন টানার চেষ্টা দিই।
- দে।
- কাউরে বাশ দিতে হইলে তারে ব্র্যান্ড বানায়া দাও। এবং তারে সিডিউস করো অনেক বেশি বেশি প্রমিজ করার জইন্য। মানে তার ব্র্যান্ডটা যেন খুবই পাওয়ারফুল হয়। এবং ব্র্যান্ডের রিচ যেন খুব ভাল হয়।
এরপর সে যদি ফেইল করে, দ্যান একটা মোক্ষম বাম্বু...
- এক্কেবারে টু দ্যা পয়েন্ট।
- এই বুদ্ধিটারে তো আরো একজায়াগায় কাস্টমাইজ করন যায়।
- কোথায়?
- ধর, আমাগো দেশের পার্টিগুলার ব্র্যান্ড রিচ ভালই, তয় তারা তেমন প্রমিজ করে না। করলেও অনেক সুপারফিশিয়াল কথা কয়। আমরা যদি তাগো এই সব সুপারফিশিয়াল কথারে কনক্রিট বানাইতে পারি....আর তারা পরে এই সব বাস্তবে না করে...দ্যান অবস্থাটা একবার ভাইবা দেখ?
- হুম, তোর তো মাথা আমার থেইক্যা ও ভালা।
এইটা ভাল আইডিয়া। ওবামারে দেখ। হে চেইঞ্জ চেইঞ্জ কইরা মুখের পানি শুকাইয়া ফালাইছে। আর অহন মাঠে গিয়ে দেখে চেইঞ্জ এত্ত সহজে আসে না। এক হেলথ কেয়ার সিস্টেম রিফর্ম নিয়া তো সে যুদ্ধ করতাচে।
ইরাক থেইক্যা সৈন্য ফিরাইতে বহুত দিন লাগব। মাঝখান থেইক্যা তার সুপার হিরো ইমেজ বাশ খাইতাছে। তয় তোর বুদ্ধি খান কামে লাগবো।
- হুম। আলবত কামে লাগব।
কারন অলরেডি হাসিনা বুঝতাছে বেশি প্রতিশ্রুতি ভাল না। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিছিল কিন্তু বাস্তবে এসব করা সম্ভব না।
- আর তোর আইডিয়া'র কারনে আবার রেজাল্ট হিতে বিপরীত হইতে ও পারে।
- যেমন?
- এই ধর, আওয়ামী লীগ ডিজিটার বাংলাদেশের কথা কইছিলো, এখন তারা আসলেই কিছু স্টেপ নিতাছে যেগুলান দেশের টেকিরা অনেক আগে থেকেই কইতেছিল। হয়তো টার্মের শেষে সরকার পেপালরে বাংলাদেশে এক্সেস দিয়া যাইবো।
এই সব প্রমিজের কারনে দেশের কিন্তু উপকার হইতেছে।
- আরে..এরকম বিপরীতে আমার কুনু সমস্যা নাই।
- ঠিক তো?
- হ
- ল, তাইরে অহন প্লান করি, কেমতে আমরা দেশের পলিটিকাল পার্টিগুলানরে ব্র্যান্ডং এর আইডিয়া খাওয়ামু।
- এইডা টুওয়ে প্রসেস
- ঝাইড়া কাশো মামু।
- এক. পার্টিগুলানরে ডিরেক্টলি এপ্রোচ করতে হইবো।
দুই. জনগন যদি ব্রান্ডেড পার্টি গুলারে প্রফার করে দ্যান কাজটা এক্কেবারে ইজি।
- চল দোস্ত, তোরে আইজ খাওয়ামু। ব্যাপক সব আইডিয়া দিলি।
- ওহহ.... (বাকি অংশ সেন্সর বোর্ড আটকে দিছে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।