এই ব্লগের সব মৌলিক লেখার স্বত্ব লেখকের নিজস্ব। মৌলিক লেখা অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
সম্প্রতি একটা বিষয়ে খুব হৈ চৈ হচ্ছে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ৭২-এর মূল সংবিধানে অনতিবিলম্বে ফিরে যেতে হবে। মহামান্য, মহাপ্রাজ্ঞ হাইকোর্ট এবং সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টও এই ব্যাপারে রায় দিয়েছেন। ১৫ সদস্যের কমিটিও তৈরি করা হয়ে গেছে।
আমাদের মহামতি মন্ত্রীগণ বলছেন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় চেতনার ওপর একটা আঘাত। খুবই ভাল কথা। কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতে পারছিনা- সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে দেশ কিভাবে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবে?
পঞ্চম সংশোধনীর আগে তো আরো একটা সংশোধনী হয়েছিল। চতুর্থ সংশোধনী যেটি করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। আশ্চার্য্য জনক হলেও সত্যি এই ব্যাপারে আমাদের মান্যবর সংসদ সদস্যগন, মহামতি মন্ত্রীগণ ও রাশভারী নেতাগণ কেউই কোন কথা বলছেন না।
এতে আমি দেশের একজন স্বচেতন নাগরিক হিসেবে হতাশ এবং এই জাতির জনকের প্রতি এই চরম অবজ্ঞার পরিস্থিতিতে চুপ থাকতে পরিনা। সংবিধানের এই সংশোধনীটি এনেছিলেন জাতির পিতা নিজে এবং যেহেতু তিনি আমাদের জাতির পিতা ও বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, তিনি সকল ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে- তিনি যা বলেছেন, যা করেছেন, তা সবই আমাদের জাতির বৃহত্তর কলাণের স্বার্থেই করেছেন। তিনি কোন ভুল করতে পারেন না। আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক তথা ব্যক্তিগত জীবনে তার আদর্শকে বহন করে চলছি। তিনি যা করেছেন, আমরাও তা করছি, তিনি যা বলেছেন, আমরা তা অনুসরণ করছি।
সুতরাং তার সকল আদর্শের সঠিক অনুসরণের মধ্যেই আমাদের মু্ক্তি নিহিত রয়েছে।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যেহেতু আমরা আমরা তার আদর্শের অনুসরী বলে নিজেদের দাবী করছি, তাহলে কেন আমরা তার দেখানো পথ থেকে বিচ্যূত হবো? একদল দস্যু বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে অপসারন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে কবর দিয়ে পঞ্চম সংশোধণীর মাধ্যমে সংবিধানকে করেছে কলুষিত। এখন যেহেতু মহামান্য হাইকোরর্টের রায়ে উল্লেখিত সংশোধণীটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই সংবিধানের পূর্ববর্তী সংস্করণ তথা চতুর্থ সংশোধণীটি প্রযোজ্য হওয়ার কথা। অথচ আমাদের অতিপ্রিয় সরকারের কোন মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও নেত্রী কেউই এ ব্যাপারে কোন কথা বলছেনা।
কেন এই নির্লিপ্ততা?
জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি সম্মান রক্ষার্থে যেকোন মূল্যে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধণী বহাল করতে হবে। কোনভাবেই ৭২-এর মূল সংবিধানের ধোয়া তুলে জাতির জনকের প্রতি অসম্মান করে তথাকথিত ৭২-এর সংবিধানে ফেরত যাওয়া যাবেনা। জাতির জনক স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে তার স্ন্তাদের কল্যাণের জন্য ৭২-এর সংবিধানের পরিবর্তন করে পচাত্তুরে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধণীটি এনেছিলেন। কার স্বার্থে আমরা জাতির জনকের রেখে যাওয়া সংবিধানের প্রতি আমরা চরম অসম্মান করে তথাকথিত ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবো? জাতির জনক কি আমাদের চেয়ে কম বুঝতেন? তিনি যেটি আমাদের জন্য ভালো মনে করেছেন, আমরা কেন তার ব্যাত্যয় ঘটাব?
দেশের একজন নাদান নাগরিক হিসেবে আমি মনেকরি কোনভাবেই জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি অসম্মান করা যাবেনা । সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়া মানেই চতুর্থ সংশোধনীর বহাল হওয়ার কথা।
যেহেতু দেশের বর্তমান এমপি-মন্ত্রীগণ এই ব্যাপারে উদাসীন- সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতির জনকের এই চরম অসম্মানে আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদেরকে মুখ খুলতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে। প্রয়োজনে হরতাল দিতে হবে।
রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা, অফিস-আদালত সব অচল করে দিতে হবে। ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে- তবুও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনকের রেখে যাওয়া সংবিধান তথা তার স্মৃতির প্রতি কোন অসম্মান করা যাবেনা, ৭২-এর সংবিধানে ফেরত যাওয়ার নামে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা যাবেনা । যদি দেশে কোন সংবিধান থাকে সেটি থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের গড়া সংবিধান। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা সব এক হও। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আজ এই চরম অবজ্ঞার দিনে তোমরা নীরব থেকোনা, থাকতে পারনা।
তাই অনতিবিলম্বে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীটি বহাল করতে হবে এবং চতুর্থ সংশোধনীর ন্যায় নিন্মোক্ত বিষয় সমুহ নিশ্চিত করতে হবে:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা, মৌলিক অধিকার রক্ষার আশায় এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে । ৭২-এর সংবিধানে এই সকল বিষয়ের কোন কিছুই উল্লেখিত ছিলনা। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি অনুধাবন করে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের সকল অধিকার নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে পঞ্চম সংশোধীর মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের যেসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় তা বহাল করা হোক।
১. সংসদীয় সরকার পদ্ধতিকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে পরিবর্তন করতে হবে। ২. প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা থাকবে সংসদ সদস্য না হলেও যে কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ করার।
৩. এতে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হবেন। এই সংশোধনী অনুযায়ী ধরে নিতে হবে যে ঐদিন তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
৪. সংশোধনী অনুযায়ী ধরে নিতে হবে যে সংসদে যেসব সদস্য এখন সংসদে আছেন তারা সেদিনই জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন ও তারা তারপর ৫ বছর মেয়াদে থাকবেন।
৫. প্রেসিডেন্ট পদে থাকার কোনো নিদিষ্ট মেয়াদ থাকবেনা। এই সংশোধনী বলে তিনি যতকাল ইচ্ছা ততোকাল প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে পারবেন।
৬. সংশোধনীর আওতায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার কার্যপদ্ধতি থাকবে তথাপি;
৭. প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করার প্রস্তাবের জন্য সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতির প্রয়োজন হবে আর অভিশংসিত করতে হলে সংসদের তিন-চতুর্থাংশের ভোটের প্রয়োজন হবে।
৮. প্রেসিডেন্টকে নিরঙ্কুশ ভেটো দেয়ার ক্ষমতা থাকবে, অর্থাৎ সংসদে পাস করা কোনো বিলে যদি প্রেসিডেন্ট সম্মতি প্রদান না করেন তাহলে সে বিল কখনও আইনে পরিণত হবে না। আর সংসদ ঐ বিলটি পুনর্বিবেচনা করতে পারবে না।
৯. এই সংশোধনীর আওতায় একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ সৃষ্টি করা হোক।
১০. ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগদানের ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের হাতে।
১১. মন্ত্রী পরিষদকে প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
১২. মৌলিক অধিকার বলবৎ করার ব্যাপারে বিচার শাখার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। তার পরিবর্তে সংসদকে কর্তৃত্ব দেয়া হবে একটি সাংবিধানিক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য যা মৌলিক অধিকারগুলো বলবৎ করবে।
১৩. বিচার বিভাগ পেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
১৪. কেবল মাত্র প্রেসিডেন্টই সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের নিয়োগ করার একমাত্র কর্তৃপক্ষ থাকবেন।
১৫. প্রেসিডেন্ট বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করার ও তাদের স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণ করার ক্ষমতার অধিকারী হবেন।
১৭. বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে এক দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তিত হবে।
১৮. সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে দেয়া হবে ও তার স্থলে মাত্র একটি রাজনৈতিক দল (বাকশাল) দেশে থাকবে বলে নির্ধারণ করা হোক।
১৯. সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক করণ করে তাদের ও নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য করার ব্যবস্থা করা হোক।
২০. এই সংশোধনী বলে নতুন দল বাকশালের অনুমোদন ছাড়া কেউ প্রেসিডেন্ট বা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না এবং নতুন দলে যোগ না দিলে বর্তমান সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ হারাতে হবে বলে নির্ধারণ করা হোক।
২১. মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা দেওয়া জন্য রাষ্ট্র বাধ্য থাকবেনা।
২২. রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ৪ টি সংবাদপত্র ছাড়া সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হোক এবং সকল সংবাদ সংবাদপত্রের খবর রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে।
২৩. জেলার সংখ্যা ৬৫ টিতে উন্নীত করা হোক।
২৪. প্রতিটি জেলার মুখ্য প্রশাসন হবে একজন গভর্নর ও গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের হাতে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।