আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাপগল্প:অতল দৃশ্যে নির্বাসন (বিকেল বা শেষ পর্ব)

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)

পাপগল্প: অতল দৃশ্যে নির্বাসন (সকাল পর্ব) পাপগল্প: অতল দৃশ্যে নির্বাসন (দুপুর পর্ব) দুই. চোখে আলো লাগছে খুব। জ্বালা করছে। অনেক কসরত করে চোখ খুলে দেখি,রুপা পাশে বসে আছে। আমি একটা বেডে শুয়ে আছি। চারপাশ দেখে মনে হচ্ছে,ক্লিনিক।

রুপা কে জিজ্ঞেস করলাম,আমি এখানে কেন? তুই হাঁটতে হাঁটতে অজ্ঞান হয়ে গেছিস। আমি তো টাসকি!!পরে কয়েকটা লোকের সাহায্যে এখানে নিয়ে আসছি। রুপা বলতে লাগলো। ডাক্তার আংকেল একবার দেখেছেন। কিছু টেস্ট করেছেন।

রেজাল্ট এসে গেছে মনে হয়। আমি রুপার হড়বড় শুনছি। শোন,উনি কিন্তু আসলেই আমার আংকেল। তবে ভীষণ ফ্রি। উনি আবার আসবেন।

তোর সাথে কথা বলবেন। তোর বাসার নাম্বার চেয়েছিলেন। আমি আঁতকে উঠলাম। দিয়েছিস নাকি!!! না। আমি নিজেই তো জানি না।

হাঁফ ছাড়লাম। থাক,জানতে হবে না। সর। আমি উঠব। থাপড় খাবি।

শুয়ে থাক। আমি আংকেল কে ডেকে আনি। রুপা বেরিয়ে গেলো। আমি কি পালিয়ে যাব?না। রুপা কষ্ট পাবে।

ওকে কষ্ট দেয়ার কোন অধিকার আমার নেই। রুপার আংকেল হাসিমুখে ঢুকলেন। গমগম করে জিজ্ঞেস করলেন,কেমন আছো? আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। একজন হড়বড়,আরেকজন গমগম। রুপাফ্যামিলি মনে হয় হড়বড়-গমগম টাইপ ফ্যামিলি।

উনি রুপাকে পাশের রুমে গিয়ে বতে বললেন। রুপা বাধ্য মেয়ের মত চলে যাচ্ছে। আমি চাচ্ছি না সে চলে যাক। সে আমার হাত ধরে বসে থাকুক। আমি ওকে বলবো,রুপা,আমাদের বাচ্চার নাম হবে রুহি।

রু মানে রুপা,হি মানে হিমেল। ধুর!এসব কি ভাবছি আমি!!রুপার সাথে আমার বিয়ে হবে কেন?আমি কি ওকে ভালবেসে ফেলেছি?আমি ওকে ভালবাসবো কেন? আমি মনে মনে তিন বার বললাম, আমি রুপা কে ভালবাসি না। আমি রুপা কে ভালবাসি না। আমি রুপা কে ভালবাসি না। ডাক্তার আংকেল আমার নাড়ি ধরে দেখলেন।

চোখ টেনে,হা করিয়েও দেখলেন। আমার মজা লাগছে। উনি হা বন্ধ করতে বলেছেন। আমি করছি না। আচ্ছা,আমাদের তো অনেক দিবস আছে।

হাত ধোয়া দিবস। পা ধোয়া দিবস। একটা হা দিবস হলে কেমন হয়?সবাই সারাদিন হা করে থাকবে। এতে একটা লাভ হতো। কেউ কোন মিথ্যে বলতে পারতো।

হা দিবস হতো মিথ্যে মুক্ত। হা বন্ধ করতে হলো। উনি প্রশ্ন করছেন। কবে থেকে অজ্ঞান হওয়া শুরু করেছি জানতে চাচ্ছেন। বছর তিনেক।

আমি মিথ্যে বললাম। হা বন্ধ করা মাত্রই মিথ্যে। মাস টাকে বছর বানিয়ে ফেলেছি। উনি প্রেশার মাপতে মাপতে বললেন,হুটহাট অজ্ঞান? জ্বী না। বৃষ্টির মত।

টুপটাপ অজ্ঞান। উনি চোখ সরু করে ফেললেন। আমার সাথে ফাজলামি করবে না। ফাজলামি আমি সহ্য করতে পারি না। জ্বী আচ্ছা।

আর করবো না। উনি হাসলেন। আমি শিউরে উঠলাম। উনার সামনের দুটো দাঁত নেই। মনে হয় কেউ ঘুষি মেরে ভেঙে দিয়েছে।

শোনো,তোমার সমস্যা হলো,টেনশান। কোন কিছু নিয়ে তুমি কি খুব আপসেট? আমি মাথা দোলালাম। না তো!!! উনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন কিনা বুঝলাম না। ফিজিক্যালি ঠিক আছো তুমি। টেনশান টা কমালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

আর,সিগারেট টা কমাও। মুখের ভেতর কালো কালো দাগে ভরে গেছে। চা খাবে?সবুজ চা। আমার ছেলে সিলেট থেকে পাঠিয়েছে। আমি হাসলাম।

আপনি কি সবাই কে আপনার ছেলের পাঠানো সবুজ চা খাওয়ান? তুমি খাবে কি না বল। ফ্লাস্কে করে গরম পানি নিয়ে আসি আমি। জ্বী না। ইচ্ছে করছে না। উনি একটু আহত হলেন মনে হচ্ছে।

ঠিক আছে,শুয়ে থাকো। আমি রুপার সাথে কথা বলবো। ডাক্তার আংকেল পাশের রুমে রুপার সাথে কথা বলছেন। গমগম কথা গুলো আমি এখান থেকেই শুনতে পাচ্ছি। রুপা শোন।

তোর ফ্রেন্ডের ফিজিক্যাল কন্ডিশান ভালো না হলেও উদ্বিগ্ন হবার মত না। কিন্তু মেন্টাল কন্ডিশান খুবই খারাপ। ব্লাডে সুগারও বেড়েছে। মোট কথা,ওর বেশী দরকার,কম্পানী। অলটাইম।

রুপার কোন সাড়া পাচ্ছি না। ওর কি লাইফে কোন চেন্জ এসেছে?ধর কোন অ্যাক্সিডেন্ট? হ্যাঁ। একটা মেয়ে কে ভালোবাসতো খুব। মেয়েটা অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। রুপা বললো।

ডাক্তার আংকেলের গলায় গমগম ভাব কমে এসেছে। এটাই কারণ। মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছে। কোন প্রেশার নিতে পারছে না। ডাক্তার আংকেল আবার বললেন,রুপা তোকে সরাসরি একটা জিজ্ঞেস করি,ছেলেটা কি তোকে ভালোবাসে? আমি জানি না।

রুপা আস্তে জবাব দেয়। তুই? একবার মনে হয়,হ্যাঁ। একবার মনে হয়,না। শোন,না হলে এই ছেলে থেকে দুরে থাকবি। আর হ্যাঁ হলে তুই এক কাজ করতে পারিস।

ওকে বিয়ে করে ফেল। ছেলেটাকে খারাপ মনে হয় নি। আমি তোর বাবা কে ম্যানেজ করবো। রুপা খুব আস্তে আস্তে বললো,একটু সমস্যা আছে আংকেল। ও এসবে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

আর ও মুসলমান। আমার হাসি পেলো খুব। ডাক্তার আংকেল কথা বলছেন না। উনি মনে হয় ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেছেন। মুসলমান ছেলে আর হিন্দু মেয়ে,উনার সমীকরণ মিলছে না।

মিলবেও না। ধর্ম হয়তো ওনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমাকে কিছু দেয় নি। তাই আমার সমীকরণ খুব সহজেই মিলে যায়। যারা ধর্ম কে অস্বীকার করে,কোরানের কসম দিয়ে মিথ্যে বলে আল্লাহ তাদের কেই সুখী করেন।

রুপা কি কাঁদছে এখন?ও কি আমাকে ভালোবাসে? মাথাব্যথাটা আবার বাড়ছে। চোখে অন্ধকার দেখছি। ঘুমঘুম লাগছে। হারিয়ে যাচ্ছি গভীরে। আবছামত স্বপ্ন দেখছি এখন।

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম আমি। খাটের উপর রুপা বসে আছে। মাথায় ঘোমটা। ঘোমটা মাথায় বসে থাকার কারণটা বোঝা যাচ্ছে। খাটে রাশি রাশি ফুল ছড়িয়ে আছে।

রুপার পরনে কালো একটা শাড়ি। কালো সুতার কাজ করা। ওকে দেখে মনে হচ্ছে,রাশি রাশি ফুলের মাঝখানে একটা বড়সড় কালো গোলাপ ফুটে আছে। আমি রুপার পাশে বসলাম। আলগোছে ঘোমটা তুলতেই আমি চমকে উঠলাম।

রুপা নয়। যে বসে আছে তাকে চিনি নিজের চেয়েও বেশী। সেই চেনা ছল ছল চোখ। কপাল। নাক।

ঠোঁট। চুল। সে আমার চোখে চোখ রেখে বললো,শেভ করো নি কেন?শেভ করে আসো। দাঁড়ির খোঁচায় আমার মুখের চামড়া উঠে যাক তা চাই না। আমি অবাক।

ঢোক গিলতেও ভুলে গেছি। একটা ঢোক গেলা দরকার। গলা শুকিয়ে গেছে। সে আবার বললো,হা করে আছো কেন?আমাকে এখনো ক্ষমা করতে পারো নি এখনো,তাই না?যাও শেভ করে আসো। আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।

সে হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি আর তাকে দেখতে পাচ্ছি না। আরো গভীর কোন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি। তলিয়ে যাচ্ছি অন্ধ কূপে।

বহুদূর থেকে একটা কান্নার সুর ভেসে আসছে। আমি এই কান্না টাকে চিনি। রুপা কাঁদছে। রুপা কাঁদবে কেন?রুপার কি কোন সমস্যা হয়েছে? আমি চোখ মেলতে চাচ্ছি। পারছি না।

রুপার কান্নার সাথে আর একটা সুর মিশেছে। চেনা সুর। তোমার এই....তোমার এই...হার্স ভয়েজ.......... আমার মনে হচ্ছে,এদুটো সুরে মাঝে ডুবে যাচ্ছি। হঠাৎ সুর থেমে গেলো। আমি তাকিয়ে দেখি,সামনে দুটো বাচ্চা।

কোমল চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। আমি ওদের নাম জানি। একজন অঙ্ক,আরেক জন শঙ্খ। আমি হাত বাড়ালাম। ওরা আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।

বুকের ভেতর চেপে ধরলাম। ওদের উষ্ণতা টের পাচ্ছি। চোখ জলে ভরে উঠছে। ওদের কে বুকে নিয়ে সামনে তাকালাম। সাগর।

দুগ্ধসাগর। সাদা সাদা ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আমি,অঙ্ক,শঙ্খ...আমাদের তিনজোড়া চোখ সেই ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। {সমাপ্ত}

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।