আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজব সাজা ( লেখক --সুকুমার রায় । সন্দীপ রায়ের পিতামহ )

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

পিতার লেখাঃ-- Click This Link "পন্ডিত মশাই , ভোলা আমায় ভ্যাংচাচ্ছে । " " না , পন্ডিতমশাই , আমি কান চুলকোচ্ছিলাম তাই মুখ বাঁকা দেখাচ্ছিল । " পন্ডিতমশাই চোখ না খুলিয়াই অত্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলিলেন , "আঃ ! কেবল বাঁদরামি ! দাড়িয়ে থাক। " আধ মিনিট পর্যন্ত সব চুপচাপ । তার পরই আবার শোনা গেল , "দাঁড়াচ্ছিস না যে ?" "আমি দাঁড়াব কেন ? তোকেই তো দাঁড়াতে বলল ।

" "যাঃ আমায় বলেছে না আর কিছু ! গনশাকে জিজ্ঞেস কর । কিরে গন। শা , ওকে দাঁড়াতে বলেছে না ?" গনেশের বুদ্ধি কিছুটা মোটা , সে আস্তে আস্তে উঠিয়া গিয়া পন্ডিত মহাশয়কে ডাকিতে লাগিল , " পন্ডিতমশাই , ও পন্ডিতমশাই !" পন্ডিতমশাই বিরক্ত হইয়া বলিলেন , " কি বলছিস , বল-না । " গনেশচন্দ্র ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞেস করিল , " কাকে দাঁড়াতে বলেছেন পন্ডিতমশাই ?" পন্ডিতমশাই একমূহুর্ত কট্ মটে চোখ মেলিয়াই সাংঘাতিক ধমক দিয়া বলিলেন , " তোকে বলেছি , দাঁড়া !" বলিয়াই আবার চোখ বুজিলেন । গনেশচন্দ্র দাঁড়াইয়া রহিল ।

আবার মিনিটখানেক সব চুপচাপ । হঠাৎ ভোলা বলিল , " ওকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেছিল না ভাই ?" গনেশ বলিল , "কক্ষনো না , খালি দাঁড়া বলেছে । " বিশু বলিল , " এক আঙুল তুলে দেখিয়েছিল , তার মানেই এক পায়ে দাঁড়া । " পন্ডিতমশাই যে ধমক দেবার সময় তর্জনী তুলিয়াছিলেন একথা গনেশ অস্বীকার করিতে পারিল না । বিশু আর ভোলা জেদ করিতে লাগিল , শিগগীর এক পায়ে দাঁড়া বলছি , তা না হলে এক্ষুনি বলে দিচ্ছি ।

" গনেশ বেচারা ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি এক পা তুলিয়া দাঁড়াইয়া রহিল । অমনি ভোলা আর বিশুর মধ্যে তুমুল তর্ক বাধিয়া গেল । এ বলে ডান পায়ে দাড়ানো উচিৎ , ও বলে , না , আগে বাঁ পা । গনেশের মহা মুশকিল । সে আবার পন্ডিতমশাইকে জিজ্ঞাসা করিতে গেল , " পন্ডিতমশাই , কোন্ পা ?" পন্ডিতমশাই তখন কি যেন একটা স্বপ্ন দেখিয়া অবাক হইয়া নাক ডাকিতেছিলেন ।

গনেশের ডাকে হঠাৎ তন্দ্রা ছুটিয়া যাওয়ায় সাংঘাতিক রকম বিষম খাইয়া ফেলিলেন । গনেশ বেচারা তাহার প্রশ্নের এরকম জবাব একেবারেই কল্পনা করে নাই , সে অত্যন্ত ভয় পাইয়া বলিল , " ঐ যা , কি হবে ?" ভোলা বলিল , " দৌড়ে জল নিয়ে আয় । " বিশু বলিল . " শিগগীর মাথায় জল দে । " গনেশ এক দৌড়ে কোথা হইতে একটা কিঁজা আনিয়া ঢক্ঢক করিয়া পন্ডিতমশাইয়ের টাকের উপর জল ঢালিতে লিগিল । পন্ডিতমশায়ের বিষম খাওয়া খুব চটপট থামিয়া গেল , কিন্তু তাহার মুখ দেখিয়া গনেশের হাতে জলের কুঁজো ঠকঠক করিয়া কাঁপিতে লাগিল ।

ভয়ে সকলেই গম্ভীর হইয়া রহিল , খালি শ্যামলাল বেচারার মুখটাই কেমন যেন আহ্লাদীগোছের হাসি-হাসি মতন , সে কিছুতেই গম্ভীর হইতে পারিল না । পন্ডিতমশাইয়ের রাগ হঠাৎ তাহার ইপর ঠিকরাইয়া পড়িল । তিনি বাঘের মতন গুমগুমে গলায় বলিলেন , "উঠে আয় !" শ্যামলাল ভয়ে কাঁদ-কাঁদ হইয়া বলিল , "আমি কি করলাম ? গনশা জল ঢালল , তা আমার দোষ কি ?" পন্ডিতমশাই মানুষ ভাল , তিনি শ্যামলালকে ছাড়িয়া গনশার দিকে তাকাইয়া দেখেন তাহার হাতে তখনো জলের কুঁজো। গনেশ কোন প্রশ্নের অপেক্ষা না করিয়াই বলিয়া ফেলিল , "ভোলা আমাকে বলেছিল । " ভোলা বলিল , " আমি তো খালি জল আনতে বলেছিলাম ।

বিশু বলছিল , মাথায় ঢেলে দে । " বিশু বলিল , " আমি কি পন্ডিতমশায়ের মাথায় দিতে বলেছি ? ওর নিজের মাথায় দেওয়া উচিৎ ছিল , তা হলে বুদ্ধিটা ঠান্ডা হোত । " পন্ডিতমশাই খানিকক্ষন কট্ মট্ করিয়া সকলের দিকে তাকাইয়া তারপর বলালেন , " যা! তোরা ছেলেমানুষ, তাই কিছু বললাম না । খবরদার আর অমন করিস নে । " সকলে হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিল , কিন্তু পন্ডিতমশাই কেন যে হঠাৎ নরম হইয়া গেলেন কেহই তাহা বুঝিল না ।

পন্ডিতমশাইয়ের মনে হঠাৎ যে তাঁর নিজের ছেলেবেলার কোন দুষ্টুমির কথা মনে পড়িয়া গেল , তাহা কেবল তিনিই জানেন । [ এ গল্প যখন প্রথম পড়েছি অনেক বার পদক্ষেপ নিয়ে শেষে পড়তে পেরেছি ; হাসির দমকে থামতে হয়েছে ঘনঘন ] (সুকুমার রায় ; ৩০.১০.১৮৮৭ --১০.০৯.১৯২৩ , জন্মস্থান -কোলকাতা । উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র । সত্যজিত রায়ের পিতা , সন্দীপ রায়ের পিতা মহ । )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।