সিরিয়ায় আজ সামরিক হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চলবে তিন দিন। হামলাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে মার্কিন রণতরীসহ পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সমরোপকরণ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন সরকার ও তার মিত্র দেশগুলো হামলার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনকারীদের ওপর সিরীয় সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারই এ হামলার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও ইরান। সেখানে বাইরের কোনো শক্তি হামলা চালালে এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশগুলো। অন্যদিকে সিরিয়া বলেছে, আক্রান্ত হলে তা প্রতিহত করা হবে যে কোনো উপায়ে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রেডিও তেহরানের।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুক্রবার (আজ) রাতে চালানো হতে পারে। সিরিয়া প্রসঙ্গে আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার পরপরই এ হামলা চালানো হবে বলে জানা গেছে। মার্কিন টিভি চ্যানেল ফঙ্ নিউজের বরাত দিয়ে ভয়েস অব রাশিয়া এ খবর দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, হামলায় নেতৃত্ব দেবে মার্কিন নৌবাহিনী। এর স্থায়িত্ব খুব বেশি সময় হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা মনে করে, সিরিয়াকে দমানোর জন্য কয়েক দিন নয় বরং কয়েক ঘণ্টার সামরিক হামলাই যথেষ্ট। এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজসহ প্রয়োজনীয় সমরোপকরণ। একই সঙ্গে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর চারটি ডেস্ট্রয়ার এবং অন্তত একটি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ। সিরিয়ায় সেনা অভিযানের বিষয়টি পার্লামেন্ট অনুমোদন করলে ব্রিটিশ একটি ডুবোজাহাজও হামলায় অংশ নিতে পারে। মার্কিন নৌবাহিনীর প্রতিটি ডেস্ট্রয়ার একসঙ্গে ৯০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে।
এর প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে খরচ হবে সাড়ে ছয় লাখ মার্কিন ডলার। যেহেতু টোমহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ক্ষেত্রে আবহাওয়া বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তাই এমন সিদ্ধান্ত। সূত্র জানায়, দূরপাল্লার স্টিলথ বোমারু বিমানসহ মার্কিন বিমানবাহিনীর অস্ত্রও ব্যবহার করা হবে হামলায়। সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাগালের বাইরে অবস্থান করে সাগর থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চালানো হতে পারে এ হামলা। সিরিয়ার দৃষ্টিগ্রাহ্য লক্ষ্যবস্তু-যেমন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার বা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা অস্ত্রঘাঁটি হতে পারে এ হামলার লক্ষ্য।
এদিকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের জরুরি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। আর এ বৈঠকের আগে কোনোভাবেই হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সেনারা এখন অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশের। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, সিরিয়ায় হামলার জন্য তাদের বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বিবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন মার্কিন সেনারা।
তারা সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জায়গামতো রেখেছি। প্রেসিডেন্ট যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবে যেন অভিযান চালানো যায় তেমন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছি আমরা। প্রেসিডেন্টের নির্দেশ পেলেই মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী শুরু করবে হামলা। ' আর হামলা শুরু হলে তা হবে সিরিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিগুলোর এই প্রথম সবচেয়ে আক্রমণাত্দক অভিযান।
সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'জঘন্য রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য কে দায়ী, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য সিরিয়ার সরকারই দায়ী। ' ওবামা প্রশাসনের সবেচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তি জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'নিরস্ত্র মানুষের ওপর যারাই হামলা চালিয়েছে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুথি হতে হবে তাদের। 'হোয়াইট হাউসের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব সামরিক বিকল্প বিবেচনা করা হচ্ছে, তা শুধু এক দিনেই শেষ হবে যাবে এমন নয়।
বরং যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা পরিচালিত হবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কথা মাথায় রেখেই। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব দেশ এতে (সিরিয়ার পক্ষে) জড়িত হবে, তাদের এর সম্ভাব্য পরিণতির কথা ভেবে নিতে হবে আগেই। এদিকে সিরিয়া সংকটে ব্রিটেনের ভূমিকা কী হবে সে প্রসঙ্গে ভোটাভুটির জন্য দেশটির পার্লামেন্টে ডাকা হয়েছে বিশেষ অধিবেশন। সিরিয়ার বিষয়ে সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, দেশের মানুষের ওপর সিরীয় সরকার রাসায়নিক হামলা চালানোর পর আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় চুপ করে থাকতে পারে না।
অন্যদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, দামেস্কের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলে তারা ও তাদের মিত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চালাবে একই ধরনের হামলা সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এফএনএকে বলেন, দামেস্ক আক্রান্ত হলে তেল আবিবও হামলার লক্ষ্যবস্তুর বাইরে থাকবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা এই মর্মে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সিরিয়া আক্রান্ত হলে ইহুদিবাদী ইসরায়েলকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। আর আমাদের প্রতিবেশীরাও অংশ নেবে ওই হামলায়। সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানও সম্ভাব্য মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে একই ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে তাতে হয়তো বিষয়টি শুধু সিরিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে পুরো অঞ্চলকে।
অন্যতম বিশ্ব পরাশক্তি রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ায় শক্তি প্রয়োগ ওই অঞ্চলের জন্য ডেকে আনবে 'বিপর্যয়কর পরিণতি'। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়াল্লেম বলেছেন, তার দেশ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তারা যে কোনোভাবে প্রতিহত করবেন তারা। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বর্ণনা করে দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধীদের অভিযোগ, ২১ আগস্ট রাজধানী দামেস্কের অদূরে দেশটির সেনাবাহিনী রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছে। এতে শিশুসহ সহস্রাধিক ব্যক্তি নিহত হন আর আহত হন পাঁচ হাজারের বেশি।
তবে দেশটির সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এ অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সত্যি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে জাতিসংঘের ২০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল সিরিয়া সফরে গিয়েছে। - See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/08/29/13237#sthash.WXvjI1Y7.dpuf
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।