নাড়ি ছায়া , জাগি স্বপ্নের আভায়
কামাল চৌধুরীর কবিতা
১০ জানুয়ারি ১৯৭২
.............................
যেদিন তিনি ফিরে আসলেন, সেদিন
শীতার্ত আলো হাওয়ার মধ্যে ঋতু বদল হলো স্বদেশের
ঝরাপাতায় জেগে উঠল বসন্ত
শাখায় শাখায় ফুটে উঠল পাতা
লক্ষ কোটি মানুষের উল্লাসের মধ্যে সূর্যোদয় হলো
স্তব্ধতার মধ্যে বেজে উঠল সুর
অসংখ্য পাখির গানে মুখরিত হলো শঙ্কিত আকাশ।
তিনি ফিরে আসলেন, তখনও এই মাটি রক্তে ভেজা
চতুর্দিকে শোক, আহাজারি, ধ্বংসচিহ্ন, পোড়াগ্রাম, বিধ্বস্ত, জনপদ
তিনি ফিরে আসলেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতর ফুটে উঠল কৃষ্ণচূড়া
মুকুলিত হলো অপেক্ষার শিমুল
শোক থেকে জেগে উঠল স্বপ্ন, রক্তে বাজল দারুণ দামামা
বেদনার অশ্রুরেখা মুছে ফেলে
'জয় বাংলা, জয় বাংলা' বলে হেসে উঠল
লতাগুল্ম, ধূলিকণা, পরিপূর্ণ দীপ্ত পতাকা।
তখন আমাদের নদীগুলো আর নদী থাকল না
তারা হয়ে উঠল অবগাহনের ঝর্ণা
সমুদ্র আর নিস্তব্ধ থাকল না, ঢেউ দিল আদিগন্ত জলরাশি
বিশাল তিমির পিঠে তারা নিয়ে এলো শুভেচ্ছার ফুল
অরণ্য হয়ে উঠল মুগ্ধ সবুজ, পাহাড়ের চূড়া থেকে
হেঁটে আসল সাদা মেঘ
আমাদের শস্যক্ষেত, আমাদের দরিদ্র গ্রাম,
আমাদের শোক বিহ্বল বাড়ির ওপরে
শ্রমিকের শীর্ণ পেশি, কৃষকের শুষ্ক দু'হাতে
শিশু কোলে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাম-বধূর বিস্মিত চোখের মণিতে
সন্তানের অপেক্ষায় বসে থাকা জননীর শোকার্ত মুখের রেখায়
পথে পথে পড়ে থাকা স্বজনের অচেনা করোটির ওপর
উড়তে থাকল সাদা মেঘ, শুভ্র ডানার সব শান্তি কবুতর।
তখন সারা বাংলায় অপেক্ষায় অধীর মানুষ
প্রতিটি হৃদয় স্পন্দিত বজ্রকণ্ঠে
পিতার জন্য অপেক্ষা করছে সন্তান
বন্ধুর জন্য ভাই
নেতার জন্য মুগ্ধ অনুসারী
জনকের জন্য আবহমান এক দেশ।
তিনি আসলেন-মৃত্যুপুরী থেকে জেগে উঠল দেশ
মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেল থেকে আতশবাজির মতো
ফুটতে থাকল উল্লাসের বুলেটবৃষ্টি
বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত প্রতিটি সড়ক
ভরে উঠল ভালোবাসার ফুলে
বাতাসে ধ্বনিত হলো 'স্বাগতম'-চতুর্দিকে উৎসব, চতুর্দিকে আনন্দ
চতুর্দিকে স্বাধীনতা।
তিনি ফিরে আসলেন
অগণিত মানুষের আনন্দ অশ্রু-জলে ভাসতে ভাসতে বললেন
দ্যাখো, আমি মরি নাই
তোমাদের ভালোবাসা আজ আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।