এতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থহানী হয়েছে মন্তব্য করে ওবামা বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়েঅজন বলে তিনি মনে করছেন।
অবশ্য সিরিয়ায় ঠিক কখন সামরিক অভিযান চালানো হবে- তা এখনো ঠিক করেননি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিসকে (পিবিএস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ওবামা।
বুধবার রাতে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, হামলার ধরন দেখে মনে হয় না যে বিদ্রোহীরা এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সরকারি বাহিনীই ওই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আর এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই ভূমিকা রাখা উচিত।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর মধ্যে টানাপড়েনের মধ্যেই ওবামার এই বক্তব্য এলো।
গত সপ্তাহে গ্যাস বোমা ব্যবহার করে কয়েকশ লোককে হত্যার জন্য সিরিয়া সরকারকে দায়ী করে বুধবার জাতিসংঘে এই প্রস্তাব তোলে ব্রিটেন।
বেসামরিক সিরীয়দের রক্ষার জন্য ‘প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।
কিন্তু সিরিয়ার বাশার সরকারের মিত্র রাশিয়া তাতে আপত্তি জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লেভরভ বলেছেন, সিরিয়ায় জাতিসংঘের যে অস্ত্র পরিদর্শকদের প্রতিবেদন না দেখেই এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
সিরিয়ার পরিদর্শকদের কাজ শেষ হতে দিন চারেক লাগতে পারে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ মনে করছেন, জাতিসংঘে ঐকমত্য না হলেও সিরিয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার দায় রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
অবশ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টেই সিরিয়ায় সামরিক অভিয়ান চালানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রস্তাব বাধার মুখে পড়েছে।
বিষয়টি ভোটের তোলার উদ্যোগ নিলেও লেবার পার্টির বিরোধিতার হুমকিতে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান ক্যামেরন। এ নিয়ে আবারো ভোটাভুটি হবে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সামরিক অভিযান নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই হাঁকডাকের জেবাবে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়াল্লেম বলেছেন, আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ গড়বে তার দেশ।
দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেও বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।
এদিকে সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সিরিয়াবাসীর মধ্যে।
হামলা শুরু হলে খাবারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে- এই আশঙ্কায় রুটি, শুকনো খাবার ও ফলমূল কিনে রাখছেন অনেকে। অনেককে পানিও কিনে রাখতে দেখা গেছে।
দামেস্কের বাসিন্দা রুলা রয়টার্সকে বলেন, “গৃহযুদ্ধের কারণে শহরের মানুষ অনেকদিন ধরেই খাবার সংরক্ষণ করে রাখছিল। এখন বড় ধরনের অভিযানের আশঙ্কায় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খাবার সংরক্ষণ শুরু করেছে। ”
রয়টার্স জানিয়েছে, দামেস্ক ও এর আশপাশের শহরের ব্যাংকগুলোতেও বুধবার মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেককে দেখা গেছে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।
যুদ্ধের আশঙ্কার ছাপ এখন দামেস্কের সর্বত্র।
তবে এর মাঝেও প্রেসিডেন্ট আসাদ সমর্থক একদলকে ভয় কাটাতে উঁচু আওয়াজে দেশাত্মবোধক গান বাজাতে দেখা গেছে।
প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থকরা পিকআপে লাউড স্পিকার বসিয়ে, পতাকা উড়িয়ে রাজপথে টহল দিচ্ছে।
দামেস্কের পাশাপাশি অন্য শহরেও শঙ্কায় রয়েছেন বাসিনস্দারা। হুমে, জুমরিয়া, কাদসিয়াতে লোকজন নিজেদের বাসাবাড়ি ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে বাসাভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছেন।
সম্ভাব্য পশ্চিমা আক্রমণ থেকে বাঁচতে দামেস্কের ঘাঁটি থেকে আসাদ বাহিনী তাদের সেনাদেরকে সরিয়ে নিচ্ছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্রোহীরা দাবি করেছে।
সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত ট্রেইলার ট্রাক দিয়ে যুদ্ধের সরঞ্জাম নতুন গন্তব্যের দিকে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
সিরিয়ায় সম্ভাব্য যুদ্ধের আগে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ইসরাইল।
পাশের আরেক দেশ তুরস্কও পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনীয় সব প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়েছে।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগলু বলেন, “আমরা এখন আরো সতর্ক অবস্থানে আছি। নিরাপত্তার প্রয়োজনে যা করা দরকার, তুরস্ক সবই করতে প্রস্তুত।
”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।