এটি ছিলো আমাদের দশম সূর্য উৎসব। এর আগে আমরা সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, নিঝুম দ্বীপ, কেওক্রাডাং, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, বিরিশিরি, রাঙামাটির পাবলাখালীসহ অন্য জায়গাগুলোতে গিয়েছিলাম। এবার আমাদের গন্তব্য সুন্দরবনের কটকা। এটি দ্বিতীয়বারের মত সুন্দরবনে সূর্য উৎসব আর আমার তৃতীয়বার সুন্দরবন যাওয়া। ২৮ তারিখ পৈ পৈ করে সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে- সূর্য উৎসব কোনো প্লেজার ট্রিপ নয়।
এতে অংশ নেয়া সবাইকে ম্যালা কষ্ট করতে হবে। থাকা, খাওয়া, বাথরুম সব কিছুতেই কষ্ট। আসলে আমরা একটু বাড়িয়েই বলি। পারতপক্ষে কাউকেই তেমন কষ্ট করতে হয়না। তবুও বলে নেই, যাতে সমস্যা-টমস্যা হলে কেউ কোনো অভিযোগ করতে না পারে।
এবারে সেভাবেই বলা হয়েছে। সবাই একমত হয়ে কবেই তার যাওয়া নিশ্চিত করেছে।
৩০ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় লঞ্চ ছাড়ার কথা । সদরঘাট থেকে আমাদের নিয়ে পারাবত- ১ ভেঁপু বাজালো দুপুর ২.১০ মিনিটে। যথারীতি শেষ সময়ে এটা সেটা কেনা, অনেকের না এসে পৌঁছানো, নতুন করে কারো কারো আমাদের সফরসঙ্গী হওয়া...।
যাই হোক, জাহাজ ছাড়ার পরই সবাইকে তার কেবিনের চাবি (যদিও বলা ছিলো- শিশু এবং বৃদ্ধদের শুধু কেবিন দেয়ার পর কেবিন বাকী থাকলে অন্যদের দেয়া হবে) দিয়ে দেয়া হলো। খাবারে ক্ষানিকটা বিলম্ব হবে, সেজন্য সবাইকে মুড়ি-চানাচুর মাখা দেয়া হলো। আমরা যে যার কাজে নেমে পড়লাম।
জাহাজ চালাবার সার্বিক দায়িত্ব দেখবেন- মিলন ভাই।
মুড়ি-চানাচুরের দায়িত্ব- শিবলী।
আমাদের ১১ বেলা খাবারের দায়িত্ব - জুয়েল।
জাহাজ সাজানো, বাচ্চাদের ছবি আঁকা দেখবেন- রাশেদ, রিয়াজ।
গান-বাজনা-প্রজেকটর এসব দেখবে - শাওন।
রেফেল ড্র, কুইজ, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদি দেখবো- আমি আর নওরোজ।
বিভিন্ন রঙ্গের ১০০ গজের একটি বিশাল পতাকা (যার মধ্যে আবার কন্টকীর বিশাল মুখোশ আঁকা রয়েছে) জাহাজের উপরে টানিয়ে দেয়া হলো।
সবার সহযোগিতা নিয়ে বিশাল পতাকাবাহী বাঁশটিকে জাহাজের সামনের দিকে দাঁড় করিয়ে দেন রাশেদ আর রিয়াজ। সবাই বেশ আনন্দের মুডেই আছে। ছাদে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে ঢাকাকে। মোটামুটি বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ দুপুরের খাবার দিয়ে দেয়া হলো। খাবার খেয়ে বেশিরভাগই ছাদে ইঠে গেলো।
নিচে গান চলছে। উপরে আড্ডা আর ছবি তোলা। আমাদের সাথে যাচ্ছেন- বাংলাভিশন, বৈশাখী আর দেশটিভির বন্ধুরা। এছাড়াও আছেন- বিডি নিউজ ২৪.কম, ইত্তেফাক, ডেইলি স্টার, যুগান্তরসহ কয়েকটি প্রিন্টিং মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এছাড়াও প্রায় সবার কাছেই রয়েছে ডিজিটাল ক্যামেরা।
আস্তে আস্তে সূর্য ডুবে গেলো। তীব্র শীত। আমরা সবাই ছাদ থেকে নেমে এলাম নিচে।
আমাদের লঞ্চ চাঁদপুর পেরিয়ে যাবার পর জানা গেলো- এ জাহাজের চালক (যাকে সুকানী বলা হয়) জীবনেও সুন্দরবন এলাকায় যায়নি। তবে টেনশন নেই, মংলা থেকে পাইলট (যে রাস্তা চিনিয়ে নেয়) নিয়ে নেয়া হবে।
ঢাকা থেকে নেননি ক্যানো ? কোনো জবাব নেই। মাথার চুল ছিঁড়ে আর কমাতে চাইনি। সিগারেট খাওয়ার পরিমান বেড়ে গেলো আমাদের কয়েকজনের। অন্যরা কিছুই জানেনা। সারারাত চালিয়ে সকাল ১০ টায় মংলায় থামলাম।
ঘন্টাখানেক থামার পর জাহাজের মাস্টার এসে বললো- সব ঠিকাছে। জাহাজ ছাড়বে কিনা ? বললাম- ছাড়তে। জাহাজ চলছে...। আমাদের রুট ছিলো- ঢাকা থেকে শরণখোলা- রায়েন্দা হয়ে কটকা। অথচ এখন অন্তত ১০ ঘন্টার রাস্তা ঘুরে যাচ্ছি আমরা।
সন্ধ্যা নাগাদ আর কোনো অঘটন ছাড়াই পৌঁছলাম হিরন পয়েন্ট। সেখানে ২০০৯ সালের শেষ সুর্যাস্তটা দেখলাম। জাহাজের গাইড জানালো- রাতটা এখানে কাটাতে পারি। আবার ঘন্টাখানেক দুরের কটকাতেও কাটাতে পারি। যেহেতু আমাদের গন্তব্য কটকা, সকালে আমরা মাটিতে নামবো, নতুন সূর্যকে বরণ করে নেবো, বেশ কিছু ইভেন্ট আছে- তাই সিদ্ধান্ত হলো কটকাতেই রাত কাটাবো।
কটকার কাছাকাছি যেয়ে জাহাজ নোঙ্গর করা হলো।
আজ ৩১ ডিসেম্বর। ১০টার মধ্যে রাতের খাবার দিয়ে দেয়া হলো। মাইকে গান বাজছে। আমাদের রাতের প্রোগ্রামের প্রস্তুতি চলছে।
প্রথম প্রহরে আমরা মঙ্গল দ্বীপ জ্বালিয়ে নদীতে নামাবো। মাটির সরাতে রঙ্গীন কাগজ দিয়ে তার ভেতরে ছোট পিদিম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৫০ টি মঙ্গল দ্বীপ ভাসিয়ে দেব। আর এ কাজটিতে নের্তৃত্ব দেবেন আমাদের এ উৎসবের প্রধান অতিথি, আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান। প্রচন্ড বাতাস আর ভয়ঙ্কর সব ঢেউয়ের মাঝেও আমরা আমাদের মঙ্গল দ্বীপগুলো ভাসিয়ে দিলাম নদীতে।
এরপর খালি গান, নাচা, মাস্তি আর লুকিয়ে লুকিয়ে তরল খাওয়া......। সবাইকে বলে দেয়া হলো- সকাল ৬ টায় রিপোর্ট করার জন্য । ৭ টায় আমরা মাটিতে নামবো।
চলবে....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।