মন খুলে কথা বলুন....
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এমনকি এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব অবস্থা ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ তথ্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী। আন্তর্জাতিক এই শিক্ষাবিদ গতকাল রোববার এশিয়াটিক সোসাইটির ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বক্তৃতায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
বক্তৃতায় অধ্যাপক গওহর বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচি তৈরি, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং গবেষণাধর্মী কাজ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারি অনুদানের বাইরে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
গওহর রিজভী তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইনস্টিটিউটে গবেষণা ও সৃজনশীল কাজে সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের আগ্রহ খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গতানুগতিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রয়োজনীয় মেধা থাকা সত্ত্বেও এ দেশ গবেষণাধর্মী কাজে পিছিয়ে পড়ছে।
এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যাঁরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন, তাঁরা দেশে থাকছেন না।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উত্কর্ষে, গুণে-মানে ও উদ্ভাবনী কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উত্কর্ষের ওপরই এই সমাজের উত্কর্ষ নিহিত। বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো যোগ্য স্নাতক গড়ে তুলতে হলে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীনতা থাকার ওপর জোর দেন অধ্যাপক গওহর। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর্থিকভাবে স্বাধীন নয়।
তাই উপাচার্য নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তিপ্রক্রিয়া, এমনকি পাঠ্যসূচিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যায়। উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা আরও মসৃণ করার জন্য সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি ও করপোরেট খাতকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বকীয়তা ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে কারও হস্তক্ষেপ যাতে না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার ওপরও জোর দেন তিনি।
অধ্যাপক গওহর রিজভী মানসম্মত উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্নাতকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কর আদায় করা যেতে পারে বলে মত দেন। এই অর্থ দিয়ে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এশিয়াটিক সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এশিয়া ও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় বাংলাদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহফুজা খানম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুন অর রশিদসহ শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।