বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
দর্শকের মুখোমুখি নির্মাতা টোকন ঠাকুর
রেজা ঘটক
গত ১১ ডিসেম্বর ২০০৯, শুক্রবার বিকাল ৫ টায় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর উদ্যোগে দর্শকের মুখোমুখি নির্মাতা শিরোনামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ধানমন্ডির আলমগীর কবির চলচ্চিত্র কেন্দ্র অডিটরিয়ামে। ডিজিটাল সালে চিত্রিত চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর রচিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র ব্ল্যাকআউট -এর সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান প্রদর্শিত হয় এবং প্রদর্শনী শেষে হল ভরতি দর্শকের সাথে এক আনন্দঘন প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর কৌতুহল দর্শকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে নির্মাতা টোকন ঠাকুর উচ্চারণ করেন তিন বছরেরও অধিক কাল ধরে ব্ল্যাকআউট –এর এডিটিং কালের নানা অভিজ্ঞতা, এক্সপারিমেন্ট, যন্ত্রণা, বাচ্চা প্রসব করার বেদনা সর্বোপরি নানা মহলের সহমর্মিতা ও সহযোগিতার কথা। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বাদল রহমানের অসুস্থতা জনিত অনুপস্থিতির কারণে উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর। অনুষ্ঠানে ব্ল্যাকআউট ছবিটির উপর আলোচনা করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এসিট্যান্ট প্রফেসর ও চলচ্চিত্র গবেষক ফাহমিদুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি-এর যুগ্ম সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন। উক্ত অনুষ্ঠানে দর্শকদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখ ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি মামরুল ইসলাম। ওই অনুষ্ঠানেই মামরুল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চোখ ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে অনুরূপ একটি আয়োজনের ঘোষণা দেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরকে ব্ল্যাকআউট-এর সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান প্রদর্শনের নিমন্ত্রণ করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর সাদরে সেই নিমত্রণ গ্রহন করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, খুব শিগগিরই ব্ল্যাকআউট-এর ফাইনাল এডিটিং ভার্সান সরকারি সেন্সর বোর্ডের কাছ থেকে সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে হল পর্যায়ের দর্শকদের মুখোমুখি হবে ব্ল্যাকআউট।
সেই সূত্র ধরেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চোখ ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে গত ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ আয়োজন করা হয় প্রথম শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল ২০০৯।
উল্লেখ্য, ফ্যাস্টিভালের নামকরণে প্রথম শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল বলা হলেও ব্ল্যাকআউট ছবিটিই ছিল ওই ফ্যাস্টিভালের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ফুললেন্থ চলচ্চিত্র। এছাড়া ফ্যাস্টিভালে যে সকল চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় সেগুলো হলো- ডেডলাইন বাংলাদেশ, ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি, আননোসেন্ট ফেস, মানুষ কয়টা আসছে? (২১ ডিসম্বের), শিকড়, জলছাপ, স্নোরি, ব্ল্যাকআউট (২২ ডিসেম্বর), পিস, পাতার নৌকা, কুমির, দুধ কয়লা, বাউল করিম (২৩ ডিসেম্বর)। অনুষ্ঠানে চালচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে মিট দ্য ডিরেক্টর পর্বে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে এনামুল করিম নির্ঝর (২১ ডিসেম্বর), টোকন ঠাকুর (২২ ডিসেম্বর) ও শ্যামল কান্তি ধর (২৩ ডিসেম্বর)।
৭:০০ টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে !
২১ ডিসেম্বর ২০০৯ সকাল ৬:৩০ টা। আমরা (টোকন ঠাকুর, রেজা ঘটক, জন রোমেল, শাকিল সৈকত, ইমন কল্যাণ) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশানে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর ভিতরে ভিতরে টেনশন মামুন কি পারবে ট্রেন ধরতে! কারণ আমাদের ট্রেনের টিকিট বেলায়াত হোসেন মামুনের কাছে।
আর মামুন তখনো ফার্মগেট ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। ৬:৫৯ টা, অথচ মামুনের দেখা নাই। স্টেশান কর্মকর্তা জানালেন আপনারা না উঠলেও পারাবত এক্সপ্রেস ঠিক ৭:০০ টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, ওদিকে অনেকটা দৈব ঘটনার মতো কোত্থেকে এসে যেন হঠাৎ উপস্থিত হলেন মামুন। তারপর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশানের প্লাটফরমে সকাল বেলার ঐতিহাসিক সেই ঘোড়ার দৌড়।
ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও দৌড়াচ্ছি। ডানপাশে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মহানগর প্রভাতীও রেডি। আর ঠিক বামপাশে পারাবত এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছুটছে। আমরাও সমান তালে পাল্লা দিয়ে ছুটছি। স্টেশানের প্লাটফরম যেখানে শেষ ঠিক সেই পর্যায়ে হঠাৎ আবিস্কার হল আমরা সবাইও ট্রেনের শেষ বগিতে সওয়ার।
কিন্তু আমাদের জন্য নির্ধারিত বগি হলো ঙ। এবার ট্রেনের মধ্যে হাঁপাতে হাঁপাতে হাঁটা। অবশেষে ঙ নম্বর বগিতে ১৭-২২ নম্বর সিট আবিস্কার করতে আর কোনো ঝামেলা নেই।
কুয়াশা মোড়া রাজধানী
শীতের শান্ত সকাল। কুয়াশা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে প্রিয় ঢাকা শহর।
যেন আমাদের রাজধানী ছেড়ে যাবার খবরে ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙছে ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকার। আলস্য কাটিয়ে সরব হয়ে ওঠার জন্য তার বুঝিবা প্রস্তুতি। পূর্ব দিগন্তে রবি বাবুর আগমণের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন জেগে উঠছে ব্যস্ততম মহানগর আজকের ঢাকা। সোডিয়াম বাতিগুলো শীতে কুকড়ি মুকড়ি দিয়ে ঝিমুচ্ছিল আর আমরা ছুটছিলাম শান্ত ঢাকার ঘুম কাতুরে ঢুলুঢুলু চেহারা দেখতে দেখতে।
পারাবত এক্সপ্রেস ও কিছু টুকরো স্মৃতি
২০০৪ সালের যে রাতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলে হামলা চালায়, পরদিন সকালে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমরা চার বন্ধু (নাজির, রিয়াজ, পুলক আর আমি) এয়ারপোর্ট থেকে পারাবত এক্সপ্রেসে উঠেছিলাম বিনা টিকিটে।
গন্তব্য ছিল আখাউড়া বন্ধু নাজিরদের বাড়িতে। ওই দিনই সন্ধ্যায় ঢাকামুখি ফিরতি পারাবত এক্সপ্রেসে অবশ্য আমরা টিকিট কেটেই ফিরছিলাম। বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নেবার জন্য ওটা ছিল আমাদের স্রেফ প্রমোদ ভ্রমণ। ২০০৭ সালের নভেম্বরে মিরপুর ২ নম্বর স্টেডিয়ামের কাছে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় আমাদের প্রিয় বন্ধু নাজির প্রাণ হারালে আর কোনোদিন নাজিরের উদ্যোগে অমোন করে বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া হয়নি। আমাদের আর কোনোদিন আখাউড়া যাওয়াও হয়নি।
পারাবত এক্সপ্রেস কি একজন ঘাতক ! ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে নিখোঁজ হলো আমাদের প্রিয় বন্ধু আমিনুল ইসলাম স্বাধীন। পাঁচটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় স্বাধীনের ছবিসহ নিখোঁজ সংবাদ ছাপানো হলো। স্বাধীনকে ঠিক পাঁচ দিন পর আবিস্কার করা গেলো এয়ারপোর্টের কাছে খিলক্ষেত ট্রেন লাইনে। হাত পা বাঁধা দু-টুকরো স্বাধীনকে আমরা পেলাম লাশ আকারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল পারাবত এক্সপ্রেসেই কাটা পড়েছে স্বাধীন।
স্বাধীন আসলে অপহৃত হয়েছিল আর অপহরণকারীদের স্বাধীন হয়তো খুব ভালো করেই চিনে ফেলেছিল। কারণ, ঘাতকরা তখন টেলিফোনে পাঁচ লাখ টাকা দাবী করেছিল জাকিয়া আপার কাছে। স্বাধীনকে আমরা ফেরৎ পেয়েছিলাম এই পারাবত এক্সপ্রেসে কাটা পরা লাশ হিসেবে। অথচ রাষ্ট্রের কেউই আজ পর্যন্ত স্বাধীনের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামায় নি। কোনো রহস্যও আর আবিস্কার হয়নি।
এখনো উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের পাশ দিয়ে যখন পারাবত এক্সপ্রেস ছুটে যায় জাকিয়া আপা নির্বাক হয়ে চলে যাওয়া পারাবত এক্সপ্রেস দেখতে থাকেন। পারাবত এক্সপ্রেস তুমিও মিশে আছো আমাদের কিছু টুকরো স্মৃতির সঙ্গে।
দুপুর ১:৩০ টায় সিলেট
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর ১:৩০ টা। আমরা সিলেটে পা রাখলাম। স্টেশানে আমাদের রিসিপ করলেন চোখ ফিল্ম সোসাইটির সংগঠক এমরান দেওয়ান আর আবু তাহের।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পৌঁছালাম ঠিক দুপুর ২:০০ টায়।
ক্যাম্পাস পরিদর্শন, পরিচয় পর্ব ও ফটো সেশান
সিলেট শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি দূরে ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ি উঁচু নিচু সবুজ শ্যামলিমায় বেশ পরিছন্ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সারি সারি বাহারি গাছ আর আধুনিক প্রযুক্তির প্রায় সকল উৎকর্ষে সমৃদ্ধ এই বিশ্¦বিদ্যালয়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দৃষ্টি কাড়ে। ছাত্রছাত্রীরা ছোট ছোট গ্রুপে স্ট্যাডি অথবা আড্ডায় মত্ত। আর চোখে পড়ার মতো তাদের সাথে যে জিনিসটি খুব বেশি রয়েছে সেটি হলো ল্যাপটপ।
বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারটির অবস্থান সবচেয়ে নজর কাড়ার মতো। উঁচু এক পাহাড়ে সুদৃশ্য ১০০ সিঁড়ি মাড়িয়ে আমরা যখন শহীদ মিনারের লাল সূর্যের দেখা পেলাম, ঠিক তার পিছনে তখন মেঘালয়ের সারি সারি বড় বড় পাহাড়ের মায়াবি হাতছানি। ক্যাম্পাস পরিদর্শনের পাশাপাশি ছিল চোখ ফিল্ম সোসাইটির সংগঠক জান্নাতুল ফেরদৌস তৃষ্ণা, বিবেক, হাবিব, রোমেলসহ অন্যান্য কর্মিদের সাথে বিভিন্ন স্পটে পরিচয় পর্ব আর ফটো সেশান।
গাজী কালুর দরগাহ
গাজী কালু নিশ্চিত কবি ছিলেন। নইলে শহরের কোলাহল থেকে দূরে অমন সুউচ্চ নির্জন টিলায় আস্তানা গড়ার রহস্য কোথায়? উত্তরে মেঘালয় আর দক্ষিণে সমতল ভূমি হয়ে বয়ে গেছে শ্রীমতী সুরমা সুদর্শনী।
মাঝখানে নেড়ে মাথার সুউচ্চ টিলায় গাজী কালুর দরগাহ। দিবালোকে প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্য উপভোগ আর যামিনী কালে অমন নির্জন টিলায় কেবল ধ্যানমগ্ন কবি-ই পারে সবকিছু ভুলে থাকতে। গাজী কালু হয়তো সেই গোত্রের কোনো বঙ্গীয় বাল্মীকি ছিলেন।
সন্ধ্যা ৬:০০ টায় উদ্ধোধন
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সন্ধ্যা ৬:০০ টা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল-নীল পতাকা আর আলোক সজ্জিত কনফারেন্স কমপ্লেক্স অডিটরিয়মে প্রথম শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভালের শুভ উদ্ধোধন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর সালেহউদ্দীন।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর, চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর, পেট্রোলিয়াম ও জিও-রিসার্স ইনজিনিয়রিং বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ জাকারিয়া, মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বেলায়াত হোসেন মামুন, চোখ ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মামরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন চোখ ফিল্ম সোসাইটির সংগঠক আবু তাহের। সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় প্রথম শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল ২০০৯ ।
ইকো বিভ্রাট:
ডেডলাইন বাংলাদেশ ডকুমেন্টারি প্রদর্শন দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখ ফিল্ম সোসাইটির ফার্স্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল। কিন্তু কনফারেন্স কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় শুরু হয় ইকো বিভ্রাট।
চলচ্চিত্র নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরের সক্রিয় অনুরোধে চোখ ফিল্ম সোসাইটির আয়োজক দল অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিয়ে পরবর্তী ফিল্ম শো-র ভ্যানু পরিবর্তন করে এ বিল্ডিংয়ের মিনি অডিটরিয়ামে ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিনের ফিল্ম শো শেষ হয় রাত ১০:৩০ টায়।
তীব্র শীতের শহর সিলেট
অডিটরিয়ম থেকে বের হবার পর আমরা প্রথম টের পেলাম সিলেট আসলে তীব্র শীতের শহর। ঘন গাছপালা আর মুহূর্মুহু শিয়ালের হু-আক্কা-হু-র মধ্যে আমরা ক্যাম্পাস গেটে সংক্ষিপ্ত আড্ডা শেষে অগত্যা বিশ্ববিদ্যালয় রেস্ট হাউজে বাকি আড্ডার জন্য রওনা হলাম।
পাতা কুড়ানি মা
ক্যাম্পাস পরিছন্ন রাখার জন্য আনুষ্ঠানিকতার বাইরে সবচেয়ে যেটি বেশি নজর কাড়ার মতো সেটি হলো পাতা কুড়ানি মায়েদের তৎপরতা।
পাতা কুড়ানি মায়েরা দলবেধে সারি সারি গাছের তলা থেকে ঝড়া পাতা কুড়িয়ে নিচ্ছেন। আমরা জানিনা বস্তা ভরতি ঝড়া পাতা মাথায় নিয়ে পাতা কুড়ানি মায়েরা বাড়ি ফিরে আসলে কি রান্না করবেন। অথবা আদৌ তাদের রান্না করার মতো চাল চুলো আছে কিনা? তবে রোজ সকালে ওইভাবে ক্যাম্পাস থেকে ঝড়া পাতা কুড়িয়ে পাতা কুড়ানি মায়েরা ক্যাম্পাস পরিছন্নতায় যেভাবে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন, তার মূল্য অবশ্যই তাদের শীর্ণ শরীরের জীর্ণ ছিন্ন বস্রের তুলনায় ঢের অমূল্য।
শাহজালালের মাজারে রমরমা ফিকিরি
শাহজালালের মাজারে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে যে সাইনবোর্ড সেটি হলো- ‘সাবধান : পকেট চোর, ছদ্মবেশী ধোকাবাজ হইতে সাবধান’। সাইনবোর্ডের আধিক্য থেকেই অনুমান করা যায় কতো নিরিহ লোকজন সারা বছর ওই সব ধরিবাজ ফিকিরি কারবারিতে কতো কিছুইনা বিসর্জন দিচ্ছেন।
একটি সংগঠিত চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র মাজার এলাকায় প্রকাশ্যে যে কেনাবেচার হাট বসিয়ে কারবারি করছেন, তা দেখে যে কারো মনে হবে ওটা বাংলাদেশ সরকারের শাসনের বাইরে অন্য কোন স্বাধীন চোরাকারবারি ভূখন্ড। মাজারের আড়ালে চলছে ধর্মান্ধ নিরিহ মানুষদের নিয়ে প্রকাশ্য ফিকিরি। আর আমাদের জাতীয় নেতা নেত্রীরা মাজার সংস্কৃতির বিজ্ঞাপন মডেলের নামে ওসব জেনেও না জানার ভান করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ককে স্যালুট
শাহজালালের মাজার থেকে আমরা হাজির হলাম মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী সাহেবের কাছে। তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাকআউট টিম সামরিক কায়দায় চিরকুমার এই জেনরেলকে স্যালুট করে।
আমরা জানি ব্যাচেলর ছাড়া কারো পে এরকম একটা গণযুদ্ধের সর্বাধুনিক হওয়া চাট্টিখানি কখা নয়। এক মিনিট নিরাবতা পালন শেষে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অকাল প্রায়াত নায়ক শালমান শাহ’র কবর, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমাযুন রশীদ চৌধুরীর কবর। ধর্ম ব্যবসার বাইরে ওই কবর চত্বরেই আমরা বরং কিছুটা বেশি সময় কাটাতে স্¦চ্ছন্দবোধ করেছিলাম।
ব্ল্যাকআউট শো সন্ধ্যা ৭.১৫ টায়
২০০৬ সালে চিত্রিত চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর রচিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র ইখঅঈকঙটঞ -এর সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান প্রদর্শিত হয় ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৫ টায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিল্ডিংয়ের মিনি অডিটরিয়ামে। প্রদর্শনী শেষে হল ভরতি দর্শকের সাথে এক আনন্দঘন প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর কৌতুহল দর্শকদের নানামুখি প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে নির্মাতা টোকন ঠাকুর দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ছবিটির সহকারী পরিচালক রেজা ঘটক ও জন রোমেলকে। এছাড়া তিনি মঞ্চে ডাকেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বেলায়াত হোসেন মামুন এবং টোকন ঠাকুরের ফিল্ম কার্যক্রমের সহকারী পরিচালক শাকিল সৈকত ও ইমন কল্যাণকে। সিলেটে ইখঅঈকঙটঞ দর্শকদের সামনে ছবির পরিচালক টোকন ঠাকুর তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বিশেষ করে ইখঅঈকঙটঞ সিলেট জার্নিতে কাজের চাপে আসতে না পারা ইখঅঈকঙটঞ -এর চিত্রগ্রাহক ও সম্পাদক সামির আহমেদ, মিউজিক ডিরেক্টর অর্ণব, আর্ট ডিরেক্টর আবদুল হালিম চঞ্চল, প্রধান সহকারী পরিচালক রাজীব আশরাফ, স্থির চিত্রগ্রাহক রিচার্ড রোজারিও এবং ছবির কুশীলবদের কথা, যারা এই ছবিতে সর্বোচ্চ প্রেম দিয়ে অভিনয় করেছেন যেমনÑ তানভীর হাসান, রাহুল আনন্দ, তিনা, সারা, কফিল আহমেদ, ধ্র“ব এষ, বাপ্পি আশরাফ, বেলায়েত, জাহেদউদ্দীন, জুয়েনা ফেরদৌস মিতুল, দাদু, বিমল বাউল...
শো-র আগেই ভোঁজের নিমন্ত্রণ
আমাদের বন্ধু দম্পতি গল্পকার প্রশান্ত মৃধা ও ফারজানা সিদ্দিকা রনি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটবাসী। দুজনেরই পেশা শিক্ষকতা।
প্রশান্ত সিলেট এম এম কলেজের বাংলা বিভাগে আর রনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। ব্ল্যাকআউট শো শেষে ওদের সুন্দর পরিপাটি বিশাল দাওয়াখানায় দুঘন্টার আড্ডা আর ভোঁজ ছিল অবশ্যই মনে রাখার মতো। বাড়তি ছিল ওদের ৪ বছরের তাতা-র সঙ্গে ব্ল্যাকআউট টিমের সবার বন্ধুতা।
সদর দফতর
পরদিন ২৩ ডিসেম্বর খুব সকালে ডিরেক্টর টোকন ঠাকুরের ডাকে ঘুম ভাঙল। উদ্দেশ্য সবাই ঘুম থেকে জাগার আগেই ক্যাম্পাস ও আশেপাশে একটা ঝটিকা ট্যুর।
সঙ্গে রইল অবশ্যই ফুৃজি এফ-১০০ ক্যামেরা। শাহপরান হল আর দ্বিতীয় ছাত্র হলের পিছনে ফাঁকা সমতল মাঠ পেড়িয়ে সুউচ্চ টিলার উপরে যে পরিত্যক্ত অট্টালিকা ওটি কার? কাহার সেই পরিত্যক্ত ভিটায় হয়তো একদিন আমরা দলবেধে চলে যাবো। আর তাঁবু গাড়বো নতুন ছবি স্যুটিংয়ের সদর দফতর হিসেবে। তাহাতে কাহারো কি কোন আপত্তি থাকার কথা!
দিনভর আড্ডা
অতঃপর দিনভর দলবেধে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে আড্ডা। শহীদ মিনারে দেখা মিলল অবুঝ বুড়িমা আর তার নিরিহ পুত্রবধূর সঙ্গে।
দোয়া চাইলেন যেন তার সংগ্রহ করা পানি পড়া খেয়ে তার পুত্রবধূর অন্তত একটা সন্তান লাভ হয়। আমরা বুড়িমাকে নিঃশর্ত আশির্বাদ দিলাম। কি জানি হয়তো হুজুরের পানি পড়ার ফিকিরে একটা ফুটফুটে অবুঝ শিশু আসবে অবুঝ নিরিহ পুত্রবধুর কোলে আগামী শীতের আগেই।
পাঠানটোলার চা বাগানে চাঁদ ডুবল যখন
পাঠানটোলার চা বাগানের খোলা আকাশের নিচে যখন আমরা কুয়াশা মাড়িয়ে শীত পাহাড়া দিচ্ছি, তখন মুঠোফোনে প্রশান্ত আবদার করল টোকন যেন ওর কাছে চা বাগানের বোতল নিয়ে পালিয়ে যায়। কি ছিল তার মনে, তাহার মনে, আমরা জানিনা।
শুধু জানি পাঠানটোলার চা বাগানে চাঁদ ডোবার পর মামরুল, হাবিব, এমরান, রোমেল, বিবেকরা আমাদের লাস্ট বাসে তুলে দিয়েছিলেন। প্রিয় পাঠক, সারা পথে একটা জিনিসই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলÑ খুব শিগগিরই আমরা ব্ল্যাকআউট-এর ফাইনাল ভার্সান আপনাদের দেখাতে পারবো দেশ বিদেশের সিনেমা দর্শকদের সামনে। ব্ল্যাকআউট-এর বাংলা নাম মনে নেই। জয়তু ব্ল্যাকআউট ট্যুর। জয়তু ব্ল্যাকআউট ।
।
২ জানুয়ারি ২০১০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।