আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া-৪ (দেখে এলাম মাধবকুন্ড জলপ্রপাত) (ছবি ব্লগ)

মহলদার
আমরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে রওনা দিলাম ১২টার দিকে। কমলগঞ্জ পার হয়ে মাধব কুন্ডের দিকে চলতে থাকলাম। পথে বিভিন্ন বাজারে লোক জনের কাছ থেকে মাধবকুন্ডের পথ ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে করতে পৌঁনে ২টার দিকে পৌঁছালাম ওখানে। পথে যথারীতি সপ্তর্ষী আর শ্রাবণের জন্য বার কয়েক যাত্রা বিরতি। তবে মাধব কুন্ডের জলপ্রপাতের কাছে যেতে মেইন রাস্তা হতে(বাজারটার নাম মনে নেই) ভিতরের দিক ৬-৭ কিলোমিটার চিকন সড়ক দিয়ে যেতে হয়।

একেবারে গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা। চারিদিকে ছোট ছোট পাহাড়, কোনটিতে চা বাগান, কোনটিতে আবার ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় গাছ। যতই কাছে এগোচ্ছি ততই ভাল লাগছে আমার। ওদিকে সপ্তর্ষী ভীষণ অসুস্থ বোধ করায় কান্না শুরু করে দিয়েছে। ওর অবস্থা এমন হল যে গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গার কিছু আগেই আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।

চোখে মুখে পানি দেওয়ায় ও আস্তে আস্তে সুস্থ্য বোধ করতে লাগল। আমরা হেঁটে গেটের কাছে পৌঁছালাম। ভেতরে ও বাইরে অনেক ভীড় চোখে পড়ল। ইকোপার্ক মাধব কুন্ডের আদেশ পরিস্কার পরিচন্নতা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু তার ছিটে ফোঁটাও চোখে পড়ল না।

আমরা হাঁটতে থাকলাম। পথের পাশে টিলার উপর বুনো ঝোঁপঝাড়। দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়। পাহাড়ের নিচে আছে ছোট ছড়া আর বড় বড় পাথর। এই হলো মূল জলপ্রপাত।

এখন পানির বেগ অনেক কম। জলপ্রপাতের নিচে বিশাল পাথর। সামনের দিকে বিশাল স্তরীভূত পাথর, উপরে গাছ পালা। ওখানে আছে অবজার্ভ টাওয়ার। টাওয়ারের উপর থেকে জলপ্রপাত।

টাওয়ারের উপর থেকে। টাওয়ারের উপর থেকে শিব মন্দির, পাহাড়। জলপ্রপাতের কাছে আসার পর এক অন্য রকম ভাল লাগছিল। প্রকৃতির কি নয়নাভিরাম দৃশ্য। বর্ষাকালে নাকি এই সৌন্দর্য বেড়ে যায় আরো।

পানির প্রচন্ড তোড় থাকে তখন। এখন এর নিচে পুকুরের মত, এর সাথে সংযুক্ত ছড়াটি দিয়ে চিন চিন করে পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পাথর ছড়ানো ছড়ার মাঝখানে। অনেক মানুষের ভীড় জলপ্রপাতের গোড়ায়। পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কিংবা পানিতে নেমে সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত।

একেবারে উপরে যেখান থেকে পানি পড়ে সেখানেও দেখলাম কয়েকজন লোক। ওখানে ওঠা নিষেধ থাকলেও দেখার কেউ নেই যেন। নিচের পুকুরের পানিতে ডুবেও নাকি অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে। চারিদিকে কাগজ, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট ছড়ানো ছিটানো। প্রতিদিন এখানে কত পর্যটক আসে অথচ এই স্পটটিকে যদি সুন্দর ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যেত তাহলে হয়ত এর আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত।

আমরা জলপ্রপাত দেখে উঠলাম ওয়াচ টাওয়ারে। টাওয়ার থেকে পাহাড়, ঝর্ণা আর গাছপালা দেখতেও খুব ভাল লাগল। আমরা টাওয়ার থেকে নামলাম। এখন ফিরে যাবার পালা। আমাদের গাড়ি কুলাউড়া এসে থামল।

সেখানে দূপুরের খাবার খেলাম। এরপর এখানকার একমাত্র ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে এসে দেখি বিশাল লাইন। এক ঘন্টা দাঁড়ানোর পর আমাদের পর্ব এল। গ্যাস নিয়ে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিল সিলেটের উদ্দেশ্যে। তখন অন্ধকার নেমে গেছে।

দু'ধারে পাহাড় আর এর মাঝখানের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলছে। পাহাড়ের আবছা আলোয় সরে সরে যাচ্ছে গাছ গুলো। আমরা গাড়িতে সবাই চুপচাপ, কিছুটা ক্লান্তি, তার মাঝে বেজে উঠল- বিমূর্ত এই রাত্রি আমার মৌনতার সুতোয় বোনা একটি রঙিন চাদর........ (সমাপ্ত) ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া-৩ (ঘুরে দেখলাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান) (ছবি ব্লগ) ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া-২ (ঘুরে দেখলাম চা বাগান) (ছবি ব্লগ) ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া-১ (দেখলাম চা উৎপাদন প্রক্রিয়া)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।