[আগামী ৩০-৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল ,বাসদ এর ১ম কেন্দ্রীয় কনভেনশন উপলক্ষে আজ ২৭ ডিসেম্বর ২০০৯ সকাল ১১৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রৃমে সংবাদ সম্মেলনে বাসদ আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামান কর্তৃক পাঠিত লিখিত বক্তব্য আগ্রহীদের জন্য প্রকাশ করা হল। ]
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদেরকে জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা। ইতিমধ্যে আপনারা অনেকে অবগত হয়েছেন যে, বুর্জোয়া মহাজোট-জোটের অধঃপতিত গণবিরোধী রাজনীতির বিপরীতে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর প্রথম কেন্দ্রীয় কনভেনশন আগামী ৩০-৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২৯ বছর আগে ১৯৮০ সালের ৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দল আত্মপ্রকাশ করেছিল। আজ দলের বিকাশের একটা উচ্চতর পর্যায়ে এসে আমরা প্রথম কনভেনশন করতে যাচ্ছি।
এই কনভেনশন আমরা করছি যে সময়ে তখন এদেশের মানুষ ৩৮ বছরের বুর্জোয়া শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় একথা বুঝে নিয়েছে যে, শুধু ক্ষমতার পোষাকী পরিবর্তনে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে না। বিশেষ করে দিনবদলের কথা বলে জনমনে ব্যাপক প্রত্যাশা জাগিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আঃ লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের ১ বছরের শাসনে দলীয়করণ, দখল অভিযান, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্যাস পাচারের চক্রান্ত, সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু নীতিতে টিফা চুক্তির আয়োজন, ট্রানজিট-করিডোরের মাধ্যমে সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলা, প্রতিশ্রুতিভঙ্গ ইত্যাদি মিলে অতীত শাসনের ধারাবাহিকতার রকমফের ছাড়া আর কিছু ভাবার কোন অবকাশ নেই। দ্বি-দলীয় পাল্টাপল্টির রাজনীতিতে সরকারী ব্যর্থতার নেতিবাচক ফলাফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পুনরায় উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। পার্লামেন্টে সামনের সারির আসন বন্টন বিতর্কে বিরোধীদলশূন্য পার্লামেন্ট নিয়ে দু’পক্ষই সন্তুষ্ট থাকছে।
জনগণ বুর্জোয়া রাজনীতির পাল্টাপাল্টি থেকে মুক্তি চায়।
এ মুক্তি পুঁজিবাদ বহাল রেখে, বুর্জোয়া শ্রেণীর শাসনে আসবে না। তার জন্য প্রয়োজন সমাজের আমূল পরিবর্তন অর্থাৎ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এর বিকল্প নেই। সেই বার্তা নিয়েই আমরা কনভেনশনে যাচ্ছি। ২৯ বছরের সংগ্রামে বাসদ জনগণের মাঝে যতটুকু যেতে পেরেছে ততটুকু আশা মানুষের মধ্যে জাগাতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
আমরা গতানুগতিক ধাঁচে দল গড়ে তুলিনি, পরিচালনাও করিনি। সত্যিকারের একটি বিপ্লবী দল গড়ার মাকর্সবাদী-লেনিনবাদী নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে সংগ্রাম চালিয়েই আমরা একটা বিকশমান বিপ্লবী শক্তি হিসাবে দাঁড়িয়েছি।
কনভেনশনকে সামনে রেখে আমরা সারা দেশে ৪২ হাজার প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করেছি। সম্মেলন/ কাউন্সিলের মাধ্যমে ৭৯টি থানা/ উপজেলায় নতুন পাঠচক্র কমিটি/ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি। ২৬ থানায়/ উপজেলায় পুরনো পাঠচক্র কমিটি রয়েছে।
এছাড়াও আরো ১০০টি উপজেলা/ থানায় সাধারণ পাঠচক্র এবং সাংগঠনিক যোগাযোগ রয়েছে।
কনভেনশন উপলক্ষে ২৯ জেলায় সম্মেলন/ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়ে নতুন পাঠচক্র কমিটি/ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। ৯ জেলায় পুরনো পাঠচক্র কমিটি রয়েছে। এর বাইরে আরো ১১ জেলায় সাধারণ পাঠচক্র ও সাংগঠনিক যোগাযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের কেন্দ্রীয় কনভেনশনে মোট ৪৯টি জেলা থেকে ৭ শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক ৩১ ডিসেম্বর ’০৯ দ্বিতীয় দিনের প্রতিনিধি অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন।
প্রতিনিধি অধিবেশনে আহ্বায়কের সাংগঠনিক-রাজনৈতিক প্রতিবেদন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির রিপোর্ট এবং নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন, আর্থিক প্রতিবেদন পাশ, জনস্বার্থ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষায় ভবিষ্যৎ আন্দোলন কর্মসূচি, বাম বিকল্প গড়ে তোলার পথ ও পন্থা নির্ধারণ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সারা দেশে কনভেনশনের প্রচারের জন্য আমরা ২ দফায় ৫৫ হাজার পোস্টার, প্রায় চার লক্ষ লিফলেট, সাড়ে ছয় হাজার আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছি। এ ছাড়াও ঢাকাসহ সারা দেশে দেয়াল লিখন, ব্যানার, বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। প্রচারের জন্য ঢাকায় মাইকিং হচ্ছে। কনভেনশন উপলক্ষে সারা দেশে গণচাঁদা সংগ্রহ অভিযান চলছে।
ঢাকায় গত অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লড়্গ ২৬ হাজার ৪ শত ৯৫ টাকা কেন্দ্রীয়ভাবে গণচাঁদা সংগৃহীত হয়েছে। এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১ লক্ষ ৬ হাজার টাকা গণচাঁদা সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী-দরদীরা ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৫০ টাকা কনভেনশন তহবিলে জমা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলা শাখা কনভেশন উপলক্ষে নির্ধারিত হারে কেন্দ্রীয় আয়োজনের জন্য ৫ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা প্রদান করবে। কনভেনশনের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।
কনভেনশনের প্রথম দিনের প্রকাশ্য অধিবেশনে সারা দেশ থেকে দশ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক-দরদী অংশ নেবে। উপস্থিত কমরেডরা প্রতি বেলা ৩০ টাকা দিয়ে কূপন কিনে খাবার সংগ্রহ করবে। দলের নিজস্ব আয়োজনে খাবার রান্না হবে।
আমরা আমাদের সামগ্রিক বক্তব্য কনভেনশনে হাজির করবো। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সে বক্তব্য পৌছে যাবে।
আমরা আপনাদের সবাইকে ৩০ ডিসেম্বর কনভেনশনের প্রকাশ্য অধিবেশন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনার সভায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের কনভেনশনের বিস্তারিত অনুষ্ঠান সূচি নিম্নরূপ।
৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গণসঙ্গীত পরিবেশন করবে।
সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং উৎসব বেলুন উড়ানোর পর দলের আহ্বায়ক কনভেনশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
এরপর দুপুর ১২টায় ঢাকার রাজপথে ব্যানার-ফেস্টুন, লালপতাকাসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাসদ আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামান। বক্তব্য রাখবেন পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, কমরেড আবদুলস্নাহ সরকার, কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী এবং আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কনভেনশনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড সারা ফাউন্ডার্স, ভারতের সোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টারের পলিট ব্যুরোর সদস্য কমরেড প্রভাস ঘোষ, নেপালের ইউনিফায়েড কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র পলিট ব্যুরোর সদস্য কমরেড ইন্দ্র মোহন সিজেল, শ্রীলংকার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (মার্কসবাদী)-র ন্যাশনাল অর্গানাইজার কমরেড ই· থাম্বাইয়া, উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি বাংলাদেশস্থ ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার মাননীয় রাষ্ট্রদূত কমরেড সিম হং কোল, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল একশন সেন্টারের পরিচালক কমরেড মাইকেল ক্রেমার, ইন্টারন্যাশনাল এন্টি ইম্পেরিয়ালিস্ট পিপলস সলিডারিটি কো অর্ডিনেটিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মানিক মুখার্জী। উপরোক্ত দু’টি সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন আমেরিকার সাবেক এটর্নি জেনারেল রামসে কার্ক। এছাড়াও ভেনিজুয়েলার কমিউনিস্ট পার্টি, তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টি (এমএলসিপি), যুক্তরাজ্যের কমিটি ফর ওয়ার্কার্স ইন্টারন্যাশনাল, কানাডা ভিত্তিক ফ্রেন্ডড ফর সোভিয়েত পিপলস এর মুখপত্র নর্থস্টার কমপাসের সম্পাদক মাইকেল লুকাস বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলন ও সারা দুনিয়ার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে এবং কনভেনশনের সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন।
কনভেনশনের প্রকাশ্য অধিবেশন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় দেশের বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ, প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র-শ্রমিক-নারী-সংস্কৃতি-শিক্ষক-সাংবাদিক-আইনজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা আশার করছি তাঁরা উপস্থিত থাকবেন। আলোচনা সভা শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গীতি আলেখ্য পরিবেশন করবে। এবং দেশের বরণ্যে শিল্পীর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
আমরা আশা করছি আগামী কনভেনশন সফল করে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মেহনতি জনতা তথা শ্রমিক শ্রেণীর সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে বাসদ বিপ্লবী দল হিসেবে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি নির্মাণ ও শোষণ মুক্তির লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে উত্তরোত্তর এগিয়ে নিতে এবং বাংলাদেশ সহ দুনিয়ার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা ও বুর্জোয়া মহাজোট-জোটের বিপরীতে বাম বিকল্প গড়ে তোলার কর্তব্যকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
কনভেনশনে আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের সাথে আগামী ১ জানুয়ারি ২০১০, ২ মনি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনস্থ মৈত্রী মিলনায়তনে (ছয় তলা) বিকেল ৪টায় আমাদের দেশের বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। কনভেনশন উপলক্ষে আয়োজিত এ সকল কর্মসূচিতে আপনাদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছি। আমাদের দলের প্রথম কেন্দ্রীয় কনভেনশন সফল করতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষ যে নৈতিক সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন তার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা আপনাদের এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে ৩০ ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় কনভেনশনের প্রকাশ্য অধিবেশন ও ১ জানুয়ারির মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আমাদের কনভেনশনের সামগ্রিক সংবাদ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলন তথা শোষণ মুক্তির সংগ্রামকে বেগবান করতে সহায়তা করার জন্য আপনাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
আমাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আবারো আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।