আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কত কত তেলাপোকা



তেলাপোকা নামটা শুনলেই কেমন যেন গা ঘিন ঘিন করে। দেখলে তো আরও। আর যদি ফড় ফড় করে উড়াউড়ি করা শুরু করে, তাহলে তো কথাই নেই। এইটুকু একটা প্রাণীকে এত ভয় লাগে কেন যে সেটাই বুঝি না। আব্বা-আম্মার কাছে কত যে বকা খেয়েছি এর জন্য।

তারপরও তেলাপোকা উড়তে শুরু করলেই চিৎকার করে লাফালাফি-দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিই। আর তেলাপোকাগুলোও কম পাজী না, উড়ে উড়ে আমার কাছেই আসতে থাকে। কলেজে প্র্যাকটিকাল ক্লাসে তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে কি যে অবস্থা হত। প্রথম দিন ম্যাডাম দেখিয়ে দিলেন কিভাবে তেলাপোকা এক হাতে ধরে আরেক হাতে ফরসেপ ধরে ব্যবচ্ছেদ করতে হয়। দেখতে গিয়েই একেকজন পারলে বমি করে দেয়।

পরে যখন নিজেদের করার পালা এল, একেকজন "ইয়াক ইয়াক" করতে করতে শুরু করল। একজনকে দেখলাম তুলা দিয়ে আলতো করে ধরেছে তেলাপোকাটা। আমি কয়েকবার হাত বাড়িয়েও সরিয়ে নিলাম, কিভাবে ধরব এই বিচ্ছিরি প্রাণীটাকে। আমার এক বান্ধবী আমার অবস্থা দেখে সাহায্য করতে এগিয়ে এল, সে নিজে ততক্ষণে ঘেন্না কাটিয়ে উঠেছে। সে বলল, এই দ্যাখ আমি তেলাপোকা ধরছি, তুইও ধর।

আমি ওকে দেখলাম, বললাম, পারব না। এরপর সে আমার হাত ধরল। বলল, এই যে আমি তেলাপোকা ধরে এরপর তোর হাত ধরলাম, তাহলে তোর হাতে তেলাপোকা লেগে গেছে, এইবার ধর। বললাম, পারব না। এবার সে জোর করে আমার হাতে তেলাপোকা ধরিয়ে দিল।

আমি চিৎকার করে উঠতে গিয়েও চুপ করে গেলাম। হঠাৎ কিভাবে যেন সহ্য হয়ে গেল। বাকী কাজগুলো ঠিকমতই করতে পারলাম। এইচ এস সি প্র্যাকটিকাল পরীক্ষার দিন সবাই পকেটে করে এক্সট্রা তেলাপোকা নিয়ে গিয়েছিলাম, যদি কোন গন্ডগোল হয়ে যায় তাহলে যেন ব্যাকআপ দেয়া যায়। ঠিকই আমি একটা গন্ডগোল করে ফেললাম, মুখোপাঙ্গের ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে একটা উপাঙ্গ ভেঙে গেল।

এখন আমার এক্সট্রা তেলাপোকাই ভরসা। ওটাকে বের করে কাজ শুরু করলাম। কিন্তু সমস্যা হল এই বান্দাকে তো অজ্ঞান করা হয়নি। হাতের ভিতর চিড়বিড় করা শুরু করল। আমার মনে হচ্ছিল এক্ষুণি চিৎকার করে ওটাকে ফেলে দিব।

কিন্তু কোন মতে দাঁত চেপে কাজ চালিয়ে গেলাম। কিভাবে যে সেদিন চুপ করে ছিলাম নিজেও জানি না। বড় বোনদের কাছে শুনেছি ছোট বোন নাকি একেবারে ছোট থাকতে (হামাগুড়ি দেয়ার বয়সে) তেলাপোকা দেখলেই ধরে ধরে ছিড়ে ফেলত। বড় হতে হতে আমার মতই ভীতু হয়ে গেছে, আমার মতই চিৎকার করে লাফালাফি শুরু করে দেয়। আমার হামাগুড়ি বয়সের কাহিনী অবশ্য আরও ভয়াবহ।

বড়পা নাকি একবার দেখে আমার মুখ থেকে একটা কালো সুতা বের হয়ে আছে। সে সুতার মাথা ধরে টান দিতেই দেখে ওটা আসলে একটা বড় কালো পোকার পা। ঘেন্নায় ভয়ে ওর অবস্থা কেরোসিন, তারপরও আমার কথা চিন্তা করে কোনমতে আঙুল দিয়ে টেনে বের করেছিল পোকাটা। এখন কিন্তু আমি একা থাকতে থাকতে অনেক সাহসী হয়ে গেছি। তেলাপোকা দেখলে নিজেই স্যান্ডেল দিয়ে বাড়ি মারি।

তবে তার আগে একটু চিৎকার দিয়ে নাচানাচি করে নিই, এই আর কি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।