১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইরাকের শহর হালাবজাতে সংঘটিত গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে একটি শিশু রক্ষা পেয়েছিল। সেই শিশু ২১ বছর পর পূর্ণাঙ্গ যুবক হয়ে পুনরায় ফিরে এলো মায়ের কাছে।
সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইরাকী বাহিনীর গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটানোর পরদিন ইরানী সৈন্যরা ইরাকের কুর্দিশ শহর ধ্বংস করার পর শিশুটিকে ইরানে নিয়ে যায়। সেই গ্যাস বিস্ফোরণে প্রায় ৫,০০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল যা সাদ্দাম হোসেনের সবচাইতে নিষ্ঠুরতম হামলাগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয়।
সেদিনের ওই শিশুটির নাম আলী পৌর।
তার বয়স এখন ২১। তিনি কার সন্তান তা নির্ধারণ করার জন্য একটি ডিএনএ টেস্ট করা হয়। কারণ আরো পাঁচটি পরিবার বিচারকের কাছ থেকে রায়ের অপেক্ষায় ছিল। তারা সকলেই আশা করেছিল যে আলী পৌর তাদেরই হারিয়ে যাওয়া সন্তান। কিন্তু রায় ঘোষণার পর দেখা যায় ৫৮ বছর বয়স্কা মহিলা “ফাতিমা মোহাম্মাদ সালিহ হলেন আলী পৌর এর মা।
রায় শোনার পর নিজের সন্তানকে ফিরে পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।
‘আমি এখন একটা ঘোরের মধ্যে আছি। জানিনা এটা কি আমার স্বপ্ন? নাকি খোদা প্রদত্ত উপহার?’-এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন ফাতিমা মোহাম্মাদ শাহ, যিনি তার স্বামী এবং ৬ সন্তানকেই হারিয়েছিলেন সেই গ্যাস বিস্ফোরণে।
আলী পৌর এতদিন এক ইরানী মহিলার কাছে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। বসবাস করতেন ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় এক শহরে, এবং ফারসী ভাষায় কথা বলতেন।
তবে আলী জানতেন যে তিনি ‘হালাবজা’ নামক শহর থেকেই এসেছিলেন।
ইরানী সরকার এবং ইরাকী কুর্দিশ সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ২১ বছর পর এই মিলন-মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবং এই প্রথম প্রায় ২১ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পর হালাবজা শহরের এক সন্তান ফিরে এলো তার মায়ের কাছে।
আলী পৌর শিশু বয়সে তার মায়ের কাছে ‘জিমনাকু’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার কুর্দিশ পরিচয়ে গর্ববোধ করে এবং এখন আসল মায়ের কাছে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া এবং স্থানীয় ভাষা শেখার পরিকল্পনা নিয়েছেন আলী পৌর।
আলী পৌরের মতন আরো ৪১ জন রয়েছে যারা সেই হামলার মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে আলী পৌরের মত আর কেউ মাতৃভূমিতে চলে আসবে কিনা এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ‘মার্টায়ার্স অব হালাবজা; নামক সংগঠনের চিফ।
৩ মাস বয়সী শিশু আলী পৌর গ্যাস বিস্ফোরণ হামলার পরের তিন দিন ধরে তার পরিবারের আর সব সদস্যদের সাথেই ছিল, যারা সবাই সেই গ্যাস বিস্ফোরণে মৃত্যুবরণ করেছিল। কিন্তু আলী পৌর এবং তার মা-ই একমাত্র বেঁচে ছিলেন।
তার মা সেই ভয়াবহ মুহুর্তের কথা স্মরণ করে বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণের ফলে তার সন্তানদের গায়ে আগুন ধরে যায় এবং ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
আহত অবস্থায়ই হেঁটে হেঁটে তেহরান হাসপাতালে চলে যান।
কিন্তু তিনি জানতেন না ওই দূর্ঘটনায় যে তার একটি সন্তান বেঁচে আছে। একজন ইরানী মহিলা তাকে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। আলী পৌরের সেই পালক মাতা ৪ মাস আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। আলী পৌর বলেন, এই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি,খুব একাকীত্ব অনুভব করি।
একটি অদৃশ্য অনুভূতি আমাকে আমার স্বদেশে ফিরে যেতে বলছিল, আমার মা এবং আমার আত্মীয়দের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হতে বলছিল। এরপর……. আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার স্বদেশে ফিরে আসার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।