আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৯০ ভাগ যুদ্ধাপরাধি বিশেষ দলে আশ্রয় নেয়ায় ওই দলও ক্ষতিগ্রস্থ হবে-হারুন-অর রশিদ বীরপ্রতীক

Only I know what is my goal, My heart is my temple.

কাজী সায়েমুজ্জামান: সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্য সচিব সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল অব. হারুন-অর রশিদ বীরপ্রতীক বলেছেন, ৯০ ভাগ যুদ্ধাপরাধি একটি বিশেষ দলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধিরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ওই দলতো ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। যদি বলা হয় ওই দলকে শেষ করে দেয়ার জন্য এ চক্রান্ত করছেন তাতে আমাদেরতো করণীয় কিছু নেই। তরুন প্রজন্মের চাপেই সরকার যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করতে বাধ্য হবে। একমাস আগে হারুন অর রশিদ এ প্রতিবেদককে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।

এটি নিউ এজ বাংলা প্রকাশনা সাপ্তাহিক বুধবারে ছাপা হয়েছে। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একে নির্বাচনী ইশতেহারে স্থান দেয়ায় এটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। একটি জাতির কাঁধ থেকে দায় নামানোর জন্যই তাদের বিচারের প্রয়োজন। এজন্য যুদ্ধাপরাধিরা বৃদ্ধ হলেও বিচার হতে হবে। আমি চাই আরও দ্রুত গতিতে বিচারের কাজটি শুরু হোক।

তবে এ ইস্যুতে সরকারের ওপর এখন পর্যন্ত কোন চাপ দেয়ার সময় এসেছে বলে আমার মনে হয়না। অন্য কোন দেশ চাপ দেবে আর আমরা কাজ করবো না তা হয়না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দেশগুলো ফের বিরোধিতা করতেই পারে। তবে এ চাপ কুটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তার পুরো সাক্ষাতকারটি নিচে উপস্থাপন করা হলোÑ কাজী সায়েমুজ্জামান: যুদ্ধাপরাধিদের বিচার প্রক্রিয়া এ মূহুর্তে কোথায় রয়েছে? হারুন অর রশিদ : আইন মন্ত্রীর সঙ্গে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তিনি জানিয়েছেন প্রশাসনিক প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত সংস্থার নাম ঘোষনা করা হবে। তারা তদন্ত কাজ শুরু হবে। আমরা সরকারী এ উদ্যোগকে বাস্তাবায়নে সহকারীর ভূমিকায় থাকবো। অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।

আমরা অনেক দিন ধরে মাঠে রয়েছি। এ কারণে তদন্ত সংস্থাকে ভুক্তভোগীদের পরিচয় করিয়ে দিতে সাহায্য করবো। সাক্ষী ও প্রত্যদর্শীদের চিহ্নিত করার কাজেও আমরা তাদের সহায়তা করবো। সায়েম: মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরী হয়েছে যে, আপনারা এ ইস্যুতে নির্বাচনের আগে যতটুকু সক্রিয় ছিলেন বর্তমানে ততটা নন। এর কারণ কি? হারুন: না, ব্যাপারটি তা নয়।

আমি বলবো নির্বাচনের আগে যেভাবে ইস্যুটা ছিল, তখন আমাদের জানা ছিলনা কে নির্বাচনে জিতবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সবাইকে বলেছি যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের এ ইস্যুকে জাতীয় ইস্যু করে যারা সরকার গঠন করবে তাদের এটা বাস্তবায়নে যেন বাধ্য করা যায়। তারই ফলশ্র“তিতে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এটি সংযুক্ত করে। নির্বাচনের পরবর্তীতে সরকার সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

এজন্য অর্থও বরাদ্দ করেছে। আন্তার্জাতিক ট্রাইব্যুনালের যে আইনে বিচারটি করা হবে তা সংশোধন করা হয়েছে। যে ভবনে বিচার কাজ শুরু হবে তা সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমরা বলবো যে, আমাদের কাজ যদিও আগের তুলনায় কম, তারপরও আমরা সরকারের এসব কাজে সহযোগির ভুমিকায় রয়েছি। বলতে পারি যুদ্ধাপরাধিদের বিচার দাবী কোনভাবেই স্তিমিত হয়নি।

এটা অগ্রসর হচ্ছে। আর আগে রাজনৈতিক সরকার ছিলনা। এখন একটি নির্বাচিত সরকার মতায় রয়েছে। আগে যেভাবে গণমাধ্যমের আকর্ষণ পেয়েছি এখন তা পাচ্ছিনা। তবে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে এটা স্বাভাবিক।

বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরতো দাবীটি আগের মতো জোরালো থাকেনা। সায়েম : আওয়ামী লীগ সরকার আগের বার মতায় গিয়ে বিচার করেনি। এবারও আওয়ামী লীগ এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবে-এ ধরনের কোন আশংকা কিনা? হারুন : দুটি প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের কথাটি উল্লে­খ ছিলনা। সংসদে তাদের এমন কোন শক্তি ছিলনা যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করতে পারতো।

এবার তারা নির্বাচনী ইশতেহারে জণগনের কাছে ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছে। বলেছে যে ক্ষমতায় গিয়ে তাদের বিচার করবো। এছাড়াও বর্তমান সংসদে তাদের যথেস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এটি বর্তমানে জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই তরুন প্রজন্ম বিশেষ করে এক কোটি ৩০ লাখ নতুন ভোটারের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

এজন্য এবার যুদ্ধাপরাধিদের বিচার থেকে পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সায়েম : সরকারী দলের কেউ কেউ বলেছেন, এ ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের চাপ রয়েছে। অন্যরা বলেছে কোন চাপ নেই। আপনার কি মনে হয়? হারুন: আমি কোথাও দেখেনি যে সরকারের কেউ কোন দেশের চাপের কথা বলেছে। আমি বলবো এ ধরনের কোন চাপ থাক বা না থাক, সরকার জণগনের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে।

তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি রয়েছে। তাদের প্রতিশ্র“তি পূরণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মুসলিম বিশ্ব আমাদের বিরোধিতা করেছিল। তারপরও আমরা যুদ্ধ করে তাতে জয়লাভ করেছি। কোন চাপ থাকলে সরকার কুটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে।

অন্য কেউ আমাদের চাপ দেবে আর আমরা কাজ করবোনা তা হয়না। আমরা একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম জাতি। আমাদের স্বকীয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে অপরাধ ঘটিয়ে তারা দেশে রয়েছে তাদের আমরা বিচার করবো। অন্যরা কে কি বললো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার রয়েছে বলে আমি মনে করিনা।

সায়েম : আপনারা কি সরকার বা অন্য কোন দিক থেকে রাজনৈতিক বা মনস্তাত্বিক কোন চাপ অনুভব করছেন? হারুন: একটা স্বাভাবিক বিষয় হলো-যুদ্ধাপরাধিরা জানে কারা যুদ্ধাপরাধি। তারা এ বিচারের দাবীটা বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যা দরকার তা করবে। আর তদের সহযোগী কেউ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। অনেকেেত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।

সেই চাপ আগেও ছিল এখনও আছে। তবে কেউ প্রত্যক্ষ চাপ দেয়নি। সায়েম: বিচার যাতে না হতে পারে সেজন্য গোপনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং শুরু হয়েছে। আপনারা কি করছেন? হারুন: আমরা ঢাকাস্থ ইউরোপিয়ান কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের ব্যাপারে আগ্রহী।

সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছে। কিছু দিন আগে দেখেছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি সরকারের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের জন্য সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমার জানামতে এমন কোন দেশ নেই যারা বলছে এদের বিচার করা যাবেনা। সায়েম: এত আশ্বাস সত্ত্বেও সরকার কেন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করছেনা। আপনার কি মনে হয়? হারুন : সরকার কেন করছেনা তা তারাই ভালো বলতে পারবে।

তবে বাস্তবতা বুঝতে হবে। এ সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর তাদের ওপর কয়েকটি গুরু দায়িত্ব পড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, ২১ শে আগস্টে বোমা হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সুরাহা করা দরকার। এর সঙ্গে বিডিআর হত্যা মামলা যোগ হয়েছে। আমাদের যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের দাবীতো রয়েছেই।

এর প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিডিআর হত্যাকান্ডের পর সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। নয়তো এতদিনে আমাদের কাজ শুরু হয়ে যেত। এতসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারকে চিন্তাভাবনা করে এগুতে হচ্ছে। একটি কথা বলা ভালো-এ বিচারটি হতে যাচ্ছে ঘটনার ৩৮ বা ৩৯ বছর পর।

এত বছর ধরে যুদ্ধাপরাধিরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। কাজেই আমাদের কিছু করতে গেলে তাড়াহুড়া করলে হবেনা। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। আর বিচারটা যেন আন্তর্জাতিক মানের হয় সেজন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন। আমার মনে হয় সরকার এ কারণেই কিছুটা দেরী করছে।

সায়েম : এ বিচারের জন্য আইনগত ও গবেষণাগত প্রস্তুতির ব্যাপারে আপনারা কতদূর এগিয়েছেন ? হারুন : আমরা নির্বাচনের আগে একটি তালিকায় ৫০ যুদ্ধাপরাধির নাম প্রকাশ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে অনেক তথ্য প্রমাণ আামদের হাতে রয়েছে। আমরা তদন্ত সংস্থাকে ওইসব তথ্য প্রমাণ দিয়ে সহায়তা করবো। এছাড়াও অনেক সংগঠন এধরনের তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও অনেক তথ্য প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে।

তদন্ত সংস্থা ঠিক হলেই তাদের কাছে এসব হস্তান্তর করা হবে। সায়েম: আপনাদের আন্দোলন সংগ্রামে যে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে তা চাঙ্গা করতে কোন কর্মসূচী নেবেন কিনা? হারুন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। আমাদের যে কাজটা তা আমরা করছি। আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুল কলেজগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার নিয়ে মতবিনিময় করছি। আর গণমাধ্যমে যখনই সুযোগ পাই, এ কথাগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।

তবে কথা হলো সেক্টর কমান্ডারদের অনেক বয়স হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাফেরা করতে করতে পারেননা। তারপরও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে বিষয়টি এমন কোন অবস্থায় নেই যাতে বলতে পারি সরকার কিছুই করছেনা। সায়েম : সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী আমাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বিচার শুরুর ইংগিত দিয়েছেন।

শেষ করার ইংগিত কেন দেয়া হচ্ছেনা? এ ইস্যু আগামী দিনেও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের আশংকা রয়েছে কিনা? হারুন: আইনের ভাষা বুঝলে শুরুর কথাই বলতে পারি। শেষ কবে হবে তা বলতে পারিনা। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার শুরু হলে কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুরু হয়েছিল অনেক আগে, এখনও এর বিচার শেষ হয়নি। আর আমি এটাও বলতে পারছিনা যে কত জন অপরাধি।

অপরাধির সংখ্যা হাজার হাজার হলেতো কয়েক যুগেও শেষ হবেনা। কয়টি ট্রাইব্যুনাল করে তার বিচার করা হবে তাও এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি। এগুলো সবকিছু নির্ভর করছে তদন্তকারী সংস্থা মনোনয়ন এবং তারা তদন্তের মাধ্যমে কতজনকে যুদ্ধাপরাধি সনাক্ত করে তার ওপর। সায়েম : বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাচ্ছেন। তাদের এ যুক্তি কিভাবে খন্ডন করবেন? হারুন: দেখুন, যুদ্ধাপরাধ এমন একটি সময় হয়েছিল যখন আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত ছিলাম।

রাজনীতি ছাড়াতো স্বাধীনতা আসেনি। এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো রয়েছেই। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি স্থান দিয়ে জণগনের কাছ থেকে রায় পেয়েছে। এ কারণে এটা এখন রাজনৈতিক ইস্যু। এখন কথা হলো- যুদ্ধাপরাধিরা সকলে মিলে একটি রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নিলে যুদ্দাপরাধিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই রাজনৈতিক দলতো ক্ষতিগ্রস্থ হবেই।

আর এটাকে যদি বলা হয় ওই দলকে শেষ করে দেয়ার জন্য এ চক্রান্ত করছেন তাতে আামদেরতো করণীয় কিছু নেই। কারণ ৯০ ভাগ যুদ্ধাপরাধি তো ওই বিশেষ দলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সায়েম : তবে বিএনপি তো আসল যুদ্ধাপরাধিদের বিচারে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। তাদের সঙ্গে কোন সংলাপ করে মতৈক্যে পৌছাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা? হারুন: গ্রামের ভাষায় এটাকে বলা যায়, সালিশ মানি কিন্তু তালগাছ আমার। আমার কথা হলো সালিশও মানবো আর সঙ্গে তাল গাছের দাবীও যুক্ত করবো তাতো হতে পারেনা।

বিএনপির অবস্থাও এই রকম। নির্বাচনের আগে আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙেগ বৈঠকে বসেছি। তাদেরও দাওয়াত করেছিলাম। তারা আমাদের কোন অনুষ্ঠানে যায়নি। ওই দলে মুক্তিযোদ্ধারা রয়েছেন মানছি।

তবে মুক্তিযোদ্ধারাইতো কেবল যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাচ্ছেননা। দেশবাসী বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম তাদের বিচার দেখতে চান। আমরা একটা অপরাধ বোধের মধ্যে রয়েছি। কারণ যুদ্ধাপরাধিরা এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশ নিচ্ছে। তাদের কোন বিচার হচ্ছেনা।

সেখান থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। আরও কত কথাইতো তারা বলছে- কিছূ লোক বলছে, যুদ্ধাপরাধিরা আর কদিনইবা বাচঁবে? কদিন বাদেই তারা মারা যাবে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধিদের বিচার এখনো চলছে। একটি জাতির কাঁধ থেকে দায় নামানোর জন্যই তাদের বিচারের প্রয়োজন। এটা আমদের নৈতিক দায়িত্ব।

তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অথচ তার গাড়িতে পতাকা থাকবে। এটাতো হতে পারেনা। সায়েম: বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধির বিচার করা সম্ভব নয়। কারণ তারা এর আগে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিল।

আপনার মতামত কি? হারুন: যুদ্ধাপরাধিদের বিচার হয়নি এটা ঠিক নয়। ১৯৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বিচার চলছিল। পরে সামরিক আইন জারি করে সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়। ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনের সকল প্রজ্ঞাপন, আদেশ, অধ্যাদেশ বৈধ করা হয় । এ কারণে ৫ম সংশোধনী থাকাবস্থায় কিছূই করা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ৫ম সংশোধনী উঠে গেল। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারাইতো এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেখেছিল। এখন ওনারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। যে গেজেটের মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল তা গণমাধ্যমে তুলে ধরা দরকার।

সেই সাধারণ ক্ষমায় কিছূ শর্ত ছিল। এতে যাদের বিরুদ্ধে খুন রাহাজানী বা এ ধরনের কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ছিল তারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় ছিলনা। বিএনপি এ বিষয়টিকেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে আসছে। সায়েম: তদন্তে পাকিস্থানী যুদ্ধাপরাধিদের নাম আসলে সে বিষয়ে আপনারা কি ব্যবস্থা নেবেন? হারুন: ১৯৫ জন পাকিস্থানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও তা ১১৮ জনে দাড়িয়েছিল। পরবর্তীতে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের পাকিস্থানে যেতে দেয়া হয়েছিল।

পাকিস্থানী সরকারের প্রতিশ্র“তি ছিল তাদের পাকিস্থানে নিয়ে গিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে। কিন্তু পাকিস্থান তা করেনি। যেহেতু তারা আমাদের হাতে নেই তাদের বিচার করবো কিভাবে? যারা হাতে আছে তাদের বিচার করতে পারি। আমি পাকিস্থানীদের বিচার করতে পারবোনা- এর মানেতো এই নয় গোলাম আজমের বিচার করতে পারবোনা। আমিও চাই পাকিস্থানী যুদ্ধাপরাধিদের বিচার হওয়া উচিত।

বিষয়টি পাকিস্থানের ওপর। আগে দেশের যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করে পাকিস্থানীদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে হবে। সায়েম: তরুন প্রজন্ম যারা আপনাদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চেয়ে বর্তমানে অনেকটা আশাহত অবস্থায় রয়েছে; তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন? হারুন : তরুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানাবো এজন্য যে তারা জাতিকে একটি অপবাদ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিল। যেকোন জাতির জন্য এটা গৌরবের বিষয়। তারা একটি গর্বিত জাতির উত্তারাধিকারী।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের গর্ব করার অনেক কিছু রয়েছে। এজন্য যেকোন মুল্যে আমাদের যুদ্ধাপরাধিদের বিচার কাজ শেষ করতে হবে। আামদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। আমরা যে গতিতে চাচ্ছি সে গতিতে হয়ত যুদ্ধাপরাধিরে বিচারের কাজ শুরু হচ্ছেনা। আমি চাই আরও দ্রুত গতিতে হোক।

আমি সরকারকে এখন পর্যন্ত চাপ দেয়ার কোন সময় এসছে বলে মনে করিনা। তবে হ্যা, যখন দেখবো এটি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কাজটি হচ্ছেনা, তখন অবশ্যই চাপ দেবো। একটা কথা বলতে চাই যুদ্ধপরাধিদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। এ বিষয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সায়েম: আপনাকে ধন্যবাদ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।