আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিবস,বিজয় দিবস---মাত্র একদিনের ছুটি কেন? কেন নিয়াজির আত্ম সমর্পন অরোরার কাছে?রাজাকারদের কিছু দলিলের সন্ধান

সত্য পথের অনুসন্ধানি
১। বিজয় দিবসের দিন একটা ছবিই বেশী দেখি আমরা আর সেটা হল নিয়াজির আত্ম সমর্পন মিত্রবাহিনীর প্রধান অরোরার কাছে । এখানে আমারও প্রথম প্রথম খটকা লাগত পরে বড় হয়ে বুঝেছি এবং জেনেছি কিছু কিছু। খটকা লাগিয়েছে বলতে গেলে । কারন আমাদের অনেক বছর ধরে ইতিহাস পড়তে হয়েছে, শুনতে হয়েছে পরাজিতদের দোসরদের কাছ থেকে তাই যে কোন ঘটনাকে বাঁকা করে প্রজন্মের সামনে দিয়েছে ওরা।

পাকিস্তান কোন ভাবেই চায়নি বাংলাদেশের কারো কাছে তারা আত্ম সমর্থন করুক এবং এরা বেশী শংকিত ছিল তাদের বিশাল সংখ্যক সৈন্যের জীবন নিয়ে। সারেন্ডার সৈন্য সংখ্যায়(৯০ থেকে ৯৩ হাজার) এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সারেন্ডার বলে বিবেচিত। পাকিস্তান ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে চান নি আত্মসম্মানের কথা ভেবে। জয়ের নেশায় মত্ত বাঙ্গালীদের ভয় পাচ্ছিল ,প্রতিশোধ নিবে এটা ধরে নিয়েছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদমর্যদার কথা ভেবে হয়ত নিঁয়াজি কর্নেল পদমর্যদার ওসমানির কাছে আত্মসমর্পন করেননি।

তাই তারা রেডক্রস, মার্কিন অধিদপ্তর এবং জাতিসংঘ দপ্তরে যোগাযোগ করেছিলেন। এ বিষয়ে কেউ কেউ বলেন ওসমানিকে আসতে দেয়া হয়নি। আমার কাছে এর সঠিক তথ্য নেই। তার আসার সময়ের সাথে বা সময় ক্ষেপন কতটুকু যুক্তিযুক্ত তার ও সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। কেউ জানলে মন্তব্যে দিবেন আশাকরি।

আর সেই সময় আর এখনকার স্বাধীন বাংলাদেশতো এক নয়। ( আপডেট:অমি রহমান পিয়াল এর পোষ্টে এই বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন http://omipial.amarblog.com/posts/33755) ২। দিবস বা ডিসেম্বর আসলে অনেকেই বলেন সিজনাল আবেগ--- এ প্রসংগে আমি আগে ও বলেছি সিজনাল আবেগ বলে ব্যাপারটাকে হালকা করার কোন কারন নেই। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বলেছেন দিবসের দিনে আমারা বহু, একা নই, সমস্বরে একই কথা বলি, অন্য সময়ে আমরা বলি তবে নিজে নিজে । তাই দিবসের শক্তি অনন্য।

৩, বিজয় দিবসের সরকারী ছুটি একদিন কেন তা বোধগম্য নয় । এট লিষ্ট ৩ দিন ছুটি হওয়া উচিত। বিশ্বের অন্যন্য দেশের সাথে তুলনীয় করে ভাবা দরকার। দায়সারা ভাবে একদিনের ছুটি কোন ভাবেই গ্রহন যোগ্য নয়,মনে হয় স্কুল পরিদর্শক আসিয়াছে সেই আনন্দে একদিনের নৈর্বত্তিক ছুটি। ৪।

এবারের বিজয় দিবসকে ঘিরে মানুষকে বেশ স্বতঃস্ফুর্ত হতে দেখা যাচ্ছে, যা বলার অনেকেই বেশ স্পষ্ট ভাবে এবং ভয়হীন ভাবে প্রকাশ করছে । অনেক নতুন তথ্য , ভিডিওর সন্ধান করছেন এবং মন খোলে বলার প্রবনতা লক্ষনীয়, নতুন প্রজন্ম ও দেখলাম বেশ জীবন্ত করেই বর্ননা করছে ইতিহাস, দরদ মেখেই লিখছে সে সব গৌরব গাঁথা। ৫। এই বিজয় আনতে যুদ্ধকালে সব চেয়ে বেশী খেঁটেছেন জেনারেল ওসমানী এবং মুজিব নগর সরকারে প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ--তাদের অবদান আরো বেশী করে স্মরন করা উচিৎ----তাদের নামে স্থাপনার নামকরন খুব দেখা যাচ্ছে না, কি নিদারুন সময়েই না তারা নেতৃত্বদিয়েছেন। কি বিচক্ষনতায় দেশকে ১১ টি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করেছেন --জাহাজ নেই, হেলি কপ্টার নেই , প্রশিক্ষিত ফোর্স নেই।

বিশ্বের সব শক্তিধর দেশ গুলো ও তখন পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। ৬। বিএনপি এবং জামায়াত দুই দলের ই উচিৎ তাদের দল থেকে রাজাকার মুক্ত করা। বি এন পি কখন সাকা মুক্ত হবে আল্লায় জানে। তা না হলে এই প্রজন্ম ধর্মের প্রতি ও ভিতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠবে।

জামাতের শীর্ষ নেতৃত্বের এই দুর্বলতার কারনে তাদের সাপোর্ট করা এই সময়ের কিছু প্রজন্ম যারা শিবির করে তারা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এক ধরনের এলার্জিতে ভুগেন। তাই এই গুটি কয়েক রাজাকার নেতাদের উভয়দল থেকে বাদ দিলে মনে হয় না দল দুটি সমস্যায় পড়বে। আত্ম সমর্পনের আগের কিছু টুকরো ঘটনা --শেয়ার করছি প্রথম আলো্তে প্রকাশিত জনাব মফিদুল হকের কলাম থেকে: সংক্ষেপিত করে @নিয়াজি আকুল হয়ে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কথা বলতে চান। দেশের এই গুরুতর পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়ার তখন অন্য দশা, নিয়াজি লিখেছেন, ‘জেনারেল হামিদ বললেন তিনি (ইয়াহিয়া) বাথরুমে গেছেন। আদতে তিনি বাথরুমে ছিলেন না, অতিরিক্ত মদ্যপানে তার তখন বেসামাল অবস্থা।

এরপর এয়ার মার্শাল রহিম খান আমার সঙ্গে কথা বলেন, তাঁকেও মনে হচ্ছিল মাতাল, তিনি চাপ দেন আমি যেন প্রেসিডেন্টের হুকুম তামিল করি। ’ এর পরপরই মালিক-ফারমান আলী মুসাবিদা করা লড়াইয়ে ক্ষান্ত দেওয়ার বার্তা ভারতীয়দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন নিয়াজি। @এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকার উদ্যোগে চলছিল শেষ খেলা। ১৩ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো সোভিয়েত ভেটো নিছক যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের মার্কিন প্রয়াস রুখতে সমর্থ হয়েছিল। পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে আমেরিকা আবারও নেয় সেই চেষ্টা।

আলোচনা দীর্ঘায়িত করার জন্য পোল্যান্ড পেশ করে নতুন প্রস্তাব যেখানে কেবল যুদ্ধ বন্ধ নয়, এর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিক সমাধান তথা পূর্বাংশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও শেখ মুজিবের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকে। নাটকীয়ভাবে প্রস্তাবের কাগজ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পাকিস্তানি প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভুট্টো পরিষদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। ফলে চুকেবুকে যায় সংকটের আন্তর্জাতিকীকরণের সব প্রচেষ্টা। বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে যাওয়া মার্কিন সপ্তম নৌবহরের আটটি যুদ্ধজাহাজকেও থমকে যেতে হয়। তাদের মাথার ওপর এমন কোনো ছাতা মেলে ধরার সম্ভাবনা রইল না, যার আড়ালে তারা হতে পারবে সক্রিয়।

@ নিয়াজির যুদ্ধ বন্ধের বার্তাটি দেওয়া হয়েছিল ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাকের হাতে, ভারতীয় হাইকম্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। স্পিভাক সেটা সরাসরি দিল্লি না পাঠিয়ে প্রেরণ করেন ওয়াশিংটনে। সেখানে মার্কিন প্রশাসন তখন মরিয়া যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের চেষ্টায়, যেনতেনভাবে হলেও যেন পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করা যায়। কিন্তু তাদের হাতে আর কোনো তাস ছিল না, নিরাপত্তা পরিষদ অকেজো, এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর সব মুরোদ গেছে ফৌত হয়ে। ফলে খেলায় ক্ষান্ত দিয়ে বার্তাটি তারা পাঠিয়ে দেয় দিল্লিতে।

@ভারতীয় বাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল মানিকশ জবাবে নিয়াজি প্রদত্ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে তাঁকে জানান, ‘যেহেতু আপনি যুদ্ধ আর না চালানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, তাই আমি আশা করি, আপনি বাংলাদেশে আপনার কম্যান্ডের অধীন সব বাহিনীকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং যারা যেখানে আছে তাদের আমার অগ্রসরমাণ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দেবেন। ’ মানেকশ পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপদ হেফাজতের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আরও জানান, ১৫ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে তিনি ঢাকার ওপর বিমান হামলা এবং সব ধরনের আক্রমণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সবশেষে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘তবে আমি যা বললাম তা যদি আপনি মান্য না করেন সে ক্ষেত্রে আমার আর অন্য কিছু করবার থাকবে না, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯-০০ ঘটিকা থেকে সর্বশক্তি নিয়ে আমি আবার আক্রমণ শুরু করব। ’ @দিশেহারা হয়ে যাওয়া ইস্টার্ন কম্যান্ড ও বিলুপ্ত বেসামরিক শাসন এবং সুরায় ভাসমান রাওয়ালপিন্ডির সমরকর্তা কেউ আর মানেকশর এই চূড়ান্ত হুমকির জবাব দিতে পারঙ্গম ছিল না। কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল, কিন্তু সেই রাতে তারা ছিল জড়ভরত হয়ে, জবাবদানের মতো কোনো নেতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধতা আর পরাজিত পাকিস্তানি জেনারেলদের ছিল না।

পাকিস্তানি ক্ষমতাকেন্দ্রে অধিষ্ঠিত নেতৃত্ব যে কতটা অযোগ্যতা, ভীরুতা, লাম্পট্য ও উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত সেটা বাইরে থেকে বোঝা যায়নি। বাংলাদেশের গনহত্যা এবং রাজাকারদের বেশ কিছু দলিল পাওয়া যাবে জেনোসাইড বাংলাদেশ নামক ওয়েভ সাইটে নিচের লিংক ক্লিক করলেই পাবেন অনেক কিছু। সেখানে এবিসি নিউজের একটা ভিডিও আছে যেটা খুবই মর্মান্তিক। আরো আছে সে সময়ে সংগ্রামে প্রকাশিত সাবেক শিল্প মন্ত্রী জনাব রাজাকার নিজামি সাহেবের বেশ কিছু বীর গাঁথা। জেনোসাইড বাংলাদেশ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=246 আসুন না সবাই আজকে ঐক্যবদ্ধ হই---বিজয়কে সুসংহত করি।

এখনো যতটুকু সাফল্য আমাদের সেটাকে যেন বড় করে দেখি, যেন কথায় কথায় না বলি কি লাভ হল এই বিজয়ে। যেন না বলি আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো আসেনি। রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের কলংক যেন আমার প্রিয় স্বাধীনতা, বিজয়ের উপর না ফেলি। আমরা যেন বলি স্বাধীন হয়েছি এবার সমৃদ্ধ হব। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

সরকারকে অভয় ও দিতে হবে যে এই বিষয়ে আমরা আছি। এই প্রজন্ম এক পায়ে খাড়া । আর এই সরকারের আমলে এই বিচার না হলে বা সরকার পরিবর্তন হলে সেটা আর আশা করা যাবে না। এ যে হতেই হবে না হলে যে বীরঙ্গনারা চোখের পানি মুছতেই থাকবে আর বাচ্ছু রাজাকারেরা পানের পিক ফেলবে তাদের শাড়িতে। আর কত দেরী--দেখে যেতে চাই ---জানি এ বড় বেশী জটিল তবুও যে দেখে যেতে চাই----
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।