আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বক কি আপনার বাব দাদার, যে মারবো না

এলোমেলো ভাবনা সারাক্ষণ মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে

গতকাল একটা ওয়ার্কশপে যোগদানের জন্য টাঙ্গাইলের পাইকরা ইউনিয়নে যাচ্ছিলাম। পথে দেখলাম একটা পাজেরো গাড়ি। গাড়ির একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি ভদ্রবেশী বাংলাদেশী সন্তান। গায়ে দামি কাপড়। একজন যুবক বন্দুক উঁচিয়ে আছে দূরে দাঁড়ানো বকটির দিকে।

আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। গাড়ি হতে নেমে উক্ত যুবকদের কাছে গেলাম। বিনয়ের সাথে বললাম, 'আপনারা কি এই এলাকায় থাকেন? একজন বলল না,,আমরা ঢাকায় থাকি, বেড়াতে এসেছি। কেন আপনি একথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন? বললাম,'আপনাদের হাতে বন্দুক দেখলাম, তাই ভাবলাম --- আপনাদের সাথে একটু কথা বলি। বন্দুকওয়ালা ভাই ততক্ষণে বললেন,' ইস্ আপা আপনি কথা বলছিলেন তাই বকটি মারতে পারলাম না।

মিস্ হয়ে গেল। যাই হোক আরো বক আছে বিলে , মারা যাবে। সবে মাত্র ৫টি মেরের্ছি। আরো ১০/১২টি মারতে হবে। তা না হলে গ্রামে আসাটাই মাটি হয়ে যাবে'।

আমি মুচকি হেসে বললাম,' আমি এসে আপনাদের দারুণ ক্ষতি করে ফেললাম। কিন্তু আমি যে জন্য আপনাদের কাছে এলাম তা বলাই হলো না, এই যে পাখি মারছেন, এতে প্রকৃতির দারুণ ক্ষতি হচ্ছে, আর তাছাড়া এখন এপাখিগুলি প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই পাখি মারা বন্ধ করুণ'। একজন আমার দিকে রাগাম্বিত হয়ে বলল, 'আপা এ পাখিগুলি কি আপনার বাব দাদার -- যে মারবো না। অনেক পাখি আছে, কিছু মারলে এর এমন কি ক্ষতি হবে? আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, বাংলাদেশের বুকে দাঁড়িয়ে পাখিগুলি কেবল খাওয়ার জন্য মারছি, পাকিস্তানে যেয়ে তো আর মারবো না'।

বললাম, 'বয়স কত'? যুবকটি বললো 'ঊনিশ বছর'। বললাম,' স্বাধীনতা সম্পর্কে আপনাকে আরো অনেক কিছু জানতে হবে যে ভাই। বিশেষ করে স্বাধীনতার মানেটা বুঝতে হবে। আর একটা কথা -- দেখে তো মনে হচ্ছে কলেজ, ইউনিভারসিটিতে পড়েন,,তাই শালিনতার সাথে কথা বলতে হবে'। একজন বললো,' আপা আপনি কি করেন'? আমি বললাম,' সেভ দ্য চিলড্রেনএ কাজ করি'।

আরেকজন যুবক বললেন, 'আপা আপনি শিশুদের রক্ষা করুণ, আমরা শিশু নয়'! আমি বললাম,' ০-১৮ বছর এর নীচ পর্যন্ত শিশু, আপনি কেবল তা হতে একটি বছর অতিক্রম করেছেন মাত্র, আর হ্যা শিশুদের আমরা শারিরীক এবং মানসিকভাবে প্রটেকশন দেওয়ার কাজ করি, যাতে তারা নিজেরাও সেভ হয়, অন্যকেও সেভ করতে পারে এবং সেইসাথে প্রকৃতিকেও ভালভাবে রক্ষা করতে পারে। কারণ প্রকৃতিই যদি না বাঁচে, মানুষ কিভাবে বাঁচবে'। একটু দূরে দাঁড়ানো যুবক কিছু বলছিল না, শুধু কথাগুলি শুনছিলেন। এগিয়ে এসে বললেন, 'আপা আপনি ঠিকই বলেছেন, ওদের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি, আপা কিছু মনে করবেন না। বড় বোন হিসেবে আপনি মাফ করে দিবেন।

অন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন,' আমি আর তোদের সাথে নেইরে, আর আমি ঐ পাখির মাংসও খাব না'। একজন বলল,' ইস সব মাটি হয়ে গেল! আমি সকলের উদ্দেশ্যে বললাম, মানুষকে ভালবাসুন, প্রকৃতিকে ভালবাসুন, দেখবেন সবকিছুই ভাল লাগছে, পাখি মারার আর দরকার হবে না। বললাম আমার জন্য অনেকে অপেক্ষা করছে, আমি আসি ভাই, আপনারা ভাল থাকবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।