আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা খাদিজা তার এক বিয়ে না বহু বিয়ে এবং তার বিয়ের সময়ে বয়স ২৫ নাকি ৪০ বৎসর ?!



ইসলামি ইতিহাসের নজিরবিহীন ব্যক্তিত্বদের একজন হচ্ছেন ইসলামের প্রথম মুসলিম নারী, রাসুলের(সা.) একাকিত্বের সাথী উম্মুল মুমেনিন মা খাদিজাজুল কুবরা। "ইসলামের উন্নতি মা খাদিজার সম্পদের কাছে ঋণী" এই উক্তিটি হচ্ছে একটি অতি সত্য কথা; কেননা এতে ইসলামে মা খাদিজার স্থান, মহত্ত্ব ও মর্যাদাকেই উল্লেখ করে। তাছাড়া এই ভদ্রমহিলার জীবদ্বসায় ও হৃদয়বিদারক মৃত্যুর পর (যাকে আমুল হুযন নামকরণ করা হয়েছিল) নবী করিমের(সা.) অসাধারণ সম্মান ও তাঁর প্রতি জীবরাঈলের মাধ্যমে খোদার সালাম পৌঁছিয়ে দেয়া; শুধুমাত্র মা খাদিজার সম্মানিত স্থান ও পদমর্যাদার এক অংশকেই দেখায়। ইসলামের ইতিহাসে যে একটি বিষয় বেশি আলোচিত তা হচ্ছে; রাসুলের(সা.) সাথে বিয়ের পূর্বে মা খাদিজার বার বার বিয়ে, যা কিনা আমার মতে এক ধরনের ভুল ধারনা ও সন্দেহজনক। মনে হয় এর পেছনে কোন অদৃষ্ট হাত রয়েছে যা মা খাদিজার ব্যক্তিত্বকে মলীন করে তুলেছে; অন্যদিকে কিছু মিথ্যা ফজিলত তার সাথে উপস্থাপন করা যা এই মহিয়সী মহিলার উম্মুল মুমেনীন পদবীকে স্থানান্তরিত করেছে।

এবং বত্তুত তারা একাজ করতে সক্ষমও হয়েছে। কিন্তু আলোচিত ভুল ধারণাগুলো হচ্ছেঃ ১। বিবাহের সময়ে মা খাদিজার বয়স এটাই বিখ্যাত(শিয়া সুন্নি নির্বিশেষে) যে রাসুলের(সা.) সাথে বিয়ের সময় মা খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বৎসর এবং রাসুলের(সা.) বয়স ছিল ২৫ বৎসর। অর্থাৎ ১৫ বৎসরের তারতম্য; এবং এই ভিত্তিহীন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তারচেয়ে অধিক বেশি ভিত্তিহীন কথাকে (যেমন রাসুলের(সা.) ইন্দ্রিয়পরায়ণ ও কামুক না হওয়া, যা কিনা স্বয়ং নিজেই রাসুলের(সা.) জন্য একটা বড় ধরণের ধৃষ্টতা ও অসম্মানজনক আচরণ); প্রমান স্বরূপ যেশ করা হল। যা মেনে নেয়া যায়না।

তদুপরি যদি আমরা ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দেই আমাদের জন্য অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে যে এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা মৃত্যুর সময় মা খাদিজার বয়স ৫০ থেকে ৬০ বৎসর উল্লেখ করা হয়েছে (ইয়াকুবি ৫০ বৎসরকে বর্ণনা করেছেন)। অবশ্য তিনি আমুল হুযন বৎসরে অর্থাৎ বে'সতের ১০ বৎসর পর মৃত্যুবরণ করেছেন, তাছাড়া বে'সতের ১৫ বৎসর পূর্বে নবী করিমের(সা.) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যা যোগ করলে মোট ২৫ বৎসর হয়। যদি এই বয়সকে তার মৃত্যুর সময়ের বয়স থেকে বাদ দেয়া হয় তাহলে ২৫ বৎসর বাকি থাকে। অর্থাৎ মা খাদিজা তার বিয়ের সময় নবী করিমের(সা.) সমবয়সি ও ২৫ বৎসরের ছিলেন; আর মশহুর ওলাবৃন্দের মধ্য থেকে বাইহাকি, ইবনে কাসির, ইবনে হিশাম ও হালাবি প্রমূখও এই দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে মতামত পেশ করেছেন।

২। প্রথম ও শেষ বিবাহ এটাই মশহুর(শিয়া সুন্নি নির্বিশেষে) যে উম্মুল মুমেনিন মা খাদিজা বিধবা ছিলেন এবং নবী করিমের(সা.) বিবাহের পূর্বে মুশরেকিনদের সাথে আরও দুটো বিয়ে তার হয়েছিল; শিয়া আলেমদের মধ্যে সৈয়দ মুর্তাযা তার "শাফি"তে, শেখ তুসি তার "তালখিসুশ শাফি"তে ও ইবনে শাহর আশুব "মানাক্বিব" এ এবং সুন্নি আলেমদের মধ্যে বালাযুরি তার "আনসাবুল আশরাফ" এ ও আবুল কাসেম কুফি তার নিজের বইতে এ কথায় বিশ্বাসি যে, إنّ النبی تزوّجت بها و کانت عذراء. অর্থাৎ নবী করিম(সা.) মা খাদিজাকে বিয়ে করেছেন আর তখন তিনি কুমারি ছিলেন। (আরবিতে عذراء শব্দের অর্থ হল: যৌন মিলনের অভিজ্ঞতা হয়নি এমন নারী। অর্থাৎ কুমারি নারী) আর মা খাদিজা কখনই রাসুলের(সা.) সাথে বিবাহের পূর্বে কোন বিবাহ করেননি এবং এটাই ছিল তার প্রথম ও শেষ বিবাহ। এটা কিভাবে সম্ভব যে, অভিজাত, ভদ্রলোক ও কুরাইশ বংশীয়দের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ একজন ৪০ বৎসর বয়সের কয়েক সন্তানের জননী বিধবা মহিলার সাথে বিয়ের প্রস্তাবকারি হতে পারে; যা ঐক্যমত্যে মা খাদিজার একাধিক বিবাহ প্রার্থীর বর্ণনা দেয় যা উল্টো নিজেই তার কুমারী ও অবিবাহিতা যুবতী হওয়ার প্রমান পেশ করে।

বহু বিবাহের নয়। ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।