অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ফুটবল দলের চূড়ান্ত নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল নেপালের কাঠমান্ডুতে ম্যানেজার মিটিংয়ের আগে এই দল ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নাম ঘোষণা নিয়ে এর আগে কখনো এত অপেক্ষা বা আগ্রহ দেখা যায়নি। ১৯৭৩ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রতিবারই ক্যাম্প চলাকালেই চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হয়েছে। এবারই তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। দুই মাসের বেশি সময় ধরে আবাসিক ক্যাম্প এমনকি বেশ কটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পরও কোচ লোডডিক ক্রুইফ চূড়ান্ত দল ঘোষণা করছিলেন না। এ নিয়ে ফুটবলাররা যেমন টেনশনে ছিলেন তেমনিভাবে বাফুফেও বেশ বিরক্ত হয়ে পড়ে। শোনা যায়, ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বার বার দল ঘোষণার জন্য কোচকে তাগাদাও দিয়েছেন।
থাইল্যান্ডে দুই অনুশীলন ম্যাচ শেষে ক্রুইফ নাকি সালাউদ্দিনের কাছে চূড়ান্ত তলিকা পাঠান।
ঈদের পর বাফুফে একাদশের বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচ দেখে সে তালিকা সংশোধনের কথা বলে তা বাদ দেন ক্রুইফ। অতীতে দল গঠন নিয়ে স্বজনপ্রীতি কম হয়নি। যারা ফেডারেশনের দায়িত্বে ছিলেন তারাই তাদের ক্লাবের খেলোয়াড়দের এখানে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ নিয়ে হৈ চৈও কম হয়নি।
কিন্তু কে শুনে কার কথা, যোগ্যের পরিবর্তে অযোগ্যদের স্থান দিয়ে দলকে দুর্বলে পরিণত করেন। ফুটবল পিছিয়ে থাকার পেছনে এটাও বড় কারণ হয়ে দেখা দেয়।
যাক এবারেই প্রথম কোনো কোচ পুরোপুরি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। চুক্তির আগে সালাউদ্দিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন ক্রুইফ বা রেনে কোস্টারের কাজে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করা হবে না। ওরা যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন।
ফলাফল যাই হোক না কেন টুর্নামেন্টের পর কোচের কাছে জানতে চাইব। বাফুফের এই ভূমিকা প্রশংসা করার মতো। কোচকে যেমন স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তেমনিভাবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে কোনো কাজের ঘাটতি রাখেনি। আগে যেনতেন প্রশিক্ষণ হলেও এবার সাধ্যমত সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগে বলা হতো কি পেয়েছে ফুটবলাররা।
এবার বলা হচ্ছে কি বাকি রেখেছে কর্মকর্তারা। সহকারী কোচ, ফিজিও এমনকি প্রথমবারের মতো বিদেশ থেকে গোলরক্ষক প্রশিক্ষকও আনা হয়েছে। সে কারণে প্রশ্ন উঠেছে এমন পরিপূর্ণ প্রস্তুতির পরও চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে বাধাটা কোথায়। তাহলে কি ক্রুইফ তার শিষ্যদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছিলেন না। না মুখে না বললেও বাস্তব ঘটনাটা তাই ছিল।
বিশেষ করে শেষের দিকে অনুশীলন ম্যাচে ক্রুইফ তার শিষ্যদের উপর এতটা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন যে ম্যাচে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত নেপাল যাওয়া আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলে ম্যাচের একদিন বা দুইদিন আগে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করবেন।
শেষ পর্যন্ত করলেনও তাই। আগামীকাল নেপালে বহুপ্রতীক্ষিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পর্দা উঠছে। উদ্বোধনী দিনেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে।
নেপালে শিষ্যদের শেষ পরীক্ষাটা নিয়ে ক্রুইফ দল সাজিয়েছেন। উড়ে যাওয়া ২১ জনের ২০ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা হবে ক্রুইফ আগেই তা জানিয়েছেন। সে কারণে এখানে কোনো চমক থাকার সম্ভাবনা ছিল না। শুধুমাত্র গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান জিয়ার শেষ মুহূর্তে ঠাঁই পাওয়াটা বিস্ময় বলা যায়। কেননা তিন গোলরক্ষকের মধ্যে জিয়া মাসখানেক আগেই ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন।
মামুন খান, বিপ্লব ভট্টাচার্য ও সোহেল তিন গোলরক্ষকের তালিকায় চলে আসেন। অথচ বুধবার দুর্ভাগ্যক্রমে সোহেল ইনজুরিতে আক্রান্ত হলে বিকল্প হিসেবে জিয়াকে কাঠমান্ডুতে নেওয়া হয়। এছাড়া শেষের দিকে ক্যাম্পে ডাক পাওয়া শেখ জামালের মোনায়েম রাজুর চূড়ান্ত দলে জায়গা হয়নি। কারো কারো ধারণা ছিল ডেনমার্কের প্রবাসী ফুটবলার জামাল ভুঞাকে চূড়ান্ত দলে রাখবেন না কোচ। কিন্তু প্রথমবারের মতো কোনো প্রবাসী ফুটবলার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অভিষেক ঘটাতে যাচ্ছে।
অনেক সুযোগ-সুবিধা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাফে এবার চূড়ান্ত দল গঠন হয়েছে। এখন এই যোগ্য খেলোয়াড়রা মাঠে কতটা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন সেটাই দেখার বিষয়। বাংলাদেশে টার্গেট নিঃসন্দেহে শিরোপা। বাস্তবে সেই সামর্থ্যও রয়েছে। অথচ প্রতিবারই ফেবারিট থাকার পরও চূড়ান্ত লড়াইয়ে ফুটবলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন না।
গতবার প্রতিপক্ষ হিসেবে তেমন কোনো শক্তিশালী দল না থাকলেও গ্রুপ পর্ব খেলে বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হয়েছিল। অথচ এবার গ্রুপেই মোকাবেলা করতে হবে নেপাল, পাকিস্তান ও ভারতের মতো টপ ফেবারিটের বিপক্ষে। এক্ষেত্রে সেমিতে যেতে কঠিন লড়াইয়ে সম্মুখীন হতে হবে তাদের। সেক্ষেত্রে উদ্বোধনী ম্যাচটিই ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। নেপালকে হারাতে পারলে বাংলাদেশর সেমিফাইনালের পথটা বেশ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
দেখা যাক শুরুটা মামুনুলরা কেমন করেন। পুরো দেশই চেয়ে থাকবে তাদেরই দিকে।
বাংলাদেশের চূড়ান্ত দল
মামুন খান, বিপ্লব ভট্টাচার্য, জিয়াউর রহমান জিয়া (গোলরক্ষক), ওয়ালি ফয়সাল, আরিফুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মো. লিংকন, আতিকুর রহমান মিশু, রায়হান হাসান (রক্ষণভাগ), মামুনুল ইসলাম (অধিনায়ক), মোবারক হোসেন, জামাল ভূঞা, ওমর ফারুক বাবু, সোহেল রানা, জাহিদ হোসেন (মধ্যমাঠ), তকলিস আহমেদ, জাহিদ হাসান এমিলি, ওয়াহেদ, মিঠুন, শাখাওয়াত হোসেন রনি (ফরোয়ার্ড)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।