আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

BEST UMMAH (সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেশন )

"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"

বর্তমান বস্তুবাদী দুনিয়াতে আমাদের চারপাশে অনেক কিছু উদ্ভাবিত হয়েছে যা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করি। এমন এক সময় ছিল আমরা বর্তমানে যা ব্যবহার করছি তা কল্পনাও করা যেত না। উন্নত টেকনলজি, সেই সম্পর্কিত জ্ঞান, অর্থকরী বর্তমান বস্তুবাদী দুনিয়ার উন্নত জাতির মাপকাঠি। কিন্তু আমাদের জীবনটা কি তাতে সহজ হয়েছে? বা এমন হয়েছে যে আমরা এমন এক জায়গায় পৌছে গেছি যেখানে আমাদের ইচ্ছাগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে? হয়নি কিন্তু! আয়শা (রা) কতৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করল, মানব জাতির মধ্যে কারা সবচেয়ে উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই জেনারেশন যার সাথে আমিও আছি, এরপর দ্বিতীয় জেনারেশ (অর্থাৎ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেনারেশনের পরেই এসেছেন; তাবেঈন) এরপর তৃতীয় জেনারেশন (অর্থাৎ যারা দ্বিতীয় জেনারেশনের পরে এসেছেন; তাবে-তাবেঈন)। Muslim :: Book 31 : Hadith 6159 ইমরান বিন হুসাইন (রা) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম জেনারেশন হচ্ছে আমার জেনারেশন, এরপর দ্বিতীয় সর্বোত্তম হবে তারাই যারা তাদের(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জেনারেশ) কে অনুসরন করবে, এরপর তারা যারা দ্বিতীয় জেনারেশকে অনুসরণ করবে।

Bukhari :: Book 8 :: Volume 78 :: Hadith 686 আমি যখন প্রথম এই হাদীসটি পড়ি তখন বিষয়টি আমার কাছে ততটা পরিস্কার হয়নি কিন্তু কিছুদিন পর যখন আমি বাস্তব জীবনের ঘটনা দিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করলাম তখন বিষয়টি আমার নিকট একদম পরিস্কার হয়ে উঠল, আলহামদুলিল্লাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জেনারেশনকে সর্বোত্তম বলেছেন, কারণ, সে সময়কার বিশ্বাসীরা ছিল দৃঢ়চেতা। তাঁরা যা বিশ্বাস করতো তা তাঁদের কর্মে সম্পাদন করতো, আল্লাহ তাআলাকে সর্বাধিক ভয় করতো অর্থাৎ সর্বাধিক তাকওয়া সম্পন্ন ছিল। কোন কিছুর বিনিময়ে তাঁরা তাওহীদ বিশ্বাস থেকে বিন্দু মাত্র বিচ্চুত হতো না এবং তাওহীদ বিশ্বাসের ফলে তাঁদের উপর যে সকল কর্তব্য বর্তায় তা তাঁরা সম্পূর্ণরুপে বাস্তবায়ন করতো আর বাস্তবায়ন করেই ক্ষান্ত হতো না তাঁরা প্রচুর কান্নাকাটিও করতো আল্লাহর নিকট যাতে করে তাদের কর্মগুলো আল্লাহ যেভাবে চান সেভাবে যেন হয়। কর্ম সম্পাদন করে তাঁদের মধ্যে কোন অহংকার ছিল না, তাঁরা ছিলেন খুবই বিনয়ী।

তাঁদের কারণে কোন মানুষ দুঃখ পায় কিনা বা কারো অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে কিনা বা কেউ তাঁর সাথে কথা কিংবা যোগাযোগ করতে ভয় পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলেন। তাঁদের জীবন যাপন ছিল আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর ভয় ব্যতীত অন্য কোন কিছুর পরওয়া তাঁরা করতেন না। এবার বাস্তব জীবনের কিছু উদাহরন দিই, আমরা যখন কোন কাজের জন্য কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে দেখা করতে যাই, তখন কত শত নিয়ম কানুন আমাদের মেনে চলতে হয়। একটা নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সময়ে সেই বিশিষ্ট জনের সাথে দেখা করতে হবে, তার সাথে সম্মানের সাথে তোয়াজ করে কথা বলতে হবে, সমীহ ভাব থাকতে হবে প্রভৃতি। সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আবার নিরাপত্তার চাদরে প্রাসাদসম বাড়িতে ঢাকা থাকেন, চারদিকে এমন একটা আবহ তাদের পাশে বজায় থাকে যাতে করে সাধারণ মানুষেরা তাদের ভয় পায়, সমীহ করে, শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে প্রভৃতি।

সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আবার ভয় পান এবং তারা তাদের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন যে তারা না থাকলে এ জাতি শেষ হয়ে যাবে। যাই হোক, কিছুদিন আগে আমাকে এরকম পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিল। কতশত নিয়ম, কত নিরাপত্তা, নির্দিষ্ট সময় ছাড়া দেখা দেন না। আমি এত কষ্ট করে এতদূর থেকে যাই খুবই সামান্য কিছু কাজের জন্য যা করতে হয়তো মিনিট পাঁচেকও লাগে না। কিন্তু কি আর করা, বস্তুবাদী দুনিয়া তাদের যে সম্মান, নিরাপত্তা দিয়েছে তা সাধারণ মানুষের জীবনকে কঠিন করেছে আর বিশেষ কিছু করে নি।

যখন তাদের সাথে দেখা করতে যেয়ে ব্যর্থ হই তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসটির মর্মার্থ হারে হারে বুঝতে পারি। উমর (রা) অর্ধ জাহানের মালিক ছিলেন, ভিনদেশী দূত এসে দেখল গাছতলায় ঘুমাচ্ছেন, উমরা (রা) রাতের বেলায় বেড় হতেন তাঁর রাজ্যের মানুষদের দেখার জন্য! বর্তমান বাস্তব দুনিয়ার সাথে এই ঘটনাটি মেলান আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসটি উপলব্ধি করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু শুধু তাঁর জেনারেশনকে সর্বোত্তম বলেননি। আজকে যারা ক্ষমতায় আসীন হন বা একটু ক্ষমতার ভাগীদার হন বা কিছু সম্পত্তির মালিক হন আর কিছু আলোচিত প্রতিষ্ঠান থেকে বস্তুবাদী জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে একটা কিছু ভাবতে শুরু করেন তারা মানুষের জীবনকে আরো কঠিন থেকে কঠিনতর করছেন আর কিছু নয়। বর্তমান বস্তুবাদী দুনিয়ার এক নম্বর ইউনিভার্সিটি হাভার্ড, কত জ্ঞানী গুণী শিক্ষকরা সেখানে জ্ঞান দান করেন কিন্তু একজন উমর (রা) ও তৈরী করতে পারছে না। উমর (রা) যাকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন, যার জীবন আদর্শ তাঁকে সর্বোচ্চ তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তি হতে সাহায্য করেছে তিনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

উমর (রা) এর জ্ঞান প্রজ্ঞা মানুষকে দূরে ঠেলে দিত না বরং কাছে টেনে নিত, মানুষকে আল্লাহ ভীতি হতে সাহায্য করতো। উনি এমন ছিলেন না যে, উনাকে মানুষ ভয় করবে বরং মানুষকে তিনি এতই স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে সামনা সামনি জনগন তাঁর সমালোচনা করতো। উনি এমনও মনে করতেন না যে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে না থাকলে মুসলিম উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে, যদি মনে করতেন তাহলে আর গাছতলায় ঘুমাতেন না। অর্থাৎ ভয় করতেন একমাত্র আল্লাহকেই, অন্য কাউকে ভয় করে নিরাপত্তার চাদরে নিজেকে ঢেকে রাখতেন না। লেখা আর বড় করবো না, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীদের জীবন ছিল একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে, তাদের ঈমান ছিল স্বচ্ছ।

তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের কর্ম ছিল আল্লাহকে ভয় করে। এখানে শুধু উমর (রা) এর ঘটনাটি উল্লেখ করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জেনারেশনকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন আর তা যে কতটা বাস্তব তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জেনারেশনকে অনুসরণ করবে তারা যে সেই জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেশন হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের খুব যত্নের সাথে ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছেন আর তাঁরাও আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করে সে কর্মগুলো সম্পাদন করতেন কেননা, কোন গুণাহ হয়ে গেলেই তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দৌড়ে আসতেন, কান্নাকাটি করতেন, আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করবেন কিনা তার জন্য।

এই যে আল্লাহকে সর্বোচ্চ ভয় করা, সর্বোচ্চ তাকওয়া সম্পন্ন তাঁরা হয়েছিলেন তা সম্ভব হয়েছিল কারণ তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন আদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়েছিল। তাই মুসলিম ভাইয়েরা আসুন, সাহাবীদের মতো করে আল্লাহকে ভয় করি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্মনীতিকে আকড়ে ধরি। ইনশাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন এবং সহীহ ভাবে জীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দিবেন। আমীন। আকুলু কাউলি হাযা ওয়া আস্তগফিরুল্লাহ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।