আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭১এ বোম্বের বালকেরা বাংলাদেশীদের জন্য বলেছিলঃ পালিশ করি জুতো মুছিয়ে দিতে ক্ষত (পর্ব-৩)

ব্যস্ত শহর ঠাঁস বুনটের ভিরে আজো কিছু মানুষ স্বপ্ন খুজে ফিরে........

সিকিম ও কাস্মিরের ভুখন্ড বড়দের বাট্টা হতে পারে কিন্তু রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ নয়- পর্ব ১ CIA এন্টি কম্যুনিজম মিশনঃবাংলাদেশে ধর্মিয় উগ্রতা বিস্তারে প্রথম বীজ (পর্ব-২) ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধ,অখন্ড পাকিস্তানের অংশ হিসাবে সেই যুদ্ধে ভারত আমাদেরও প্রতিপক্ষ ছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্র যন্ত্র তথা সামরিক শক্তি সম্পুর্ন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্বে চলছিল। সবচেয়ে অবাক হবার বিষয় সেই যুদ্ধ্বের সময়টাতে পুর্ব পাকিস্তান আর ভারতের সীমান্ত ছিল সম্পুর্ণ অরক্ষিত। পাকিস্তান সেনা বাহীনি কোন রকম নিরাপত্তা দান না করে সকল শক্তি পশ্চিম পাকিস্তান আর ভারতের সীমান্তে নিয়োজিত করে!কাস্মির নিয়ে সে যুদ্ধ্ব শুরু হলেও সেটি ছিল স্টেট ওয়ার। ভারত পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান অতিক্রম করে সে যুদ্ধে লিপ্ত হয় অগাস্টের ৫ তারিখ।

পুর্বপাকিস্তানকে অরক্ষিত রেখে পুর্ব পাকিস্তান রাইফেলস কে পর্যন্ত সেই যুদ্ধে লাগানো হয়। সে সময় মাত্র ১৬ টি প্লেন ছিল পুর্ব পাকিস্তনানে,ছিলনা কোন ট্যাংক। যুদ্ধের এক পর্যায়ে পুর্ব পাকিস্তান বেইজ ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানের যুদ্ধ বিমান উড্ডয়ন করে সেই যুদ্ধে ভারতের বিপক্ষে অংশ নেয়। অবশেষে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে অমীমাংসিত অবস্থায় যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে হয়। বারবার আমাদের নিরাপত্তার কথা তখন উত্থাপন করা হলেও পশ্চিমারা ছিল নিরব।

নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলেও সেদিন তারা রম্য সুরে বলে ছিল "তোমাদের যদি তারা নিয়ে যায়,তবে আমরা দিল্লি দখল করে নেব"!!!! সামরিক তথ্যের সুত্রঃ ডন এর আর্কাইভ থেকে: Reflections on two military presidents ও ডিফেন্স জার্নাল থেকেঃ The Pakistan Army(From 1965 to 1971 আজ ৬ ডিসেম্বর। এই দিনটি এক দিক দিয়ে খুবই গুরুত্ব পুর্ণ,কারন দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দান করে। আর এর ফলে বিশ্বের অন্যকোন রাষ্ট্রের কাছে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকে না। ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধে ভারতের যে সাহায্য সেটি কি কেবল রাজনৈতিক সাহায্য ছিল?সেই সাহায্য কি কেবল ভারতের রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ থেকে ছিল?এই প্রশ্নের জবাব জানাটা খুবই জরুরী বলে আমি মনে করি। বোম্বে শহরের বালকেরা পাকিস্তানিদের সেই বর্বতায় ক্ষত বিক্ষত বাংলাদেশের ক্ষত মুছে দিতে রাস্তায় নামে,সারাদিন জুতা পালিশ করে যা উপার্জন করে সেই টাকা দান করে বাংলাদেশের সাহার্য্যার্থে!মানবতার জন্য এর চেয়ে উতকৃষ্ঠ উদাহারন আর কি হতে পারে?তারা সেদিন লিখে ছিল "We shine shoes to help heal the bruise"... "পালিশ করি জুতা মুছে দিতে ক্ষত" ভারতের অনেক সংস্কৃতিকর্মীও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন।

তাদের মধ্যে পন্ডিত রবিশংকর, চিত্রনায়িকা ওয়াহিদা রহমান, চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের নাম উল্লেখযোগ্য। এখানে উলেখ্য কন্সার্ট ফর বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোগতা রবিশংকর ছিলেন। অন্যদিকে বোম্বে থেকে ২০০২ সালের মুক্তি প্রাপ্ত "16th December" নামক মুভিতে,পাক-ভারত দ্বন্দের ফাঁকে স্পষ্ট বলা হয়েছে ৭১ এ পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্মসমর্পন করেছে!!! আমি অবাক হয়েছিলাম সেই মুভির পর বাংলাদেশ থেকে কোন প্রতিবাদ করা হয়নি। পাঞ্জাবের এক ভারতীয় বন্ধু ছিল যে বাংলাদেশকে ভারতের অংশ বলায় গত ৩ বছর আগে ম্যাসেঞ্জারে ঝগরার পর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করি। আমি জানি এমন মন্তব্য করার মত ভারতীয় নাগরিকের হয়ত সংখ্যা কম হবে না।

কিন্তু মিত্র বাহীনির যারা কমান্ডার ছিল,সেই Sam Manekshaw,Jagjit Singh Aurora ও J F R jacob তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে যে হৃদয় স্পর্শী বর্ননা তাদের লেখনিতে (কলাম,বই)দিয়েছেন,কোন ভিন দেশি মানুষ আমাদের গৌরবকে এভাবে উচ্চারিত করতে পারে ভাবতে অবাক হতে হয়। । তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে কোন ভাবেই ছোট করে দেখেন নি। তারা নিজেদের কৃতিত্ত্বকে কোথাও বড় করে দেখান নি। এই সিরিজের সমাপ্তি এই পর্বে টানা সম্ভব হচ্ছে না।

উপসংহার যা আগামী ও শেষ পর্বে টানব সেটির জন্য আরো কিছু কথা সংক্ষেপে সামনে আনা দরকার। ১)মুজিবকে ইসলাম বিরুধী বলে একটা প্রচারনা সবসময়েই ছিল। কিন্তু এই তথ্য গুলি জানা সকলের উচিত ,মুজিব বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে স্থান দিলেও OIC এর সদ্যস্য পদের জন্য আবেদন করেন ও সম্মেলনেও যোগ দান করেন। যদিও তার আমলে সদস্য পদ দেয়া হয়নি। মুজিবের শাসনামলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আর সবচেয়ে গুরুত্ব পুর্ণ একটা তথ্য হলো,৭৫ এর পুর্বে বাংলাদেশে মদের লাইসেন্স প্রদান করা হত না। ২)এই আধুনিক বিশ্বে আমার জানা মতে এমন নজির হয়ত নাই,যা ভারত বাংলাদেশি চ্যানেল তাদের ওখানে প্রচার নিশিদ্ধ্ব করে স্থাপন করেছে । ৩)টিপাই মুখি বাঁধ নিয়ে বর্তমান সরকারের দায় সারা কথা ব্লগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে,ভারত এই বাঁধ নির্মানকে ক্ষতিকর না ভাবলেও,যখন চীন ভারতের উজানে বাঁধ নির্মানের কথা তুলে প্রতিবাদে ফেটে পরে ভারত!!!!!(এই কথা গুলি এখানে তোলার একটাই উদ্দেশ্য,উপসংহার টানার সময় এ সবের বিবেচনার দরকার আছে) ৪)বিডিআর বিদ্রহের পর অনেকেই ভারতের দিকে আঙ্গুল তুলেছে,কিন্তু যে দিকটি খেয়াল করা দরকার সেই ৩ দিন বাংলাদেশের অরক্ষিত বর্ডারের পরেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা কেবল রক্ষা পেয়েছে বি এস এফ এর বর্ডার সিল করে রাখার কারনেই। তা না হলে এ কদিনে যে অবৈধ্য পন্য,অস্ত্র,ড্রাগ প্রবেশ করত সেটি থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ সেই বি এস এফ এর কল্যানে যার হাত আমার দেশের ভাইয়ের রক্তে লাল। আশা করি আগামি পর্বে সমাপ্তি সুচক উপসং হার টানব, এই তিন পর্বের নানা পয়েন্টের উপর।

আশা করি সাথে থাকবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।