আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!
টাইম ট্রাভেল
আমি রুমে বসে স্টুয়ার্সের ধারা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। জিনিসটা বেশ জটিল, একটা জায়গায় এসে বারবার ভুল করছিলাম। গণিতবীদ স্টুয়ার্স এই ধারাটি আবিষ্কার করেন। প্রকৃতির নানা ঘটনা এই ধারা মেনে চলে। এই ধারার আবিষ্কৃত শেষ দুটি সংখ্যা আমার আবিষ্কার করা, যা মাসিক অ্যাবেল পত্রিকার গত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
পরবর্তী সংখ্যাটা কি হবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। এমন সময় রুশো বলল,
“রবীন, আমার এই সমীকরণটা একটু দেখবে?” আমি ওর কথায় বেশ অবাক হলাম, কারণ ও পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র আর আমি গণিতের। ওর সমীকরণ আমার বোধগম্য হবার কোন কারণ নেই। তবু আমি উঠে গিয়ে ওর টেবিলের পাশে দাঁড়ালাম। ও একটি খাতা বাড়িয়ে দিল।
খাতাটি বিভিন্ন রকমের সমীকরণে ভর্তি, যা আমার কাছে অর্থহীন। আমি ওর দিকে খাতাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
“সরি, আমি এসবের কিছুই বুঝতে পাছি না। ”
“প্লিজ একটু ভাল করে দেখ বুঝতে পারবে। ” আমি ওর কথায় আবার ভাল করে দেখতে লাগলাম। খাতাটিতে পদার্থের বিভিন্ন সূত্র এবং ক্যালকুলাসের কিছু সমীকরণ ছাড়া কিছুই আমি বুঝতে পারলাম না।
“তুমি একটু বিষয়টা বুঝিয়ে দাও তাহলে হয়ত আমি কিছু বুঝতে পারব। তাছাড়া এটা তোমার টিচার কে দেখালেই বোধহয় ভাল হবে। ”
“স্যার একটা কনফারেন্সে একটু দেশের বাইরে আছেন। ঠিক আছে ব্যাপারটা আমি তোমাকে বোঝাবার চেষ্টা করতে পারি। দেখ.......।
” এই বলে ও শুরু করল আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, যখন বুঝতে পারলাম ও কত বড় একটা আবিষ্কার করতে যাচ্ছে। ও আমাকে বুঝাচ্ছিল কীভাবে আপেক্ষিক তত্ত্ব ও ক্যালকুলাসকে সমন্বিত করে একটি সাধারন সমীকরণ দাঁড় করানো যায়। আমি গণিতের ছাত্র হলেও জানি রুশো যে সমীকরণটা দাঁড় করেছে তা যদি শুদ্ধ হয় তবে এই সমীকরণটা হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। কারণ এই সমীকরণটিই তখন বলে দেবে বিগ ব্যাং এর সময় ঠিক কী ঘটেছিল এবং কীভাবে বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়। এক জায়গায় এসে রুশো থামল, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল সমস্যাটা এখানে।
“কেন? এখন পর্যন্ত তো ঠিক আছে বলেই মনে হচ্ছে। ”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে, কিন্তু আসলে,কোথাও ভুল আছে। সেটাই বের করতে পারছি না। তুমি যেহেতু গণিতের ছাত্র তাই তোমাকে দেখালাম, কারণ ক্যালকুলেশনগুলো আমার থেকে তুমি বেশি ভাল বুঝবে। ”
“সমীকরণে ভুল আছে এমন কথা বলছ কেন?”
“দেখছনা এখানে সময়ের মান ঋণাত্মক, যা কখনও সম্ভব না।
”
“একটু বুঝিয়ে বলবে?”
“আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী আলোর গতিতে চলমান বস্তুর সাপেক্ষে সময় স্থির এবং আলো থেকে অধিক গতি সম্পন্ন কিছু থাকতে পারে না। সময় স্থির অর্থাৎ ধ্র“ব সুতরাং সময়ের ডিফারেন্সিয়েসান করলে তার মান শূন্য হবে, ঋণাত্মক হয় কীভাবে। ”
“সময় স্থির হয় কীভাবে! সময় একটি চলরাশি না? সময়কে চলরাশি ধরে কর তাহলে হয়ত ঠিক হবে। ”
“আমিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু সময়কে চলরাশি ধরেও একই মান আসছে।
তাছাড়া আলোর গতিতে চলমান বস্তুর সাপেক্ষে সময় স্থির। আমরা বর্তমান সময়টাকে শূন্য ধরলে এই সমীকরণ অনুযায়ী অতীতে চলে যেতে পারব। ”
“তুমি বর্তমান সময়টাকে শূন্য ধরছ কেন? এই সময়ের একটা মান আছে না?”
“সমীকরণে সময়ের ঋণাত্মক মান আসছে, সুতরাং সমীকরণে কোন একটা যায়গায় সময়ের মান শূন্য; সেই সময়টা যদি বিগ ব্যাং সংঘটনের সময় হয়, মানে অন্যান্য পদার্থবিদ সেই সময়টাকেই শূন্য ধরেন, তাহলে এই সমীকরণে সময়ের যে মান দিচ্ছে তা হবে বিগ ব্যাং এর কিছু সময় পূর্বেকার, কিন্তু কথা হচ্ছে বিগ ব্যাং এর আগে কি আদৌ কোন সৃষ্টি ছিল? কিংবা সময়?”
এরপর আমার আর স্টুয়ার্সের ধারা নিয়ে গবেষণা করা হল না। রুশোর সাথে মেতে গেলাম সমীকরণের ভুল বের করতে। আমি প্রথম বারের মত অনুভব করলাম ম্যাথের মত ফিজিক্সও অনেক বেশি নেশা ধরায়।
সমীকরনের মাঝে একবার গভীরভাবে প্রবেশ করলে কখন যে সময় পার হয়ে যায় বুঝতে পারতাম না। কিন্তু আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে সমীকরণটি আগের অবস্থানেই থেকে গেল। আমরা কোনভাবেই সময়ের মানটা ঠিক করতে পারলাম না। আবার ওদিকে রুশোর টিচার হঠাৎ অসুস্ত হয়ে পড়ায় বেশ কিছুদিনের ছুটিতে আছেন। তাই দুজন মিলে একটি কঠিন সিদ্ধান্তে এলাম, আমরা সমীকরণটা পরীক্ষা করে দেখব।
এই কাজটি আরও কঠিন হয়ে পড়ল। রুশোর সমীকরণ ব্যবহার করে আমরা দুজনে একটি টাইম মেশিণ তৈরী করলাম। কাজটি শেষ করে একটি কুকুরকে অতীতে পাঠালাম। পাঠালাম বটে, কিন্তু কুকুরটি কোথায় গেল তা আর জানতে পারলাম না। তাই ঠিক করলাম আমরা দুজনেই যাব অতীতে।
ভাবতেই শিহরিত হচ্ছিলাম। আমরা আবার বর্তমানে ফিরে আসার জন্য ছোট্ট একটি মহাকাশযান তৈরী করলাম, যার গতি হবে আলোর গতির কাছাকাছি। মহাকাশ যানটির ইঞ্জিন চালাবার জন্য যে প্রচন্ড শক্তি দরকার তার জন্য বসুজেনাম ব্যবহার করলাম। এটা বাংলাদেশের বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর নামানুসারে নাম করণ করা হয়েছে, এই পদার্থ নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ায় ইউরেনিয়ামের চেয়ে দশগুন বেশী শক্তি নির্গত করে। সবকিছু শেষ করে আমরা ০৩.০১.৩০০৭ তারিখে রওনা দিলাম।
================================
আমরা একটি পাহাড়ের মালভূমিতে এসে ল্যান্ডিং করলাম। ল্যান্ডিং করা নিয়ে যে ভয় ছিল তার অবসান হল ঠিক মত ল্যান্ডিং করায়। আমরা দুজন স্পেস সুট পরে বের হয়ে এলাম। এয়ার স্যাম্পুল নিয়ে পরীক্ষা করলাম। সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু বাতাসে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিশে আছে প্রচুর পরিমাণে, যা আশঙ্কাজনক।
তারপরেও আমরা সুট খুলে পাহাড় থেকে নেমে এলাম, এসে দাঁড়ালাম সাগর তীরে। আমাকে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুশো বলল,
“পাহাড়ের মত এখানের মাটিও লাল! ”
“আমার মনে হচ্ছে এটা মঙ্গল গ্রহ”
“ঠিকই বলেছ, আমারও তাই মনে হচ্ছে। ”
“তারমানে আমরা অতীতের পরিবর্তে ভবিষ্যতে চলে এসেছি! কারণ যখন আমরা পাড়ি জমাই তখনই মঙ্গলকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছিল ” আমরা কথা বলছি এমন সময় দুজন বালককে এগিয়ে আসতে দেখলাম। আমরা ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই, ওরা দৌড়ে পালিয়ে গেল। আমরা বেশ অবাক হলাম।
কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হল, তার পর আকাশে চাঁদ উঠল, একসাথে দুটি। রুশোর দিকে তাকাতেই, ও নীরবে মাথা, দোলাল।
“আসলেই আমরা মঙ্গল গ্রহে চলে এসেছি। ” আরও কিছুক্ষণ পর আমাদের মাথার উপর দিয়ে দুটি ফাইটার প্লেন উড়ে গেল। আমি এবং রুশো কেবল স্পেসশীপে এসে পৌঁছেছি এমন সময় আমাদের পাশের পাহাড়ে একটি বোমা ফাটল।
বোমার আঘাতে আমাদের পাহাড়টা কেঁপে উঠল। আমরা দুজনে একটি সাদা কাপড় হাতে নিয়ে দ্রুত শীপ থেকে বের হয়ে এলাম। সাগরে একটি যুদ্ধ জাহাজকে ভেসে থাকতে দেখলাম, আমাদের মাথার ওপর দিয়ে আবার দুটি ফাইটার প্লেন উড়ে গেল। জাহাজ থেকে আবার গোলা বর্ষণ হল, একটি প্লেন ভূপাতিত হল। অপর প্লেনটি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেল, মুহুর্তে জাহাজটিকে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করল।
কয়েক সেকেন্ড পর জাহাজটি বিষ্ফোরিত হল। আমাদের তীরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া করার কিছুই নেই। বুঝতে পারলাম এখানে ভয়ানক যুদ্ধ চলছে, তাই বাতাসে তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ এত বেশী। তীরে একটি লাশ ভেসে এল, লাইফ জ্যাকেট লাশটিকে ভাসিয়ে রেখেছে। আমি লাশটার দিকে এগিয়ে যেতেই ভুল ভাংল, লোকটি আসলে আহত হয়েছে।
আমরা দুজনে লোকটিকে অনেক কষ্টে শীপে নিয়ে এলাম। প্রাথমিক চিকিৎসার পর লোকটির জ্ঞান ফিরল। কিছুক্ষণ পর আমরা ওকে কিছু পানীয় খেতে দিলাম, ফলে আরও একটু সুস্থ হয়ে উঠল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম,
“ আপনার নাম?” লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বুঝলাম, ও আমাদের ভাষা বুঝতে পারেনি। কিন্তু কিছুক্ষন পর লোকটি অবাক করে দিয়ে বলল,
“পাসওয়ার্ড?” আমি রুশোর দিকে তাকালাম রুশো বলল,
“দেখুন আমরা অতীত পৃথিবী থেকে এসেছি, আমরা আপনার শত্র“ও না মিত্রও না।
......... আমরা আপনার নাম জানতে পারি?”
“সুভাস”
“দেখুন আমরা আপনার কোন ক্ষতি চাই না, কিন্তু নিজেদের কৌতুহল মেটানোর জন্য আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করব......”
“জ্বি বলেন....”
“এটা কততম বিশ্বযুদ্ধ?”
“দ্বিতীয়। ”
“দ্বিতীয়! এটা কীভাবে সম্ভব?” রুশো আমার দিকে তাকালো।
“এটা অবশ্য আমারও জানা নেই, তবে সম্ভবত মঙ্গলে বসতি স্থাপনের পর এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আপনাদের যুদ্ধের কারণ জানতে পারি?”
“কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্র নৃ এর প্রাণীজগত ধ্বংশ করে দিয়েছে? আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো এর প্রতিবাদে যুদ্ধ করছি। কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রও আমাদের সাথে আছে।
” আমি ওর কথা বুঝতে পারলাম না, রুশোর দিকে তাকালাম, সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সুভাসকে বললাম,
“আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না। ”
“আমাদের এই গ্রহে জনসংখ্যা আনেক বেড়ে গিয়েছিল, তাই উন্নত রাষ্ট্রগুলো অনুন্নত দেশগুলোতে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধ শেষে ঠিক করা হয়, আমাদের পার্শবর্তী গ্রহ নৃতে কিছু মানুষ গ্রহান্তর করা হবে। কিন্তু নৃতে অনেক বড় বড় সরিসৃপ জাতীয় প্রাণী ছিল, তাই ওদের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পাঠিয়ে দিয়ে একটা এলাকাকে আমাদের বাস উপযোগী করার কথা ছিল।
সব ঠিকমত হচ্ছিল, কিন্তু একদিন সরিসৃপগুলো আমাদের এলাকাতে আক্রমণ করে। এতে ৪০০ বিজ্ঞানী ও ১০০০ কর্মী নিহত হয়। ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্রতিশোধ নিতে পুরো গ্রহে হিমায়ক পদার্থ ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে ঐ গ্রহের অধিকাংশ প্রাণী মারা পড়বে। অথচ এই ঘটনা অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে গোপন করা হয়।
তাই আমরা আবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। ”
সুভাসের বিশ্রাম দরকার তাই ওকে একা রেখে ঘর থেকে দুজনে বের হয়ে এলাম। রুশো বলল, “মানে আমরা অতীতে আসতে পেরেছি। ”
“হ্যাঁ এবং আমরা এখন পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক কিছু জানি। জানি, কিভাবে ডাইনোসর যুগের অবসান হয়।
মঙ্গলে প্রানের বিকাশ হয়েছিল কিনা। ”
“বর্তমান পৃথিবীকে এই মহামূল্যবান তথ্য দিতে হলে আমাদের সকালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ”
“ধার হ্যাঁ, যদি বেঁচে থাকি। কারণ যে হারে পাশের পাহাড়ে গোলা বর্ষণ হচ্ছে, তাতে একটি গোলা আমাদের শীপে আঘাত হানলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। ”
সাই ফাই ১।
স্বপ্নের শুরু!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।