নোয়াখালীর সর্বত্র সড়ক যোগাযোগে বেহাল দশা। সংকীর্ণ ও ভঙ্গুর সড়কপথ পাড়ি দিয়ে এখনও জেলা সদরে যেতে হয় অনেক এলা-কার মানুষকে। বিশেষত বড় যানবাহন চলাচলের উপযোগী সড়ক না থাকায় জেলার দক্ষিণাঞ্চলের দশ লাখ মানুষকে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর এ অবস্থা বিরাজ করলেও দুর্দশা লাঘবের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, ১৯৬০ সালের পর নোয়াখালীর অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিকল্পনায় আর কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অথচ এ সময়ের পরও নোয়াখালীর দক্ষিণে ভূমি বেড়েছে জেলার এক-তৃতীয়াংশের সমান। এসব স্থানে হয়েছে ব্যাপক জনবসতি।
জেলার পুরনো অংশেও বেড়েছে জনবসতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অথচ অতীতের সীমিত যান চলাচল এবং স্বল্প অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিমিত্তে তৈরি সড়কের ওপর মাঝে মাঝে কার্পেটিং করেই টিকিয়ে রাখা হয়েছে সড়কপথ। তাই পুরনো রাস্তাগুলোর সবখানেই দেখা যায় গর্ত আর খানাখন্দক।
নোয়াখালী সদর থেকে কোম্পানিগঞ্জ, কবিরহাট উপজেলায় যাতায়াত এখনও সরু সড়কপথে। সোনাপুর থেকে পূর্বদিকে পুরনো বেড়ির ওপর পাকা সড়কটিরও বেহাল দশা। আর দক্ষিণে যাতায়াতের জন্য সোনারপুর থেকে আক্তার মিয়ার হাট হয়ে সন্দ্বীপ ঘাট এবং কালিতারাবাজার হয়ে চরজব্বর সড়ক ত্রিশ বছর আগে যে প্রস্থে ছিল তাই আছে। মূলত নোয়াখালীর দক্ষিণে সোজাসুজি ৫০ কিলোমিটার জুড়ে ঘনবসতি হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে। এ এলাকায় এখন পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বাস।
আর হাতিয়া উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের চলাচলও নতুন এ সুবর্ণচর উপজেলার মধ্য দিয়ে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলার কোথাও সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা নেই। এ অঞ্চলের দশ লাখ মানুষের যাতায়াত এলজিআরডি নির্মিত সরু সড়ক দিয়ে। জানা যায়, নোয়াখালী শহরের দক্ষিণপ্রান্ত সোনাপুর থেকে হাতিয়ার উত্তরপাশে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি কোথাও ১২ ফুট আর কোথাও ১৪ ফুট চওড়া। এ সড়কপথটি বড় যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হলেও জনগণের চাপেই কয়েকটি বাস চলাচল করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে।
দক্ষিণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন মালিকরা এ ঝুঁকি নিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জনচলাচল বৃদ্ধি এবং হাতিয়ার সংযোগ সড়ক হওয়া সত্ত্বেও এ রাস্তাটি এখনও সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তরের প্রস্তাবও করা হয়নি। এছাড়া জেলার দক্ষিণাংশে পূর্ব-পশ্চিমে চলাচলের জন্য সড়ক নেই বললে চলে। জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে জোরারগঞ্জ হয়ে ফেনীর সোনাগাজী, কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণাংশ দিয়ে সোনাপুর হয়ে আলেকজান্ডার পর্যন্ত সড়ক প্রস্তাব রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু বছরের পর বছর এ প্রস্তাব পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।
এ সড়কটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সন্দ্বীপের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক সম্পর্কে কথা বললে কালিতারাবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি বাচ্চু মহাজন বলেন, দক্ষিণের দুটি ভাঙা রাস্তা স্বাধীনতার পর থেকে একইভাবে আছে। মাঝে মাঝে জোড়াতালি দেয়া হয়। কিন্তু বৃষ্টি হলেই ভেঙে যায়। দক্ষিণের মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে চরজব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন কবির মাস্টার আমার দেশকে বলেন, চরের মানুষ বলে আমাদের প্রতি যত অবহেলা।
চরে খাদ্য উত্পাদন হয়, সাহেবরা তা-ই খেয়ে বাঁচেন। কিন্তু চরের দুর্ভোগ নিয়ে ভাবেন না তারা। তিনি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট সড়ক বড় যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন। এদিকে চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে জেলা শহর হয়ে সোনাপুর সড়কটি এখনও সরু। এ সড়কটি চার লেন করা হলে জেলা শহরের যানচলাচল সঙ্কটে স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
নোয়াখালী জেলা সড়কের এ বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, নোয়াখালীর সড়ক উন্নয়নে অনেক প্রস্তাব রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কেবল তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে কোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট সড়কটি হাতিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করলেও এ নিয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই বলে তিনি জানান। জেলাটি দক্ষিণে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় নোয়াখালীর সড়ক ব্যবস্থাপনায় নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2009/12/06/8438
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।