আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুল ও ভালবাসাঃ ভাবনার অন্তরালে

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

ভুল ও ভালবাসাঃ ভাবনার অন্তরালে মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র। আর এই বিচিত্র জীবন অসংখ্য ভুলে ভরা। মানুষতো আর ফেরেশতা নয় তাই তাদের জীবনে ভুল হওয়াটাই স্বাভবিক। ভুল ব্যতিত মানুষ মহাপুরুষতুল্য। আমরা কেউ মহাপুরুষ নই।

তাই প্রতিনিয়ত ছোট ছোট ভুল করে যাচ্ছি। তাই মানুষের জীবন মানেই অনেক ভুলের সমষ্টি। ভুল বা শুদ্ধ যাচাই করার ক্ষমতা মানুষের থাকলেও মানুষ অনেক সময় নিজের মনের অজান্তেই ভুল করে বসে। আর ভুল করে বলেই সে মানুষ। কোন সাধারণ মানুষ জীবনে ভুল করেনি এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।

ভুলের মধ্যে দিয়েই মানুষ কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক বুঝতে পারে। যদিও কোন কোন সময় একটা সামান্য ভুলের কারণে মানুষ তার নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি তদুপরি এই অমূল্য জীবনের প্রতি ভীষণ অভিমানী হয়ে ওঠে। আর এই অভিমানী মানুষগুলো সেই ভুলের মাশুল দিতে আরো বেশী ভুল করে বসে। রাগ, অভিমান বা দুঃখ যা’ই বলিনা কেন মানুষ কখনো কখনো নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করে আবার কখনো ভুলের কাছে নতি স্বীকার করে। তবে বার বার ভুলের কাছে বশত্যা স্বীকার করলে জীবনে সাফল্য সেভাবে না’ও আসতে পারে।

ভুল সংশোধন করতে করতে বা ভুলের কারণে বিরক্ত হয়ে কাজে পিছিয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজের বা অন্যের ভুলের কারণে রাগ বা অভিমান না করে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেক মানুষের জীবনে সুখ বা আনন্দের স্থায়িত্ব স্বল্পকালীন সময়ের জন্য। আবার তেমনি দুঃখও কারো জীবনে চিরকালের জন্য জেঁকে বসে থাকেনা। সুখ-দুঃখ সবই মানুষের জীবনে ফিরে ফিরে আসে।

কেউ যদি অতি কষ্টের মধ্যে থেকে ভেবে নেয় তার জীবনে আপাতত সবই শেষ, তবে সেটা মস্তবড় ভুল হবে। সে যাকে শেষ বলে ভাবছে সেটাই হয়তো তার জীবনের শুরু কিংবা শুরু হবার প্রথম পদক্ষেপ, একটা নতুন জীবন গড়ার সূচনামাত্র। কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার আগে ভালভাবে ভেবে দেখা উচিৎ, তার ভবিষ্যতের জন্য একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিৎ। লক্ষ্য স্থির না করে বিরাট কিছু অজর্নের চেষ্টা না করাই ভাল। যে কোন কাজেই নামা না কেন, সেই কাজের পরিণতি বা ফলাফল কি হতে পারে তার স্বচ্ছ একটা ধারণা থাকা উচিৎ।

তাই জীবন গড়ার আগে জীবন কী এবং কেন সেটা ভাল করে জেনে নেয়া দরকার। কখনো কোন দৈব বিপাকে পড়ে বা বিরূপ অবস্থার কারণে চিরাচরিত নিয়মনীতি থেকে কিছুটা সরে যেতে হতে পারে বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে বা কাজে সাময়িক বিচ্যুতি ঘটতে পারে সেক্ষেত্রে নিজের আস্থা ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করা উচিৎ। কারো প্ররোচণায় বা লোভে পরে মানুষ বিপথগামী হতেই পারে আর সেই কারণে কেউ তার চিরাচরিত জীবন থেকে পালিয়ে যাবে বা জীবনের প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলবে এমনটা ভাবা বোকামি এবং কোনভাবেই তা করা উচিৎ নয়। ভ্রষ্ট পথের স্রষ্টা যারা তাদের কাছে থেকে মুক্তি লাভের বা মন্দ পথ থেকে সরে আসার জন্য স্রষ্টার কাছেই প্রার্থনা করা উচিৎ। তার জীবনের সকল শুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা এবং সুন্দর ও সৎ পথের সন্ধান একমাত্র ঈশ্বরই দিতে পারেন।

মানুষের জীবনতো একটাই ‌আর এই জীবনটা প্রকৃত অর্থে কতটা অর্থবহ, কতটা সুন্দর, কতটা বৈচিত্রপূর্ণ, কতটা মোহনীয় আর মায়াময় তা সৃষ্টিকর্তার এক অনুপম সৃষ্টি হিসেবে নিজেকে চিনতে ও বুঝতে পারলেই জানা সম্ভব হয়। মানুষের মনের সুকুমার বৃত্তি ও বিশ্বাস, ঈশ্বর ধ্যানে বা সৃষ্টিকর্তার তপস্যায় পরিশুদ্ধ হয়। সেই ধ্যানে মানব মনের সব পঙ্কিলতা দূর হয়ে সেখানে পবিত্রতা আর শুভ্রতা ফুটে ওঠে। একজন মানুষ সত্যিকার অর্থেই একজন মানুষকে খুঁজে পায়। সেই মানুষ তার জীবনের মূল্য খুঁজে পায়।

নিজের প্রতি অগাধ ভালবাসা সৃষ্টি হয় আর সেই ভালবাসার জোড়েই সে তার নিজের ভুলগুলোকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। সবার কাছে সে বিশ্বস্ত একজন হয়ে দাঁড়ায়। সে তখন জীবনের অর্থ ও বেঁচে থাকার অনুপ্ররণা খুঁজে পায়। আমি নিজেকে খুব ভালবাসি। আমার ধারণা নিজেকে ভালবাসা মানেই জীবনকে ভালবাসা।

জীবনকে ভালবাসা মানেই স্রষ্টাকে ভালবাসা আর স্রষ্টাকে ভালবাসা মানেইতো তাঁর সৃষ্টিকে ভালবাসা। নিজের জীবনকে ভালবেসে টের পাওয়া যায় এই পৃথিবীটা সত্যিই একটা সুন্দর জায়গা। কিছু মানুষের কারণে তা কখনই বিনষ্ট হতে পারেনা। যেমন বিনষ্ট হতে পারেনা এই অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি, নষ্ট হতে পারেনা প্রকৃতি ও মানুষের নিবিড় বন্ধন। পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব ও তৃণের প্রতিও রয়েছে ঈশ্বরের অপরিসীম অনুগ্রহ আর মহানুভবতা।

কারণ সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। বস্তু অবিনশ্বর হলেও ঈশ্বর তাঁর কোন সৃষ্টিকেই চিরকাল বাঁচিয়ে রাখেননা। প্রতিটি সৃষ্টির মৃত্যু বা ধ্বংশ অনিবার্য। প্রতিটি মানুষকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। তবে সবাই আশা করে সেই মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিক কোন মৃত্যু হয়।

আপনজনের নিকট সান্নিধ্যেই হয়। কীট পতঙ্গের মতো কারো মৃত্যু যেন লোকচক্ষুর অন্তরালে না হয়। নিজের প্রতি, মানুষের প্রতি ভালবাসা গভীরতর হলে মানুষ যে কোন মৃত্যুকেই দূরে ঠেলে দিতে চায়। কিন্তু তা পারেনা। অন্যের মৃত্যুতে তার নিজের চোখেও জল গড়ায়।

কেউ দেখুক না দেখুক, ঈশ্বরতো দেখেন- হৃদয়ের গভীর গোপন থেকে নিঃসৃত দু’এক ফোঁটা নির্মল অশ্রুবিন্দু একজনের আত্মাকে সামান্যতম সময়ের জন্য হলেও বিশুদ্ধ ভালবাসার ছোঁয়া দিতে পারে। আপন সৃষ্টির প্রতি ঈশ্বরের অসীম মায়া। তাই একবারের জন্য হলেও নিজেকে একটু ভালবেসে দেখা- সেই ভালবাসায় বিভোর হয়ে অন্যকেও ভালবাসতে চাওয়া। তাজা ফুলের সুবাসের মতো সেই ভালবাসা আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে থাকুক। সেই সুবাসে বিমোহিত হবো তুমি, আমি এবং আমরা সবাই।

ঈশ্বর দূরে বসে মুচকি হাসবেন। মানব সৃষ্টির মূলে হয়তো ভালবাসাই সবচেয়ে বড় রহস্য!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।