আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অণু গল্পের পারমানবিক বিশ্লেষন।

সত্য পথের অনুসন্ধানি

এমনিতেই সকালে অফিসে যাওয়ার আগে বাডির গেইটের দুই পাশের দুই দেবদারু গাছের একটার অবস্তা দেখে মনটা খারাপ হয়েছিল। পাশের কলিগের সাথে পত্রিকার নিউজ নিয়ে আলোচনা অতপর তার মেয়ের পঞ্চমশ্রেণীর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ভাল হওয়ার বিষয়ে আলাপ রত অবস্তায়- অফিসের বস রুমে ঢুকেই রাগত স্বরে আমাকে বললেন " অফিসে কাজ করতে আসছি নাকি গল্প করতে আসছি? বসের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমার মাথায় বাজ পড়ার মত করে একটি শব্দই তোলপাড় শুরু করে দিল " গল্প"। আর নানা মূখি প্রশ্ন--আরে উনি কি জানেন সাহিত্য কি ? উনি কি জানেন গল্প কি? গল্প কয় প্রকার? আরে আমি যদি গল্প করতেই জানতাম তাহলেতো গল্প লিখতে ও পারতাম, নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে মলাট বাঁধা প্রচ্ছদে আমার নামটি ও ছাঁপানো থাকত। যেহেতু বসের উপাধি পেয়েই গেলাম "গল্পকার" তাহলে আজ দেখে নেব গল্পের আগাগোড়া। যেদিন গল্প লিখে নাম হবে সেদিন বসকে বলব দেখে নাও "আমি গল্প এখন করি না, লিখি ও,ছাপায় ও।

সৌজন্য সংখ্যাটা তাহাকে দেবার বাসনা নিয়ে শুরু করলাম আমার পথ চলা গল্পের বাড়ি অভিমুখে। প্রথমেই বুঝে নিলাম অফিসে বসে টেলিফোনে বা পাশের কলিগের সাথে যে কথা গুলো বলা হয় সে গুলো গল্প না, তাহলে তার কি নাম দিব? আড্ডার কথোপকথন?-গাল -গল্প-গসিপ? নাকি এটা ও গল্প যেহেতু এসব কথায় জীবন থাকে, জীবনের বাঁক থাকে,চরিত্র ও তো থাকে!! যাহোক আগোছালো কথা নিয়ে এত না ভেবে একটু গোছানো চিন্তা বা সাহিত্য কি বলে দেখি। টুকটাক লেখালেখি করে এমন বন্ধু শামিমের দ্বারস্ত হলাম ---ফোন দিলাম। আরো অনেকের কথা মনে আসছিল--কবির রনি, রুদ্র, ফকির মালেক, নজরুল, হাজারি, শামান আর বান্ধবীদের মধ্যে লেখা আঁকা করে --জান্নাতুন নাহার, নিম, ফাতেমার নাম । কিন্তু বান্ধবী সবাইতো দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায়, জাপানে, জেদ্দায়।

যা হোক আগে শামিম কি বলে দেখি। আমি ও পড়লাম আকাশ থেকে ---গল্পের এত ব্যবচ্ছেদ দেখে---টেলিফোন রেখে দিয়ে গালে হাত দিয়ে ডান হাতে মাউসটা এলো মেলো নাড়াচ্ছি আর শামিমের মুখ থেকে শুনা শব্দ ---- কেন্দ্রীয় চরিত্র, উপন্যাসের সাথে গল্পের সুস্পস্ট পার্থক্য, রবিন্দ্রনাথের ছোট গল্প, শেষ হইয়া ও হইল না শেষ নামের অতৃপ্তি, সাহিত্যের ভিবিন্ন ধারা, ফিকশন। ইশপের fables, আরব্য রজনীর গল্প , আ্যানিকডৌট(anecdotes) রূপকথার গল্প( fairy tale) গল্পের আদি ইতিহাস । সব শেষে যে শব্দটা বলল সেটাই বেশী করে বাজতে লাগল। "অনু গল্প।

" অনূ গল্প। " অধ্যায়ন কালে রসায়নে molecular structure পড়ার সময় অনু শব্দের সাথে- এটমের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, কিন্তু গল্পে কি ভাবে এই শব্দ আসে? সে চাইলেতো পারত "ক্ষুদ্র গল্প "নাম দিয়ে বলতে। কারন অনু বলতে তো বুঝি পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম। যা হোক কম বুদ্ধির মাথায় এত বেশী চিন্তা করলে শেষে গল্পই লিখতে পারব না। নাম যাই হোক ব্যাপারটা পছন্দ হয়েছে ---"অনু গল্প"।

যেহেতু অলস হিসাবে আমার বেশ নাম আছে এবং হাল ফ্যাশনের প্রতি অনুরাগ আছে এবং পৃথিবীটাও দিন দিন ব্যস্ত এবং ছোট হয়ে আসছে তাই নেমে পড়লাম এই অনূর পিছে পিছে। এই অনুগল্পের ইলেকট্রন প্রোটন, এবং তার নিউক্লিয়াসের বারটা বাজাব। মনে মনে ধরে নিলাম গল্প একটি যৌগ আর তাহার একটি এককের নাম অনুগল্প। মনে মনে পানির H2O হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন অনুর কথা ভাবতেছিলাম। আবার লাগালাম ফোন শামিমকে।

ফোন দিয়েই বললাম ভাই একটু বুঝাই দাও এই অনু গল্পটা কি ও কেন? সে আমাকে দেখা করতে বললেন মধুদার নান কাবাবের দোকানে । যেহেতু নেমেই পড়েছি গল্প লিখব এবং লিখলে একদম আপডেট ধারাটাই লিখব তাই তার সাথে দেখা করার মনস্থির করি এবং বসের ঘোমরা মুখের উপর বলে এসেছি আজকে লান্চের পর অফিসে আসতে পারব না, কাজ আছে। নিরিবিলি কোণের টেবিলটাতে বসে কুশলাদির পর শামিম বিশেষজ্ঞের মত করে বলতে শুরু করলেন, "আসলে জীবন এবং জীবনের ঘটনা গুলোকে অনন্য কুশলতায় পাঠকের সামনে তুলে ধরতে পারার নামই আসলে সাহিত্য বা সৃজনশীল কর্ম। কি কি কুশলতা জানতে চাইলে উত্তরে বলল-- বাক্যবিন্যাস, চৌকস উপস্থাপনা, থ্রীল, এডভেন্চার, উপমা, সর্বোপরী ট্রিকস, ক্লাইমেক্স, ক্রাইসিস,টার্নিং পয়েন্ট। বিশেষ বৈশিষ্টের কারনে এক একজন এক একটা নাম দিয়েছে, যেমন রবিন্দ্রনাথের ছোট গল্প ---এটি ও একটি গল্পই ।

উপন্যাস একটু বড় পরিসরে জীবনকে আনে আর গল্প কম পরিসরে জীবনের ঘটনা গুলোকে আনে । আর অনু গল্প হবে পরিসরে ছোট করে একটি ঘটনাকে কেন্দ্রকরে কম ডালাপালার বিস্তার ঘটিয়ে (নতুন কুড়ি পর্যন্ত) কিছুটা তৃপ্তির- অতৃপ্তির মিশ্র অনুভুতি জাগিয়ে পাঠককে গল্পের স্বাধ দেয়া। "অনূ" নামটা আসলে সাইজের জন্য। কোন ভাবেই যেন এটা গল্পের বৈশিষ্টের উপর আঘাত না হানে। Short stories tend to be less complex than novels. Usually, a short story will focus on only one incident, has a single plot, a single setting, a limited number of characters, and covers a short period of time. বেশী নেরেটিভ না করে চরিত্রের ডিটেইসল পরিচয়ে না গিয়ে ঘটনাটাকে মুখ্য করে চমৎকার উপস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে টেনে এনে দিতে পারলে অনূ গল্পের অবয়বটা পাবে এটুকু বিশ্বাস এবং ধরনা রাখেন বলে জানায়।

সম্প্রতি তার পড়া একটা গল্প--- জুঁই কোথায় যায় এর উদাহরন টানেন। গল্পকার শুভ "জুঁই একটা রাস্তায় রিকসার জন্য অপেক্ষা করছে"--এই একটি লাইনকে উপজীব্য করে একটা অনু গল্প দাঁড় করিয়েছেন। আমি পড়ব , দেখব বলে মাথা নাড়ছি আর শামিম বলে চলেছেন। " গল্প বা ঘটনা বেশীর ভাগ ফ্লাস ব্যাকে না নিয়ে চলমান বা ফরোয়ার্ডে লিখলে গতিময়তা পায় , ঘটনার একদম শুরু থেকে বা মাঝখান থেকে শুরু করে ও ঘটনা এগিয়ে নেয়া যায়। নিজস্ব মুনসিয়ানায় , উপমায়, উপস্থাপনায় সাধরন একটা ঘটনাকে ও অসাধরন করে পাঠকের সামনে তুলে ধরা যায়।

বাক্যের ভারে যেন গল্প নুয়ে না পড়ে। " পরে আরেকদিন আরো কিছু যোগ করবেন বলে শামিম ওঠে পড়েন খাবার টেবিল থেকে। একদিনে অনেক কথা জানলাম তাই একটু মোহিত ভাবে মধুদার সামনে গেলাম। শামিম মাথার সামনের চুলে বিলি কাটতে কাটতে বেরিয়ে আসল। হাঁটতে হাঁটতে সংজ্ঞা কি হবে এই প্রশ্নের উত্তরে সে বলল " আসলে সৃজনশীল সাহিত্যের বা কর্মের কোন সংজ্ঞা দাঁড় করা যায় না সহজে, যত সংজ্ঞাই বলি না কেন সেটা কেবল সংকীর্ন অর্থই প্রকাশ করে।

"যেমন আরনেস্ট হোমিং ওয়ের" The Old Man and the Sea." বড় গল্প ও বলতে পারি, ছোট গল্প ও বলতে পারি, নোভেল ও বলতে পারি,। আমি সেই ওল্ড ম্যানের কথা ভাবতে ভাবতে সকালে গেইটের দেবদারু গাছের কথা ভাবতে ভাবতে ৮ টাকা দরদামে রিকশায় উঠি বাসা অভিমুখে। বাসার সামনে এসে ১০ টাকা দিয়ে ২ টাকা ফেরত চাইলে রিকশা ওয়ালা ভাংতির অভাব হেতু একটা সরি সুলভ হাসি দেন। আর আমি বিকেলের আলোয় ডালপালা ছাটা গেইটের ডান পাশের দেবদারু গাছটিকে দেখে নিচ্ছি, আব্বা কেন এই কাজটা করতে গেল!! বাসায় গিয়ে বলতে ইচ্ছে হল "আব্বা দেবদারু সেতো তার ছোট ছোট ডাল পালা নিয়েই সুন্দর"। আব্বা হয়ত বলবে ডালপালার জন্য সামনের রাস্তটা দেখা যাচচ্ছিল না, একটার ই তো ডালপালা ছাঁটলাম, বাম পাশেরটাতো আছে।

কলিং বেল টিপে অপেক্ষার সময়ে মনে হল এই যে আজকে অনু গল্প নিয়ে এত কিছু ভাবলাম, করলাম এটা লিখলে ও কি একটা অনু গল্প হবে? ভাবনার ছেদ ঘটিয়েছে মায়ের মুখ। মা দরজা খুলেই বলল-- আজেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরলি যে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।