যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
এরকম একটা ছেলেই খুঁজছিলো কামাল। যে হাত পাতলে ড্রাইভাররা টাকা দিতে বাধ্য হবে। চেহারায় একটু রুক্ষ্মতা থাকবে, চৌকষ, কিন্তু আবার গুন্ডাপান্ডা টাইপের না। মোলায়েমভাবে হলেও দাবীর মধ্যে দৃঢ়তা ফুটে উঠবে। মেহদী ঠিক তেমনই।
প্রতিদিন কমপক্ষে একশটাকা বেশী আয় হচ্ছে, যদিও এজন্য তাকে দেয়া লাগছে সত্তুর টাকা।
ইদানিং গাড়ীর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কামাল সবগুলো সামলাতে পারছিলো না। লোকজনও সিরিয়াল মানছে না। একইসাথে ভরে যাচ্ছে দু/তিনটে গাড়ী। ড্রাইভাররাও এত ভদ্র নয় যে স্বইচ্ছায় তাকে দশটা টাকা দিয়ে যাবে।
অনির্ধারিত এই মাইক্রোস্টান্ডে গাড়ী ও যাত্রীর সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করা, যাত্রী ডাকা, ট্রাফিক ক্লিয়ার করা - ইত্যাদি কাজগুলো কামাল একাই করে এসেছে এতদিন। তার অচল এক হাত নিয়ে যখন মোড়ে দাড়ানো মাইক্রোর ড্রাইভারদের অনুরোধে সে যাত্রী ডাকা শুরু করলো বছর দুই আগে তখন এতো ঝামেলা হতো না। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জিপ, পাজেরোর ড্রাইভাররা না চাইতেই পাঁচটাকা দশটাকা ধরিয়ে দিতো। প্রথম প্রথম কামালেরই লজ্জা লাগতো। কিন্তু এখন এটা তার একমাত্র পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।
স্টান্ডটাও পরিচিত হয়ে উঠেছে অত্র অঞ্চলে। যাত্রী ও গাড়ীর ভিড় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
মেহদী একটা পাজেরোর সামনে দাড়ানো। গাড়ীতে একজন লোক দরকার। সে ডেকে যাচ্ছে সজোরে।
বড় রাস্তা দিয়ে যে সড়কটা ভিতরে ঢুকেছে তার বামপাশের ফুটপথের উপরে নেমে এসেছে এপার্টমেন্ট হাউজের সিড়ি। সেখানে বসে কামাল নজরদারী করে। অনেক দূরে একটা রিকশাকে বাক ঘুরতে দেখে সে টের পেয়ে যায় রিকশার যাত্রী তার স্ট্যান্ডের নিয়মিত যাত্রী। পাজেরোটা এবার পূর্ণ হবে। মেহেদী জোরে ডেকে চলে, গুলশান দুই! গুলশান দুই!
রিকশাটা পাজেরোর সামনে দাড়াতে কামাল চিৎকার করে সালাম জানায়।
ভদ্রলোক কামালের দিকে স্মিতহাসি ছুড়ে দিয়ে পাজেরোতে উঠে পড়ে। মেহেদী ঘুরে গিয়ে ড্রাইভারের পাশে দাড়ায়। কালো গ্লাসের ভেতরে ড্রাইভার হুইল ঘোরাতে ব্যস্ত। গিয়ার পড়েছে। গ্লাসে নক করে মেহদী বলে, ভাই টাকাটা দেন!
কিন্তু টাকা না দিয়ে পাজেরোর ড্রাইভার গাড়ী টান দিয়েছে।
মেহদী কিন্তু নাছোরবান্দা। দৌড়াতে দৌড়াতে অনবরত টোকা দিয়ে যাচ্ছে গ্লাসে। গাড়ীর ভেতরের যাত্রীরা বিরক্ত। একজন বলে, ড্রাইভার সাব টাকা দিয়েন না কুত্তার বাচ্চাটারে! চান্দাবাজি শুরু করছে সালারা! লেংড়াটা এই মাস্তানটারে ভাড়া কইরা নেতা হইতে চাইতেছে!
আরেকজন যাত্রী একই কথা বলে। ঠিক বলেছেন ভাই।
বাঙালীর জাত, খাইতে দিলে হুইতে চায়! এখন জোরজবরদস্তী কইরা টাকা নেয়া শুরু করছে!
ড্রাইভার ততক্ষণে ছোটরাস্তায় পৌছে গেছে। মেহদী এখনও পাশেপাশে দৌড়াচ্ছে। কামাল সিড়ি থেকে উঠে দাড়িয়েছে। অচল এক হাত বুকের সাথে লটকানো, অন্য হাত উচিয়ে চিৎকার করছে গাড়ির ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে। টাকা দিয়া যা কিন্তু! ড্রাইভার উইন্ডো সরিয়ে বললো মেহদীকে, শুয়োরের বাচ্চা সর কিন্তু, নইলে গাড়ী চাপা দিমু! হুইলটা ডানে হালকা টান মারে, লাফিয়ে সরে যায় মেহদী।
তারপর গ্লাস উঠিয়ে পাজেরো ছুটতে থাকে গুলশানের দিকে।
যাত্রী ও ড্রাইভার একদিকে এবং অন্যদিকে মেহদী ও কামাল। সমানতালে একে অন্যের বাবা-মাকে দেখে নিচ্ছে। অবশ্য কারো কথাই আর কারো শোনা হয় না।
ওস্তাদ, সালারে চিন্না রাখছি।
কাইল যদি এইখানে যাত্রী নেবার আয় সালারে সাইজ কইরা দিমু!
কামাল তখনও গালি দিয়ে যাচ্ছে পাজেরোর ড্রাইভারকে। তার রাগ কমছে না। চুরি কইরা প্যাসেঞ্জার টানোস আর আমার দশটাকা দিতে পারোস না! সালারে প্যাসেঞ্জার টানোনের মজা টের পাওয়ামু! মেহদীরে কয়, হ! কাইল দেখুমনে!
দিন বাড়তে থাকে। গাড়ীর চাপ কমে যায়। গাড়ী না আসলেও কয়েকজন যাত্রী দাড়িয়ে থাকে।
কেউ দেরী করে অফিসে যাচ্ছে, কারো ক্লাস দেরীতে। সকালে মাত্র দুই-আড়াই ঘন্টা কাজ থাকে। এরপর সারাদিন ফ্রি। এই সময়টুকুতেই তিনশ/চারশটাকা তার কামাই হয়ে যায়। আগে পরিমাণটা কম হতো।
এখন উপার্জন বেড়ে যাবার সাথে নানা উপদ্রব সামলাতে হচ্ছে। আগেও যে খুব নিশ্চিন্ত থাকতে পেরেছে তা নয়। একবার তো প্রায় উচ্ছেদ হতে বসেছিলো। মুসা নামে এলাকার এক পানের দোকানীর সালা কয়েকদিন যাত্রী ডাকা শুরু করেছিলো। কিন্তু পরিচিত যাত্রী ও গাড়ীর ড্রাইভারদের সম্মিলিত প্রতিরোধে সে টিকে গেছিলো।
এই স্টান্ডের উপরে কামালের আধিপত্য সেই তখন থেকেই অলিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
এরপরে তার সহযোগী হিসাবে মুসা কিছুদিন কাজ করেছে। কিন্তু ড্রাইভারদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে টিকতে পারেনি। কামালেরও পছন্দ ছিলো না। প্রতিদ্বন্দ্বী কখনও ভালো সাবঅর্ডিনেট হতে পারে না।
কিন্তু মেহদীর মধ্যে আদব-লেহাজ রয়েছে। কামালকে বড় গলায় ওস্তাদ ডাকে। সকালের কাজটুকু শেষ হলেও সাথে সাথে থাকে। অনেক ড্রাইভারের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়েছে। বিকেলে রাতে তাদের মেসে গিয়ে আড্ডা দেয়।
স্ট্যান্ডের নানা সম্ভাবনা, সমস্যা নিয়ে আলাপ চলে। কোন ড্রাইভার সমস্যা তৈরী করছে এবং তাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তা নিয়েও পরিকল্পনা রচনা হয়।
তবে সকালে যতটা তীব্রতা নিয়ে তাদের আলোচনা-পরিকল্পনা শুরু হয় দিনের শেষভাগে এসে ফিকে হয়ে যায়। যাত্রী ও ড্রাইভাররাই তাদের যে ভাগ্য নিয়ন্ত্রক এটা মনে পড়তে থাকে। কৌশলে ড্রাইভারদের মনজয় করতে না পারলে স্ট্যান্ডে কামালের আধিপত্য থাকবে না।
মেহদীকে বলে, তুই ঐ পাজেরো ড্রাইভারকে কিছু বলতে যাইস না! সালায় এক বিচারকের ড্রাইভার, ত্যাদড় আছে! মেহদী এই পেশায় নতুন, অনেক কিছু তার শেখার আছে। কামালের গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা দেখে সে মুগ্ধ হয়। মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সেও ওস্তাদের মত একটা স্ট্যান্ডের মালিক হবে।
পরের দিন পাজেরোর ড্রাইভার জোট পাকিয়ে আসে। নিজে দাড়িয়ে থেকে অন্য দুটো গাড়ীতে লোক ওঠায় সাহায্য করে।
মেহদী ও কামাল ঐ একই গাড়ীর জন্য যাত্রী ডাকে। ড্রাইভার বলে, লাভ হইবো না লেংড়ার বাচ্চা, তুই না ডাকলেও যাত্রী উঠবো!
কামাল চিন্তিত হয়ে পড়ে। বুঝে উঠতে পারে না কি করা উচিত। এমন পরিস্থিতর সামনে সে আগে পড়ে নাই। অনেক ড্রাইভার টাকা না দিয়ে চলে গেছে, কিন্তু কেউ তার রুটিরুজির উপরে হস্তক্ষেপ করে নাই।
কামাল বুঝতে পারে যা করার তা এখনই করতে হবে। আধিপত্য বজায় রাখার জন্য মাঝেমাঝে শক্তি প্রদর্শন করতে হয়। মেহদী আছে। কয়েকজন যাত্রী তাকে খুবই স্নেহ করে। একটা গাড়ী টাকা ছাড়া যাবার চেষ্টা করতেই কামাল গিয়ে গাড়ীর সামনে দাড়ায় দু হাত আগলে।
ড্রাইভার জোড়ে পিকআপ দিয়ে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছে। অদূরে দাড়ানো পাজেরোর ড্রাইভার বলে, সালার গায়ের উপরে চাপা দিয়া যা! কামালেরও মুখ চলতে থাকে। "আমারে টাকা না দিয়ে এইখান থেকে একটা গাড়ীও যাইতে পারবে না"! মেহদী যেতে উদ্যত গাড়ীরের জানালায় অনবরত ধাক্কা মেরে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে গাড়ী থেকে লাফিয়ে নামে দুজন যাত্রী। ডিজুজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। একজন গাড়ীর সামনে গিয়ে কামালকে একটা ঘুসি মারে। অন্যজন লাথি মেরে কামালকে সরিয়ে দেয় সামনে থেকে। ড্রাইভারও সুযোগ বুঝে গাড়ী টান দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যাত্রীরা উত্তেজনাকর একটা অভিযান শেষ করে গাড়ীতে লাফিয়ে ওঠে, একজনের গলা থেকে উপহাস বেয়ে নামে।
হেহ! ওরে চান্দা না দিলে গাড়ী যাইবো না! সালা তুই কোন কুতুব গজাইছোস!
গা ঘেষে গাড়ী এর আগে চলে গেছে টাকা না দিয়ে, কিন্তু এমন ঘটনা অভাবনীয়। কামালের গায়ে হাত তুলেছে যাত্রীরা। দুচোখে কিছু দেখতে পায় না কামাল। কান দিয়ে ধুয়া বের হচ্ছে। মুখে কোন শব্দ যুতসই মনে হচ্ছে না।
পাজেরোর ড্রাইভার হো হো করে হেসে চলছে অন্য দুই ড্রাইভারের সাথে। মেহদীকে মনে হয় কোথায় যেন দৌড়ে যেতে দেখলো।
পাজেরোর ড্রাইভারের এবার নিজের যাবার পালা। নতুন নতুন যাত্রীরা টের পায় না কামালের অস্থিরতা। একজন ড্রাইভার গলা উচিয়ে বলে, কিরে কামাল ভালো আছিস!
পাজেরোর ড্রাইভার দাত বের করে বলে, সালারে আজকে সাইজ করে দিছে প্যাসেঞ্জাররা!
কামালকে কুশল বিনিময়কারী ভদ্রলোক অনেকদিন যাবত এই স্ট্যান্ডের নিয়মিত যাত্রী।
কামালকে বিভিন্ন সময়ে এমনিতেই টাকা দিয়েছে। অচল এক হাত নিয়ে ছেলেটা নিজের একটা কাজ তৈরী করে নিয়েছে, লোকজনেরও উপকার হচ্ছে। কিন্তু তাকে কেন যাত্রীরা মারবে?
কামাল একটু যেন আশার আলো দেখতে পায়। যাত্রীর কাছে দৌড়ে আসে। বলে, স্যার, এই ড্রাইভার আইজকা আমারে মাইর খাওয়াইছে! ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
দুঃখিত হয়ে ওঠে যাত্রী। সাথে তার দুজন সহকর্মীও। সবাই স্বপ্রশ্ন দেখায় ড্রাইভারের দিকে। ড্রাইভার কৈফয়তের ভঙ্গীতে বলে - স্যার, এই হালায় চান্দাবাজি শুরু করেছে এইখানে! এরে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হইবে না!
যাত্রী ভদ্রলোক ড্রাইভারের কথা শুনে অবাক হয়। বলে, চোরের মার বলা কথা? তুমি মিয়া কি করতেছো? তোমার সাহেব জানে যে তার গাড়িতে তুমি প্যাসেঞ্জার টানতেছো?
মুখে উপরে এমন জবাব প্রত্যশা করেনি ড্রাইভার।
চুপসে যায়। বিচারকের গাড়ি। ভয়ডর তারও আছে। সে বলে, আমরা তো প্যাসেঞ্জার টানি আপনাদের উপকারের জন্যই!
কিন্তু ততক্ষণে মেহদি চার/পাঁচজন ছেলেছোকরা নিয়ে হাজির। ড্রাইভারের গ্লাসে টোকা দিয়ে বলছে, সালা তুই নাম!
পাজেরোতে দুজন নারী যাত্রীও ছিল।
বিপদের আশংকা দেখে তারা নেমে গেল। তাদের দেখে বাকীরাও নেমে যাচ্ছে। ড্রাইভার এবার পুরা গ্যারাকলে। কামাল গিয়ে মেহদীকে থামায়। যাত্রীরা নেমে গেছে পাজেরো থেকে এতেই সে সন্তুষ্ট।
পেছনেই দাড়িয়ে আছে আরেকটা মাইক্রো। সবাই গিয়ে সেখানে উঠেছে। পাজেরো ড্রাইভার গজগজ করতে করতে কোন যাত্রী ছাড়াই রওয়ানা হয় গুলশানের পথে।
কামাল, মেহদী ও আগত ছেলের দল হৈহৈ করে ওঠে। ড্রাইভারকে উচিত শিক্ষা দেয়া গেছে।
কামালের মুখে হাসি, মেহেদী কনুই এর গাট চুলকে টের পায় এই স্ট্যান্ডের গুরুত্ব। এর দ্বৈত চরিত্র। কামালের তুলনায় টের পায় তার শক্তির পার্থক্য। যেখানে কামাল কেদেটেদে সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করেছে মেহদী সেখানে মুহূর্তেই ঘটনা তার অনুকূলে নিয়ে আসতে পেরেছে মাত্র ক'য়েকটা ছেলের কবজির মোচড়ে।
পাজেরো ড্রাইভার চরম অপমানে সারাদিন দগ্ধ হতে থাকে।
সামান্য একটা লেংড়া কলারের কাছে তাকে অপমানিত হতে হলো। তার উপরে সরকারী স্ট্যান্ড ঝুলানো একটা পাজেরোর ড্রাইভার হয়ে। পরের দিন তার পরিচিত ড্রাইভারদের নিয়ে সে দাড়িয়ে থাকে স্ট্যান্ডে। মেহদী ড্রাইভারকে দেখামাত্র এগিয়ে আসে জানালার কাছে। মুখে চওড়া হাসি।
গতকালের দাবড়ানির পরে এসেছে দেখেও সে মুখ টিপে হাসে। কিন্তু ড্রাইভারের মুখে কোনো বিকার নেই। উইন্ডোটা নামিয়ে বিশটাকা বাড়িয়ে ধরে বলে, গতকালের টা সহ আজকের টা দিলাম। ভাই ব্রাদারদের ভুলত্রুটি মনে চাপা রাইখেন না।
মেহদী অবাক হয়।
এমন ফলাফল প্রত্যাশা করেনি। হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে হ্যান্ডশেক করে। ড্রাইবারকে বলে, ঠিকাছে ওস্তাদ, আপনারা আছেন বলেই তো আমরা আছি! গাড়ী ভরে যায় যাত্রীতে।
কয়েকদিনের মধ্যে পাজেরো ড্রাইভারের সাথে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। কামালের সাথেও ড্রাইভারের এখন মধুর সম্পর্ক।
তবে মেহদীর সাথে একটু বেশী। পনেরটাকা দিয়ে বলে, পাঁচটাকা আলাদা কইরা আপনাকে দিলাম।
মাস কেটে যায়। একদিন সকালে গাড়ী পার্ক করে মেহদীকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে দূরে বসে থাকা কামালকে দেখিয়ে বলে, কিছু মনে করবেন না ভাইজান, সারাদিন তো দেখি আপনিই পরিশ্রম করেন। কিন্তু কামাল কত পায় আর আপনি কত পান?
মেহদী বলে, ওস্তাদ তো আমারে আগে ৭০টাকা দিতো, এখন একশ টাকা দেয়।
আর কামাল? ড্রাইভার হালকা চালে জি্জ্ঞেস করে।
তিনশতো হইবোই! সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বলে।
দুজন প্যাসেঞ্জার ইতোমধ্যে পাজেরোতে উঠে বসেছে। ড্রাইভার সেদিকে তাকিয়ে বলে, যাই গা বস! তয় একখান কথা বইলা রাখি। আপনি-ই যখন সারাদিন খাটবেন, তখন ঐ ল্যাংড়াটার হাতে কেন সব টাকা তুইলা দিতেছেন? অর তো কোনো টাকাই পাওয়া উচিত না!
পাজেরোতে যাত্রী ফুল।
কিন্তু মেহদীর নিজেকে ফুল মনে হয়। এই স্ট্যান্ডের প্রতিটা গাড়ীর ড্রাইভারের সাথে তার এখন সুসম্পর্ক হয়ে গেছে। সব যাত্রী তার চেহারা চেনে। কোনো যাত্রীর সাথে সে খারাপ ব্যবহার করে নাই। তবে কেন শুধু শুধু কামালের অধীনে সে কাজ করবে।
স্ট্যান্ডের উপরে আধিপত্য বিস্তারের এটাই তো মোক্ষম সময়।
শেষ গাড়িটা চলে গেলে মেহদী টাকা গুনে দেখে চারশ পয়ত্রিশ। প্রাইভেট কার ৫টাকা, মাইক্রো ১০টাকা হিসাবে কত গাড়ী গেছে তার হিসাব দরকার নেই। কামালের কাছে গিয়ে বলে, ঐ কামাইল্লা, ল একশটাকা! আইজ থাইক্কা তুই আমার হইয়া কামলা দিবি! তরে আমি একশটাকা কইরা দিমু!
মাথার উপরে সূর্য্য ভেঙে পড়লেও এমন অবাক হতো না কামাল। নেমকহারাম, কুত্তার বাচ্চা বলে কিছুক্ষণ চেচালো।
তারপরে মেহদীর হাতে দুটো থাপ্পর খেয়ে চুপসে গেলো।
পরের দিন কামাল ও মেহদী উভয়েই স্ট্যান্ডে হাজির। তবে যাত্রী ডাকছে সেই আগের মত কামালই। পাজেরো ড্রাইভার ছাড়া আর কারও চোখে পার্থক্যটা চোখে পড়লো না। দূরে একটা পানের দোকানে বসে স্ট্যান্ডের দিকে দৃষ্টি রেখে মেহদী তখন চা গিলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।