আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বয়ে চলো নিরন্তর দুঃসহ স্মৃতীর প্রহর

কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।

গীতিকার মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর সম্মানীয় বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লেখা একটি গান আপনারা অনেকেই নিশ্চই শুনেছেন। গানটির প্রথম অন্তরা-- দৃষ্টিতে আগুন তোমার চোখেতে সাগর বিধ্বস্ত মলিন মুখ নয়ন ডাগর কত দিন গেক কত মাস দীর্ঘ দীর্ঘ বছর বয়ে চলো নিরন্তর দুঃসহ স্মৃতীর প্রহর। আমি আমার প্রিয় এই গানটির একটি লাইন নিলাম আমার আজকের এই পোস্টের শিরোনাম হিসাবে। গানটিতে লেখক বলেছে-- তাকে কোন যুবক বলেনি ভালবাসার কথা, তার কষ্টগুলো এই দেশে ফুল হয়ে ফুটে থাকে, তার আচঁল আজ সবুজ লাল দেশের পতাকা।

এই গানটি আমার ভিতরের ভীতটাকে নাড়া দেয়। এই দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। আমরা আলোর মুখ দেখছি। একদিন আমরা সব পাব , অবশ্যই পাব। দেখবো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।

তাদের উদ্ধত মাথা ভূলুন্ঠিত হয়েছে। বীরাঙ্গনা হে বীরাঙ্গনা তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী। আমার এক বন্ধুকে একদিন রাস্তায় এক পাগলীর দিকে গভীর মনযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করেছিলাম--- ''ওর দিকে কি দেখছ?'' সে বলল-- '' না দেখছি। " এরপর খুব ধীরে ধীরে স্পষ্ট উচ্চারণে বলল---," আমার শ্বাশুরী মা কে?" মহান স্বধীনতা যুদ্ধের সময় আমার ঐ বন্ধুর বরের বয়স ছিল পাঁচ বছর। একরাতে ওনার মাকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়।

সেই পাঁচ বছরের শিশুটি এখন ও মায়ের সেই আর্তচিৎকার শুনতে পায়। মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে ভয়ে চিৎকার করে কাঁদে। দেশ স্বাধীন হবার পর তাকে ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়। বাসায় আনার পর একমাত্র আদরের সন্তানকে চিন্তে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতেই অজ্ঞান হয়ে যান।

তারপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন তিনি সম্পুর্ন অপ্রকৃতস্থ। এই আবস্থায় দুই দিন থেকে, তিনি হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যান। একদম চুপচাপ এবং সেই রাতেই তিনি কোথায় যে চলে যান, কেউ খোঁজ পায়নি আর কোন দিন। সেই সময় পত্রিকাতেও তার খোঁজে ছবিসহ খবর ছাপান হয়, কিন্তু কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। সেই পাঁচ বছরের শিশুটি এখন একজন পূর্নবয়স্ক মানুষ--------- আজও তিনি খুঁজে ফিরেন তার মাকে।

রেলস্টেশনে, বাসস্টেশনে, ফেরীঘাটে সর্বত্র কোন বয়স্কা পাগলীকে দেখলেই সব ভুলে তার কাছে চলে যান । সারা বংলাদেশে তার দুই চোখ ব্যাকুল হয়ে ঘুরে বেড়ায় একবার মাকে দেখবার জন্য। শুধু একবার। আমার বন্ধুটি বলল,'' শুধু ও কেন আমিও খুঁজি, যদি একবার তার দেখা পাই। '' আমার আজকের পোস্টটি আমি একটি মন্তব্য হিসাবে দিয়েছিলাম শেরিফ আল শায়ারের ---বীভৎস যৌন নির্যাতন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই এই পোস্টে।

কিন্তু রাজ মোঃ আশরাফুল হক বারামদী এর একটি মন্তব্য আমাকে মনে করিয়ে দিল এটা শুধু মন্তব্য হতে পারে না এটা একটা পোস্ট হও্যা উচিৎ । আর তাই আমি একে কিছুটা পরিবর্ধন করে পোস্ট তৈরী করে দিলাম। গত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর তারা জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করলেন এবং শহীদদের সম্মান জানাবার জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করলেন। রাতে টিভিতে এই খবর দেখার পর পরই একটা ফোন এল। ফোনে খুব ভদ্রভাবে আমাকে জানান হল এই সরকার একটা কাজের কাজ করছে।

আমি বললাম ,''কি কাজ? ওরা তো সবে মাত্র ওথ নিল! '' আপরপ্রান্তের কথা শোনা গেল," কেন? টিভি তে খবরে দেখলা না বড় বড় রাজাকারদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্মৃতি সৌধে, শহীদদের সম্মান দেখাবার জন্য। তারা শহীদদের সালাম দিয়েছে আবার এক মিনিট নিরবতাও পালন করেছে?" আমি বললাম ''খুব খুশি মনে হয় তুমি। '' উত্তর পেলাম ''বুঝতে পারছি না । সম্পুর্ন বোধ শূন্য। '' আসলেই আমি এখন মানুষ না আমি এখন রোবট।

মেমোরীতে যা ডাউনলড করা আছে তার বাইরে কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা এখন আর নাই। আমি যুদ্ধোপরাধীর বিচার চাই। প্রকাশ্যে বিচার চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।