আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৯২ এর সেই আমেরিকান মেয়েটির বাংলাদেশের জেল জীবন। সাড়ে চার বছর...

নিজের কথা প্রকাশে ব্লগের চাইতে ভালো কিছু আর কিইবা হতে পারে।
৯২ এ এক আমেরিকান মেয়ে বাংলাদেশের কোর্টের যাবজ্জীবন দন্ড নিয়ে জেল খাটছিলো, অনেকের বোধ হয় মনে আছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে তাকে নিয়ে বানানো মুভিটা আবারো দেখিয়েছে। গতকাল দেখলাম। মাত্র ২০,০০০ ডলার বিনিময়ে ১৮ বছরের তরুনী ড্রাগ পাচারের এসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল।

টানা ২ সপ্তাহ ঢাকার ৫ তারা হোটেলে থেকে একসময় ভেবেছিল ড্রাগ না নিয়েই সে দেশে ফিরে যাবে কিন্তু হোটেল লবিতে পাচারেকারী চক্রের লোকেরা দেখে ফেলে । তার এসাইনমেন্ট ছেড়ে পালানোর রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যায়। পুরো শরীরে ৭ পাউন্ড কোকেনের প্যাকেট মাস্কিং টেপ দিয়ে পেচিয়ে জিয়া এয়ারপোর্টে গিয়ে বোর্ডিং কার্ড হাতে নেয়। সে ছিল সবশেষ প্যাসেন্জার। ভেবেছিল নির্বিঘ্নেই প্লেনে উঠতে পারবে।

সব ধরনের চেকিং পেরিয়ে রানওয়ের গাড়িতে যাবার জন্য যখন সিড়ি দিয়ে প্রায় নেমে গিয়েছিল ঠিক সে সময় সিকিউরিটি লেডি তাকে ডেকে নেয় - বডি সার্চের জন্য। তারপর ঘটনা গুলো গড়াতে থাকে নিয়ম মত, যেখানে মেয়েটার করার কিছু ছিল না। অনেকে ভেবেছিল তার মৃত্যুদন্ড হবে। যেহেতু সে প্রফেশনাল ড্রাগ পাচারকারী ছিল না সেজন্য মৃত্যুদন্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় হয়েছিল। বয়ষ অল্প হওয়াও একটা কারন ছিল।

টেক্সাসের এই মেয়ে ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে ছিল টানা ৪ বছর ৬ মাস। প্রথম প্রথম অন্য নারী বন্দীদের মাঝেও একা একা চুপ করে বসে শুধু কাদতো। ভাত আর দুর্গন্ধময় ডাল ছিল তার প্রতিদিনের খাদ্য। তার জন্য মশা, তেলাপোকা আর নোংরা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল। ধীরে ধীরে সে নিজেকে মানিয়ে নেয়।

সে জানতো তার বয়স যতদিন পর্যন্ত না ৫০ হচ্ছে ততদিন এখানেই থাকতে হবে। তার সাথে দেখা করার জন্য আমেরিকান এ্যাম্বেসি লোক এসেছিল সরি বলার জন্য। তারা বলেছিল এ্যাম্বেসি কোন হেল্প করতে পারবে না। কারন আমেরিকা তখন ওয়ার অন ড্রাগ ঘোষনা করেছে। ধীরে ধীরে সে জেল জীবনে নিজেকে মানিয়ে নেয়।

রাশিদা, অমেনা তার বন্ধু হয়ে উঠে। বাংলা বলতে লিখতে শিখে। সংগীদের ইংরেজী শিখায়। অন্যদের খৃস্টান ধর্ম নিয়ে গল্প বলে, অন্যরা তাকে ইসলাম নিয়ে গল্প বলে। চোখের সামনে তার জেল সংগী খুকুর ফাঁসি কার্যকর হয়।

নতুন নতুন মেয়েরা আসে আবার অনেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায়। কিন্ন্তু আমেরিকার মেয়েটা এভাবেই সাড়ে চারটা বছর কাটিয়ে দেয়। হঠাৎ একদিন মেয়েটা একটা পোস্ট কার্ড পায়, সিনেটর বিল রিচার্ডসনের লেখা। বিল লিখেছি আমি তোমার মুক্তির জন্য চেস্টা করছি। মেয়েটা এই মামুলি পোস্ট কর্ডের লেখাকে খুব একটি আমলে নেয় না।

কিন্তু ওদিকে প্রভাবশালী সিনেটর বিল রিচার্ডসন খুব গুরুত্ব দিয়ে কুটনৈতিক চালাচালি করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমার অনুমতি আদায় করে। নিজেই ফ্লাই করে বাংলাদেশে চলে আসে। মেয়েটা সত্যি সত্যি একদিন দেখে তার মুক্তির ফরমান এসে গেছে। ৯৬ এর ১৯ জুলাই বিল রিচার্ডসন তাকে সংগে নিয়ে ওযাশিংটনের ডালাস এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে। ---------------------------------------------------------------- সাড়ে চার বছরের দু:সহ স্বপ্ন নিয়ে এখন মেয়েটা (Eliadah "Lia" McCord) একবারের জন্য হলেও বাংলাদেশে আসতে চায়, তার জেলের সংগীদের সাথে দেখা করার জন্য।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।