আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি , রাসেল , রাজীব খান এবং ঈশ্বর

ইকার এর নিঃসঙ্গ বচন আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক বরাবরই খারাপ । খুব খারাপ না । কিন্তু খারাপ । গল্প উপন্যাসের সৎ মা'দের মত আমার মা প্লেটে মুরগীর রান না তুলে দিয়ে ঝোল তুলে দিয়েই দায়িত্ব সারতে চান । এটাই খারাপ সম্পর্ক হওয়ার প্রধান কারন না ।

আমি রাতে ঘুমাই আমাদের বাসার স্টোররুমে । অথচ ভাইয়া আর আপু শোয়ার পরও বাসায় দুটি বেডরুম খালি পড়ে থাকে । একটিতে আমার বাবা ঘুমাত , আরেকটি গেস্টরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এমন না যে বাসায় সবসময় গেস্ট এসে ভরেই থাকে । আরেকটি গুরুত্বপুর্ন কথা বলতে ভুলে গিয়েছি ।

আমার বাবা নেই । মারা গেছেন । আমার বয়স যখন ৭ , তখনকার ঘটনা এটা । এক রাতে আমার খুব ইচ্ছে হল আমি আইসক্রিম খাবো । যেন তেন আইসক্রিম না ।

মাচো । বাবাকে মাচোর কথা বলতে বলতে পাগল বানিয়ে দিলাম । বাবা বিরক্ত হয়ে শেষমেশ মাচো আনতে গেলেন । ঘন্টাখানেক পর বাবা ফিরলেন । কিন্তু লাশ হয়ে ।

বাস এক্সিডেন্ট । সেই থেকে মা আমাকে দেখতে পারেনা । মার ধারনা হয়েছে বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী । আমি যদি আইসক্রিম খেতে না চাইতাম তাহলে বাবাও মারা যেতেন না । তাই নিজের পেটের সন্তান হওয়ার পরেও আমাকে তিনি থাকতে দেন স্টোররুমে ।

বাসাইয় দুরের মেহমান , মানে মার অফিসের কলিগ বা এইটাইপ কেউ আসলে আমাকে তিনি বাসার "কাজের ছেলে" হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন । আমার বড় বোন আর ভাইয়া যখন ঈদে নতুন নতুন কাপড় পড়ে ডাইনিং টেবিলে বসে সেমাই-পায়েশ খায় , আমি তখন স্টোররুমে বসে রুবি খালার সাথে ডাল-রুটি খাই । রুবি খালা আমাদের বাসায় কাজ করেন । ____________________________________________________________________ এই পর্যন্ত লিখেই রাসেল থেমে গেল । মেজাজ গরম লাগছে ।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার অতি প্রিয় একজন লেখক । তার "আমি তপু" বইটি পড়ে সে বাথরুমে গিয়ে একঘন্টা ধরে কেঁদেছে । বাথরুমে গিয়ে , কারন ছেলে মানুষ বলে সে সবার সামনে কাঁদতে পারেনা । কিন্তু তাই বলে "আমি তপু" এর কাহিনী ফটোকপি হয়ে তার কলম দিয়ে বের হচ্ছে এটা কিছুতেই মানা যায়না । অন্য কিছু করতে হবে ।

স্কুলের ম্যাগাজিনের জন্য লেখা দেয়ার লাস্ট ডেট কালকেই । ভাবতে হবে । প্রচুর ভাবতে হবে । আরাম করে ভাবার জন্য পা টিপে টিপে বারান্দায় গেল রাসেল । বাবার ইজিচেয়ার এখানেই রাখা ।

সুমন বলে ইজিচেয়ারে দোল খেতে খেতে ভাবলে নাকি ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি এভাবেই গীতাঞ্জলি লিখেছেন । ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে দোল খেতে খেতে প্রায় ঘুম এসে গেল রাসেলের । কিন্তু ক্রিয়েটিভিটি তো একই আছে মনে হচ্ছে । মাথায় আরেকটা ভাবনা উঁকি দিয়ে গেল তার ।

পাশের ক্যাবিনেটে বাবার সিগারেটের প্যাকেট রাখা থাকে । সিগারেট হবে নাকি একটা ? হুমায়ুন আহমেদ নামে যে একজন "বড়দের" লেখক আছেন উনি নাকি রোজ ৫০ টা করে সিগারেট খান । এতে নাকি মাথায় গল্পের প্লট আসে । এটা গুজব নয় মোটেই । তার এক বন্ধু আছে , শোভন ।

ওর আপন মামা নাকি শাওন এর এক ফ্রেন্ডের ছোটভাই । অতএব সোর্স রিলায়েবল । একটা সিগারেট খেয়ে দেখা যেতে পারে । রাসেল ক্যাবিনেটের পাল্লা খুলল । _________________________________________________________________ গল্প জগাখিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে ।

রাজীব খান অত্যন্ত হতাশ বোধ করছেন । আজকে জানুয়ারির ১৫ তারিখ । সামনের বইমেলার জন্য এই উপন্যাসটি লেখা অত্যন্ত জরূরী । অথচ এই নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বারের মত নতুন কাগজ নিয়ে বসলেন । প্রতিবারই একই জায়গায় গিয়ে আটকে যাচ্ছেন ।

এটাই কি রাইটার্স ব্লক ? হলে হবে । ব্লক কাটাতে যা করা দরকার করা লাগবে । আপাতত তার চরিত্র রাসেলের মত একটা সিগারেট ধরাতে হবে । বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে হঠাত করে রাজীব খান বুকের বামপাশে চাপা ব্যাথা অনুভব করলেন । সেই ব্যাথা আর চাপা থাকল না ।

বাড়তে লাগল । রাজীব খানের হাত থেকে জলন্ত সিগারেট পড়ে গেল । পাপোশের ওপর । _____________________________________________________________ এই পর্যন্ত এসে ঈশ্বর মুচকি হাসলেন । জীবন নামক উপন্যাসের লেখকের চিন্তাধারা অত্যন্ত জটিল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।