oracle.samu@googlemail.com
বোন-ফায়ার নাইট। অনুষ্ঠানটা গাই ফোকস্ নাইট নামেই পরিচিত সারা ইংলেন্ড জুড়ে। স্টেফোর্ডে বেশী পরিচিত 'বোন-ফায়ার নাইট' হিসেবে। অনেকটা আমাদের দেশের শবে-বরাতের অতশবাজি বা ভারতের দেয়ালি উতসবের মত। তবে এর পেছনের মূল ইতিহাসটা হল, ১৬০৫ সালে কিছু সন্ত্রাসী বৃটিস পার্লামেন্ট হাউজ উড়িয়ে দিয়ে অরাজগ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
কিন্তু গান-পাউডার সহ পার্লামেন্ট হাউজ থেকে পাকরাও করা হয় তাদের। আর সে থেকেই ইংলিশরা পটকা-বাজি করে পালন করে এই ঘটনাকে।
নভেম্বরের শুরু থেকে ১২-১৫ তরিখ পর্যন্ত চলে এই উত্সব। বিশেষ করে উইকেন্ডসের রাতগুলোতে বেশী জমে। ইউনির শিক্ষক ডঃ এলেন ইয়ার্ডলির কাছ থেকে কিছুটা শুনলেও এটাকে তেমন বড় কিছু বলে মনে হয়নি প্রথমে।
৭ তারিখ সকালে আমার বাড়িওয়ালা (মি, কেভিন কোর্ট) তার পরিবারের সাথে বোন-ফায়ারে যাবার আমন্ত্রন জানাল। যাব/যাবনা এ নিয়ে ভোটাভোটি করতে করতেই তিন বাঙ্গালি উঠে বসলাম কেভিনের গাড়িতে। আমি, কামাল ভাই আর নাজমুল ভাই। কামাল ভাইকে রিতীমত জোর করে ঘর ঠেকে বের করলাম। বিলেতে নতুন তার উপর আবার রাত, ঠান্ডায় পা কাপা-কাপি অবস্থা আর কি!
সুগবরো হল মাঠে
আমাদের দেশীয় বৈশাখী মেলার মতই মেলা জমেছে।
তবে রাইড আর খাবারের স্টলগুল একটু আধুনিক। মাঠের মাঝ খানে বিশাল কাঠের স্তুপ। ওটাকে ঘিরেই সব আয়জন। প্রচুর মানুষ। কেভিন বলল, পার্ক-করা গারির লাইন নাকি মাঝে-মধ্যে ৩-৪ কি,কি, লম্বা হয়।
আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি কারন পথে কেভিন আমাদের নদী দেখিয়েছে, ২ টা নদী একসাথে মিশে এগিয়ে গেছে স্টোক-অন-ট্রেন্টের দিকে। আমার কাছে ওটাকে খাল ছারা আর কিছু মনে হয় নি। তুরাগ বা বুড়িগংগা দূরে থাক, ঢাকার হাতিরঝিলের খালটাও ঐটার তুলনায় বিশাল মনে হবে। কেভিনের ১০-১২ বছরের ছেলে ফেজারকে আমাদের চাদপুরের ত্রি-মোহনার কথা শুনিয়ে বললাম তোমাদের ওটা যদি নদী হয় তাহলে আমাদেরগুলতো সাগর।
কেভিনের বউ পাম আসে নি।
আগে কিনে রাখা ফেমিলি টিকেটের সদব্যাবহার করতে আমরা ও ওরসাথে জুটে গেলাম। ৬ পাউন্ড বাচল আর কি । ইংলেন্ডের পাউন্ড নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। কোন কিছুর দাম দেখলেই ওটাকে ১১৫ দিয়ে গুন করি। তাই প্রায় ৭০০ টাকা দিয়ে শিতের রাতে আতশবাজি উত্সব দেখার সাহস এখন ও হয়ে উঠেনি।
আবার না আসলে বড় ধরনের 'মিস' হয়ে যেত। কেভিনকে পরে তাই ঘটা করে ধন্যবাদ দিলাম।
পাউন্ড নিয়ে ঝামেলায় কথা বলতেই আমার আগের অফিসের বস শাওন ভাই এর কথা মনে পড়ে গেল। আমেরিকায় গিয়ে প্রথম ১ সপ্তাহে উনি কিছুই কিনতে পারেননি, সব কিছুর দামকেই উনি ৭০ দিয়ে গুন করছিলেন। দেশে আসার পড় অবস্থা উল্টো, এবার উনি সব কিছুর দামকে ৭০ দিয়ে ভাগ করছিলেন।
সুজোগটা ভালই নিয়েছিলাম, আমেরিকা ভ্রমনের আকিকা হিসেবে ওনার টাকায় টিমের বাকি ৩ জনের ভূড়ি-ভোজ।
রাত ৭ টায় আগুন দেওয়া হল কাঠের স্তুপে, দেখতে দেখতেই গনগনে আগুনের উত্তাপে শিতের প্রকোপ থেকে মুক্তি, অবশ্য মাত্র ঘন্টা দেড়েকের জন্য। ৭-৩০ শে শুরু হলো আতশবাজি।
রঙ্গিন আতশবাজির বর্নিল আলোক-ছটা দেখতে দেখতেই রাত ৮ টা। এ যেন 'শুরু না হতে হতেই শেষ' আরকি।
কার-পার্কের পাশেই ইংলিশ পান-শালা, সদল-বলে আমরা সবাই হাজির। কেভিনের জন্য বিয়ার আর বাকি ৪ জনের জন্য অরেন্জ জুস।
ওখান থেকে আমাদের পরবর্তি গন্তব্য কেভিনের এক বন্ধুর বাড়ি। হোস্ট ভদ্রলোক সবার হাতে বিয়ারের কেন ধরিয়া দিচ্ছিল, আমাদের ৩ জনের জন্যে বেশ কষ্ট করেই উনি পাইনাপেন জুস জোগার করলেন। কেভিনের বান্ধুবি শার্লি, 'বিয়ার খাই না' শুনে আমাদের দিকে একন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন ৩ আজব চিড়িয়া দেখছে।
এর পর শুরু হল বাড়ি উঠোনে আতশবাজি পোড়ান। শার্লি অতি উত্সাহে বাজির মুখ মাটির দিকে রেখেই আগুল লাগিয়ে দিল, সে এক দেখার মত দৃশ্য , এক দফা তুমুল হাসি-ঠাট্টা হয়ে গেল ওকে নিয়ে। ঠান্ডায় আমাদের অবস্থা কাহিল, অথচ ইংলিশগুল টি-শার্ট পড়ে উঠোনে হাটছে ! কামাল ভাই খুব বিরক্ত, এমনিতেই ঠান্ডা তারউপর আগুনের ফুল্কি লেগে জেকেট পুড়েছে।
রাত ১০ টায় বাসায় ফিরলাম। ডিম ও সবজি সহযোগে পাস্তা খেয়ে ঘুম।
ভাত-তরকারি রান্না করা বেশ সময় সাপেক্ষ, উইকেন্স ছারা রান্না করি না । ডিম, সবজি, দুধ, পাউরুটি ও পাস্তা খেয়েই দিন কাটাচ্ছি । শপগুলোতে সারি-সারি মাংস ও মাংসজাত খাবার কিন্তু খেতে পারছি না। এখানে হালাল মাংস প্রায় পাওয়াই যায় না। হালাল মাংেস জন্য যেতে হবে কাছের অন্য শহরগুলতে কিন্তু যেতে-আসতে ভাড়া লাগবে ১০ পাউন্ড।
৫-৬ পাউন্ডে মাংস কিনতে লাগবে ১০ পাউন্ড এ যেন ১২ হাত কাকুড়ের ১৩ হাত বিচি।
এখানে বাস ভাড়াও বেশ বেশী, নূন্যতম দেড় পাউন্ড, তাই 'পা-জোড়া' নিয়েই ২ কিলো দূরের মসজিদ ও চেইন শপে যেতে হয়। গত কাল জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে শুনলাম আগামী শুক্রবার ঈদ.....এই ঈদে মাংস খেতে পাড়ব কীনা জানি না।
** অবশেষে 'হারিকেন জ্বালিয়ে গরু খোজা' করে হালাল মুরগির সন্ধান কপয়েছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।