আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প/আদনান মুকিত দীপ্র/হট্টগোল-১১



নিচের গল্পটি হট্টগোলের ১১ তম সংখ্যায় ছাপা হয়েছে : প্রশ্ন আদনান মুকিত দীপ্র সজলদের বাসার সামনে এসে দেখি বারান্দায় ওর আব্বা বসে আছে। হাতে খবরের কাগজ। মাথার টাকটা চকচক করছে। এই অবস্থায় সজলকে ডাকলে নিশ্চিত ওর আব্বার কাছে ধরা পড়তে হবে। আমি সজলকে ফোন দিলাম।

বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন ধরল গাধাটা । -হ্যালো, তুই কই? -আমি তোর বাসার সামনে। -মানে? বাসার সামনে তুই কি করছিস? -তোর আব্বার টাক দেখছি গাধা কোথাকার, বাইরে আয়। আমি সজলদের আম গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। এত বড় আম গাছ অথচ একটা আমও ধরেনি এবার।

একদম সজলের আব্বার মত। এত বড় মাথা কিন্তু কোন চুলই নেই। সজল আসছে। কাঁধে আবার ব্যাগও আছে একটা। দূর থেকে দেখে কে বলবে, এই সজল ১ম পার্বিকে অংকে ১০০ তে তিন পেয়েছিল! সজল এসেই চাপা গলায় বলল, -এখানে থাকা যাবে না।

স্যারের বাসায় যাবার কথা বলে বেরিয়েছি। চল মাঠে যাই। মাঠে এসে দেখি কেউ নেই। কাল থেকে ২য় পার্বিক পরীা শুরু। সবাই পড়ালেখা নিয়ে খুব ব্যস্ত।

বড় পেয়ারা গাছটার ডালে বসে বললাম, -সজল, কালকে তো পরীা। অংক-টংক কিছু পারিস? -অংক পারব কিভাবে? অংক বইটাই তো খুঁজে পাচ্ছিনা। গত রাত থেকে খুঁজে শুধু বইয়ের মলাটটা পেয়েছি। তুই কিছু পারিস? -আরে না। আমার তো বইই নাই।

- ও। তুই তো বই বিক্রি করে শন পাপড়ি খেয়েছিস। তবে দোস্ত, এবার কিন্তু খবর আছে। আব্বা বলেছে ফেল করলে বজলু স্যারকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠাবে। -ভালো তো।

তোর বাবা উকিল মানুষ। কোন ভেজাল হলেই মামলা ঠুকে দেবে। ঠেলা সামলাবে বজলু মিয়া। -আরে বেকুব, বজলু স্যারকে ধরলেই তো সমস্যা। ওয়াসার পানি দিয়ে যেমন পোকা বের হয় তেমনি করে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সব কথা জানতে পারলে বাবা আর আমাকে আস্ত রাখবে না। আমি নিশ্চিৎ, আমাকে ১ বছরের কারাদন্ড অনাদায়ে ৩০০০ টাকা জরিমানা করবে... তোর জন্যই তো এমন হল। - আমার জন্য মানে? প্ল্যান তো এটাই ছিল। আমরা স্যারের টাকা মেরে দেব। মিশু ভীতু ছেলে, ও স্যারের কাছে নিয়মিত পড়বে এবং পরীার আগে স্যারের দেওয়া প্রশ্নের ফটোকপি আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের হাতে তুলে দেবে।

এজন্য ওকে আমরা স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাবো। আর খাওয়া তো আছেই। কিন্তু তুইই তো এক ল্যাং মেরে মিশুর হাত ভেঙে দিয়ে সব প্ল্যান নষ্ট করলি। - ল্যাঙ না মারলে ওই ব্যাটা নিশ্চিত গোল দিয়ে দিত। শেষ সময়ে গোল খেলে ম্যাচটা আর বাঁচানো যেত না।

- পারলে এখন তোর বাবার হাত থেকে নিজের জীবনটা বাঁচা। ফেল করলে তুইও শেষ, আমিও শেষ। এখানে বসে না থেকে মিশুর বাসায় চল। ওর কাছ থেকে প্রশ্নটা নিয়ে আসি। - পাগলে কয় কী? এখন মিশুর বাসায় গেলে ওর মা পিটিয়ে আমার হাতটাও ভেঙে ফেলবে।

- এ জন্যই তো যেতে বলছি। হাত ভেঙে গেলে আমাদের আর পরীা দিতে হবে না। দুজন মিলে পঙ্গুতে একটা কেবিন নিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ব। দারুন হবে! - তোর মাথা হবে। পঙ্গু হাসপাতাল সম্পর্কে তোর কোন ধারণাই নাই।

ওটা এক ভয়ংকর জায়গা! একবার আমার বোনের বান্ধবীর দুলাভাইয়ের মামার বাম হাত ভেঙে গিয়েছিল, পঙ্গুতে নেবার পর ওখানকার ডাক্তাররা তার ডান হাত দেখে বলেছিল কোন সমস্যা নেই, শুধু একটু মচকে গেছে। - সজল! তুই পড়ালেখা বাদ দিয়ে গল্প-উপন্যাস লেখা শুরু কর। গাছের ডালে বসে এত সুন্দর একটা গল্প তুই কিভাবে বানালি? তোর মত বন্ধু পেয়ে সত্যিই আমি গর্বিত। এখন চাপাবাজি রেখে মিশুর বাসায় চল। দুজন মিলে ওর ভাঙা হাতটা ধরে হাতজোর করে বললে প্রশ্ন দিয়ে দেবে।

চল যাই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হল সজল। রোগীর বাসায় তো আর খালি হাতে যাওয়া যায় না, তাই মোড়ের দোকান থেকে দুই হালি কলা কিনে নিলাম আমরা। মিশুর আম্মা তো আমাদেরকে দেখে খুব খুশি হয়ে বললেন, - তোমরা এসেছ দেখে খুব ভালো লাগছে। মিশু তো সব সময় তোমাদের কথা বলে।

মনে মনে বললাম, তাতো বলবেই, হাতটা তো আমরাই ভেঙেছি। আন্টি আমাদের মিশুর ঘরে নিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখি প্লাস্টার করা হাত নিয়ে বিছানায় শুয়ে বিদ্যুত মিত্রের খালি হাতে আত্মরা বইটি পড়ছে মিশু। বোধহয় আমাদেরকে খালি হাতে শায়েস্তা করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ও। আমাদেরকে দেখেই হাসিমুখে বলল, - আরে তোরা? কেমন আছিস? - ভালো।

তুই? ওর পাশে বসে বললাম আমি। - এইতো ভালো। সজল, তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বস না। সজল বসল। মিশু বলল, - এরকম আসামীর মত মুখ করে আছিস কেন? তুই তো আর ইচ্ছা করে ল্যাঙ মারিস নি।

খেলতে গেলে এরকম হতেই পারে। - হ্যা, অবশ্যই হতে পারে! তাছাড়া ইনজুরিতে না পড়লে ভালো খেলোয়াড় হওয়া যায় না, কী বলিস? মিশুর সাথে তাল মিলিয়ে বললাম আমি। সজল বলল, - মিশু, তুই কি পরীা দিবি? - আরে না! হাতই তো নাড়াতে পারি না। ভালোই হয়েছে। বজলু স্যার এসে বলেছেন, ‘পরীা দেয়া লাগবে না।

তুই শুধু রেস্ট নে আর অংকগুলো দেখ। ’ স্যারতো প্রতিদিন একবার করে আমাকে দেখে যান। - বলিস কী? বজলু স্যার এত ভালো? - ধুর! স্যার আসলে তার ছোটভাইয়ের বদলির ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলতে আসেন। এজন্যই আমার প্রতি তার এত দরদ। - তুই তো ব্যাটা হাত ভেঙে বেঁচে গেলি।

আমাদের তো পরীাও দিতে হবে, ফেলও করতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম আমি। - সমস্যা নাই। আমার কাছে প্রশ্ন আছে। বজলু স্যার নিজে দিয়েছেন।

তোরা ওটা নিয়ে অংকগুলো প্র্যাকটিস করে ফেল। - তুই প্রশ্ন দিবি? আমি আর সজল একসাথে জিজ্ঞেস করলাম। - কেন দেব না? সেরকমই তো কথা ছিল। - দোস্ত! তুই না থাকলে কী যে হত! আবেগে আরেকটু হলে মিশুর ভাঙা হাতটাই জড়িয়ে ধরতাম আমি । হাতাটা সরিয়ে নেওয়ায় আর ধরলাম না।

মিশু বিছানা থেকে নেমে অনেক খুঁজে একটা কাগজ এনে দিল। এটাই সেই প্রশ্ন। প্রশ্ন দেখে বজলু স্যারের প্রতি শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নুয়ে এল। সজল বলল, - মিশু, আমাদের কারো কাছে তো বই নাই। অংকগুলাও করা নাই।

প্র্যাকটিস করব কিভাবে? - অংক বইও নাই! কী আর করবি? আমার খাতা দেখে অংকগুলো তুলে নিয়ে যা। আমরা তা-ই করলাম। এর মধ্যে আন্টি এসে আমাদের খাবার দিয়ে গেলেন। বড় ভালো লাগল। মিশু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা যে যার বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসেই অংকগুলো করা শুরু করলাম আমি। বিকেলে খেলতেও গেলাম না। এবার অংকে ১০০ পেয়ে বজলু স্যারসহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেব, এমনটা ভাবতেই ভালো লাগছিল। পরদিন পরীার হলে গিয়ে সজলের সাথে দেখা হতেই ও হেসে বলল, - দোস্ত! এইবার ১০০ পাবই পাব! বজলু মিয়া একেবারে টাষ্কি খেয়ে যাবে। - কিন্তু পরীা শুরু হচ্ছে না কেন? এমন সময় খাতা নিয়ে স্যার রুমে ঢুকলেন।

খাতা পেয়েই ব্যাপক উৎসাহে সব পাতায় মার্জিন টানা শুরু করলাম। ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে স্যার প্রশ্ন দিলেন। প্রশ্নটা এক নজর দেখেই আমার মাথা ঘুরতে লাগল। এ কোন প্রশ্ন? কাস নাইনের প্রশ্ন নাতো? না, ৮ম শ্রেণিই তো লেখা আছে। তাহলে মিশু যে প্রশ্ন দিয়েছিল সেটা কোথায়? সজলের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর অবস্থাও একই।

কি আর করা, নাম-রোল লিখে তাড়াতাড়ি খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে এলাম আমরা। সজল বলল, - চল, মিশুর বাসায় যাই। - কী করবি গিয়ে? - ওর বাম হাতটাও ভেঙে দিয়ে আসব। কত বড় সাহস! আমাদের সাথে বিটলামি করে? ওকে শিা দেয়া জরুরী। - ঠিক আছে, চল।

বলেই আমরা হাঁটা শুরু করলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।