আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল জল শৈশব-৩



Click This Link বিলাতী মামা ও অন্যান্য হাতিয়ায় আমার পিতার বদলীর চাকরীর সূত্রে থাকতাম। কিন্তু অনেকগুলো স্থানীয় পরিবারের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো আমাদের। শুরু করেছিলেন সিংচরের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক খান। আমার মা নাকি তাঁর মৃত বোনের মতো। সোজা আমার মাকে বোন ডেকে ফেললেন।

এই পরিবারটির কারো কারো সাথে এখনো সম্পর্ক বজায় আছে। তিনি আমার আপন দুই মামার সাথে আমাদের তৃতীয় মামা হয়ে গেলেন। এখন আর বেঁচে নেই তিনি। কী বিচিত্র কারণে আমাদেরকে তিনি ভীষণ ভালো বাসতেন। তাঁর বড়ো ছেলে শোভা খান একটা এনজিওতে কাজ করেন।

বোহিমিয়ান টাইপের মানুষ। ভালো গান করেন। তাঁর স্ত্রী বেতারেও গান করতেন এক সময়। এই শোভা খান আমাদের বাড়ীতে দীর্ঘদিন থেকেছেন। আমাদের বাড়ীতে থেকে বিএ পাশ করে গেছেন তিনি।

তার ছোটভাই জেবু সোনালী ব্যাঙ্কের উঁচু পদে আছেন। জেবু ভাইয়ের স্ত্রী এখন একটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। (শোভা ভাইদের বাড়ী নিয়ে পরে লিখবো বিস্তারিত। ) মাসুদ মামাকে কেন্দ্র করে আমার বহু মামা হয়ে গেলো হাতিয়ায়। কারণ বড়ো কেউ এলেই আমি মামা ডাকা শুরু করতাম ( নতুন কিছু শিখলে শিশুরা যা করে আর কি )।

এর মধ্যে একজন এলেন, নাম আফলাতুন। এই নামটি এখনো আমার কাছে আনকমন। আফলাতুন মামা ছাড়া আরেকটি মাত্র আফলাতুন নাম আমার চোখে পড়েছে। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ছিলেন। মাঝে মাঝে মনে হতো ইনিই সেই আফলাতুন কিনা ? সেটা নানা কারণে যাচাই করা হয়নি।

আর হবেও না, কারণ সাহিত্যিক আফলাতুন বেশ আগেই মারা গেছেন। বড়ো হয়ে জেনেছি গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর নাম আরবীতে লেখা হয় আফলাতুন। অন্যান্য নতুন পাতানো মামাদের কথা ভুলে গেলেও বিলাতী মামার কথা মনে আছে। একদিন এলেন এক সেইকালের সাজুগুজু করা ভদ্রলোক। আমি বললাম, মামা আপনি তো খুব সুন্দর ( সাজগোজকে সৌন্দর্য বলে ধরে নিয়েছিলাম) আপনার বাড়ী কোথায় ? তিনি বললেন, বিলাত (ইংল্যাণ্ড)।

এরপর থেকে তিনি হয়ে গেলেন আমার বিলাতী মামা। অনেক চেষ্টা করেও তিনি নিজের আসল নাম আমার কাছে গছাতে পারলেন না। আমিও তার আসল নাম জানিনা। সেই সব মামারা কে যে কোথায় আছেন জানিনা। সাগরের নীল জলের ঢেউরাও এর জবাব জানে কিনা জানি না।

দুধের কৌটা, বিস্কুটের টিন............ সেই কালে শিশুদের বিকল্প প্রধান খাদ্য ছিলো গরুর দুধ। টিনের কৌটার দুধ ছিলো আলাদা ফুটানীর মাধ্যম। এখনকার মতো বহুরকমের দুধের কৌটা পাওয়া যেতো না। অল্পকিছু ব্র্যাণ্ড ছিলো- ডানো, বেবিলাক, লা ফ্রিজিয়ানা, অস্টার মিল্ক ইত্যাদি। আমার প্রিয় ছিলো ফুলক্রিম অস্টার মিল্ক।

প্রায়ই মায়ের অজান্তে ( সোজা বাংলায় চুরি করে ) খেতাম। হরলিক্সও পাওয়া যেত। আমি পছন্দ করতাম না। বিস্কুট পাওয়া যেত প্যাকেটের পাশাপশি টিনেও। এসার্টেড বিস্কুট।

নাবিস্কোর টিন আমার প্রিয় ছিলো। আজকালকার মতো তখনো বিদেশী বিস্কুটের টিন পাওয়া যেত। তেল বলতে দোকানের খোলা সরিষার তেল। সয়াবীন মাত্র আসতে শুরু করেছিলো। দাম কম ছিলো।

তখন সেটা ছিলো গরীবের তেল। বাদাম তেলের নাম শুনতাম। এটা কি পৃথক কোন তেল না সয়াবীনের ভিন্ন নাম তা বলতে পারি না। সেদিনকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা বনস্পতি নামে ডালডা আর তাল্লোর গাওয়া ঘি ছিলো সুপার হিট। তখন শিশুদের পেটের সমস্যার অব্যর্থ মহৌষধ ছিলো উডওয়ার্ডের গ্রাইপ ওয়াটার।

সকল ওষুদের ওপর ক্ষিপ্ত থাকলেও গ্রাইপ ওয়াটারের ঝাঁঝালো মিষ্টি স্বাদ আমার খুব প্রিয় ছিলো। এরশাদ আমলের ওষুধনীতির পাল্লায় পড়ে গ্রাইপ ওয়াটার বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হলেও ভারতে বোধহয় এখনো পাওয়া যায়। বছর সাতেক আগে আমার ছেলের জন্য ভারত থেকে একজনের মাধ্যমে আনিয়েছিলাম। (চুপে চুপে বলে রাখি ছেলের সাথে আমারো খুব খেতে ইচ্ছে করছিলো। ) (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।