আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[ংন]একটি ময়নাতদন্ত : জামায়াতে ইসলাম[/ংন]

একটু আগে বাড়ি ফিরলাম। সব ঝামেলা চুকে। দরোজায় দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে দ্যাখি, এ-কী! আমার সমস্ত শরীর যেনো পুড়ে যাচ্ছে শারদীয় জোছনায়, তীব্র আলোয়। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, তখনও ওরা বলেছে ‘ইসলাম গেলো, গেলো’। নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে নানাভাবে ইসলাম-কে ব্যবহার করেছে।

কুরআনের ব্যাখা দিয়ে বেয়োনট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেছে। হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে। জানি না ধর্মীয় দৃষ্টিতে আপনি সেগুলো জায়েজ বলবেন কীনা জানি না। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে এদের ভাষায় তারা তখনও নাস্তিক-মুরতাদ হয়েছিল।

এই সেই ব্যক্তিরা যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের সহায়তা নিয়ে অজস্র মানুষ হত্যা করেছ নৃশংসভাবে নির্যাতন করেছে। পঙ্গু করে দিয়েছে। হত্যা করেছে। আজ ৪২ বছর, মুক্তিযুদ্ধের পর। এখনও তাদের আস্ফালন।

এ কয়েক বছরে বিভিন্নজনকে মুরতাদ বলা হয়েছে, নাস্তিক বলা হয়েছে। এখনও বলে যাচ্ছে এই একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। ভাবটা এমন তারাই একমাত্র ইসলামের ত্রানকর্তা। ইসলাম সম্পর্কে তারা সব জানে। বাকিরা কিছুই জানে না।

নাস্তিক। ‘যার যার ধর্ম তার তার কাছে’ এইটা যেমন বলেছে কুরআনে, এইটাও বলা হয়েছে ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না’। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এখন শাহবাগে গণজাগরণ চলছে। গণআন্দোলন চলছে। এরা এখনও বলে চলছে ওরা নাস্তিক।

ওরা ধর্ম মানে না। ধর্মের সম্পর্কে এতটাই সচেতন তারা, রাজিবের জানাযায় কয়টা তাকবির হয়েছে, তাও তারা খেয়াল করেছে। কিন্তু নিজে গিয়ে জানাযা পড়েনি। জানাযার ইমামকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। নানাভাবে তারা কুৎসা রটাচ্ছে।

নানান বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলনকে ধর্মের সঙ্গে সংযোগ করে চলছে। কুৎসা রটাচ্ছে। নানান গল্প জুড়িয়ে দিচ্ছে। অনলাইনে আইডি চুরি করে আপত্তিকর কথা জুড়ে দিচ্ছে।

যে লোকগুলো রাজিব এর মৃত্যুর পরপরই নতুন একটা সাইট বানিয়ে সবার ভিতর ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে তাদের উদ্দেশ্যটা কি? ওরা শাহবাগের প্র্রতিবাদকে নাস্তিকদের আখড়া হিসাবে প্রমাণ করতে চায়, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে এই আন্দোলন গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এই আন্দোলন এ আস্তিক-নাস্তিক সকলেই আছে, এটা রাজিব এর একার আন্দোলন না, বাঙালির আন্দোলন। হয়তো বা রাজিব নাস্তিক, কিন্তু কিছু মানুষ রাজিব এর নাস্তিকতাকে ইস্যু করে সবার উপর চাপিয়ে সাধারণ এর মাঝে বিদ্বেষ ছড়াতে চায়, একজন প্রকৃত মুসলমান কখনই ইসলাম নিয়ে খারাপ কোন জিনিসের প্রচারনা করবে না। আমাদের কয়েকজন বন্ধু তাদের উস্কানী-উড়ো বাতাসে একাত্ম হচ্ছেন। প্রকারান্তরে সরব-নিরব সমর্থনও জানাচ্ছে।

তাদের মনেও শংকা ‘ইসলাম গেলো, গেলো’। আওয়ামী লীগ কিংবা প্রগতিশীল দলকে ক্ষমতার বাহিরে রাখার জন্য একটি অপপ্রচার করেছিল ‘ওরা ক্ষমতায় আসলে মসজিদের উলুধ্বনি শোনা যাবে’। এখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় কোথাও কি উলুধ্বনি শোনা যাচ্ছে? এখন বলছে, ‘মসজিদে নাকি সামনে নামায পড়তে পারবে না। ’ হাস্যকর। ইসলামের কোন তরিকানুযায়ী বা কোরআনের কোন আয়াতে বলা হয়েছে অন্যের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ কিংবা লুটপাট করার কথা? যদি তা না হয়- তবে কেনো এই নিরবতা? কিছুদিন আগেও যারা জিহাদি জোশে নানা পন্থায় রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেবার বিষয়ে উচ্চকিত ছিলেন তাদের তো কোনো দেখা পাই না, ভুল ছবি-ভুল তথ্য দিয়ে যারা বার্মার ঘটনাকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করার অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন রামুর ঘটনায় তাদের কোনো রা নেই।

একেই বলে সভ্যতা! অন্য দেশের ‘মুসলিম’ আক্রান্তের ঘটনায় মুমিন মুসলমানরা যতোটা সোচ্চার হয়েছিলেন, নিজের দেশের ‘মানুষ’ আক্রান্তের ঘটনায় তাদের এই বিভৎস নিরবতা সত্যিই সন্দেহজনক। যারা শুধু ‘মুসলমান’ চেনেন কিন্তু ‘মানুষ’ চেনেন না। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে তৎকালীন সময়েই নানা জনে নানা জিহাদি বক্তব্য দিয়েছে, রামুতে বৌদ্ধ বসতি আক্রান্ত হবার ঘটনায় তাদের প্রচ্ছন্ন মদদ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক যে নয় তার দুটো কারণের একটি হলো- ওইসব জিহাদি স্ট্যাটাসধারীদের নিরবতা, আর অন্যটি হলো-রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে সরকার ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’র কূটচালের বাড়া ভাতে ছাই ছুড়ে দিলো। রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’ সারাদেশে সা¤প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ায়, মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে এবং সবশেষে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ভারি করে।

রাজশাহীতে জঙ্গি বাংলা ভাইদের উত্থানে এ বিশেষ গোষ্ঠীর সংযোগ ছিল। সেই ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’র নাম জামায়াতে ইসলাম। ১৯৪১ সালে পাঠানকোটে আবুল আ’লা মওদুদী জামায়াতে ইসলামী নামে ‘অরাজনৈতিক’ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। কিছুদিন পর দেখা গেল তিনি রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছেন। ব্রিটিশদের পা চাটা শুরু করেন।

পাকিস্তান নিয়ে তখন যে আন্দোলন চলছিল তাকে তিনি উল্লেখ করেন ‘আহাম্মকের বেহেশ্ত’ এবং ‘মুসলমানদের কাফেরানা রাষ্ট্র’ হিসেবে। হিন্দু জাতীয়তাবাদ তার ভাষায় যেমন ‘লানত’, মুসলিম জাতীয়তাবাদও তাই। মুসলিম লীগ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামী কি ইন্তেখাবী...গ্রন্থে মওদুদী বলেছিলেন, ওরা পরিবেশকে পায়খানার চেয়েও খারাপ করে ফেলেছে। জিন্নাহর সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন মওদুদী। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে মওদুদী ‘কাফেরদের রাষ্ট্র’ পাকিস্তানের লাহোরে এসে ডেরা বাঁধেন এবং ঘোষণা করেন, পাকিস্তান হলো ‘খোদাদাদ’ বা আল্লাহর দান।

ভারতে প্রকাশিত তার আগের বইগুলো যখন পাকিস্তানে ছাপা হয় তখন জিন্নাহ, পাকিস্তান, মুসলিম লীগ সম্পর্কে যেসব সমালোচনা ছিল সেগুলো ছেঁটে ফেলেন। তারপর তিনি স্বভাব অনুযায়ী রাজনীতিতে নাক গলাতে লাগলেন। ১৯৫৩ সালে পাঞ্জাবে তিনি কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু করলেন। মওদুদীকে গ্রেফতার করে বিচার হলো এবং ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো। পরে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপে তার ফাঁসির দণ্ড রদ করা হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি-জামায়াত সম্পর্কের কথাও বলতে হয়। মওদুদী তফহিমের চতুর্থ খণ্ডে সৌদি রাজবংশকে কা’বার খাদেম হিসেবে অস্বীকার করেছেন। কা’বার খাদেমদের বলেছেন হরিদ্বারের পা। কারণ ইসলামে রাজতন্ত্র নেই। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সৌদি বাদশাহ ফয়সালের কথোপকথনের উল্লেখ করতে হয়।

সৌদি আরব তখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফয়সাল বঙ্গবন্ধুকে বললেন, সব ঝামেলা মিটে যায় যদি বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু বললেন, অতি উত্তম প্রস্তাব। মহান কা’বা শরীফের রক্ষক যদি নিজের দেশের নামের আগে রাজরাষ্ট্র (কিংডম) শব্দটি বাদ দিয়ে প্রজাতন্ত্র করেন তো আমরা সবাই তা অনুসরণ করব। ফয়সাল আর কোন কথা বলেননি।

ফয়সাল মওদুদীকে টাকা দিতে লাগলেন, মওদুদী প্রায় প্রতিদিন ফয়সালের প্রশংসা করতে লাগলেন। এভাবে জামায়াতের সঙ্গে ওহাবী ইসলামের যোগাযোগ হলো। সৌদি প্রতিষ্ঠান রাবেতার মাধ্যমে জামায়াত টাকা পায় বলে অনুমিত। এ টাকায়ই বাদশাহ ফাহাদ, ফয়সাল ইত্যাদি নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হয়। আর এসব থেকে মুনাফা সাদা টাকায় পরিণত হয়।

সেই কারণে জামায়াতের টাকার কোন অভাব নেই। মীর কাশেম আলী ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন শুধু লবিস্ট নিয়োগে! হাদীস শরীফ-এর এ ভাষ্য অনুযায়ী তথাকথিত জামাতে ইসলামীর জন্মদাতা মওদুদী কোন্ পর্যায়ের মুনাফিকরূপে সাব্যস্ত হন তা বিচারের জন্য পাঠকের নিকট নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ও বক্তব্য (প্রথম পর্যায়ে ইসলামী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রচেষ্টায় নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে এবং পরবর্তিতে তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে) যা চরম নির্লজ্জতার, বেহায়াপনার ও নগ্ন স্বার্থবাদিতার জ্বলন্ত উদাহরণ। মওদুদী ইসলাম সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জামায়াতী ছাড়া অন্য কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পক্ষে তা মেনে নেয়া কষ্টকর। কারণ ইসলাম হচ্ছে ‘সিরাতুল মোস্তাকিম। ’ এই সহজ পথটিকে জামায়াতীরা কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছে।

ইসলাম প্রসঙ্গ আনার কারণ আছে। কারণ জামায়াত ইসলামের নামেই রাজনীতি করে। তারা নিয়ত বলে, ইসলামের ঠিকাদারি তারাই নিয়েছে এবং মানুষকে মুসলমান বানাবার ঠিকাদারিও তাদের। আর এ কাজটি সহজ করার জন্য ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। প্রথমে তার নামের প্রসঙ্গ।

আ. ত. ময়মনী লিখছেন, “আলেমদের মতে, আবুল আ’লা নামটি শিরক-মিশ্রিত। আ’লা স্রষ্টার সিফাত, অতএব এই ‘আ’লার কোন ‘আব’ বা পিতা হতে পারে না। আল্লাহর যেমন পুত্র নেই, তেমনি পিতাও নেই। ” সুতরাং এই ধরনের নামই শিরক। সাধারণ মুসলমানরা ফেরেশতা মানেন।

মওদুদী বলেন, ‘ফেরেশতা হলো ভারতের এবং গ্রীসের দেবদেবীর অনুরূপ। ’ শুধু তাই নয়, তিনি খলিফা হযরত ওমর (রা.) এবং সাহাবাদের নিয়ে নানা বিদ্রুপাত্মক কথা লিখেছেন। ইমাম মাহদীকে মওদুদী মানলেও তার সম্পর্কে তার অভিমত ছিল, মাহদী হবেন বিপ্লবী নেতা। তিনি দাবি করেছেন, ইসলাম হলো ফ্যাসিজম। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রিয় রসুল (স.) সম্পর্কেও অবমাননাকর কথা বলেছেন।

(তফহিমুল কোরান, ১৮ খ-)। তাছাড়া হযরত ইউনুস, সুলায়মান, দাউদ সম্পর্কেও তিনি আপত্তিকর সব মন্তব্য করেছেন। দাসীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তিনি সমর্থন করেছেন। এসব কারণে জামায়াত করেন না এমন অনেক আলেম মওদুদীর বিরুদ্ধে দাজ্জাল ও জামায়াতকে গোমরাহ্ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন মৌলানা মাদানী, এহতেশামুল থানবী ও হাফেজ্জী হুজুর।

গোলাম আযমের গুরু ছিলেন আবদুর রহিম, যিনি তাকে জামায়াতে এনেছিলেন। পরে তিনি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়ে পড়েন মওদুদীর বিভিন্ন দর্শন ও গোলাম আযমের কর্মকাণ্ডে। গোলাম আযম মওদুদীকে মানেন, আবার নিজের স্বার্থে অমান্যও করেন। দু’-একটি উদাহরণ দিই। মওদুদী বলেছেন, কোরান ও সুন্নাহ অনুসারে নারী সংসদ দূরে থাক সরকারি কোন দায়িত্বপূর্ণ পদেও যেতে পারে না।

অর্থাৎ নারী নেতৃত্ব নাজায়েজ। একটি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, যে স্বৈরাচার পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহণ ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে নারী নেতৃত্ব গ্রহণের অনুমোদন শরীয়তে আছে। অথচ ১৯৫২ সালের ‘মাসিক তরজুমানুল কোরআন’ ও ‘মাসিক আল ফুরকান’ পত্রিকায় তিনিই লিখেছেন নারী নেতৃত্ব কোন ইজতিহাদী মাসয়ালা নয়। এ প্রশ্ন গোলাম আযমদের কাছে করা হলে তারা বলেন, খালেদা ও হাসিনা হচ্ছে দুই শয়তান। একজন বড়, একজন ছোট।

তারা ছোট শয়তানের সমর্থক বাস্তব কারণে। অথচ কোরানে আছে, ‘শয়তান নিশ্চয় তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ [জুখরুখ, ৬৩ আয়াত]। মওদুদী ঘোষণা করেছেন, বিষাক্ত দুধের মাখন হলো গণতান্ত্রিক নির্বাচন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে কেউ যদি সংসদে নির্বাচিত হয় তাহলে ইসলাম অনুযায়ী তা হারাম। এসব নির্বাচন হচ্ছে কুকুরের দৌড়।

এখন এই মওদুদী ও তার ইসলামের নির্দেশ অমান্য করে জামায়াতের নেতারা কুকুরের দৌড়ে শামিল হয়েছেন। ছোট শয়তানের সঙ্গে আঁতাত অক্ষুণœ রাখার জন্য গোলাম আযম ঘোষণা করেন, ‘কোন মুসলিম রাষ্ট্রে যদি কোন মহিলা সরকারপ্রধান হন তাহলে এর জন্য সে মহিলাকে দায়ী করা মোটেই সঙ্গত নয়। ’ মহানবী (স.) সব সময় ক্ষমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমাদের ক্ষমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, হত্যার নয় (ময়মনী)। ‘লা ইকরাহা ফিদ্দিন’ ও ‘লাকুম দীনুকুম ওলীয়াদীন’ ছাড়াও আরও কয়েকটি সূরায় ধর্ম সম্পর্কে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে এবং মুরতাদকে মৃত্যুদন্ডের কথা কেউ বলেনি।

ইসলাম ত্যাগ করে যারা মুসলমানদের ক্ষতিসাধন করেছে তাদের তিনি মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর, ময়মনী লিখেছেন, রসুল ১০ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু পরে ৭ জনকে ক্ষমা করা হয়। ইবনে খাত্তান তার সঙ্গীকে হত্যা করে যাকাতের মাল নিয়েছিলেন। আরও দু’জনও হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

মওদুদী বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে যার সম্পর্ক নেই সে জান্নাতবাসী হবে না। মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর গোলাম আযমরা এখানে পাকিস্তানের মতো ব্লাসফেমি আইন চালু রাখতে চান। কথায় কথায় এক সময় শিবির ছাত্রদের রগ কেটেছে, এখনও করছে। তারা ছাত্র হত্যা করে ম্যানহোলে ফেলে রেখেছে।

সৌদি আরবে ইসলামের অনেক মূলনীতি মানা হয় না কিন্তু জামায়াত সে সম্পর্কে কখনও মন্তব্য করেনি। জামায়াতে পুরোপুরি সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক একটি দল। সাম্রাজ্যবাদ যেমন তাদেরকে ‘মর্ডান ইসলামি পার্টি’ বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে, আবার তারা সাম্রাজ্যবাদ শক্তির সাথে একাট্রা হয়ে উঠেছে, ক্ষমতায় যাওয়ার দেনদরবার অব্যাহত রেখেছে। আমেরিকায় যখন মহানবী (সা.)-কে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলো, সারা বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলো প্রতিবাদী হলেও জামায়াত সে অর্থে ছিল না। সুতরাং ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইসলামের সঙ্গে মওদুদী প্রচারিত ইসলামের তফাত অনেক।

মওদুদীর ইসলামের ব্যাখ্যা ধর্মপ্রাণদের কাছে ধর্মদ্রোহিতা মনে হবে। বাংলাদেশের জামায়াতী নেতারা মওদুদীর অনুসারী। কিন্তু তারা আবার তাদের স্বার্থের অনুকূল অনেক কিছু গ্রহণ করে, তা মওদুদী দর্শনের বিপরীত। যেমন মওদুদী বলেছেন, একজন উকিল কুফরের কাজ করেন। ওকালতি খোদার আইন বিরোধী বিদ্রোহ।

এ থেকে উপার্জন হারাম। বেশ্যাবৃত্তি ও সুদের কারবার থেকে অর্জন যেমন হারাম ওকালতিও তেমনি হারাম। উকিলের মুহুরী হওয়া হারাম। উকিলের বাসায় খাওয়া-দাওয়া হারাম। বাংলাদেশের আদালতে তাহলে মওদুদীর ভাষায় কতজন বেশ্যাবৃত্তি করছে? পাকিস্তানের ওপর শাহরিয়ার কবির যে ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন, সেখানে মওদুদীর এক পুত্র সাক্ষাতকার দিয়েছেন।

তিনি বলছেন, মওদুদী তাদের জামায়াতে ইসলামীর ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি। বলেছেন, এর থেকে দূরে থাক। মাদ্রাসায় তাদের পড়াননি। মওদুদীর অনুসারীদের তিনি ধোঁকাবাজ বলেছেন। গোলাম আযম বা নিজামীরা তাদের পুত্রদের জামায়াত রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন।

মাদ্রাসায় পড়াননি। প্রচলিত স্কুল-কলেজে পড়িয়ে নাছারাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের গরিব ও মধ্যবিত্ত অনুসারীদের পুত্র-কন্যাদের মাদ্রাসায় পড়াতে বলেছেন এবং সেখান থেকে জঙ্গি উৎপাদনে ব্যবহার করছেন। জামায়াতে ইসলামী ইসলামের নামধারী, লেবাসধারী। কোনভাবেই তারা ইসলামিক দল নয়।

এদেরকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা আজ কক্সবাজারে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে থাকা একজন অসুস্থ কোরআনের হাফেজকে হত্যা করতে পিছু হননি। ধর্মকে ব্যবহার করে পুরো সমাজব্যবস্থাকে ওরা নষ্ট করে ফেলেছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।