পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
মায়ের আমসেল বঊয়ার ১৭৪৩ সালে বাবা মোজেস আমসেল বউয়ার , একজন ইহুদী ঋণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণকারের ঘরে জন্ম গ্রহন করেন । বাবা মোজেস ছেলে মায়েরকে সর্ব শক্তি নিয়োগ করে ঋণ ব্যবসা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে থাকেন। মায়ের ও ছোট বেলা থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও প্রতিভা দেখাতে থাকেন যে কোন ধরনের অর্থ ব্যবসায় । মোজেসের ব্যবসা ছিলো জার্মানীর ফ্রাংকফুর্টে একটা দোকান , ইহুদী স্ট্রীটে । অর্থ সংক্রান্ত পরামর্শ , ঋণ ও স্বর্ণ ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি ছেলেকে র্যাবাই (ইহুদী পাদ্রী) বানানোর স্বপ্ন ছিলো বলে জানা যায়।
মায়ের বাবার মৃত্যুর পরে একটা ব্যাংকে ( ওপেনহাইমার , হ্যানোভারে) কাজ নেন এবং অসাধারন কৌশল , বুদ্ধি ও চালাকি দেখিয়ে দ্রুতই জুনিয়র পার্টনার বনে যান।
এর কিছুদিন পরে ফ্রাংকফুর্টে ফিরে বাবার ব্যবসা পূনরায় কিনে নিয়ে নিজের নাম বদলে রাখেন রথচাইল্ড । আর এভাবেই বিশ্বখ্যাত ধনকুবের ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবসায়ী রথচাইল্ড হাউসের শুরু হয় ।
ওপেনহাইমারে কাজ করতে করতে মায়ের ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন জেনারেল ভন এস্টর্ফ যিনি জার্মানীর প্রিন্স উইলিয়াম অফ হানুউ এর কোর্ট এ ছিলেন । উইলিয়ামের বিরল মেডাল ও কয়েন সংগ্রহের বাতিক আছে জেনে মায়ের বেশ কিছু বিরল মেডাল, কয়েন দিয়ে উইলিয়ামের সাথে ঘনিষ্টতা গড়ে তোলেন।
এভাবে কিছুদিনের মধ্যেই মায়ের ইউরোপের প্রায় প্রতিটা প্রাসাদ ও রাজকীয় পরিবারের সাথে ব্যবসা শুরু করেন। তবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট প্রশ্রয়দাতা উইলিয়াম ছিলেন যাকে বলে " মাংসের কারবারী" । উইলিয়ামের মূল ব্যবসা ছিলো ইউরোপের বিভিন্ন রাজকীয় পরিবারের কাছে যুদ্ধের সৈন্য সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে উপার্জন করা । মারা যাবার সময় সেই আড়াইশ বছর আগে উইলিয়ামের সম্পদ ছিলো ২০ কোটি । এই উইলিয়াম যখন ডেন্মার্কে পালিয়ে যায় , তখন রথ চাইল্ডকে ৬০ হাজার পাউন্ড দিয়ে যায় যার মূল্যমান তখনই প্রায় ৩ মিলিওন ডলার ।
( মানুষের মাংসের ব্যবসা চরম লাভজনক দেখা যায়) ! উইলিয়ামের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিলো বৃটিশ মোনার্কি , আমেরিকার কলোনী গুলোকে সাইজে রাখতে প্রায়ই তাদের সৈন্যের দরকার হতো ।
রথচাইল্ড ঐ ৬০ হাজার পাউন্ড মেরে দেয় এবং ছেলেকে লন্ডন পাঠায় মার্চেন্ট ব্যাংক খোলার জন্য । উল্লেখ্য , রথ চাইল্ডের ছিলো ৫ ছেলে । ইউরোপের সর্বত্র ব্যাংকিং বা সোজা ভাষায় ঋণ ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য আনতে রথ চাইল্ড ইউরোপের ঐ সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর গুলাতে নেপলস (ইটালি), প্যারিস (ফ্রান্স) , ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) ও লন্ডন (ইংল্যান্ড) এ একটি করে ছেলে পাঠিয়ে দেয় । এক ছেলে ফ্রাঙকফুর্ট থেকে যায় ব্যবসা দেখার জন্য ।
এই পাঁচটি শহর থেকে ইউরোপের সমস্ত রাজকীয় পরিবারের সাথে রথচাইল্ডরা ব্যবসা গড়ে তোলে । উপায়টা খুব সোজা । রাজায় রাজায় যুদ্ধ করবে। রথচাইল্ডরা দুইপক্ষের রাজাকেই উচ্চ সুদে ঋণ , বন্ড ইত্যাদি দেবে এবং যেই পক্ষই হারুক জিতুক সেই ঋণ শোধ করতে হবে । শোধ করতে না পারলে জমি জমা , ধন সম্পদ ইত্যাদি বন্ধক রেখে আরো উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে ।
( মানে , যুদ্ধের ফল যাই হোক , লাভ একা রথচাইল্ডের!)
ঐ তিন মিলিয়ন ডলারের ব্যাপারটাও রক্তাক্ত । বৃটিশ মোনার্কি জেনারেল হেসকে ওই টাকা দেন তার ও তার সৈন্যদের বেতন হিসেবে যেটা প্রিন্স উইলিয়াম মেরে দেন এবং উইলিয়াম থেকে মেরে দেন রথচাইল্ড । এই টাকা দিয়ে নাথান, মায়েরের বড় ছেলে বাবার নির্দেশে লন্ডনে ব্যবসা খুলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে সোনা কিনে নেয় । এবং এই নাথান লর্ড ওইয়েলিংটনের সাথে বণ্ডের ব্যবসায় চার ধাপে বিপুল লাভ করে নেয় । মজার ব্যাপার হলো , নেপোলিয়নের ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য আর বৃটিশ সাম্রাজ্যের তখন লাভের গুড় নিয়ে চরম লড়াই চলছে ।
নেপোলিয়ন হুমকি দিচ্ছেন " হেস -ক্যাসেল " এর ভিত্তি ভেঙে দেবেন চিরদিনের জন্য , যেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রথচাইল্ড পরিবারের ব্যাংকিং ব্যবসা । কিন্তু রথচাইল্ডদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই । কিছুদিন পরে দেখা গেলো বৃটিশ আর ফ্রেঞ্চ জাহাজগুলো যখন পরস্পরের নৌ ও অন্যান্য ব্যবসার পথ গুলো আটকে রেখেছে , একটা মাছিও গলতে পারছে না , কেবল একটা কোম্পানি যাতায়াত করছে নির্বিঘ্নে ! জ্বি , ঠিকই ধরেছেন , রথচাইল্ড দুইপক্ষেরই অর্থের যোগান্দাতা ! ( নাথান রথচাইল্ড লন্ডনে, জেকব রথচাইল্ড প্যারিসে, মনে আছে তো? )
ইউরোপের ৫টি শহর , সবচাইতে ধনী পরিবার/মোনার্কির সাথে ব্যবসার পাশাপাশি সারা ইউরোপ জুড়ে নিজেদের গোয়েন্দা নেটোয়ার্ক গড়ে তোলে রথচাইল্ডরা । ফলে , অর্থনৈতিক দুনিয়ার কোথায় কি ঘটতে যাচ্ছে সেইটা আঁচ করার পাশাপাশি পরবর্তী "ঘটনাটি" ঘটানোর কাজটাও খুব ভালো ভাবে করেছে এই ধনাঢ্য পরিবার । এদের স্পাই ছিলো না এমন কোন কোর্ট , ব্যাংক , প্রাসাদ , এমন কি পথচারীদের "ইন" পর্যন্ত ছিলো না ।
সব জায়গা থেকেই এই স্পাইরা খবর সংগ্রহ করতো আর রথচাইল্ডরা নিজেদের টাকা, সম্পদ বাড়ানোর কাজে তা ব্যবহার করতো ।
এদের এই সাফল্যের মূলে ছিলো গোপনীয়তা আর কঠোর নিয়ম কানুন। রথচাইল্ডরা কোন ভাবেই কারো সাথে সত্যিকারের বন্ধুত্ব গড়ে তুলতো না । যাকে দরকার তাকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিত ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে । যেমন, মায়েরের উইলে উল্লেখ করা ছিলো , ব্যবসা কোনভাবেই পরিবারের বাইরে যাবে না ।
পরিবারের বড় ছেলে হবে ব্যবসার প্রধান । মেয়েরা কোন ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজ করতে পারবে না। মেয়েদের কাজ হলো পুরুষদের দেখভাল করা । রথচাইল্ডরা বিয়ে করতে পারবে শুধুমাত্র কাজিনদের । পরিবারের বাইরে বিয়ে করা যাবে না ।
যারা (মেয়েরা সহ) অর্থ ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত নয় তারা নিয়মিত মাসোহারা পাবে । রথচাইল্ড পরিবারের প্রকৃত অর্থসম্পদের পরিমান কোন বাইরের লোক জানতে পারবে না , পরিবারের কেউ জানাতে পারবে না । কেউ জানালে তার মাসোহারা বন্ধ করে দেওয়া হবে । ( মানে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ)
ইউরোপ এর অর্থনীতি কিনে নেওয়া ঃ
বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য তখন মুখোমুখি । ওয়াটার লুতে দুই পক্ষ সমগ্র শক্তি নিয়োগ করে যুদ্ধ করছে ।
যুদ্ধের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে কে নিয়ন্ত্রন করবে পৃথিবী জুড়ে ( ভারতের খনিজ, কাপড়, মসলা ; বার্মার রুবি; আফ্রিকার সোনা ও ডায়মন্ড ; তেল , তুলা , দাস ব্যবসা ইত্যাদি) অর্থনীতি । রথচাইল্ড যুদ্ধের দুইপক্ষেরই অর্থ যোগান দিচ্ছে , নানা রকম খবর সংগ্রহ করছে , যুদ্ধের প্রতিদিনের ফল লন্ডোন এক্সচেঞ্জের বন্ড এর দাম ওঠা নামা করাচ্ছে ( এখনো জানেন না ? যুদ্ধও একটা ব্যবসা , বহু আগে থেকেই) । জুন ১৫, ১৮১৫ - রথচাইল্ডের স্পাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে এলো নাথানের কাছে , খবরে চোখ বুলিয়ে নাথান তীরবেগে ফিরে গেলেন লন্ডনে । পরদিন সকালে নির্বিকার ভাবে বিক্রি করতে শুরু করলেন বৃটিশ কন্সাল । স্টক এক্সচেঞ্জে মহামারী লেগে গেলো ( রথচাইল্ড নিশ্চয় কিছু একটা জানে , বৃটিশরা হেরে গেছে) কনসাল বেচার ।
অল্প সময়ের ভিতরে পানির দামে সব বিক্রি হয়ে গেলো । এইবার , এক্সচেঞ্জ বন্ধ হবার একটু আগে রথচাইল্ডের নির্দেশে তার সমস্ত লোক চুপ চাপ পানির চেয়েও কম দামে সমস্ত কন্সাল কিনে নিলো । নাথানের লন্ডন ফেরার ২০ ঘন্টা পরে জানা গেলো বৃটিশদের জয়ের কথা । একদিনেই নাথানের সম্পদের পরিমান বেড়ে গেলো ২০ গুণ । নাথান রথচাইল্ডের হাত দিয়ে প্রথমে বৃটিশ অর্থনীতি ও পরে সমগ্র ইউরোপের অর্থনীতি চলে এলো একটি মাত্র পরিবারের হাতে ।
বৃটিশদের হাতে ভালো রকম মার খাওয়ার পরে ফ্রেঞ্চ অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়ে । ফ্রেঞ্চ সরকার ধার করতে শুরু করে ব্যাংকের কাছ থেকে । সরকারী বন্ড বিক্রি ও টাকা সংগ্রহের কাজে রথচাইল্ডের প্যারিস ব্রাঞ্চকে ইচ্ছে করেই বাইরে রাখা হয় । রাশভারী ও আভিজাত্যের অহমিকায় অভ্যস্ত ফ্রেঞ্চ এরিস্ট্রোকেটরা রাস্তার ক্ষ্যাত রথাচাইল্ডদের পাত্তা দিতে চায়নি । হয়ত শত্রুপক্ষের অর্থ যোগানের ইস্যুটাও ছিলো ।
এরিস্ট্রোকেটদের মন যোগাতে রথচাইল্ডরা অভিজাত পার্টি, উপহার , শিল্পকলার কেনা কাটা ইত্যাদি করেও যখন পাত্তা পাচ্ছিলো না তখন একটা খেলা খেললো । ১৮১৮ সালের অক্টোবরে তারা দ্রুত কিনে নিতে শুরু করলো ওউভ্রার্ড আর বেয়ারিং ব্রাদার্সের সরকারী বন্ড । ফলে বন্ডের দাম বেড়ে গেলো বহুগুনে । এর পর হঠাৎ করেই ৫ই নভেম্বর ১৮১৮ তে তারা একসাথে সব বন্ড বাজারে ডাম্প করাতে ফ্রেঞ্চ অর্থনীতির বারোটা বেজে গেলো । এইবার ফ্রেঞ্চ রাজা বাধ্য হলেন রথচাইল্ডদের পায়ে মাথানত করতে ।
পৃথিবীর দুটো প্রধান অর্থনীতি , বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ , চলে গেলো হাউস অফ রথচাইল্ডের হাতের মুঠোয় ।
ইউরোপের তথাকথিত মোনার্কি বা রাজপরিবার গুলো কেবল নামেই স্বাধীন রইলো । অর্থনৈতিক সমস্ত নিয়ন্ত্রন মোটামুটি নিয়ে নিলো রথচাইল্ড ও আন্তর্জাতিক ব্যাংক গুলো । এরাই ঠিক করে দিতে লাগলো কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় থাকবে না । পলিটিক্স , যুদ্ধ , শান্তি , রাজতন্ত্র , কমিউনিজম সবই আসলে নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করলো যার হাতে টাকা , অর্থাৎ রথচাইল্ড ও তাদের এলাইদের হাতে ।
আজকে রথচাইল্ড পরিবারের হাতে হাজারো ইন্ডাস্ট্রি , কমার্সিয়াল কোম্পানি, মাইনিং কোম্পানি ও টুরিস্ট কোম্পানি থাকলেও কেউই রথচাইল্ড নামটা ব্যবহার করে না । একটা কোম্পানিও তাদের ব্যালেন্স শীট পাবলিশ করতে বাধ্য নয় এবং করেও না যেহেতু তারা প্রাইভেট পার্টনারশীপ । তাই পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই বের করবে এই পরিবার তাদের প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে এই পৃথিবীর অর্থ সম্পদের ঠিক কত অংশের মালিক এবং আরো কত অংশ নিয়ন্ত্রন করে । তবে বলা হয় , ফ্রেঞ্চ রেভুলুশন , বিশ্বযুদ্ধ ১ ও ২ নাকি রথচাইল্ড ও আন্তর্জাতিক ব্যাংক গুলোর হাতে তৈরী করা । ৩য় বিশ্বযুদ্ধও এরাই তৈরী করবে ।
নিজেদের লাভের খাতিরে । রথাচাইল্ডরা মানবিকতার ধার একেবারেই ধারে না । নিজে ইহুদী হলেও প্যালেস্টাইন তৈরীর জন্য রথচাইল্ড হিটলারকে অর্থ যোগান দিয়েছে । আবার হিটলার বিরোধী পক্ষকেও ! হলোকাস্টের অর্থের যোগান দাতা আবার ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা !
আপনার কি ইচ্ছে করে না জানতে এরা আসলে কি চায়? এদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি? কারা এদের বন্ধু?
[ পাঠক চাইলে চলবে । এর পরের পর্ব আমেরিকা ও বিশ্ব নিয়ন্ত্রন]
http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/389053.stm
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Rothchilds
http://www.biblebelievers.org.au/slavery.htm
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।