আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবু হেনা স্যারকে মনে পড়ে.........(তৃতীয় পর্ব)



গত অক্টোবরে লেখেছিলাম , এখন আরেক অক্টোবর , মাঝখানে বিশাল গ্যাপ । আজ হঠাত মনে হল লিখা যাক……………… ২য় সপ্তাহ ধীরে ধীরে একে একে রাজু, তপজিত, তানিম, আরিফ এরা স্যারের বাসায় ভরতি হলো । এখন আর একাকি মনে হয় না স্যারের বাসায় । স্যারের বাসা ভালোই লাগছিল । ভেতরের রুমে বসত মেয়েরা, তখন বড়, ছোট যাই হোক সবাই মেয়েদের খেয়াল করতাম ।

একটা মেয়ে ছিল, ছেলেদের মত চুল, নাম জানিনা, তাই আমরা নাম দিলাম সামিয়া জামান ( একুশের খবর তখন খুব চলছিল । রাতে খেতে খেতে বাসার সবাই খবর দেখতাম । পরে ইন্টারের সময় জেনেছিলাম ওর নাম মুমু) ত আমারা সবাই সামিয়া জামানকে খেয়াল করতাম, ও কি করছে না করছে । আর আরেকজন ছিল স্কারফ পরা , মে বি আমাদের সিনিয়র, ওনাকে দেখতাম, ভালোই লাগত, চুপচাপ শান্ত ধরনের । স্যার একমগ চা নিয়ে বসতেন, ওদেরকে পড়াতেন, আমরা বাইরে বসে থাকতাম , এরপর স্যারের ইচ্ছা হলে আমাদের দেখতে আসতেন, ( আমরা সবাই চিন্তা করতাম, স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়লে মনে হয় স্যারই সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিবেন, এখন দেখি স্যার সম্পুরন বিপরীত) আমরা বসে বসে মাছি মারতাম।

স্যার প্রত্যেকদিন ক্লাস শেষে অনেকগুলো শব্দ দিতেন । আমাদের কাজ হলো প্রতিটা ওয়ার্ড দিয়ে সকল টেনস মেইক করব । খুবি সোজা কাজ । তাই বাসায় না করে স্কুলের কিছু স্যারদের ( ফাঁকিবাজ ) ক্লাসে করে ফেলতাম । আর যারা একিবারেই কিছু করে আনত না , তাদেরও কোন সমস্যা ছিল না, কারন স্যারের বাসায় আমরা বসে থাকতাম, ওরা ( বিশেষ করে রাজু ) অই ফাঁকে করে ফেলত ।

বাড়ির কাজ ( হোম ওয়ার্ক ) করে এনেছি, কিন্তু স্যারকে দেখাতে সাহস করতাম না, কারন জয় একদিন ঝাড়ি খেয়েছে , স্যার যতক্ষন নিজে এসে না জিজ্ঞেস করবে কি হোম ওয়ার্ক ছিল ততক্ষন কিছু বলা যাবে না । একদিন আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, “ স্যার করসি ! এখন কিতা কিতা করতাম ” খাতাটা এগিয়ে দিলাম, স্যার একদৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “ আল্লাহ আল্লাহ কর ” স্যারের ফ্রেঞ্জি বিহেবে চুপ মেরে যাই সবাই । আমরা অবশ্য আল্লাহ আল্লাহ করতাম না, দুনিয়ার যত গল্প আছে তা করতাম, স্কুলে কার টিফিন কে চুরি করল, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচে কে জিতল, হাসানের নতুন এলবামটা কেমন হইসে…বাংলাদেশের খেলা কবে, হাফটাইমে এ section এর সাথে খেলা আসে নাকি… স্যারের বাসায় যাই সকাল ৭টা ১৫তে । পড়া শেষ হতে বেশিক্ষন লাগে না, সাড়ে আট্টায় বা পৌনে নয়টায় শেষ হয়ে যায় । আমরা পড়তাম পাইলট স্কুলে, ক্লাস শুরু হত সাড়ে ১১ টায় ।

বাসায় গিয়ে কি করব, তখনো এতটা আঁতেল ছিলাম না। জয়কে বললাম, “ কিতা করতে ? ” জয় চুপচাপ, অন্যদেরকেও জিজ্ঞেস করলাম, কেউ কিছু বলে না, আমার বাইরে খাওয়ার বদঅভ্যাস ছিল, সকাল বেলায় বাসার কাউকে ঘুম থেক তুলতে ইচ্ছা করে না, তাই নাস্তা করে আসা হয় না। ত আমি বললাম, “ চল নাস্তা করি । ” প্রথম দিকে সবাই গচমচ করে । জয় বলে সে নাস্তা করেছে , আমি তখন বললাম, “ শালা বাসাত গিয়াতো পড়া শুরু করবে ।

খালি ফাস্ট অই যাইতে? যা ফাউল…বাসাত যা ” আমার এই কথায় কাজ হয়, কেউ নিজেকে আতেঁল প্রমান করতে রাজি নয়…… “ কই খাইতে ?” সবার এই প্রশ্নে আমি থমকে যাই। “ তোরা ক কই খাওয়া যায় ? ” কিছুক্ষন পর ঠিক হল ইস্টিকুটুমে যাওয়া হবে , আম্বরখানায় , নতুন খুলেছে , আমার যাওয়া হয়নি আগে , জয় কয়েকদিন আগে গিয়েছে । “ ওই ড্রাইবার, যাইতায় নি ? ” দ্রুত দুইটা রিক্সা নেওয়া হল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।