আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি মোহাম্মদ সাদিকের কবিতা

এ-মন একবারই ছুঁয়ে যেতে পারে কেউ...

কবি মোহাম্মদ সাদিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। যুক্তরাজ্যে ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। সিলটী নাগরী লিপিতে রচিত সুফি- ফকিরদের লেখা নিয়ে তাঁর গবেষণাকর্মের জন্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছে। আশির দশকের কবি মোহাম্মদ সাদিকের এ যাবত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- আগুনে রেখেছি হাত (১৯৮৫), ত্রিকালের স্বরলিপি (১৯৮৭), বিনিদ্র বল্লম হাতে সমুদ্রের শব্দ শুনি (১৯৯১), কাদের সিদ্দিকীর টুপি ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯৭), তুমি না থাকলে ও বৃষ্টিতো থাকবে(২০০০)।

অনুবাদ গ্রন্থ-নাইচেরিয়ার বিখ্যাত লেখব চিনুয়া এচিবি-র দ্বিতীয় উপন্যাস 'No Longer At Ease'-এর বাংলা ভাষান্তর 'নেই আর নীলাকাশ'। সুনামগঞ্জের ধাড়ারগাঁয়ে তাঁর স্থায়ী নিবাস। স্ত্রী জেসমিন আরা বেগম বিসিএস জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য। এক পুত্র মোহাম্মদ কাজিম ইবনে সাদিক ও এক কন্যা মাসতুরা তাসনিম সুরমাকে নিয়ে তার সংসার। ---------------------------------------- ছোটো'পা তোর নকশিকাঁথা ছোটো'পা তোর নকশিকাঁথা বুনতে বুনতে নামলো এসে শীতের শিশির তবু তো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না, শেষ হলো না! লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এ কোন কাঁথা বুনলি আপা? এ কোন নিখুঁত গাছ- গাছালি; স্বচ্ছ বকুল, অশ্রুবিন্দু? হাতের আঙুল সূঁচের ডগায় বিদ্ধ হয়ে লালচে আবির- লাগলো কাঁথার কোমল বুকে তবুতো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না, শেষ হলো না! লতার মতো জড়িয়ে থাকা সবুজ রেখা লুকিয়ে থাকা ফুলের কুঁড়ি, রুপোর কাঁকন, ঢাকাই শাড়ি ধীর গতিতে হাতের কাঁটা যাচ্ছে বুনে সময় থেকে সময় নিয়ে সব সকালের সব বিকেলের চিহৃ আঁকা ছোটো'পা তোর নকশিকাঁথা, আসবে কবে আমার ঘরে? ঢাকবে কবে আমার শরীর? অইতো শীতের হিমেল হাওয়া আসছে ছুটে ঝরিয়ে দিতে স্বপ্ন-সুখের শোভন পাতা ছোটো'পা তুই বুনলি কেবল তরতাজা সব ফুলের ছবি, ধানের ছড়া বিহান বেলার দোয়েল শালিক প্রসন্ন সব শাপলা শালুক পালকি এবং পাখির পালক।

শীতের তোড়ে কাঁপছি আমি কাঁপছে আজো করুন স্বদেশ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটি কাঁথা বুনলি আপা তবুতো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না , শেষ হলো না। শেষ কবিতার শব্দাবলী সারি সারি কবিতার মাঝে আসুক আমার মৃত্যু শিয়রে থাকুক কবিতার চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল শব্দের কোমল কোনো কাফনে যখন ঢেকে দেবে আমার শরীর প্রতীকী আতর দিয়ো উপমা লোবান ছন্দ ও মাত্রায় খুঁড়ে নিয়ো আমার কবর চিত্রকল্প সাবানে স্পর্শে আমাকে করিয়ো স্নান যুগে যুগে কবিদের চোখ এই রক্তাক্ত রোদন আসে- আমার জানাজা হবে কবিতার অন্তিম মিছিলে। রমণী নদীর নাম আমি পৃথিবীর সব ক'টি নদীর নামও ভুলে যাবো নদী কি চুলের ফিতে, রোজ যমুনায় বেঁধে রাখো চুল কোমড়ে জড়িয়ে নাও মেঘনার ঢেউ সুরমাকে সরল রেখায় রেখে দু'কানে কর্ণফুলী নদী কি ফিতে নাকি দুল তুমি সম্পূর্ণ জলের শরীর শাড়ি বা অলংকারে আলিঙ্গনে ও চুম্বনে নয় কেবল সঙ্গমে ও সাঁতারে তুমি প্রকাশিত হও আমি সব ক'টি নদীর নাম ভুলে যাবো অথচ এখনো তুমি জল খল খল কল কল নদীর নামেই আজ কোন নদী নেই তুমি এই পৃথিবীর প্রথম বহমান নদী। সমুদ্র জানে না আমার বুকের মধ্যে শুধু অনিয়ম সমুদ্র জানে না আমি নিয়মের কাছে পরাজিত নই সমুদ্র জানে না দিন বদলের দিনে ফের দেখা হবে আমাদের। সমুদ্র জানে না এখন এখানে প্রতিদিন নোনা স্বাদ, বেদনার অশ্রু ধারাপাত হয়ে ঝরে ধীরে ধীরে আজ সমুদ্র বাড়ছে বুকে, বলো তাকে এসে দেখে যেতে বলো সমুদ্রে যাবো না আমি সমুদ্রই আসবে এখানে! ঝিনুকের মতো দুঃখ জমে বুকের সৈকতে কবিতার মতো যাকে প্রতিদিন একা কুড়াই স্মৃতিরা শ্যাওলার মতো ভেসে আসে ভেসে আসে বহুদূর থেকে- নীল পথ আরো বেশি নীলাকার করে।

এখন কষ্টরা নদী এখন ঢেউয়ের শব্দ মানে রক্তের শ্লোগান! আমি কোন সমুদ্রকে দেখতে যাবো সমুদ্রই দেখবে আমাকে! বিদায় কবিতা ও অন্যান্য শব্দাবলী আঙুলের ফাঁক দিয়ে পড়ে যাচ্ছে ধান শব্দ রাত বিদায় কবিতা তোমাকে বিদায় যেরকম আকাশ বিদেয় করে বৃষ্টি, যেরকম বৃষ্টিও বিদেয় করে আলো, যেরকম ভালবাসাও বিদেয় করে তার সম্মানিত স্মৃতি তেমনি বিদায় কবিতা বিদায় নিশীথ আমার গোপন শব্দ তুলনাহীন তিমির বিদায় বেদনা শোক ও সন্তাপ অভিমানী শব্দমালা ধান নদী সুখ ও শিশির বিদায় কবিতা তোমাকে বিদায় প্রেমপত্র সূর্যোদয় গণতন্ত্র ও জোছনা নূপুরের শব্দ দেশপ্রেম সোহাগ চুম্বন তোমাকে বিদায়। কারাগার কারাগারে নেবে তাই খুলেছো দুয়ার কি হবে ওখানে নিয়ে অনেক কথাই বন্দী বুকে নিজেইতো কারাগার। পুলসেরাতে একা ছেলেবেলা তুমি আমাকে পুলসেরাতের কথা বলতে চুলের চেয়েও সুক্ষ্ণ ব্লেডের চেয়ে ধারালো কোথাও হাতল নেই নিচে দোজখের লোলুপ আগুন অই পুল পার হলে পর বেহেশতের ঠিকানা আমি বলতাম- 'যদি পড়ে যাই?' তুমি বলতে-'যারা ভালবাসে তারা পড়ে না। ' ভালবেসে আমি আজ পুলসেরাতর মাঝখানে এসে দাড়িঁয়েছি মা চুলের চেয়েও সুক্ষ্ণ ব্রেডের চেয়ে ধারালো কোথাও হাতল নেই নিজে দোজখের লোলুপ আগুন পুলসেরাতের মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি একা। কবিতা লিখিনি আজো কবিতা লিখিনি আজো তবু কবিতার জন্য ছটপট প্রাণ শুধু হাতে গোনা রাত-দিন শেষ করা চা'র কাপ, মিকচার শুধু নীরবে নীরবে নম্র নিয়মের চারপাশে ঘোরাঘোরি জমা খরচের খাতা জুড়ে এঁকে রাখা সাদা হাঁস, রোদন রোদ্দুর অবশেষে নিজে আমি হাঁস হবো শিকারী তীরের দাগ বুকে নিয়ে উড়ে যাবো দূর দেশে পৃথিবীর মানচিত্রে আমার ডানার রক্ত ফোঁটা ফোঁটা ঝরে যাবে আর তারাই কবিতা হবে একদিন।

কবিতা লিখিনি আজো তবু কবিতার জন্য এই ছটপট প্রাণ তবু কবিতার জন্য এই ছটপট প্রাণ! কবি মোহাম্মদ সাদিকের কবিতা আমাকে ভাবায়, ভালো লাগে তার শব্দবুনন, শব্দ নির্মাণ। পছন্দের কবিতাগুলো সবার সাথে শেয়ার করলাম। আশা রাখি সবার ভালো লাগবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।