আমি আমিই, অন্য কেউ নই!!!
বাঘ মামার মাথায় সবসময় আইডিয়া গিজগিজ করে। এইবার ঢুকছে পোলট্রি ফার্ম খোলার বুদ্ধি, ব্রয়লার না, লেয়ার, মানে ডিম পাড়ার ফার্ম। মামা মুরগীর ফার্ম খুলছে তার বাসার ছাদে। অনেক খুইজা বাইছা কয়টা ফরেন মুরগী আনছে ডিম পাড়ানের জন্য। কয়দিন খুব ডিম পাড়া পাড়ি চললো।
বাঘ নানী খুব খুশী। বাড়ীর সবাই ডিম খাইতে খাইতে পেট ফুলায় ফালাইলো। সবাই খুব খুশী, "বাঘু এই বার কামের কাম করছে একটা"। ডিম খাওয়ার উচ্ছাস যখন শেষ, বাঘ নানী মামারে কইলো যে এইবার কিছু ডিম বাজারে নিয়া বেইচা আয়। তোর হাত খরচটা উইঠা আসবে।
মামা ভাবলো ভাল বুদ্ধি। সাথে সাথে পীররে ফোন। হালুম শুইনা পীর উইড়া আসলো। মামা পীররে নানীর বুদ্ধিটা কইলো। পীর কয় "মামা, আপনে টেনশান নিয়েন না, আমিই আপনের হইয়া ডিম বেইচা দিতাছি"।
পীর ডিমের ঝুরি নিয়া বাইর হইয়া গেল ডিম বেচতে। তার পর সারা দিন আর তার কোন খোঁজ খবর নাই। বাঘমামা, নানী সবাই টেনশানে পড়ছে। নানী তো পারলে মামারে ত্যাজ্য-পুত্র কইরা দেয় ডিম বেচতে পীররে পাঠানোর জন্য। পীর আবার নানীর খুব প্রিয় পাত্র, সে রাজশাহী গেলে প্রতিবার নানীর জন্য ঝুড়ী ভর্তি আম নিয়া আসে।
সন্ধার দিকে পীর আইলো, চেহারা পুরা কয়লা, কিন্তু তেত্রিশ পাটি দাঁত বাইর হয়ে আছে। মামার ঘরে ঢুইকাই ডিমের ঝুড়ী মামার হাতে ধরায় দিয়া মামার ছাদের বাথরুমে গিয়া ঢুকলো। কিছুক্ষন পর বাথরুম থেইকা হাঁক দিল, " মামা, একটা লুঙ্গী আইনা দেন"। মামা দৌড়াইলো নিচে বাঘ-নানার একটা লুঙ্গী আনার জন্য, সাথে পীরের প্রত্যাবর্তনের খরটাও দিতে হবে।
যাই হোক, পরিস্থিতি ঠান্ডা হবার পর মামা পীররে দিল ঝারি, "তোর জন্য আমার ত্যাজ্য-পুত্র হইবার দশা! কই গেছিলি তুই?" পীর আগে মামার হাতে ডিম বেচার টাকা দিয়া কইলো গুইনা দেখেন তিন হাজার টাকা পুরা আছে কিনা! মামা গুইনা দেখেন যে ঠিক ঠিক তিন হাজার টাকাই আছে।
কাহিনী কিছু বুঝলো না। পীররে দিলো ডিম বেচতে, আর সারা দিন পার কইরা দিয়া পীর আইসা হাতে তিন হাজার টাকা ধরায় দিল!!!
পীর মামারে বুঝায় কইলো, শুইনা তো মামার চান্দি গরম। কাহিনী তেমন কিছুনা, পীর ডিম বেচতে বাজারে গিয়া ডিমের দামের খোঁজ নিয়া দেখে পাইকারি দাম ২৩ টাকা, খুচরা দাম ২৮ টাকা আর ফেরিওয়ালা রেট ৩০ টাকা পার হালি। পীর তাই সারাদিন পাড়ায় পাড়ায় ফেরি কইরা ডিম বেইচা আসছে। বাঘ মামা হিসাব করে দেখে যে একটা ডিমের দাম সাড়ে সাত টাকা।
হায় হায়, এই কয়দিন যে সবাই ডেইলী হালি হালি ডিম খাইলো, না জানি কতো টাকা বাথরুমে চইলা গেল!
মামার দিন এর পর ভালই চলতে লাগলো। চাইরশোটা মুরগী, ডেইলী একটা কইরা ডিম পাড়ে, পীর সেই ডিম বিক্রি কইরা আনে। দুইজনের হাত খরচা, পকেট খরচা, নলি খরচা উইঠা যায়।
এরমধ্যে কানাডা থেইকা ভূত মামা আইসা হাজির। বাঘ মামার বাসায় আইসা সবার সাথে আড্ডা-উড্ডা মাইরা যাবার আগে বাঘ মামা তারে ছাদের মুরগীর খাচা দেখাইতে নিয়া গেল।
ভূত মামা তাদের মুরগী প্রজেক্ট দেইখা উচ্ছাসিত।
ঠিক তার পরের দিন থেকে সব কয়টা মুরগীর ডিম পাড়াবন্ধ। কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। একদিন দুইদিন তিনদিন যায়... কিন্তু ডিমের খবর নাই। পীর আর বাঘমামার মাথায় বাড়ি।
শেষে মুরগীর ডাক্তার ধইরা নিয়া আসা হইলো, কিন্তু ডাকতারও মুরগী সাইজ করতে পারলো না। এদিকে মামার ডেইলী তিন হাজার টাকা গচ্ছা যাইতাছে।
এক সপ্তাহ যাবার পর পীর হঠাৎ আবিষ্কার করলো যে ভূত মামা আসার পর থেইকাই ডিম পাড়া বন্ধ। মুরগীবেটিরা ভূত দেইখা ভয়েই ডিম পাড়া বন্ধ কইরা দিছে। পীরের অ্যানালিসিস শুইনা বাঘ মামার চান্দি আরো গরম হইয়া গেল।
চিন্তা কইরা দেখে যে পীর মিছা কথা কয় নাই, আগে মুরগীর কলকাকলীতে অন্য কোন শব্দই শোনা যাইতো না, আর সপ্তাখানেক ধইরা একটা মুরগীও কোন সাড়া শব্দ করে নাই। এখন মুরগীর ভয় কাটানোর উপায় কী? দুই জনে মিলে যুক্তি করে আক্কেল মামারে ডাইকা নিয়া আইলো। আক্কেল সব শুইনা বলে কোন টেনশান নিয়েন না মামা, আমি ওদের হাসানের ব্যাবস্থা করতাছি। আক্কেল শুরু করল মিশান, "অপারেশান মুরগীর ডিম পাড়ানি"। এক সপ্তা ধইরা মুরগীরে সে গান শোনায়, কবিতা শোনায়, কৌতুক শোনায়... এদিকে টানা সাত দিন ধইরা সেসব শুইনা বাঘ মামার তার ছাদের ঘর থেইকা পিঠটান দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকলো না।
নিচে নাইমা পেপার পড়তে পড়তে সন্ধার দিকে তার নজরে পড়লো যে দুই দিন পর থেকে ডিমের হালি দুই টাকা বাইড়া যাইবো। খবর পইড়া তো মামার অ্যান্টেনা চুক্ষা!!!
ওপরে গিয়া দেখে আক্কেল তখন মুরগীর মনোরঞ্জনের জন্য পুঁথি পাঠ শুরু করছে। এমনিতেই অ্যান্টেনা চুক্ষা, তার ওপর আক্কেল মামার সুরেলা কন্ঠে বেসুরা পুঁথি শুইনা মেজাজ আর ধইরা রাখতে পারলো না। দিল এক হালুম। সব ঠান্ডা।
এর পর মুরগী গুলার দিকে তাকায় তার ইস্পিশাল বাঘস্বরে কইলো "কাইল থেইকা যদি তোরা তিনটা কইরা ডিম না পাড়স, সব কয়টারে বেইচা দিমু। মুরগীর কেজি এখন একশ পঞ্চাশ ট্যাকা"।
সকালে উইঠা নিমের ডালা চাবাইতে চাবাইতে মামা ছাদে গিয়া তো পুরা টাসকি। সবগুলা মুরগী তিনটা কইরা ডিম পাইড়া রাখছে। চেক করতে করতে দেখে সবাই তিনটা কইরা ডিম পাড়লেও একটা মুরগীর সামনে মাত্র একটা ডিম।
মেজাজ আবার চড়া শুরু করলো। মুরগীর সামনে খাড়ায় জিগায়, "ঐ মুরগীর বাচ্চা, একটা কেন? বাকি দুইটা কই?"
আল্লাহর কি কুদরত!!! মুরগীর জবান খুইলা গেল, চিঁ চিঁ কইরা কয় "মামা, আপনের ভয়ে কেমনে জানি একটা ডিম পাইড়া ফালাইছি। পরে বাকি দুইটা পাড়তে গিয়া খেয়াল হইছে যে আমি মোরগ"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।